সাহাব উদ্দিন আমাদেরকে ক্ষমা কোরো না
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০১:২৯:৩৩ দুপুর
ওর ছবিটার দিকে তাকাতে পারি না। যতবার তাকাই, চোখ ফেটে জল আসে। আমি হাউমাউ করে কাঁদি। শাহাব উদ্দিন আমার ভাই। আমার দ্বীনি ভাই, সাংগঠনিক ভাই যাই বলি না কেন। ভাইটি আমার ছাত্র। সে হয়তো প্রতিদিন মসজিদে ফজরের সালাতে যেতো, তারপর হয়তো পত্রিকা পড়তো, আমার মতোই হয়তো তার রুটি-গোশত বা ভুনা খিচুড়ি সকালের নাস্তা হিসেবে প্রিয় ছিল। সে হয়তো প্রতিদিন বিকেলে আমার মতো কেডস পড়ে দৌড়াতো। সে হয়তো আমার মতোই নিত্য-নতুন টেকনোলজি পছন্দ করত, ফেসবুকিং করতো। হয়তো সে ম্যাগাজিনে লিখত, সবচেয়ে সুন্দর গল্প বা রচনা লিখে লিখে হয়তো পুরস্কারও পেয়েছিল।
সাহাব উদ্দিন পাটোয়ারি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিল। ওর ছবিটির দিকে তাকান। বাসায় ছিল নিজের মায়ের সঙ্গে। হয়তো কথা বলছিল, অথবা মায়ের সামনে বসে গরম ভাত খাচ্ছিল। ওর ছবিটার দিকে লক্ষ্য করুন, সে এই ছবিটা তুলেছিল একটা গ্রামে। একটি খেজুর গাছের নিচে দাঁড়িয়ে। এই ছবি পোস্ট করেছিল সাহাব উদ্দিন, ফেসবুকে।
আহা, সাহাব উদ্দিন, তোমার এই টি শার্ট, তোমার ওই চোখের দিকে আমি তাকাই। কত সুন্দর তোমার নিষ্পাপ চোখ দুটি। যে চোখে কত স্বপ্ন। তোমার হালকা নীল রঙের এই টি শার্টটা। তোমার সিলভার কালারের হাত ঘড়িটা। আচ্ছা এই ঘড়িটা কি তুমি নিজে পছন্দ করে কিনেছিলে মার্কেট থেকে? কত নিয়েছিল? পাঁচ শ টাকা, ছয় শ, হাজার? তুমি রোজ রাতে ঘুমাতে তোমাদের বাড়িতে, মা ছিল, বাবা ছিল, আরো চার ভাই-বোন ছিল। কত সুন্দর, হাসি-খুশিতে ভরা তোমাদের এই পরিবার। শুধু গ্রেফতার হওয়ার সময় একাই গ্রেফতার হয়েছিলে বাড়ির সবাইকে কাঁদিয়ে ওই ভয়ংকর দিনটিতে।
হায়েনা পুলিশ যখন তোমাকে নিয়ে যাচ্ছে তখন বাবা মাকে বললে, আমি যাচ্ছি, আমাকে নিয়ে টেনশন করো না। কিন্তু হায়, গ্রেফতারের পর পরই তুমি নাকি ওই হায়েনাদের সাথে বন্দুকযুদ্ধ করেছিলে? এটা এমনই এক বন্দুকযুদ্ধ, যে যুদ্ধে তোমার শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল অথচ হায়েনাদের গায়ে একটা আচড়ও লাগলো না, তুমি যে বন্দুক দিয়ে যুদ্ধ করেছিলে, সেই বন্দুকের মডেল নাম্বার জাতি জানতে চেয়েছে। তোমাকে নিষ্ঠুর ভাবে মাথায় গুলি করেছে হায়েনারা। বন্দুকযুদ্ধ যদি হয়ও, তাহলে কি গুলি চালিয়ে মাথা ও মুখটা ঝাঁজরা করে দিতে হবে? অন্য সবার কথা বাদ দিলাম, তোমার মা-বাবার কাছে তোমার মুখটা না জানি কত প্রিয় ছিল, কত অগণিত চুমু খেয়েছে তারা তোমার মুখে। তোমার মা-বাবা এখন বেঁচে রইলেন তোমার ক্ষত-বিক্ষত মুখটার স্মৃতি নিয়ে। বেঁচে রইল তোমার ভাই-বোনগুলো। আহা, তোমার মা কীভাবে থাকবেন একা? তার আদরের সন্তান হারিয়ে? সাহাব উদ্দিন, তোমার বন্ধুরা কাঁদছে। মেধাবী ছাত্র ছিলে তুমি, সাহাব উদ্দিন। তুমি অনেক বড় হতে চেয়েছিলে।
তোমার পড়ার টেবিলটা সুন্দর করে সাজানো। পরিপাটি করে তৈরি করা আছে কলেজ ব্যাগ। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের তোমাদের বাড়িতে। ওই টেবিলে আর তুমি বসবে না। ওই ব্যাগ আর তুমি পিঠে নেবে না। প্রাইভেটে ভর্তি হয়েছিলে তুমি, সামনের বছর অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায় ভালো করতে চেয়েছিলে, আর তুমি যাবে না কোচিং সেন্টারে।
সাহাব উদ্দিন, তুমি আমার ভাই। সাহাব উদ্দিন, তোমার রক্ত মাখা এই ছবির দেখে তাকিয়ে আমি কতবার যে কেঁদেছি, তার ইয়ত্তা নেই।
ও ক্ষমতালোভী নেত্রী, আপনি ক্ষমতা চান। ক্ষমতা নেন। নেন ক্ষমতা। রাখেন ধরে ক্ষমতা। শুধু আমাদের এই ভাইটিকে ফিরিয়ে দেন। কেন আপনারা ওকে মারলেন? কেন ওকে আপনারা মেরেছেন? ২১-২২ বছরের একটা তরুণের কী অপরাধ? মানুষ মারা বন্ধ করেন। মানুষ মারা বন্ধ করেন। তরুণ-যুবকদের হত্যা করা বন্ধ করেন। মেধাবীদের হত্যা করা বন্ধ করেন। আন্দোলন দমনের জন্য পরিকল্পিত ভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারা বন্ধ করেন। পোড়া শরীরের অসহ্য যাতনা দিয়ে বার্ন ইউনিটে মানুষ পাঠানো বন্ধ করেন। বার্ন ইউনিটে গ্লিসারিন লাগিয়ে মিউজিক ভিডিওর শ্যুটিং বন্ধ করেন।
আপনার ক্ষমতা লাগে, আপনারা ক্ষমতা নেন। আপনি ক্ষমতার মসনদ খান কামড়ে কামড়ে। আমাদের কেন মারেন? আমাদের যুবকদেরদের কেন মারছেন? অনেককে বাসা-বাড়িতে না পেয়ে কেন আমাদের মা-বোনদের গায়ে হাত তুলেন? ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় ডেকে নিয়ে গিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা যারা করে, তারা মানুষ? যে অফিসার বা মন্ত্রী-এমপি-নেতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এই অ্যাসাইনমেন্ট দেয়, সে মানুষ? উপরন্তু আন্দোলনকারীদেরকে দমনের জন্য যে নেতা বাসে পেট্রোল বোমা মানুষ পুড়িয়ে মারার জন্য তার ভাড়াটে কর্মীদের নির্দেশ দেয়, সে মানুষ? যে নেতা বলে সব স্বাভাবিক আছে, তার বিবেক আছে?
আন্দোলন দমন করা মানে কী? আগে আন্দোলন দমন অন্য সরকাররাও করত, তা ছিল পুলিশ দিয়ে লাটি চার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, গ্রেফতার করা, বড়জোর অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়া। সরকারী নেতা-মন্ত্রীরা পুলিশ প্রশাসনকে বলে দিতেন, অমুকরে ধর, তমুক অফিসে তালা লাগাও অথবা অমুক সমাবেশ বন্ধ কর। ব্যস, এই ছিল আন্দোলন দমন। কোনো রাজনৈতিক নেতা-কর্মী বা আন্দোলনকারীদের ধরে ধরে রিমান্ড, ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ এইসব ছিল না। আন্দোলন দমনের জন্য এইভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা একটা সরকার কখনো করতে পারে না। পারলে র্যাব-পুলিশ-বিজিবি বাদ দিয়ে আপনারা মাঠে নামেন। একজন সরকারী নেতা-মন্ত্রীও যদি আন্দোলন দমনের জন্য মাঠে নেমে আন্দোলনকারীদের সাথে সরাসরি ফাইট করত, তাহলে বুঝতাম। স্বৈরাচার ছাড়া এভাবে ক্ষমতার লোভ কাউকে আর করতে দেখিনি।
আজ আমরা এ কী সরকার দেখছি? এ কী ধরনের পিশাচদের কবলে পড়েছি? আমাদের যুবকদের, কিশোরদের হত্যা করা হচ্ছে কেন? বাংলাদেশ কি বৈরুত হয়ে গেছে? ইরাক হয়ে গেছে? সিরিয়া হয়ে গেছে?
দোহাই লাগে, মানুষ মারা বন্ধ করেন। আপনাদের রবের কসম, মানুষ মারা বন্ধ করেন। রাজনৈতিক কর্মসূচি দেন। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবিলা করেন। রাজনৈতিক সমস্যার পুলিশি সমাধান নেই। আর রাজনৈতিক কর্মসূচির বদলে পুলিশ দিয়ে নির্ভেজাল সন্ত্রাস বা এনার্কি, বিরোধী দল দমনের জন্য নিরীহ মানুষ হত্যা, মানুষের সমাবেশ পণ্ড করে কোনো দিনও লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন না, নিকট ইতিহাসে দুনিয়ার কোথাও সন্ত্রাসবাদীরা সফল হয়নি।
শাহাব উদ্দিন, তুমি আমাদের ক্ষমা কোরো না। তুমি আমাদের অভিশাপ দাও। তোমার মতো নিষ্পাপ যুবককে আমরা গুলি করে মেরেছি এবং এই সময়ের এই দেশের একজন ফেসবুকার আমি, কিছুই করতে পারিনি। কিছুই করতে পারিনি। তুমি আমাদের থুতু দাও।
(উৎসর্গঃ এক চোখ কানা ঐ সকল সুশীলদের, যারা আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্তের ধার না ধেরে আন্দোলনকারীদেরকে হত্যা বৈধ মনে করে। যারা 'বন্দুকযুদ্ধ' বলে তরুণ-যুবকদের হত্যার প্রতিবাদ করে না।)
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৮ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
মারিয়া
পরীবানু
মরুর মুসাফির
পরীবানু ,সততার আলো
অশ্বথমা
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
পরমা ,নীলমণীলতা
বিলকিস লায়লা
দস্তার
রুপবান
মুক্তিযুদ্ধ ৭১
দ্রাবীড় বাঙাল
লেয়লা ইসলাম
বিলকিস
বাংলা ৭১
ভিক্টোরিয়া
হেলেনা
পল্লব প্রভাতে
খালেদ
রুশো তামজিদ
বারাংগনা
মধুবালা
সখি
ফয়সাল১
মাঝি-মাল্লা, ,
লায়লার
লায়লা০০৭
রাতুল দাস
চকো চকো
সায়েদ-রিয়াদ
বিভ্রান্ত নাবিক
ফাজিল
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
মুক্তিযুদ্ধ ৭২
দ্রাবীড় বাঙাল
পিচ্চি পোলা
কাওসাইন হক
চাষা
jahed_ullah
নীরু
সাদা মন
সাদা মন
চোথাবাজ
আমি বিপ্লবী
সততার আলো সকাল সন্ধ্যা
এই নেরিকুত্তাকে বেন করা হোক। যার এত নিক ।
আবুজেহেল লাহাব মরেনি আজও
রোদন করে ক্ষণে ক্ষণে,
ক্ষমতার নেশায় দিশেহারা হয়ে
ফন্দিজাল বুনে মনে।
সত্য প্রতিস্ঠায় নবীরা লড়েছে
দায়ীরা ছেড়েছে ঘর,
হেরার নবীকে তাড়াতে গিয়ে
মরেছে ক্ষমতাধর।
নবীরা কভু পাগলে ভূষিত
কভু হতো দেশদ্রোহী,
যাতনা বিষাদে প্রভুর ইশারায়
দুর দেশে দিত পাড়ি।
কেউবা জেলে জীবন কাটাত
কেউবা দেশান্তর,
কাউকে শুলে ছড়িয়ে মেরেছে
কেউবা ছেড়েছে ঘর।
কেউবা মরিত কেউবা বাঁচিত
কেউবা হতো রাজা,
প্রভূর খলিফা দায়ীর শাসনে
সুখে ভাসিত প্রজা।
ত্যাগের মহিমা চির শ্বাস্বত
সত্যর নেই পরাজয়,
মিথ্যার ক্ষণিক বিজয় দেখে
বিশ্বাসীরা করেনা ভয়।
আমীর হাজমার মিছিলের সারী
বাড়িছে দিনে দিন,
রক্তে ভেজা শহীদের ভুমিতে
বিজয় হবে প্রভুর দ্বীন।
কতটা পাষন্ড হলে এভাবে খুন করতে পারে!!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন