আল যামেখশারি - এক অপরিচিত সেলেব্রিটি
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ০৬ মার্চ, ২০১৬, ০৬:৩০:৩৬ সন্ধ্যা
পুরো নাম আবু আল কাশিম মাহমুদ ইবনে উমার আল যামেখশারি। কিন্তু সারা দুনিয়ায় খ্যাতি পেয়েছিলেন 'আল যামেখশারি' নামে। ‘পারসিয়ান স্কলার’ হিসেবে প্রসিদ্ধ আল্লামা আল যামেকশারি খোয়ারজমে (এটি বর্তমানে উজবেকিস্তান, খাজাকাস্তান এবং তুরকিমেনিস্তানের অংশ) ১৮ই মার্চ ১০৭৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু তিনি জীবনের অনেকগুলো সময় কাটিয়েছেন বুখারা, সমরখন্দ এবং বাগদাদে। তিনি ছিলেন আরবী ভাষার অসাধারণ একজন পণ্ডিত।
যামেখশারি সম্বন্ধে স্কলারদের একটি উক্তি আছে, ‘মা ফাহামতু কুরআন ইল্লাল আরজান, আওয়ালূহু যামেখশারি, ওয়াসসানিউ জুরজানি।‘ অর্থাৎ দুইজন ল্যাংড়া লোক ছাড়া কুরআন আর কেউ বুঝে নাই, একজন যামেখশারি, আরেকজন জুরজানি (জুরজানির পুরো নাম আব্দুল ক্বাহহার জুরজানি, ওনার ব্যাপারে পরে একদিন বলব ইনশা আল্লাহ)। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যমেখশারি হচ্ছেন ডান পায়ের ল্যাংড়া, আর জুরজানি হচ্ছেন বাম পায়ের ল্যাংড়া।
আল যামেখশারি রচিত ‘তাফসীরে কাশশাফ’ দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পেয়েছিল। এটি এখনো স্কলারদের জন্য এক জ্ঞানের খোরাক। যদিও এটি নামে তাফসীর, কিন্তু কালামুল্লাহ শরীফের রচনাশৈলী এবং নিপুণতা, বলার ঢং ও বাচনভঙ্গির শৈল্পিক সৌন্দর্য ও আবেদনময়তা আল্লামা যামেখশারিকে এতই মোহিত করেছে যে, তাফসীরে কাশশাফ লিখতে গিয়ে তিনি কুরআনের রচনাশৈলী, আল্লাহর কথা বলার অসাধারণ প্রাজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছেন। এই কিতাবে আল্লাহর কথা বলার স্টাইল এবং আল্লাহর কথা বলার যে যাদু, যে গ্রামার, শিল্প, রেটরিক্স (অলংকার শাস্ত্র) ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। তাফসীরের ছত্রে ছত্রে আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা কীভাবে কথা বলেন তার অপূর্ব সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লামা যামেখশারি এতোই বিমোহিত হয়ে পড়েছিলেন যে, তার বর্ণনায় ‘সময় যেন ফুরিয়ে গেল কিন্তু ভালোভাবে কিছু বলা হল না, যা বলা প্রয়োজন ছিল সে মূল বিষয়ে’, সুবহানাল্লাহ। বোদ্ধাদের নিকট আল্লামা যামেখশারির তাফসীর ও এর আবেদন কালজয়ী।
তাফসীরে কাশশাফ সম্বন্ধে বলা হয়েছে,
Considered a primary source by all major scholars, it is famous for its deep linguistic analysis, demonstrations of the supremacy of declamation of the Quran, and the representation of the method the Quran uses to convey meaning using literary elements and figurative speech.
এ ছাড়াও তিনি আরো অনেক কিতাব লিখেছেন, যার বেশীরভাগই কুরআনের ভাষা নিয়ে। যেমনঃ রাবি আল আবরার, আসাসুল বালাগাত দার লুগাত, ফাসুল-উল আকবার, কিতাব ফাসদার-নার, মুয়াজ্জম-উল হুদুদ, মানহা দারুসুল, দিওয়ান আল তামসিল, সাওয়ার-উল ইসলাম, মুফাসসাল আন মুযাজ ইত্যাদি।
আল যামেখশারিকে ‘যার আল্লাহ’-ও বলা হতো অর্থাৎ আল্লাহর প্রতিবেশী। কারণ তিনি দীর্ঘদিন যাবত কাবা শরীফে ছিলেন। পরে তিনি খোয়ারাজমে ফিরে যান, সেখানেই ওনার মৃত্যু হয় ১২ই জুন ১১৪৪ সাল।
তথ্যসূত্রঃ
১) দারসুল কুরআন- অধ্যাপক মফিজুর রহমান
২) উইকিপিডিয়া
বিষয়: বিবিধ
৩৬১৯ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক চমৎকার মানুষ সম্পর্কে জানলাম। মাদ্রাসায় তাফসীর পড়তে গিয়ে কতবার পড়েছি আল্লামা যামেখশারির তাফসীরে কাশশাফে বলা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি, কিন্তু কখনোই উনার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করিনি। আজ জানলাম এবং খুবই ভালো লাগলো।
এই ধরণের লেখা ব্লগে আজ খুব দরকার কিন্তু আপনারা লিখেন না বলে এমন লেখা পাইনা। প্লিজ লিখবেন, আল্লাহ নিশ্চয় উত্তম জাযা দেবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন