শৈশবের বিশ্বকাপ...
লিখেছেন লিখেছেন যাররিনের বাবা ১৩ জুন, ২০১৪, ১২:২১:৫৩ রাত
বিশ্বাস করা কঠিন হলেও সত্য হলো- প্যান্টে হিসু করে দেয়ার সময়কাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকা শুরু! শৈশব কৈশোর যৌবন হলে হলেই কেটেছে! সবাই ছুটি ছাটায় যখন উর্ধ্বশ্বাসে হল থেকে বাড়িতে ছুটেছে, আমার তখন কেবল এক হল থেকে আরেক হলে স্হানান্তর...
একটু খোলাসা করেই বলা যাক।
বাবা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় ছিলেন, হাউস টিউটর ছিলেন। সেই সুবাদে আক্ষরিক অর্থেই জন্ম থেকে হল জীবন শুরু! হলের লাগোয়া বাসায় থেকে থেকে হল জীবনের অনেক কিছুই স্মৃতিতে জড়িয়ে রয়েছে!
বাসায় টিভি ছিলোনা, তার দায় কিছুটা সাধ্যের- বেশীরভাগই নৈতিকতার। সুতরাং দুষ্ট অবাধ্য শৈশবের এক দুঃসাহসী এডভেঞ্চার ছিল হলের টিভি রুমে মাঝে সাঝে ঢু মারা। যে কালের কথা বলছি, সে কালে আকাশের দিকে উল্টানো থালাগুলোর আবির্ভাব ঘটেনি- সুতরাং সাধের বিটিভিই ভরসা- এবং গান নাটক সিনেমার আবেদনহীনতা ছাপিয়ে যে দু'টো জিনিস আমাদের চুম্বকের মতো আকর্ষণ করতে থাকতো- তার একটি হলো কার্টুন...
আর অপরটি হলো খেলা!
বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোর সময়- আজো মনে পড়ে আস্তে করে পা টিপে টিপে, গভীর থেকে গভীরতর রাতে নিঃশব্দে চলে যেতাম বিশাল অডিটোরিয়ামতুল্য টিভি রুমে। কানায় কানায় পরিপূর্ণ ঠাসবুনোটের মধ্যে দিয়ে চেয়ারে বসার সৌভাগ্য ছিলো পিচ্চিদের জন্য অসম্ভব- হাতের তলা দিয়ে, কনুইয়ের গুঁতা অগ্রাহ্য করে দাঁড়িয়ে থাকা বড় বড় ছাত্রদের মাঝ দিয়ে কোনক্রমে মাথা গলিয়ে তাকিয়ে থাকা ছোট্ট টিভি স্ক্রিনের দিকে...আর গোল কিংবা গোল মিসের হট্ট কলরোলে মিশে যাওয়া!
বাসায় কোন দিন হয়তো চোখ লেগে এসেছে, কিংবা ভুলে গিয়েছি খেলার দিন তারিখ সময়, কিন্তু সেই উদ্দাম মেঘগর্জনের মত আওয়াজ ঠিক ঠিক মনে করিয়ে দিতো। তারপর সব বেভুলে দৌড় দৌড় দৌড় দিয়ে দম ফেলার আগেই বাইন মাছের মত পিছলে পিছলে ঠিক সিটগুলোর পরবর্তী দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকদের কাতারে মিশে যেতাম। কি জীবন্ত আর উদ্দাম ছিলো সে দিনগুলো।
তারপর সময়ের পরিক্রমায় নিজেই হলবাসী হলাম। সবছেঁড়া আকর্ষণটা আর ঠিক সে রকম নেই- কিন্তু তদ্দিনে প্রমোশন হয়ে চেয়ারে বসার সুযোগ এসেছে।
--
বিশ্বকাপের আকর্ষণ আজ পুরোপুরিই ফিকে, চামড়ার বল নিয়ে দু দলের দৌড়া দৌড়ি আজকাল নেহায়েৎ অগুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়, এ জীবন আর পরজীবনে যে বিষয়গুলো সত্যিকার অর্থ বহন করে- প্রাণপনে চেষ্টা করছি, সেগুলোকেই অর্থবহ করে তুলতে... তবুও সেই মেঘমন্দ্র কলরব কিংবা অমোঘ হাহাকার নস্টালজিয়ায় ভোগায়।
হলবাসীরা, মেতে থাকো বিশ্বকাপের আনন্দে- কিন্তু সে বিনোদন যেনো তোমায় বেভুল না বানিয়ে দেয়...
বিষয়: বিবিধ
১০৯৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সেই সময় খেলা খেলাই ছিল। এখনকার খেলার নামে বিভিন্ন শো ছিলনা।
ব্লগে লিখতেন।
আমার অভিজ্ঞতাও আপনার মতই। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমার প্রথম রাত জেগে খেলা দেখা ছিল সে সময়ের আর্জেন্টিনা বনাম উরুগুয়ের সেকেন্ড রাউন্ডের খেলাটি ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন