ভালবাসা সবিশেষ
লিখেছেন লিখেছেন হাসান তারেক ১১ মার্চ, ২০১৩, ১০:৫৩:৫৯ রাত
এই মুহুর্তে তাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম মোবাইল ফোন। অথচ কিছুক্ষণ আগেও তারা একসাথে ছিল। লতা অনেক দিন ধরেই মাহাদীকে অন্তত একটি বারের জন্য হলেও দেখা করতে যেতে বলছিল। আগ্রহ থাকলেও মাহাদীর সময় হয়ে উঠছিল না। আজই হঠাৎ মাহাদী লতার সাথে দেখা করতে বেড়িয়ে পড়ল।
যদিও মাহাদী লতাকে দেখা করতে যাবার কথা বলেছিল তবুও রওয়ানা হয়ে লতাকে ম্যাসেজ লিখল, “দুঃখিত, আসতে পারছি না। আমায় ক্ষমা করো এবং ভুল বুঝ না”। লতার কোন প্রতি উত্তর নেই। বোধহয় রেগে ফুলে ফেঁপে একাকার। একটুপর মাহাদী আবার ম্যাসেজ লিখল, “আসতেই হবে? না আসলে হয় না? পরে একসময় আসি?”। এবারও লতার কাছ থেকে কোন Response নেই। আরো কিছু সময় পর মাহাদী লতাকে ফোন করল। ওপাশ থেকে লতা বেশ রাগান্বিত। মাহাদী বলল, “তুমি দ্রুত চলে এসো। আমি প্রায় কাছাকাছি”। লতা জানালো, “বের হচ্ছি। আসতে যতক্ষণ লাগে”। বোধহয় লতার রাগ একেবারে উধাও। আগের ম্যাসেজগুলো ছিল লতাকে Surprise দেবার জন্য।
গন্তব্যে পৌছে মাহাদী আনুমানিক ১০ মিনিট অপেক্ষা করার পর দেখল, রিক্সায় লতা আসছে। সে এগিয়ে গিয়ে তাকে Receive করল। মাহাদী ‘চল’ বলে একদিকে হাটতে শুরু করল। লতা মাহাদীর পেছন পেছন। পতিমধ্যে মাহাদী তার হাতের লতাকে দেবার জন্য কেনা বইটা লতার প্রতি আগিয়ে দিয়ে বলল, “এটা ধর তো”। লতা অনিহা ভাব দেখিয়েও নিল। তারা একটা Restaurant এর দিকে আগিয়ে গেল। পথে মাহাদী লতাকে বলল, “আমি তোমার কথামত এসেছি। এই মুহুর্ত থেকে আমি যা যা বলব তোমাকে তাই করতে হবে”। লতা কোন উত্তর দিল না। যেন মনের সম্মতি লক্ষণে প্রকাশ।
দুপুর ৩.৩০। এ সময় Restaurant এ দুপরের খাবার থাকার কথা নয় তবুও আছে। Restaurant টা নিরিবিলি। তারা মুখোমুখি নিজেদের আড়াল করে বসল। ওয়েইটার এসে পানি সরবরাহ করে অর্ডার চাইল। মাহাদী তাকে একটু পরে আসতে বলল। দু’জন নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছে। তারা কি চায়, কিভেবে চায়, এখন কি করনীয় ইত্যাদি। জমে থাকা অনেক আদো আদো কথা। অনেক আবেগ আর অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। লতা তার আদরের পুতুলটা মাহাদীকে দেখালো। মাঝখানে লতার ভেজা চুল খুলে যাওয়াতে সে চুল বাধতে ফ্রেশ রুমে যেতে চাইল। মাহাদী তাকে ফ্রেশ রুমের অবস্থানটা দেখিয়ে দিয়ে বলল, “হাত ধুয়ে এসো”। কেননা মাহাদীর দুপুরে খাওয়া হয়নি কিন্তু লতা বাসা থেকে খেয়ে বেড়িয়েছে। তাই সে খেতে অনাগ্রহ ছিল। মাহাদী জানত, লতা মাছ, মুরগী, খাঁসি কিছুই খায় না। তার পছন্দ হল ডিম, গরুর মাংস। এ Restaurant এ গরু রান্না হয় না। ডিমের ব্যবস্থাও নেই। অবশেষে লতার অপর একটা প্রিয় জিনিস আলু ভর্তা অর্ডার করা হল। মাহাদী এর সাথে ডাল ভর্তা, করল্লা ভাজি এবং গলদা চিংড়ি অর্ডার করল। খেয়ে আসাতে লতার এখনও খেতে অনাগ্রহ। অনেক অনুরোধ, জোড় করেও তাকে খাওয়ানো গেল না। আনা হল কোমল পানীয়। সে তাও খেল না। সব কষ্ট করে মাহাদীকেই খেতে হল। মাহাদী জানত, লতার অন্যতম প্রিয় জিনিস ‘আইসক্রিম’। মাহাদী ওয়েইটারকে ডেকে বাহিরে আইসক্রিম আনতে পাঠালো। খাওয়া শেষে ওয়েইটার যখন বিল নিয়ে আসল বিলের এমাউন্ট দেখে মাহাদী লতাকে বলল, “এই Restaurant তো দেউলিয়া হয়ে যাবে”। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে লতা মাহাদীকে বলছিল, “আমি আর তোমাকে ফোন দেব না”। উত্তরে মাহাদী বলল, “তুমি আমাকে ফোন না করে পারবে না”।
মাহাদী ও লতা পাশাপাশি হাটতে হাটতে লতাকে আগিয়ে দিতে রিক্সার খোঁজ করছিল। মাহাদী একটা রিক্সা ঠিক করে, লতাকে উঠিয়ে দিয়ে, রিক্সার কভার টেনে দিয়ে ভাড়া চুকিয়ে বিদায় জানালো। এরপর সে বাসস্ট্যান্ডের দিকে আগাচ্ছিল। হঠাৎ মোবাইলে বেশ কয়েকবার ভাইব্রেশন হল। লতার ফোন দেখে মাহাদী ব্যাক করল। লতা বলল, “তোমার সাথে কথা আছে। একটু এসো”। মাহাদী বলল, “কি ব্যাপার তুমি যাওনি”। লতা বলল, “না যাইনি। তুমি এসো”। মাহাদী ফিরে এসে দেখল যেখান থেকে তাকে রিক্সায় উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল লতা সেখানেই দাঁড়িয়ে। মাহাদী কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, “কি হয়েছে? যাওনি কেন? রিক্সা বিদায় করে দিয়েছ?”। লতা উত্তরে বলল, “তোমার সাথে কথা আছে। তোমার সাথে আরো ১৫ মিনিট থাকব”। মাহাদী বলল, “কি বলবে, বল”। লতা বলল, “এখানে!”। মাহাদী ‘এসো’ বলে দুইজন আড়ালে গেল।
মাহাদী বলল, “এখন বল”। লতা কোন উত্তর না দিয়ে মাহাদীর পকেট থেকে কলমটা ছিনিয়ে নিয়ে মাহাদীকে তার হাত বাড়িয়ে দিতে বলল। ভালবাসার কথা লিখবে বলে। মাহাদী Restaurant এ তাকে এটা করতে বলেছিল। মাহাদী বলল, “Restaurant এ করলে না এখন রাস্তায় এসে এসব”। মাহাদী রাজি হল না। কিন্তু লতা নাছড়বান্দা। অনেক জিদি একটা মেয়ে। এমন একটা জায়গায় বিশ্ব রোডের পাশে লোকজন যাওয়া আসা করছে সবাই যেন ফেল ফেল তাকিয়ে ওদের কান্ড দেখছিল। কেন মানুষ এভাবে ফেল ফেল তাকিয়ে দেখে? ওদের তো পর্যাপ্ত বয়স হয়েছে। এই বয়সেও যদি এতটুকু করতে না পারে তবে কারা পারবে? লতা জোড় করেও মাহাদীকে লিখে দিতে পারল না। কেননা মাহাদী এমন ব্যাপারে অভ্যস্ত নয়। মুখে বলতে বলল। লতা তাও বলবে না। তুমি এমন কেন? একটু হাতটা বাড়িয়ে দিলে কি হয়? এসব বলে লতা মাহাদীকে দুষছিল। মাহাদী তাকে বুঝিয়ে বাসায় পাঠাতে চাইল। তাকে যেন বোঝানো যাচ্ছিল না। কলমটা গিফট করতে চাইল সে তাও নিল না। লিখে পাঠাতে বলল। সে তাতেও রাজি না। মাহাদী রাগ করে বলল, “আমার শার্টে লিখে দাও”। অবশেষে ওকে ধমক দিয়ে বোঝাতে ও পাঠাতে সক্ষম হল। কিভাবে একটা মানুষ এতটা পাগলামি আর শিশু সুলভ আচরণ করতে পারে তা যেন মাহাদীর কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছিল না। মাহাদী যখন ঘুরে বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওয়ানা হচ্ছিল ঠিক সেই মুহুর্তে পেছন থেকে লতা বলে উঠল, “আমি তোমাকে ভালবাসি”। মাহাদী সামনে হাটতে শুরু করল। এক বয়স্ক ফেল ফেল তাকিয়ে পুরো বিষয়টা অবলোকন করছিলেন। উনি বোধহয় বোকা বনে হা করেই রইলেন। বাসস্ট্যান্ডের পথে হাটতে হাটতে মাহাদী লতাকে ফোন করে বলল, “ধুর বোকা, ভালবাসার কথা কি কেউ এভাবে চুরি করে বলে”।
বিষয়: সাহিত্য
১১৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন