স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং পরীক্ষার ফলাফল বিড়ম্বনা
লিখেছেন লিখেছেন হাসান তারেক ১০ মার্চ, ২০১৩, ০৬:১০:২৬ সন্ধ্যা
কিছুদিন আগে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল বেড়িয়েছে রিতিকার (ছদ্মনাম)। রাজধানীর এক স্বনামধন্য স্কুলে ৪র্থ শ্রেণির চুড়ান্ত ফলাফলের ভিত্তিতে সে নতুন ৫ম শ্রেণিতে উঠেছে। এই স্কুলে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে লটারী জিতে ভর্তি হতে হয়।
একেক শ্রেণিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি শাখা। মধ্যবিত্ত পরিবারের মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। কোনমতে পরিচিত একজন অল্প টাকায় ওর গৃহশিক্ষক। বাকি দেখা শোনা ওর মা’ই করেন। ২য় সাময়িক পরীক্ষার সময়টাতে ওর গৃহশিক্ষক ছিল না। তাই ফলাফল কিছুটা খারাপ হয়েছিল। চুড়ান্ত ফলাফলে ওর ডিমোশন হয়েছে। ওর মা সব পরিস্থিতি জানা সত্ত্বেও কিছুতেই মানতে রাজি নন যে তার মেয়ের এতটা ডিমোশন হতে পারে। মায়ের মন বলে কথা। তিনি তার বোনের ছেলে মাহাদীর (ছদ্মনাম) সরণাপন্ন হলেন যে কিনা একজন ১ম শ্রেণির সরকারী কর্মকর্তা। মাহাদী রিতিকার ফলাফল শীটটি যাচাই করতে গিয়ে একটি ভুল দেখতে পেল। ওদের বাংলা দুটো বিষয় মিলে একটি এবং ইংরেজি দুটো বিষয় মিলে একটি বিষয় ধরা হয়েছে। আর ফলাফল হিসেব করা হয়েছে ১ম সাময়িকের ৩০%, ২য় সাময়িকের ৩০%, বার্ষিকের ৪০% নিয়ে মোট ১০০% -এ। ইংরেজী বিষয়ে উপরোক্ত নিয়মে তার ২০০ নম্বরের মধ্যে অর্জিত নম্বর হয় ১১৭.২০ যেখানে ফলাফল শীটে দেয়া হয়েছে ৯২.০৮। যেই কারণে চুড়ান্ত ফলাফল যেখানে ৫৪৬.২০ হবার কথা তা হয়ে গেছে ৫২২.৮০। ব্যাপারটি ধরিয়ে দেবার পর রিতিকার মা তার বোনের ছেলেকে নিয়ে স্কুলে রওয়ানা হলেন। স্কুলে পৌঁছে জানা গেল ফলাফলের প্রকাশের পর সব শিক্ষকরাই চলে গেছেন। স্কুল থেকে তাকে দুই দিন পর সকাল ১০.০০ টায় আসতে বলা হল। তিনি বাড়ি ফিরে মেয়ের স্কুল ডায়রী ঘেটে শ্রেণি শিক্ষিকা কানিজ ফাতিমার (ছদ্মনাম) মুঠোফোন নাম্বার পেয়ে ফোন করলেন। ওপাশ থেকে শিক্ষিকা যখন বললেন, কি সমস্যা তখন রিতিকার মা বুঝিয়ে বলতে পারবেন না বলে ফোনটা মাহাদীকে ধরিয়ে দিলেন। মাহাদী সব বুঝিয়ে বলতেই ওই শিক্ষিকা নানাভাবে বুঝ দিতে চেষ্টা করছিলেন। তিনি বলছিলেন এবারই প্রথম ফলাফল কম্পিউটার সফটয়্যারের মাধ্যমে করা হয়েছে বলে এই ভুল হয়েছে। মানুষের হিসেবে ভুল হতে পারে কিন্তু কম্পিউটারকে ভুল সুত্র না দিলে সে ভুল করার কথা না। আর যদি সত্যিই কম্পিউটার সফটয়্যারের ভুল হয়ে থাকে তবে নিশ্চিত করেই বলা যায় সবার ফলাফলেই ভুল হয়েছে। শিক্ষিকা যখন কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না তখন মাহাদী নিজের পরিচয় দিলেন। পরিচয় দিতেই ওই শিক্ষিকার দফা ঠান্ডা হবার উপক্রম। একবারে জী হুজুর, জী হুজুর ধরণের। কথা প্রসঙ্গে শিক্ষিকা বলছিলেন তার বাসা নাকি মগবাজারে যদিও পরে রিতিকার মা’র কাছ থেকে জানা গেল তার বাসা যাত্রাবাড়িতে। এখন উনি রাজি হলেন ফলাফল শীট ঠিক করে দিতে কিন্তু পজিশন পরিবর্তন করবেন না। কেননা এতে একই পজিশনে দুই বা ততোধিক প্রার্থী হয়ে যাবে। তাকে বোঝানো হল শ্রেণিতে ১ম কি দুই জন হয় না? তাহলে সমস্যা কি, একই পজিশন দুই জনের হবে। অবশেষে তিনি প্রধান শিক্ষকের সাথে আলোচনা করে ঠিক করে দিতে রাজি হলেন।
বড় ব্যাপার হল পুরো বিষয়টা নিয়ে স্কুলের উপর মহল পর্যন্ত টনক নড়েছে। বোধহয় যে কোম্পানী তাদের সফটওয়্যারটি করে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্কুলের বিভিন্ন স্থানে দেয়ালে পোস্টার লাগানো হয়েছে, “ফলাফল শীটে ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত”। পুনরায় সংশোধন করে নতুন করে পজিশন সাজিয়ে পুনঃ ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। রিতিকার মা’র বোধহয় কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। মজার ব্যাপার হল রিতিকার ফলাফল শীট ঘেটে যেখানে একটি বিষয়ে ভুল পাওয়া গিয়েছিল ঠিক তখন ওরই এক সহপাঠির ফলাফল শীট ঘেটে দুটো বিষয়ে ভুল পাওয়া গিয়েছিল।
যাদি এই ভুলটা বের না হত তবে হয়ত ভুলই থেকে যেত। কচি ফুলগুলোর প্রতি অবমূল্যায়ন হত। অনেকে হয়ত রাজধানীর স্বনামধন্য স্কুলে সন্তানকে পড়িয়ে স্বস্তিতে আছেন। সেই বিশ্বাসেই ফলাফলও বিশ্বাস করে নিয়েছেন বা নিচ্ছেন। জানেন তো, দেখতে সুন্দর হলেই খেতে সুন্দর হয় না।
কাজেই চোখ কান খোলা রাখুন। অনুগ্রহপূর্বক স্বনামধন্য স্কুল বলে আর দশ জনের মত তাদের সাথে আপনিও গা ভাসিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনার সন্তানের রেকর্ডগুলো যাচাই করুন, অডিট করুন। অন্যথায় অবমূল্যায়ন হবে এবং পরিণতিতে কচি ফুলগুলো আগ্রহ হারিয়ে স্থবির হয়ে যাবে।
বিষয়: বিবিধ
১৩১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন