আমার একটি দুঃস্বপ্ন এবং শহীদ আমিন ভাই
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ২১ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:২৩:০৩ রাত
বেশ কিছুদিন আগে একদিন ফজরের নামাযের পরে ঘুমানোর সময় একটা ভয়াবহ স্বপ্ন দেখেছিলাম। স্বপ্নটা দেখে আমি রীতিমত ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম, ঘুম থেকে জেগে আমি বারবার আল্লাহ্র কাছে শুকরিয়া আদায় করছিলাম স্বপ্নের ঘটনাটা যে আমার জীবনে সত্যি সত্যি ঘটেনি এ কারণে। আমার জীবনে যতো ভয়াবহ স্বপ্ন দেখেছি তার অধিকাংশই আমি কাউকে বলিনি, কারন এইসব স্বপ্নের কথা কারো কাছে শেয়ার করতে আমার মোটেও ভালো লাগে না। ঠিক এই স্বপ্নের কথাটিও আমি কাউকে বলিনি, বলার প্রয়োজন মনে করিনি। কিন্তু আজ সময়ের প্রয়োজনে সেই স্বপ্নটা সবার কাছে শেয়ার করতে আমার কেন যেন খুব ইচ্ছে করছে।
ফজরের পরে দেখা সেই স্বপ্নটি ছিল ঠিক এরকমঃ আমি আমার ছোট বোনকে সাথে নিয়ে কি একটা কাজে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাচ্ছি। প্রায় কুমিল্লা পর্যন্ত চলে গেছি, কুমিল্লা স্টেশনে ট্রেনটি থামতেই এক দল ডিবি পুলিশ আমাদের বগিতে উঠেছে। উঠেই আমার নাম ধরে আমাকে খুঁজতে লাগল। খুঁজতে খুঁজতে আমাকে পেয়েও গেল। এমন আকস্মিক ঘটনায় আমি যতটা না ঘাবড়ে গেছি, আমার কলেজ পড়ুয়া ছোট বোনটা তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশী ঘাবড়ে গেছে। ঐ ডিবি পুলিশগুলো আমাকে তাদের সাথে এখনই যেতে হবে বলল, আমি বললাম, ‘’আমাকে যদি আপনারা এভাবে নিয়ে যান, তাহলে আমার ছোট বোনটার কি হবে? ওকে এভাবে এই অচেনা জায়গায় আমি কিভাবে একা ছেড়ে যাব? আপনারা বরং চট্টগ্রাম চলুন, সেখানে আমার ছোট বোনকে বাসায় রেখে তারপর আপনারা আমাকে গ্রেফতার করবেন’’, আমার কথাগুলো শোনার পর ডিবি পুলিশগুলো বলল, ‘দুঃখিত আমাদের কিছু করার নাই, আপনাকে এই অবস্থায় আমাদের সাথে যেতে হবে। আপনার ছোট বোন কি করবে না করবে সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়’’, আমি তাদেরকে অনুনয়-বিনয় করলাম, আমার ছোট বোনটা অনেক কান্নাকাটি করছিল। আমি বারবার অনুরোধ করলাম, বললাম ভাই আপনারা এতোটা অমানবিক হবেন না, আমার ছোট বোনটা এখানে কিছুই চেনে না, সে এখান থেকে একা আবার বাসায় ব্যাক যেতে পারবে না। কিন্তু ডিবি পুলিশগুলো আমার কোন কথাই শুনল না, আমাকে আমার ছোট বোনের সামনে টেনেহেঁচড়ে ট্রেন থেকে নামাতে লাগল, ট্রেনের শত শত যাত্রী এই ঘটনা দেখছে আর আমার ছোট বোন চিৎকার করে কান্না করছে। আমাকে গ্রেফতার করেছে কেন বা গ্রেফতার করে কোথায় নিয়ে যাবে এই বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র টেনশান হচ্ছিল না, আমার শুধু আমার ছোট বোনটাকে এভাবে একা ফেলে যেতে হচ্ছে এটা ভেবেই আমি আতংকিত হচ্ছিলাম। আমাকে টেনেহেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে আর আমি বারবার পেছন ফিরে ফিরে আমার ছোট বোনটাকে দেখছিলাম। স্বপ্নের এতোটুকু দেখেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। এমন স্বপ্ন দেখে আমি যে কতটা ভয় পেয়েছি এবং বিচলিত হয়েছি তা পাঠক নিশ্চয় অনুভব করতে পারবে। এই ধরণের ঘটনার মুখোমুখি যেন আমাকে বা অন্য কোন মানুষকে কখনো হতে না হয় এই জন্য আল্লাহ্র কাছে অনেক দোয়া করেছি।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, আমাদের একজন ভাই আমিনুল ইসলাম আমিনের সাথে এই ধরণের ঘটনায় ঘটেছে। ডিবি পুলিশগুলো কতটা অমানবিক এবং বর্বর হলে একজন মানুষকে তার স্ত্রী এবং বাচ্চাদের সামনে অজানা এক স্থান থেকে টেনেহেঁচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে পারে! আমিন ভাই তার স্ত্রী এবং বাচ্চাদের নিয়ে ঢাকা থেকে তার নিজ বাড়ি সীতাকুণ্ডে ফিরছিলেন, কিন্তু কুমিল্লার একটি জায়গায় বাস যাত্রা বিরতি করলে একদল ডিবি পুলিশ আমিন ভাইকে গ্রেফতার করে টেনেহেঁচড়ে গাড়িতে তোলে। ভাবতেই তো গা’টা কেমন শিউরে উঠে, নিজের পরিবার পরিজনকে এভাবে মাঝপথে ফেলে কেউ গ্রেফতার হলে তার নিজের চেয়ে পরিবারের জন্য বেশী টেনশান হয়, এমন জায়গায় গ্রেফতারের পর ঐ ব্যক্তির স্ত্রী-সন্তানের উপর যে কি ঝড় বয়ে যায় তা ঘটনার শিকার ব্যক্তি মাত্রই উপলব্ধি করতে পারবে। ঐ ডিবি পুলিশগুলো এমনই বর্বর এবং হায়েনা যে আমিন ভাইকে শুধু গ্রেফতার করে নি, তাকে গুম করে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে হত্যা করেছে এবং হত্যা করে আবার তার লাশটা তার নিজ বাড়ির সামনে ফেলে গেছে। এটাকে কি সভ্য দেশ বলা যায়? একজন মানুষকে যখন খুশি তখন গ্রেফতার করে বেআইনিভাবে খুন করে লাশ যত্রতত্র ফেলে রাখা যায়? এটা কি পৃথিবীর নিকৃষ্ট মানবতা বিরোধী অপরাধ নয়? এই দেশে কি কোন সরকার বা সুশীল সমাজ আছে? থাকলে এইসব ঘটনা কি তাদেরকে এতোটুকু নাড়া দেয় না? নাকি সরকার নিজেই এইসব গুম-খুনের হুকুম দাতা? আমরা কার কাছে বিচার চাইব? নাকি বিচার নিজেরাই করে ফেলব? দুনিয়াতে বিচার না পেলেও হাশরের ময়দানে বিচার পাব জানি, কিন্তু ততদিনে পৃথিবীর সমস্ত মানবতা কি টয়লেট টিস্যুতে ধুয়ে মুছে যাবে না?
সরকার এবং তার পোষা ডিবি সদস্যদেরকে শুধু একটি কথাই বলতে চাই,
ধৈর্য ধরাই তোদের কাছে
হয় যদি দুর্বলতা
এখন থেকে দেখবি তোরা
মোদের ধৈর্যহীনতা
আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা শহীদ আমীন ভাইকে জান্নাতের ফুল-পাখিদের সাথে খেলা করার তৌফীক দিন এবং তার পরিবারকে সবরে কামিলা দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১৭৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন