মান্না-খোকার ভাইবারালাপ ফাঁস, মাহমুদুর রহমান মান্না কি বিতর্কিত হয়ে গেলেন? নাকি তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে?
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:৪৬:৪৪ রাত
শুরুতেই একটা কথা বলে রাখি, এই কথোপকথনটা কত আগের জানি না, তবে এটা গতকাল রাতে ফাঁস করাটা আমার কাছে উদ্দেশ্যমূলক মনে হচ্ছে। পদ্মার লঞ্চ ডুবিতে প্রায় ৭০ জনেরও বেশী মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনা ধাপাচাপা দেয়ার জন্য নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান এই ভাইবারালাপ ফাঁসের পেছনে আছে কিনা তা খুঁজে দেখা দরকার। মাত্র কয়েকজন ছাত্র ফেরীডুবিতে নিহত হলে কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেন, আর এরকম শত শত লঞ্চ আর ফেরী ডুবিতে হাজারো মানুষ নিহত হওয়া স্বত্বেও আমাদের প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, নৌমন্ত্রীর নড়াচড়ার কোনো লক্ষণ নেই।
ভাইবারালাপে আসি, যারা মনে করেন মান্না সাহেব বিতর্কিত হয়ে গেছেন এবং এটা নিয়ে টিভিতে টকশো করছেন, পত্রিকা-অনলাইন এবং ফেসবুক-ব্লগে লেখালেখি করছেন তাদের প্রত্যেকের রাজনৈতিক পরিচয় আমরা জানি। তাদের পরিচয় তারা ঘোরতর ভাবে আওয়ামী-শাহবাগীয় চেতনায় বিশ্বাসী। মান্না সাহেব যে এই সরকারকে বৈধ মনে করেন না এবং অবিলম্বে একটা নির্বাচন চান তা নিয়ে এই গোষ্ঠী ভেতরে ভেতরে খুব জ্বলতো। কিন্তু তাঁকে কোনোভাবেই তারা কোণঠাসা করতে পারছিল না। কীভাবেই বা করবে? মান্না সাহেব টকশো করেন, দু’দলের সংলাপের পক্ষে কাজ করছেন, তাকে কোণঠাসা করার স্কোপ কোথায়? তল্পে তল্পে ছিল এই গোষ্ঠী। তিনি কোথায় যান, কী করেন, কার সাথে কথা বলেন এইসব জায়গায় ফাঁদ পাতলো তারা। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে তিনি প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের ফোনে কথা বলেন, কিন্তু যেই না তিনি খোকা এবং অজ্ঞাত একজন ব্যক্তির সাথে একটু সরকার উৎখাত টাইপ কথা বললেন, অমনিই ঐ গোষ্ঠী ছ্যাঁত করে জ্বলে উঠলো। তাদের প্রচারযন্ত্র ব্যবহার করে বেশী না মাত্র দুটি কথাকে তারা হাইলাইট করে বাজার গরম করছে। কী সেই কথা? ‘উনি বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ চান’ ‘সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান চান’।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই এই দুটি কথায় আওয়ামী-শাহবাগি গোষ্ঠী জ্বলে উঠবে, ইতোমধ্যেই জ্বলে উঠেছে। তাদের জ্বলে উঠার কারণ, মাহমুদুর রহমান মান্না এই সরকারকে চান না। আমার প্রশ্ন, এই সরকারকে তো এই দেশের অধিকাংশ মানুষই চায় না, শুধু চায় না বললে ভুল হবে, ত্বরিৎ গতিতে যেকোন মূল্যে এই সরকারের পতন চায় দেশের অধিকাংশ মানুষ। ইয়াহিয়া খান যখন কোনো অবস্থায় ক্ষমতা ছাড়ছিল না, তখন আওয়ামী লীগ ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র’ করেনি? আর এই ষড়যন্ত্র যেনতেন ষড়যন্ত্র ছিল না, সরকারী অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুট করে ইয়াহিয়া সরকারকে কুপোকাত করে ক্ষমতা দখল। একটু আগে টেলিভিশনে সাবেক এক জাসদ নেতাকেও (বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতা) দেখলাম খুব কড়া ভাষায় মাহমুদুর রহমান মান্নার সমালোচনা করছেন। ঐ নেতার কথা শুনে আমার হাসি পেল, তাকে বলতে ইচ্ছে হল, ‘মিয়াভাই, ৭২ থেকে ৭৫ এ আপনারা কর্নেল তাহেরকে কাজে লাগিয়ে সেনাবাহিনীর একটা অংশকে সাথে নিয়ে সশস্ত্র বিপ্লব করে তৎকালীন মুজিব সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছিলেন, বিশেষ করে '৭৫ এর ৩ থেকে ৭ই নভেম্বর আপনারা যা করেছেন তা আপনারা এতো দ্রুত ভুলে গেছেন?’ ‘৮১তে জিয়াকে কারা হত্যা করল, কী উদ্দেশ্যে হত্যা করল? ‘৮৬তে কারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কারা সন্ধি করল? ২০০১ এর বিএনপি-জামায়াতের সরকারকে উৎখাত করার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শত শত বার সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে, হাজারো বার বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ ’০৭-’০৮ এর সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে কারা লিয়াজো করে কীভাবে ক্ষমতায় এসেছে তা তো দিবালোকের মতো পরিষ্কার। যারা আজকে মাহমুদুর রহমান মান্নার সমালোচনা করছেন, তারা এমন ভাব করছেন যেন তারা জীবনেও ক্ষমতায় আসার জন্য সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেননি বা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক আন্দোলন করেননি! আমরা জানি, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সেনাবাহিনীকে কোটি কোটি টাকার প্লট, ফ্ল্যাট, গাড়ি ইত্যাদি উপটৌকন হিসেবে দিয়েছে। তারা নিজেরা এইসব করলে বৈধ, আর অন্য কেউ করলে অবৈধ, রাষ্ট্রদ্রোহিতা? বাহ রে নন্দলাল বাহ!
স্পষ্ট করে বলি, যতই দিন যাচ্ছে মাহমুদুর রহমান মান্না ততই এই দেশের মানুষের কাছে একজন আস্থাশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হচ্ছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই দেশে যে ব্যক্তি একটু ভালো কাজ করেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বলেন তাঁকে কোনো না কোনো ভাবে বিতর্কিত করে ফেলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যারা দৃঢ়চেতা তাদের আদতে এতোটুকু ক্ষতি করা যায় না। আমি এতোটুকু দ্বিধা না করে বলব, আজকে থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নার জনপ্রিয়তা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে, তাঁর প্রতি আস্থা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে নিঃসন্দেহে।
আসলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য একটা নাৎসি টাইপ সুত্র ব্যবহার করছে, পেট্রোল বোমা দিয়ে সাধারণ মানুষ হত্যা, ক্রসফায়ারে আন্দোলনকারীদের হত্যা আর টেলিফোন আলাপে ষড়যন্ত্রের কথা বলে আন্দোলনের পক্ষের মানুষদের বিতর্কিত করা, সামাজিক ভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা করা। সরকারের এইসব কর্মকাণ্ডে আমি ইদানিং কেন যেন খুব বিশ্বাস করি, আজকে আওয়ামী লীগ যে সুত্র ব্যবহার করছে আগামীতে একই সুত্র খুব কঠিন করে তাদের উপর প্রয়োগ করবে তাদের প্রতিপক্ষ। অর্থাৎ শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে লীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মী কার সাথে কখন কী কথা বলে সব গণমাধ্যমে প্রতিদিন লাইভ শোনানো হবে। ‘মিছিল’ শব্দ উচ্চারণ করা তো দূরের কথা, আগামীতে আওয়ামী লীগের জন্য আন্দোলন শব্দটাই উচ্চারণ করা কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে আমার।
বিষয়: বিবিধ
১১৩৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সরকার মানুষ হলে অনেক আগেই সরে পড়তো - পশু বলেই সরতে পারছে না। পশুদের কোন লাজ লজ্জা নেই, বাছ বিচার ও নেই। যাকেই নিজের জন্য বিপদ বলে মনে করে - ঘেউ করে তাকেই কামড়ে দেয়। এতে করে কিছু লোক মরে, কিছু লোক আহত হয়। কিন্তু আখেরে পশুকে মানুষের নীচে নামতেই হয়, অধিনস্থ হতেই হয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন