'৭৫ এর সেই চাটুকারেরা যে এখনো আছে, কেমনে হতাশ হই?
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৯:৪০:০৩ রাত
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, আমাদের জন্য হয়তো কোনো পথ খোলা নেই। এভাবেই হয়তো ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বলে আমাদের ভাইদেরকে একের পর এক তারা হত্যা করবে। এভাবেই হয়তো আন্দোলনকারীদের দমিয়ে দিয়ে তারা আরো কয়েক বছর ক্ষমতায় রয়ে যাবে। গত রাতে তিনজনকে তারা অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করল। এর প্রতিবাদে কোথাও যে দাঁড়িয়ে কেউ একটু প্রতিবাদ করবে, তারও কোনো অবস্থা নেই। সারা দেশে একটা আতঙ্কবস্থা বিরাজমান। মনে হচ্ছে, এই আতঙ্কবস্থা বুঝি কখনো কাটবে না, অন্ধকার বোধহয় আর কখনই দূরীভূত হবে না, রাত্রি পেরিয়ে সূর্যোদয়ের দেখা বোধহয় আর পাওয়া যাবে না। সব বুঝি শেষ।
আমি জানি অনেকেই এভাবেই ভাবছেন, স্বৈরাচারের পতন হবে এমন আশা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে, অত্যাচার-নির্যাতন আর সহ্য করতে পারছেন না। তাদেরকে বলছি, আপনারা কুরআনের এই আয়াতটির ব্যাখ্যা খুব ভালো করেই মনে গেঁথে নিন, ওয়ালা তাহিনু ওয়ালা তাহযানু, ওয়া আনতুমুল আ’লাওনা ইনকুনতুম মু’মিনীন। অর্থাৎ তোমরা চিন্তিত হয়ো না, হতাশ হয়ো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো। খুব লক্ষ্য করুন, আল্লাহ্ বলছেন, বিজয় কিন্তু মু’মিনদেরই হবে। স্বৈরাচারের হম্বিতম্বি আর জুলুম-নির্যাতন দেখে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই স্বৈরাচার বিজয়ী হয়ে গেছে বা আমরা হেরে গেছি।
একটিবার পেছনের কথা ভাবুন, আজকের এই অবস্থার মতো ১৯৭৫ সালেও কিন্তু একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, মনে হচ্ছিল আর বুঝি কোনো পথ খোলা নেই, স্বৈরাচার যেভাবে বলছিল সেভাবেই সব হচ্ছিল, পুরো প্রশাসন, মিডিয়া সব স্বৈরাচারের আজ্ঞাবহ ছিল। যাকে খতম করে দেয়ার হুকুম করতো, সঙ্গে সঙ্গে তাকে খতম করে দেয়া হতো, মিডিয়াকে যেভাবে বলতো ঐভাবেই নিউজ করত, রাস্তা-ঘাটে যেখানে সেখানে লাশ পড়ে থাকতো। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিডিআর, রক্ষীবাহিনী, সচিবালয়, বিশ্ববিদ্যালয় সবকিছু স্বৈরাচারের হাতের মুঠোয় ছিল। এখনকার মতো তখনো স্বৈরাচার ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল, ‘যা প্রয়োজন হয় কর, দায়-দায়িত্ব সব আমার’। সবাই ভেবেছিল, আর কোনদিন বোধহয় এই স্বৈরাচারের পতন হবে না, কোনদিন বোধহয় অন্ধকার রাত্রি দূর হয়ে নতুন ভোরের আলো ফুটবে না।
কিন্তু হঠাৎ এক রাতে সব শেষ, কোথায় গেল সেনাবাহিনী প্রধান শফিউল্লাহ, কোথায় গেল তোফায়েল, কোথায় গেল পুলিশের আইজি, কোথায় গেল ছাত্রলীগ-যুবলীগ-কৃষকলীগ-শ্রমিকলীগ, কোথায় গেল এইচ টি ইমাম? কোথায় গেল মিডিয়া? কোথায় গেল স্বৈরাচারকে সারাক্ষণকে ঘিরে রাখা সেই চাটুকারেরা? কোথায় গেল ভারত? কংগ্রেস আর বিজেপি? আজকের এই অবস্থা দেখে আমাদেরও মনে হতে পারে, ও আল্লাহ্, এই স্বৈরাচারকে কেমনে নামামু? সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, মিডিয়া, সুশীল, শাহবাগ, এমপি-মন্ত্রী, পুরো প্রশাসন সব তো তার দখলে, কেমনে কী হবে ও আল্লাহ্? আমরা তো বোধহয় শেষ! ইনশা আল্লাহ্, শেষ বলতে কোনো কথা নেই।
সুস্পষ্টভাবে একটা কথা বলে রাখি, '৭৫ এর স্বৈরাচারকে যেভাবে তার চাটুকারেরা উল্টাপাল্টা পরামর্শ দিতো, তেমনি আজকের স্বৈরাচারও সেই একই চাটুকারদের কাছ থেকে উল্টাপাল্টা পরামর্শ পেয়ে উল্টাপাল্টা ডিসিশান নিচ্ছে। ‘ম্যাডাম, কোনো অবস্থায় পদত্যাগ করবেন না, মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়েন না’ ‘ম্যাডাম, ক্রসফায়ার দিলে সব ঠাণ্ডা হয়ে যাবে’ ‘সেনাবাহিনী ওকে আছে ম্যাডাম’ ‘ভারত পুরাই আমাদের ফেভারে আছে’ ‘ম্যাডাম বেনজিররে র্যাবে বসান, শহিদুলরে বানান আইজিপি', 'ম্যাডাম ওরে এখানে দেন, তারে সেখানে’ ‘ম্যাডাম, সমাবেশ করতে দিয়েন না’ ‘ম্যাডাম খালেদারে তালা মাইরা দেন’ ‘ম্যাডাম জামায়াতের কয়েকটারে ঝুলাই দেন’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
ম্যাডাম শেখ হাসিনা অনেক দিন আগে সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগের সবাইকে কেনা যাবে, কিন্তু আমাকে কেনা যাবে না’।
এই কথার তাফসীর (ব্যাখ্যা) করতে গিয়ে খাঁটি আওয়ামী লীগার স্থপতি মোবাশ্বের আলী বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনার এই বক্তব্যের মাধ্যমে বুঝা গেল, উনি ওনার নিজের দলের কাউকে বিশ্বাস করেন না এবং উনি নিজেই ওনার দলের লোকদের কাছে নিরাপদ নন। ’৭৫ এর সেই চাটুকারদের খপ্পরেই উনি পড়েছেন, তার দলের নেতাদের দ্বারাই তার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।'
অতএব একের পর এক বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ার আর তোফায়েল, বেনজির, ছাত্রলীগের সোহাগ-নাজমুলদের হম্বিতম্বি দেখে চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই। পরিস্থিতি একটু পরিবর্তন হলে এই তোফায়েলরাই ’৭৫ এর মতো সবচেয়ে বড় বেঈমানি করবে ইনশা আল্লাহ্। অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতি আল্লাহ্ নিজ হাতে অত্যন্ত সহজ করে দিবেন বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস রাখি। বাহ্যিক দৃষ্টিতে যেটাকে আমরা জটিল মনে করছি, আল্লাহর কাছে তা কিন্তু অত্যন্ত সহজ। আল্লাহ্ 'কুন' বললেই হয়ে যায়।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন