বন্ধু
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৯:৩৬:০৯ রাত
বন্ধু,
আমি জামায়াত করি বলে তুমি আমাকে জামাতি বলে গালি দাও। কিন্তু তুমি কি জান, জামাতি এটা আসলে কোন গালি নয়, কারণ ‘জামায়াত’ মানে হচ্ছে সংঘবদ্ধ আর ‘জামাতি’ মানে যে সংঘবদ্ধ। এখন তুমিই বল, এটা কি গালি হতে পারে? তুমি যে আমাকে জামাতি বলে গালি দিচ্ছ, তাতে তো তুমি আমার প্রশংসা করছ মানে আমি সংঘবদ্ধ, একাকী জীবন যাপন করতে পছন্দ করি না, সবসময় মানুষের সাথে মিলে-মিশে, ভালবাসা মাখামাখি করে জীবন যাপন করি বা করতে পছন্দ করি। তাই নয় কি? আচ্ছা, তোমাকে যে নাস্তিক, সেক্যুলার বা শাহবাগি বলে গালি দিই, এগুলো যে আসলেই গালি তা কি তুমি বোঝ? নাস্তিক মানে কী তোমাকে বোঝানো লাগবে? সেক্যুলার মানে ধর্মনিরপেক্ষ অর্থাৎ ধর্মের ব্যাপারে তুমি নিরপেক্ষ, কোন একটি বিশেষ ধর্মের প্রতি তোমার পক্ষপাতিত্ব নাই, মানে তুমি ভেতরে ভেতরে কোন্ ধর্ম লালন কর তা তুমিই জান কিন্তু আমি তোমাকে ধর্মহীন ধরে নিতে বাধ্য হচ্ছি। অর্থাৎ ‘সেক্যুলার’ এটা একটা গালি। তারপর শাহবাগি এটাও কিন্তু গালি। কীভাবে?
শাহবাগে যারা যায় অর্থাৎ শাহবাগে যারা ঘুরতে যায়, বই কিনতে যায়, ফুচকা খেতে যায় বা আড্ডা দিতে যায় তাদেরকে কিন্তু আমরা শাহবাগি বলি না। অথবা যাদের বাসাবাড়ি শাহবাগে তাদেরকেও কিন্তু আমরা শাহবাগি বলি না। কারণ এটার কোনো যৌক্তিকতা নাই। যেমন আমি যদি কারওয়ান বাজারে থাকি তাহলে কি আমি কারওয়ান বাজারি হয়ে যাব? নিশ্চয় নয়। তাহলে তোমাকে শাহবাগি বলছি কেন? কারণ তোমরা শাহবাগের রাস্তা আটকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস যেভাবে ‘বিচার চাই না, ফাঁসী চাই’ ‘জবাই কর্’ ‘নিষিদ্ধ কর’ ‘জ্বালো জ্বালো’ ইত্যাদি শ্লোগান দিয়ে একজন সম্পূর্ণ নিরপরাধ মানুষকে ‘কসাই’ বানিয়ে ফাঁসীর নামে খুন করে ছেড়েছ, তাতে তোমরাই যে আসল কসাই বা এর উত্তরসূরি তাতে তোমাদেরকে আমরা কসাই-ই ডাকতাম। কিন্তু দয়া করে তোমাদেরকে একটি নতুন নাম দিয়ে আদর করে শাহবাগি ডাকি, এটা তোমাদের কপাল যে আমরা তোমাদের কসাই ডাকি না। এই ছাড়াও ‘থাবা বাবা’ সহ বাংলার বি(!)খ্যাত নাস্তিকদের নিয়ে তোমরা যা করলা!
যাই হোক, বন্ধু একে অপরকে আমরা কী ডাকি না ডাকি এসব নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এখন সামনের দিকে আস। দেখ বন্ধু, দেশকে তুমি যেভাবে ভালবাসো তার চেয়ে আমি কম বাসতে পারি এটা তুমি ভাবছ কেন? আমি তো এই দেশকে তোমার চেয়েও বেশী ভালবাসতে পারি, তাই না? আমার দেশপ্রেম নিয়ে তুমি প্রশ্ন তুলতে পার না, যেমনটা আমিও পারি না। আমার কোন কর্মকাণ্ড যদি দেশের বিরুদ্ধে চলে যায় তাহলে তুমি আমাকে জানাও, বোঝাও, না বুঝলে সমালোচনা কর। কিন্তু আমি তো এই দেশেরই সন্তান। এই দেশের যত ইঞ্চি তোমার ভাগে পড়ে, আমার ভাগেও কিন্তু ঠিক তত ইঞ্চিই পড়ে(যদিও দেশকে কখনো ইঞ্চি ইঞ্চি ভাগ করা যায় না)। আমি তোমাকে ‘ভারতে চলে যা’ বলতে পারি না, তুমিও কিন্তু আমাকে ‘পাকিস্থানে চলে যা’ বলতে পার না। কিন্তু তোমার কোন কর্মকাণ্ডে যদি ভারত লাভবান হয় বা আমাদের দেশের স্বার্থ নষ্ট হয় তাহলে আমি অবশ্যই তোমার সমালোচনা করার অধিকার রাখি, তোমার কর্মকাণ্ডে যদি দেশ ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয় তাহলে অবশ্যই আমি তার যৌক্তিক সমালোচনা করতে পারি, তুমিও পার। কিন্তু তুমি বায়বীয় অভিযোগ দাঁড় করিয়ে যদি বল আমি দেশকে পাকিস্থান বানাতে চাই তাহলে আমার কি খারাপ লাগে না? কারণ আমি বা আমরা ঠিকমতো পাকিস্থানের রাজনীতিবিদদের নামও বলতে পারি না, কীভাবে আমার মাধ্যমে পাকিস্থানের স্বার্থসিদ্ধি হতে পারে সেটাই তো আমি বুঝি না, পাকিস্থান নিয়ে তোমার চেয়ে আমার খুব একটা বেশী অভিজ্ঞতাও থাকার কথা নয়, তারপরেও তুমি আমার নামে কেন এমন অভিযোগ কর? আচ্ছা বাদ দাও। আসল কথায় আসি।
তুমি সবসময় অভিযোগ কর, আমার প্রাণপ্রিয় নেতারা ’৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল এবং সেই বিরোধিতা করতে গিয়ে অনেক মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে ব্লা ব্লা ব্লা! বন্ধু, ভালো করে শোন, আমি আমার কথা বলি। আমি তো এক মুহূর্তের জন্যও কল্পনা করতে পারি না, আমার এই দেশ বাংলাদেশ একটি সেকেন্ডের জন্যও পরাধীন থাক, অন্য দেশ লুটেপুটে খাবে বা আমাদেরকে শোষণ করবে তা ভাবতেই তো মাথার মেজাজ কেমন গরম হয়ে যায়। ভারত হোক, পাকিস্থান হোক বা অন্য কোন দেশই হোক, আমার দেশকে পরাধীন বানিয়ে রাখবে বা শোষণ করবে, এমন অবস্থা যদি সৃষ্টি হয়, তাহলে ভারত/পাকিস্থানের বিরুদ্ধে তুমি আমাকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই দেখবে। অথবা বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে কেউ যদি এখন দুই টুকরো করতে চায় তাহলে সেটা তুমি সহ্য করবে কিনা জানি না, কিন্তু আমি সহ্য করব না। বাংলাদেশটা ৫৪ হাজার বর্গমাইল যেমন আছে তেমনই থাকবে, এক চুলও কেউ নিতে পারবে না, এই দেশে যারা জন্মেছি, এই দেশের আলো-বাতাসে যারা বেড়ে উঠেছি আমাদের প্রত্যেকের মনোভাব তো এমনই। অনুরূপ আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতারাও পূর্ব পাকিস্থানের প্রতি জুলুম-শোষণের বিরুদ্ধে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন এবং এ নিয়ে আমাদের সংগঠনের প্রতি তৎকালীন পাকিস্থানের প্রতিটি সরকার খুবই নারাজ ছিল এবং দুইবার নিষিদ্ধও করে দিয়েছিল। পূর্ব পাকিস্থানকে যেন স্বায়ত্বশাসন দেয়া হয় সেইজন্য অনেক স্টেটমেন্ট তুমি এখনো খুঁজলে পাবে। কিন্তু যখনই দেশভাগের প্রশ্ন আসল, তখনই আমাদের নেতারা এটা মেনে নিতে পারেননি। কারণ পূর্ব পাকিস্থান যদি আলাদা দেশ হিসেবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাহলে ভারত এই দেশটাকে গিলে খাবে-এই ছিল আমাদের নেতাদের আশংকা। এখন ভারত আমাদের প্রতি যা করছে তাই ছিল আমাদের নেতাদের পূর্বানুমান। কিন্তু পূর্ব পাকিস্থান স্বায়ত্বশাসিত থাকুক বা স্বতন্ত্র ভাবে স্বাধীন থাকুক এটা আমাদের নেতারা শুরু থেকেই চেয়েছে। তাহলে তুমি তাঁদেরকে কেন স্বাধীনতা বিরোধী বলছ? তাঁরা তো স্বাধীনতা বিরোধী নন, তাঁরা ছিলেন অখণ্ড পাকিস্থানে বিশ্বাসী। হাসিনার এতো অত্যাচার-নির্যাতনে আমি-তুমি যদি অখণ্ড বাংলাদেশে বিশ্বাসী হয়, তাহলে ওনারা অখণ্ড পাকিস্থানে বিশ্বাসী হতে দোষ কী? হুম, এবার আস।
তুমি বলবে ওনারা অখণ্ড পাকিস্থান রাখতে গিয়ে মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছিলেন, এটাই ওনাদের দোষ। বন্ধু, আজ তোমাকে সুস্পষ্ট ভাষায় বলছি, কান পেতে শুন। আমার নেতা তো দূরের কথা, আমার নিজের বাবা-মা ও যদি কখনো কোন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেন তাহলেও আমি তাদেরকে কখনো ক্ষমা করব না, সেখানে নেতা তো আরো পরে। শোন বন্ধু, আমি আল্লাহ্কে ভয় করি, সারাক্ষণ জান্নাত-জাহান্নামের হিসেব কষি। কী করলে জান্নাত পাওয়া যাবে আর কী করলে জাহান্নামে নিক্ষেপ হতে হবে-এই জ্ঞান আমার আছে বন্ধু। তো আমি জেনে শুনে কেন মানবতা বিরোধী অপরাধীদের আমার নেতা বানাব? আমি তো পাগল নয় বন্ধু, এই দেশের লক্ষ লক্ষ তরুণ-যুবককে কি তোমার পাগল মনে হয়? এতো লক্ষ লক্ষ তরুণ-যুবক জেনে-বুঝে কতগুলো অপরাধীদের নেতা মনে করে তাদের আনুগত্য করবে? তাঁদের জন্য রাজপথে জীবন বিলিয়ে দিতে যাবে? টাকা দিয়ে কাউকে কখনো জীবন বিলিয়ে দিতে রাজপথে পাঠানো যায়? না বন্ধু, আমরা এমন নয়।
আমরা আমাদের সংগঠন এবং আমাদের নেতৃবৃন্দের প্রতি ১০০% নিশ্চিত যে তারা ’৭১ বা তার আগে-পরে খুন, ধর্ষণের মতো জঘন্যতম মানবতা বিরোধী অপরাধের সাথে বিন্দুমাত্রও সংশ্লিষ্ট ছিলেন না ছিলেন না ছিলেন না। তাঁরা রাজনৈতিক ভাবে অখণ্ড পাকিস্থানে বিশ্বাসী ছিলেন এবং এর প্রেক্ষিতে কোন অবস্থায় ভারতের সাহায্যকে সমর্থন করেননি, দেশ যখন চূড়ান্ত রক্তপাতে পর্যবসিত হল তখন ওনাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশের সেনাবাহিনীর কাছে ছুটে গিয়েছিলেন (যেমনটি এখনো দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ এবং রাজনৈতিক নেতারা ছুটে যান) যাতে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ঠিক থাকে এবং এ লক্ষ্যে যেন দেশের জন্য কিছু অবদান রাখতে পারেন। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ওনারা এন্টি-আওয়ামী লীগ এবং এন্টি-বাম হওয়ার কারণে মানবতা বিরোধী অপরাধী হয়ে গেলেন, অথচ হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো জঘন্য কাজগুলো করেছিল পাক হানাদার বাহিনী। এই দেশীয় কিছু দোসরেরা যে হত্যা-ধর্ষণে পাক হানাদার বাহিনীকে যে সাহায্য করেনি তা তো আমরা বলছি না। কিন্তু আমাদের সংগঠনের সেই সময়কার ৪৫০ জন রুকন আর ৬৫০০ জন কর্মীর একজনও এইসব জঘন্য কাজের সাথে জড়িত ছিলেন না। আমি তা বিশ্বাস করি বলেই এই সংগঠনকে ভালোবাসি এবং এর সাথে আছি। আর আমি এই নিয়তেই আছি যে, যদি সংগঠন কখনো ইসলাম বিরোধী কোন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে প্রথমে সংগঠনকে সংশোধনের চেষ্টা করব, যদি না হয় তাহলে সংগঠন ছেড়ে দেব। কারণ আমি তো আল্লাহ্কে ভয় করি। আল্লাহ্র জন্যই এই সংগঠনের সাথে আছি আবার আল্লাহ্র জন্যই সংগঠনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব।
বন্ধু এই হচ্ছি আমি এবং আমরা। তোমাকে আরো অনেক কিছু বলার ছিল। কিন্তু আজ এতোটুকুই যথেষ্ট মনে করি। আল্লাহ্ যদি আমার কথাগুলো অনুভব করার তোমাকে শক্তি দেন তাহলে এতোটুকুই যথেষ্ট। আশা করি, তুমি বুঝবে। হয়তো বুঝবে না, অবিশ্বাস করবে। কিন্তু তোমার বিশ্বাস-অবিশ্বাসে আমার কিছু আসে যায় না বন্ধু। আমি তো বন্ধু আল্লাহ্র সন্তুষ্টির মুখাপেক্ষী, আল্লাহ্ যদি হাশরের ময়দানে আমাকে বলেন ‘যা আমার বান্দা তোকে মাফ করে দিলাম’-তাহলে আমার তো আর কিছুই প্রয়োজন নেই বন্ধু। বন্ধু তোমার কী প্রয়োজন? তুমি কিসের মুখাপেক্ষী বন্ধু?
বিষয়: বিবিধ
১২৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন