চলে যাও, আর কোনদিন ফিরে এসো না এই মৃত্যু উপত্যকায়...

লিখেছেন লিখেছেন যাররিনের বাবা ১৯ মার্চ, ২০১৩, ০৬:১৯:৫২ সন্ধ্যা

খুব কাছের একজন ঘুরে এসেছে জেল জুলুমের দরিয়া।

কোন দোষ ছিলোনা তার, কোন ধরণের সন্দেহজনক সম্পৃক্ততাও ছিলোনা, ছিলোনা কারও সাথে বিষয় সম্পত্তির তীব্র বিরোধ। প্রতিবেশী এবং বন্ধুস্হানীয় সমবয়েসীদের সাথে সুসম্পর্কই ছিলো। বেশ কায়দা কানুন করে ব্যাচেলর এক বন্ধুর বিয়ের সম্মন্ধটা সুন্দর জুড়েও এনেছিলো...

সদ্য পাশ করে ঢুকেছিলো একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। জীবনসঙ্গী হয়ে সাথে আছে এক সদ্য কলেজ শেষ করা বোন- আর বাবার প্রায় কপিবুক, আমার কন্যার সমবয়েসী এক ছেলে। কাজের চাপে অতিষ্ঠ হয়ে মাঝে সাঝে গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলতেও শুনেছি অনেকবার। জন্মসুত্রে বিলেতের নাগরিক, গাঢ় নীল পাসপোর্ট এবং বাবা মা সুদ্ধ পরিবারের বাকি প্রায় সকলেই বরফের দেশে স্হায়ী।

কতবার কথা হয়েছে, এ দেশে নাকি ওই দেশে... প্রতিবারই বলেছি, ওই দেশটা বড্ড ঠান্ডা, মানুষগুলো বড়ই যান্ত্রিক আর আড্ডা; সে বস্তু ঐ কেজো দেশে দূর্লভ। থাকো এই পোড়া কাদামাটির ধুল-ধুসরিত দেশে, এখানে আর যাই হোক মানুষগুলো হৃদয়হীন নয়- আর কোন কারণে অফিস মিস গেলো তো দুনিয়া উল্টে যাবে না! না হয় খানিকটা কমই কামালে, কিন্তু জীবন কি দারুণ জীবন্ত, প্রতিমুহুর্তে অনুভবে অনুভূত...

পরামর্শের আড়ালে কিন্তু একটা নিজস্ব স্বার্থ লুকিয়ে থাকে। চেনা জানা বন্ধুসম আত্নজন নিতান্তই হাতে গোণা, তার মাঝ থেকে আর কাউকে দূরে দূর করে দিতে চাই না!

কয়েদখানার নিশ্ছিদ্র জালিতে যখন তার হাতে হাত রেখেছিলাম, তখন তীব্র অন্তর্দাহনে আর মর্মযাতনায় বিপর্যস্ত এই আমি। কোন দুঃখে অতীতের সে বোধবুদ্ধিহীন এবং অদূরদর্শী পরামর্শ দিয়ে এই পরিবারটিকে দেশে আটকে রেখেছিলাম? নিজের বিচারবোধের উপরে কখনই খুব বেশী আস্হাবান ছিলাম না, আজ নিশ্চিন্ত হলাম- আস্হা রাখার কোন দরকারই নেই!

সে অবশ্য বাংলাদেশ নামক একদা সভ্য এই জনপদের কারাগারের বাসিন্দা হওয়ার সমস্ত যোগ্যতাই রাখে। সে শাহবাগে যায়নি। সে কন্ঠে এবং হৃদয়ে ধারণ করেছে কুরআন এবং শুধু ঈদে চাঁদে জুমা'র আনুষ্ঠানিক নামাজ বাদেও প্রতিদিনের ফরজ নামাজটুকু আদায় করে। এলাকার গলির মুখে মোড়ে দাঁড়িয়ে চাঁদাবাজি এবং নেশাভাং করা সরকার দলীয় শক্তিধরদের সাথেও তার দহরম মহরম নেই। কিংবা মিছিল মিটিং ও দলীয় চাঁদা থেকে তার জীবিকার কোন যোগান হয়না।

সে কোন অপরাধের সাথে জড়িত নয়, এই দেশে আজকাল জেলে যাওয়ার জন্য এটাই কি সবচেয়ে বড় যোগ্যতা নয়?

দুঃখের বিষয়, এ সহজ জিনিষটাই সে কিংবা আমি, কিংবা আমাদের চেনা পরিচিত আরও অনেকেই, বুঝতে পারিনি।

দু'একবার ভাসা ভাসা কানে এসেছে- কোনখানে কোথায় কোথায় নাকি নাম তালিকাভুক্ত হচ্ছে... কিন্তু কোথায় এবং কেনো তার সন্ধান করার সুত্রটি অজানাই রয়ে গিয়েছিলো!

অতএব, আজ, জীবন থেকে দু'টি মাস গায়ের জোরে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশ ভীষণ তৃপ্ত হয়তো, কিন্তু কি করে বলি আড়ালে আবডালে আর কেউ হয়তো খোদ জীবনটাই ছিনিয়ে না নিতে পারার আফসোসে থাবা চাটছে।

চলে যাও, চলে যাও এ নষ্ট অসভ্য উপত্যকা থেকে, এ মৃত্যুপূরী আজ আর বাসযোগ্য নেই। রক্তই আজ এখানে সবচেয়ে উপাদেয় পানীয়, আর মানুষের জীবন সবচেয়ে সস্তায় বিকায়...

বিষয়: রাজনীতি

১৪৯০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File