মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো আমাদেরকে কী মনে করে?
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ০৮ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:১৯:৪৪ রাত
সাধারণত মোবাইল ফোন কোম্পানি থেকে কোনো ম্যাসেজ আসলে আমি নগদে ডিলিট করি। ম্যাসেজে ওরা কি দিল না দিল এগুলো নিয়ে আমি মোটেও মাথা ঘামায় না। আমি যে কয়েকটি সিম ব্যবহার করি তাতে কোন্ প্ল্যানটি আমি ব্যবহার করছি তা আমি জানি না। একেক সিমে তো একেক সুযোগ, কোনোটাতে রাতে কলরেট কম, আবার কোনোটাতে এফএনএফ নাম্বারগুলোতে কলরেট কম, আমি আসলে কোন কলরেটটি ইউজ করছি বা আমার সিমগুলোতে আদৌ এফএনএফ নাম্বার আছে কি নেই আমি জানি না। অমুক অফারটি গ্রহণ করলে টাকা একটু কম কাটবে বা অমুক এসএমএসটি পাঠালে কিছু বোনাস পাওয়া যাবে, এ চিন্তা কখনই আমার মাথায় কাজ করেনি। তাই আজ পর্যন্ত আমার কখনো কোনো অফার গ্রহণ করা হয়নি। অনেকেই ওয়েলকাম টিউন হিসেবে ইসলামী গান বা সাধারণ অনেক গান ব্যবহার করে থাকে, আমি আজ পর্যন্ত এরকম কোন ওয়েলকাম টিউনও ব্যবহার করিনি। আমি শুধু আমার ব্যবহৃত অপারেটরের নামগুলো জানি, যেমন আমি রবি, গ্রামীণফোন এবং মাঝে মধ্যে বাংলালিংক ব্যবহার করি। ব্যস মোবাইল অপারেটরদের নিয়ে আমার জ্ঞানের দৌড় এই পর্যন্তই। কিন্তু এই ফোন কোম্পানিগুলো কারণে-অকারনে, সময়ে-অসময়ে এমন এমন এসএমএস দেয় বা কল দেয়, যা ভীষণ বিব্রতকর।
আজ মাগরিবের নামাযের জামায়াত শেষ করেছি মাত্র, এমন সময় আমার মোবাইলে একটা এসএমএস এল। চিন্তা করলাম, এই জামায়াতের টাইমে কে এসএমএস দেয়! নিশ্চয় জরুরী কিছু হবে হয়তো, নইলে এমন সময় কেউ এসএমএস দিবে কেন! মাগরিবের সময়, সবাই যার যার ইবাদাতে ব্যস্ত, এমন সময় খুব জরুরী কিছু না হলে কেউ কল বা এসএমএস দেয়ার তো কথা নয়। খুব জরুরী কিছু ভেবেই আমি পকেট থেকে আমার মোবাইলটি বের করলাম, দেখলাম রবি থেকে এসএমএস! এই নামাযের সময় রবি আবার কি অফার দিল! খুব বিরক্তির সাথে ম্যাসেজটি পড়ার জন্য বাটন চাপলাম। কিন্তু এসএমএসে যা লিখা ছিল, তা পড়ে আমার মাথা ১০৪ ডিগ্রি গরম হয়ে গেল, ম্যাসেজে লিখাঃ ‘’শিরোনামহীনের ল্যাটেস্ট সব গান গুনগুন-এ! ডায়াল **** ফর অমুক গান, ডায়াল **** ফর তমুক গান….’’
এই ম্যাসেজ দেখে আমার শরীরের রক্ত টগবগ করছিল, ইচ্ছে হচ্ছিল তখনই মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর অফিসে গিয়ে তাদের কর্মকর্তাদের শার্টের কলার ধরে জিজ্ঞেস করি, ৯০% মুসলমানের দেশে কাকে কোন্ অফার দিতে হবে, এই সেন্স কি তোদের নাই??? আমাকে কি গান-বাজনা ওয়ালা লোক মনে হয়??? যারা এইসব গানগুলো সবসময় ওয়েলকাম টিউন হিসেবে ব্যবহার করে তাদেরকে এইসব এসএমএস দে, আমাকে কেন? এটা কি ভারত নাকি পশ্চিমা কোনো দেশ? এখানকার সব মানুষ কি গানপাগল, নাচপাগল? এটা কি অবাধ সঙ্গীত চর্চার দেশ? এখানে ১০০% মানুষ কি মিউজিক প্র্যাকটিস করে? তাহলে আমাদেরকে এইসব এসএমএস বা অফার কেন?
আমি একজন মুসলিম, ইসলামী বিধি-বিধানগুলো চর্চা করি, ইসলামী সঙ্গীতের ভক্ত হলেও আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য সাধারণ গান-বাজনা-নাচ এইসবকে ঘৃনা করি, আমার মতো এই দেশের লক্ষ লক্ষ ইসলামী জনতা গান-বাজনা-নাচকে ঘৃনা করে, তাহলে এইসব ফোন কোম্পানিগুলো আমাদেরকে জোর করে এইসব জিনিস গেলাতে চেষ্টা করছে কেন? শুধু অফারই নয়, এইসব কোম্পানিগুলোর প্রত্যেকটা বিজ্ঞাপন আমাদের বাংলাদেশের সব মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে না, বিজ্ঞাপনগুলোতে এতো মিউজিক ব্যবহার করা হয় এবং এমন এমন দৃশ্য ব্যবহার করা হয় যা বাংলাদেশের মুষ্টিমেয় কিছু তরুণ-তরুণীর জীবনকে প্রতিনিধিত্ব করে মাত্র, মুষ্টিমেয় ঐসব তরুণ-তরুণীর জীবনকে সারা বাংলাদেশের চিত্র হিসেবে প্রতিষ্টিত করতে চাইছে এইসব কোম্পানি। একটি দেশে নানান শ্রেণীর কাস্টমার আছে, কেউ গান পছন্দ করে কেউ করে না, কেউ বিবাহপূর্ব প্রেম করে আবার কেউ বিয়ে করে প্রেম করে। ফোন কোম্পানিগুলোর কাছে জানতে চাই, গান-বাজনা পাগল মানুষদের অফারগুলো গান-বাজনাকে ঘৃনা করে এমন মানুষদের দেয়ার কারন কি? বিবাহপূর্ব সম্পর্কে বিশ্বাসীদের জীবন-যাপন সাধারণ্যে প্রচার করে আপনারা কি মানুষের ইসলামী অনুভূতিকে হেয় করছেন না? দয়া করে, আমাদেরকে এইসব এসএমএস বা অফার দিবেন না। মনে রাখবেন, এই দেশের মানুষ আপনাদের এইসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যদি সোচ্চার হওয়া শুরু করে তাহলে এই দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যেতে হবে।
বিঃদ্রঃ এইসব ম্যাসেজ বা বিজ্ঞাপনের জ্বালায় আমার মতো সাধারণ একজন মুসলিম যুবক যেখানে অতিষ্ট, সেখানে আমাদের সম্মানিত আলেমরা যখন এইসব ম্যাসেজ পায় তখন তাদের মেজাজের অবস্থা কেমন হয় আল্লাহ্ই ভালো জানেন!
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন