কোনটিকে অবৈধ বলবেন?
লিখেছেন লিখেছেন হাসান তারেক ০৭ মার্চ, ২০১৩, ১১:৪৭:৫৫ সকাল
আজ সকালে অফিস যেতে ঘর থেকে বের হয়েই দুটো বাজে ঘটনার সম্মুখীন হয়ে মন খারাপ হল মাহাদী’র। গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রীদের সৃষ্ট ভীড় এড়াতে প্রতিদিনই একটু সকাল সকাল বের হয় মাহাদী। আজ দেরি করে বের হওয়াতে রাস্তায় অসংখ্য মানুষের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাবার ভীড়ে পড়তে হল। একটি বাসের হেলপার সিটিং সিটিং বলে দিগুন ভাড়ায় গন্তব্যে পৌঁছে দেবার শর্তে বুলি ছাড়ছিল। একে তো দেরি আবার শত শত মানুষকে গন্তব্যে যাবার আশায় নির্বিকার দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভাড়ার তোয়াক্কা না করে বাসে উঠে পরল সে।
একে একে বাসের সব সিট ভরে গেল। এরপর দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে শুরু করল। বুঝলাম এ সিটিং নয় চিটিং। তেলের মুল্য বৃদ্ধি, অফিস টাইমে একটু এমন হবেই ইত্যাদি শর্তে যাত্রীদের কাছ থেকে দিগুন ভাড়া আদায়। ছোট্ট শহরে মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে মানুষও নির্বিকার।
বেঁচে থাকার তাগিদে এবং জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে মানুষগুলো এ শহরে জীবিকা উপার্জন করে। আর তাদের এই দুর্বলতার সুযোগ নেয় পরিবহন ব্যবস্থা। অভিযোগ করেও কোন লাভ হয় না। পরিবহন সার্ভিসের মালিকের হয়ত রয়েছে ক্ষমতার জোড় অথবা টাকার জোড়।
এমন পরিস্থিতে সবাই যেন অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টিকে মেনেই নিয়েছিল। বয়স্ক এক চাচা অতিরিক্ত ভাড়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেন। বাসের কেউ তার পক্ষে নেই। সেই সুযোগে বাসের কন্ট্রাক্টর ও হেলপার খুব রুক্ষ ভাষায় তাকে বাস থেকে নেমে যেতে বলল। কাল্পনিক জগতে যেন নামিয়েই দিল। এর সমাধানের পথ খোঁজার চেয়ে বরং না খোজাই শ্রেয়। অনেকে মান-সম্মান হারানোর ভয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও কষ্টে চুপ রয়েছেন।
মাহাদী বাস থেকে লক্ষ্য করল অনেক মানুষ এক জায়গায় সমবেত হয়ে কি যেন দেখছে। যদিও সার্কাসের মত দেখতে কিন্তু সার্কাস নয়। একটি লোককে বেশ কয়েকজন মিলে মারধর করছে। বোধ হয় মোবাইল চোর বা পকেটমার। আরোও ভাল করে অবলোকন করল, কেউ হাত দিয়ে, কেউ পা দিয়ে আঘাত করছে। কেউবা আবার বড় ইট হাতে। তাদেরই একজন দৌঁড়ে গিয়ে এক আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের হাত থেকে একটা ডান্ডা নিয়ে আসল। কিছু সংখ্যক তাকে ধরে রেখেছে আর কিছু সংখ্যক বীরত্ব অর্জনে শক্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সবাই যেন একযোগে ম্যাজিক দেখছে। এমন নির্মম মারধর মানুষ মানুষকে করতে পারে, যা সামনা-সামনি না দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হতেই পারে। কারো পক্ষপাতিত্বের কথা নয় বরং প্রশ্ন হল, মানবতা বলে কি কিছু নেই? সেও তো একটা মানুষ। তারও তো জীবন আছে। ভাল পরিবারে, সুশীল সমাজে জন্ম হয়ে আপনি আমি আজ সভ্য মানুষ। আর তার ক্ষেত্রে উলটো হবার কারণে সে আজ সমাজে অসভ্য, ঘৃণিত, নিন্দিতি চোর। যারা মারছে তারা হয়ত বীরত্ব জাহির করছে অথবা ভাবছে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিলে কিছুদিন পর ছাড়া পেয়ে আবার পূর্বের পেশায় ফিরে যাবে। তাই নিজ সিদ্ধান্তেই আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে? এর পরিণতি কি? হয়ত পঙ্গুত্ব অথবা মৃত্যু। আমরা কি একজন মানুষকে পঙ্গু করা বা মেরে ফেলার অধিকার রাখি?
কি করে একটা মানুষ নিজের মনুষ্যত্বকে হারিয়ে ফেলে! কি করে এমন পাষাণ হয়ে পৈশাচিক আচরণের পরিচয় দিতে পারে তা কিছুতেই বোধগম্য নয়।
বাসের জানালা দিয়ে পুরো ব্যাপারটা দেখছিল মাহাদী। হঠৎ তার পাশে বসা লোকটি বলে উঠল, “মার শালারে মার, আরো কয়ডা দে, এই মাইরে অগো কিছু হয় না। এগুলারে মাইরা ফালান দরকার। আমার মোবাইল একবার নিছে”। বহু কষ্টে মাহাদী কোন প্রতি উত্তর না দিয়ে চুপ থকলো। হয়ত এই চোরটি কখনই তার মোবাইল নেয়নি। নিয়েছে অন্য কোন চোর।
যে কোন ধর্মে, সমাজে কিংবা রাষ্ট্রে বিচারকারীদের সিদ্ধান্তক্রমে শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও কোন ব্যক্তি বা দল বিশেষের নিশ্চই শাস্তি দেবার অধিকার নেই। আর এভাবে শাস্তি দেওয়াটা কি সমাধান?
কেন এই মোবাইল চুরি অথবা পকেটমারের মত ঘৃণিত অপকর্ম? জীবন বাঁচাতেই তাদের এই কুপথ বেছে নেয়া। আমরা যদি এর পরিত্রাণ চাই তবে তা হতে হবে একেবারে মুল থেকে। পরিবর্তনের প্রভাব ফেলতে হবে আমাদের পারিবারিক জীবনে, সমাজ জীবনে, রাষ্ট্র জীবনে তথা জাতীয় জীবনে। শুরু করতে হবে এখন থেকেই। আশা করা যায় এর সুফল মিলবে অদূর ভবিষ্যতে। আর বর্তমান সমস্যা নির্মুলে এসকল বিনষ্টকারী, অর্থহীন, হীনমন্যতা বহনকারী কার্যকলাপের পরিবর্তে নতুন কোন যুগান্তকারী পদক্ষেপ তথা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
হয়ত নিজের ক্ষেত্রে এমন চুরির ঘটনা হলে উপরোক্ত নীতিকথাগুলোকে নিছক বাক্যালাপ বলেই মনে হত। আর মাহাদীও নিজের রাগ সামলাতে না পেরে হাতে তুলে নিত আইন। এরপরও একজন দর্শক হিসেবে এহেন অমানসিক নির্মমতা ভাল লাগা বা সহ্য করার ক্ষমতা কারো কারো থাকলেও, বোধহয় সবার নেই।
বিষয়: বিবিধ
১২২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন