শ্রদ্ধাবোধের স্যালুট

লিখেছেন লিখেছেন যাররিনের বাবা ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:৩৫:০৭ রাত

কুমিল্লায় সপরিবারে গিয়েছিলাম একজন পরম সুহৃদ আত্নীয়ের বাড়ীতে।

আদর যত্নের সীমা নেই, তদুপরি গোঁ ধরেছেন, পাঞ্জাবী গিফট করবেন। দোকানীও তার প্রিয়পাত্র, বড্ড ভালো মানুষ! সুতরাং বাছাই করে দু'টি পাঞ্জাবী নিয়ে এসেছেন, যেটি পছন্দ হয় সেটি রেখে বাকিটা ফেরত দিয়ে গেলেই হলো। পাঞ্জাবী দু'টোই চমৎকার, কিন্তু বেশ জমকালো। আমি যেহেতু নিয়মিত পাঞ্জাবী পরি, সুতরাং জাঁকালো কাজের চাইতে সহজ এবং সিম্পল, কারুকাজ বিহীন পাঞ্জাবীই দরকার। সপরিবারে গেলাম দোকানে, সরাসরি তো আর বলতে পারি না- তাই দেখতে চাইলাম আর কি কি অপশন আছে।

দোকানী সততার সাথে পাঞ্জাবীর গুণাগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন, অরিজিনাল ইন্ডিয়ান পাঞ্জাবী, কাপড় আর রঙের কিচ্ছু হবে না...

ব্যাস, আমার সুবিধা হয়ে গেলো- আস্তে করে বললাম, ভাই ইন্ডিয়ান কোন জিনিস তো ব্যবহার করি না, পারতে করতে চাই না! দেশী কিছু থাকলে দেখান। দোকানী অবশ্য পেঁয়াজ আর কিসের কিসের কথা বলেছিলেন, কিন্তু আমার গোঁ থেকে আর টলাতে পারলেন না। শেষে দু'টি পছন্দসই দেশী পাঞ্জাবী নিয়েই ফিরলাম...

**

মুখে দাড়ি আর পাঞ্জাবী পরা কারো মুখ থেকে ইন্ডিয়াকে ভালোবাসার কথা শোনা খানিকটা অস্বাভাবিকই। চট করে মনে হতে পারে ধর্মীয় আবেগ থেকে উঠে আসা এ অনুভূতি। কিন্তু ইন্ডিয়ার জনসাধারণের ব্যাপারে আমার কোন ভালোবাসা কিংবা ঘৃণা নেই। কিন্তু দেশ হিসেবে ইন্ডিয়ার প্রতি, এর শাসক মহলের প্রতি মনের গভীর থেকে তীব্রতর ঘৃণা। ইন্ডিয়ান প্রতিটি জিনিসের প্রতি আছে প্রায় যুক্তিহীন বিবমিষা। এ ভূখন্ডের কোন কিছুই আমাকে টানে না, এমনকি তাজমহল পর্যন্ত। ছাত্রজীবনে একবার একটি পেশাগত সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে ঘুরে এসেছি অল্প কিছু অংশ। তারপর আজ পর্যন্ত বেশ কিছু দেশ ঘুরে ফিরে এলেও, হাতের কাছের এ দেশটিতে যাবার কথা এমন কি দূরতম কল্পনাতেও আসে না।

কারণটা একেবারেই দেশপ্রেমের জায়গা থেকে।

সিরিয়াল দেখা আর হিন্দি সিনেমায় কোমর দোলানো প্রজন্ম ঘোর লাগা চোখে আর চূর হওয়া মানসে হয়তো আঁচ পায়না, কিন্তু আমাদের সাদা চোখে কেবলই প্রতিনিয়ত ধরা পড়ে জন্মাবধি এ দেশটির নিয়ত অপমান। কথায়, আচরণে আর গুলিতে, নেংটো করে পেটানোতে, বক্তৃতা আর বিবৃতিতে, লজ্জাহীন প্রতিশ্রুতিভঙ্গে- প্রতিনিয়ত প্রতিক্ষণে এ চামার দেশটি চাবকাতে থাকে এ বদ্বীপকে!

চাবকানোই উচিৎ, কারণ পেপসির যে এ্যাডে আগে শোভা পেতো মাশরাফি আর সাকিব, রাতারাতি ভোল পালটে তা শাহরুখ আর কোন নায়িকার খোমা দেখাতে শুরু করলো- কেউ একটি কথাও বললো না! চালের দারুণ সংকটের সময় একবার এ দেশটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো চাল দেবে, বাজার মূল্যে- তারপর বেমালুম প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে দাম বাড়িয়ে দিলো কয়েকগুণ।

কেউই কথা বলে না, বললেও মতলবি চালে বলে।

কেউই ঘুরে দাঁড়ায় না, কেবলই পেছন পেতে দেয়!

***

যা বললাম এ পর্যন্ত, তার কোন কিছুই নতুন নয়। এমনটি হয়ে আসছে আজন্ম, হয়তো হতে থাকবে আরো বহুকাল। হাজার মাইল দূরের পাকিস্তানী সিল্যুয়েটের সাথে মেকি লড়াইয়ের বাকোয়াজ চলতে চলতে আরো গভীরে এঁটে বসবে দাসত্বের ফাঁস, চেতনাবড়ির নেশায় মাতাল প্রজন্মের থট কন্ট্রোল আপসে আপ চলে যাবে দাদাদের কাছে। নো প্রবলেম!

কিন্তু, আমাদের এ নিরংকুশ আত্নসমর্পণে ইন্ডিয়ান কারো বিবেকবোধে ঘা লাগতে পারে- এ এক আশ্চর্য অভিজ্ঞান! থুথু চাটা কুকুরেরও যে মানসম্মানবোধ থাকা উচিৎ,এ আর্টিকেলটি পড়ে যদি আমাদের কর্তাকর্ত্রীবর্গের ঘিলুতে সে কান্ডজ্ঞানটি তৈরী হয়, তবে প্রথমবারের মতো একজন ইন্ডিয়ানকে মন থেকে স্যালুট জানাবো!

শ্রদ্ধাবোধের স্যালুট...

বিষয়: বিবিধ

১২০২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

297990
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১২:৪২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
দুটি প্রতিবেশি দেশ এর মধ্যে পারস্পরিক বানিজ্য থাকবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা ভারতিয় পন্য কে যেভাবে ব্যবহার করতে বা্ধ্য হচ্ছি সেটা্ই দুঃখজনক। সাধারন ভাবে চিন্তা করলে মনে হ্বে যে পন্য আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়না সেটা ভারত খেকে ক্রয় করলে পরিবহন খরচ কম পরা উচিত। কিন্তু তাতেও যদি চোরাচালান এর মাধ্যমে এই পন্য ঢুকে তবে ভারতের লাভ আর আমাদের ক্ষতি।
353914
১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৫৭
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : এক বোনের মন্তব্য, "ভাইয়া, আমার কাছে মনে হয়, এই ব্লগটা এখন অর্ধ মৃত"। তিনি যথার্থই বলেছেন, আপনাদের সম্মিলিত অনুস্পস্থিতি বিডিটুডের ভবিষ্যৎ নিয়ে পাঠকদের খুব ভাবাচ্ছে। আগের সেই সরগরম অবস্থা এখন আর নেই, এ আসেনা, ও আসেনা, সে আসেনা, তাই আমারও আসতে ভালো লাগে না, অতঃপর নিরুত্তাপ... এমন প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ।
প্লিজ, কারো দিকে আর তাকিয়ে থাকা নয়, কেউ আসুক অথবা নাই আসুক, আপনি আসছেন, লিখছেন, ভালো কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করছেন, এটাই নিশ্চিত করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File