ভালবাসা সবিশেষ-২
লিখেছেন লিখেছেন হাসান তারেক ১২ মার্চ, ২০১৩, ০৭:৫৯:৩৪ সন্ধ্যা
শত চেষ্টা করেও চেহারা থেকে বিমর্ষ ভাবটা মুছে ফেলতে পারছে না রাজীব। পৃথিবীতে সুখ, দুঃখ সবই সাময়িক। কথা সত্য। তাছাড়া একটা মানুষের বাহ্যিক অবস্থা দেখে কতটুকুই বা ভেতরের দুঃখ, সুখের মাত্রা বোঝা যায়। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন ছাত্র-ছাত্রীকে বাহির থেকে যতটা প্রফুল্ল মনে হয় সত্যিকার অর্থে তার চাহিদা, পরিবার, সমাজ, বন্ধু ইত্যাদির সাথে সহবস্থান করতে গিয়ে সে এতটাই প্রফুল্ল? একজন কে নিয়ে বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যাবে সামগ্রিক অবস্থা কতটা ব্যাপক ও বিশাল। আসলে এগুলো নিয়েই আমাদের জীবন যাপন।
গত পাঁচ বছর আগে যে মানুষটার সাথে রাজীবের সাথে পরিচয় হয়েছিল গত এক বছর ধরে সেই মানুষটার সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যদিও ইদানিং মোবাইল ফোনে ভালই যোগাযোগ হয় কিন্তু সেই প্রথমবারের দেখা হবার পর আর দেখা বা কথা হয়নি। বিগত পাঁচ বছরে কত পরিবর্তনই না এসেছে। অথচ সেই স্মৃতিকে পুঁজি করে এত দূর টেনে আনা।
আজই ভোরে সোনালীর একটি ম্যাসেজ আসে রাজীবের ফোনে। ‘আপনার সাথে জরুরী কথা আছে’। অফিসের কর্মব্যস্ততার মাঝেও কোন ব্যত্ত্বয় নেই। রাজীব সোনালীকে ফোন করল। ওপাশ থেকে সোনালী জানালো এক ছেলে নাকি তার বাবা-মা সহ তাকে দেখতে এসেছে। হঠাৎ করে আগমন। সকালে বাবা হঠাৎ করেই বললেন সোনালীকে রেডি হতে। তাকে দেখতে আসছে। বিষয়টাতে বেশ ক্ষুব্ধ সোনালী।
সোনালী রাজীবের সাথে সব শেয়ার করল। সোনালী রাজীবকে দেখা করতে বলল। যদিও সোনালী ও রাজীবের মাঝে দুরুত্ব একেবারে কম নয় তবুও হালকা হতে কাছ থেকে শেয়ার করতে চাইল।
রাজীব ব্যস্ততার ভিড়ে পরে জানাচ্ছে বলে এ যাত্রায় ফোন ছাড়ল। একটু পর পুনরায় সোনালীর ম্যাসেজ। ‘যারা দেখতে এসেছিল তারা নাকি ফোন করে সোনালীর বাবাকে যেতে বলেছে’। খবর পেয়ে সোনালী অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছে। রাজীবও তাই। রাজীব সোনালীকে কিছু বুঝতে না দিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করল। ‘দেখতে আসলেই তো আর বিয়ে হয়ে গেল না। অনেক বিষয় আছে। অনেক ধাপ পেরুতে হবে। তুমি এত ভেবো না সব ঠিক হয়ে যাবে।’। রাজীব তাকে ধৈর্য্য ধরে শক্ত হতে ২/৩ টা ম্যাসেজ করল। সোনালী আবার ম্যাসেজ করল, ‘আমি কি আমাদের Relation এর কথা আমার মাকে বলব?’। রাজীব উত্তর দিল, “তোমার পক্ষে হয়ত তোমার মাকে বলা অনেক সহজ কিন্তু আমার পক্ষে impossible”। রাজীব কিছুদিন আগে একবার তার মাকে একবার বলেছিল। তার মা রাজি হননি। বরং ইদানিং রাজীবকে সন্দেহ করছেন। রাজীব সেটা সোনালীকে বলতে পারেনি। সে আরো ভেঙ্গে পড়বে ভেবে। সোনালী হয়ত তার কথা রাজীবকে শেয়ার করেছে কিন্তু রাজীব কাউকে শেয়ার করতে পারেনি। তাছাড়া তার হাত-পা যেভাবে বাধা তাও সে কাউকে বোঝাতে বা বলতে পারছে না। সোনালী হয়ত মনে মনে রাজীবের অসহায়ত্বকে দুষছে।
এরপর থেকে রাজীব আর সোনালীকে ফোন করছে না। মন চাইলে দু’একটা ম্যাসেজ দিচ্ছে। যেহেতু দুজনই ভেঙ্গে পড়েছে এবং তাদের মধ্যবর্তী সম্পর্ক গভীর এমতবস্থায় তাদের ফোনালাপ বা দেখা হওয়ার মাধ্যমে একে অপরকে সান্ত্বনা দিতে গেলে হয়ত হিতে বিপরীত হতে পারে। বরং নিজেই নিজের সান্ত্বনার জন্য মানসিক শক্তি যোগাতে পারে।
তাছাড়া তারা উভয়ই সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান বিদায় উভয়ই মা-বাবাকে কষ্ট দিয়ে বা তাদের সম্মান নষ্ট করে কিছু করতে অনিচ্ছুক। এ ব্যাপারে দুজনই একমত।
একটা মেয়ে হিসেবে সোনালীর যে পারিবারিক চাপ সাথে রাজীবের প্রতি পুর্ব পরিচয় পুঁজি করে তীলে তীলে গড়ে তোলা ভালবাসার চাপ সামলে উঠতে যে মানসিক শক্তি প্রয়োজন সেটা তাকে কে যোগাবে? রাজীবই বা কিভাবে সামাল দেবে? কি করে নিজেকে সান্ত্বনা দেবে? কি করে সোনালীকে সান্ত্বনা দেবে?
সর্বপরি এর পরিসমাপ্তি কি? কোথায় এর সমাধান? কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন হবে নাকি প্রকৃতির কাছেই হার মানতে হবে?
শুনেছি ভালবাসার একটা সুন্দর পরিণতি হল বিয়ে তাই বলে সব ভালবাসর পরিণতি বিয়ে হয় না।
যদি তা না হয় তবে এ ভালবাসার শেষ কোথায়? এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় এবং মানসিক শক্তি অর্জনে কি হতে পারে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ?
বিষয়: সাহিত্য
১২৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন