বাংলাদেশ নিয়ে একজন জিম প্রলির অনুভূতি
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ০৫ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:২২:২০ রাত
অস্ট্রেলিয়ার জিম প্রলি নামে ৬৮ বছর বয়সী এক ভদ্রলোক সকালে ব্রেকফাস্টের পর ইন্টারনেট ব্রাউজ করছিলেন। কি মনে করে যেন গুগলে 'Bangladesh' নামে সার্চ দিলেন, প্রায় 392,000,000টি ফলাফল আসল। বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন নিউজ পড়তে পড়তে জিমের একসময় 'Bangladesh is a very poor country, but its densely populated' কথাটা নজরে আসল। বাংলাদেশ অত্যন্ত দরিদ্র এবং জনবহুল দেশ-এ বিষয়ে অনেক নিউজ পড়ার তিনি বাংলাদেশ নিয়ে খুব হা-হুতাশ করলেন। তিনি চিন্তা করলেন, এই দেশের মানুষ অনেক কষ্টে আছে, ইশ ওদের জন্য যদি কিছু করা যেত।
এমন চিন্তা যখনই তার মাথায় আসল, তখনই আরেকটি নিউজ তার নজরে পড়ল। নিউজটি দেখে তার চোখ একেবারে ছানাবড়া হয়ে গেল, ওহ গড এ কি? বিশ্বের তৃতীয় সর্ববৃহৎ শপিং মল বাংলাদেশে? যমুনা ফিউচার পার্ক নামে এই মলটি এতো বৃহৎ এবং লাক্সারিয়াস যে উন্নত দেশগুলোতেও তা সচরাচর দেখা যায় না। জিম ভীষণ অবাক হল। গরীব দেশে এরকম শপিং মল? তাও একটি নয়, এক ঢাকা শহরেই একাধিক রয়েছে। জিম বাংলাদেশের রিসেন্ট কিছু নিউজ পড়ল। শেয়ার বাজার, হল মার্ক, ডেস্টিনি, ইউনি পে টু ইউ সহ সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোতে ব্যাপক দুর্নীতির নিউজগুলো পড়ল। জিম এতক্ষণে বুঝতে পারল বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা। বাংলাদেশ আসলে গরীব নয়, আসলে এখানে কিছু মুষ্টিমেয় লোকের কাছে সারা দেশ জিম্মি হয়ে আছে, জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে অল্পকিছু লোক তাদের পকেটে টাকা ঢুকিয়েছে, ব্যাংক ব্যালেন্স করেছে, আর লাক্সারিয়াস বাড়ি, গাড়ী, শপিং মল সব ঐ মুষ্টিমেয় লোকদের হাতেই। সম্পদের সুষম বণ্টন পদ্ধতি এখানে নেই। গরীবের সম্পদ ধনীদের কবজায়। জিম এইসব খবর পড়ছিল আর ভাবছিল, আচ্ছা বাংলাদেশে কি এমন কেউ নেই যারা এই দেশটাকে উদ্ধার করবে, বাংলাদেশের জনগণ কি এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে পারে না? এই দেশের তরুণ-তরুণীরা কি রাস্তায় বিক্ষোভ করতে পারে না। রাস্তায় দিনের পর দিন বিক্ষোভ করলেই তো দুর্নীতিবাজদেরকে সরকার শাস্তি দিত অথবা তারা ভয়ে দেশ ছেড়ে পালাত।
জিম প্রলির মাথায় এই প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিন্তু তার পরমুহূর্তেই একটি খবর দেখে জিমের প্রায় অজ্ঞান হওয়ার দশা। খবরটি ছিল এমনঃ ''৪২ বছর আগে ঘটে যাওয়া স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের ফাঁসীর দাবীতে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ উত্থাল, কিছু তরুণ-তরুণী ফাঁসী চাই ফাঁসী চাই বলে দিন-রাত অবস্থান করে আছে এই রাস্তার মোড়ে। ১৯৭১ সালে পাকিস্থান সেনাবাহিনীকে সমর্থন দিয়েছেন এমন অভিযোগে অভিযুক্তদের ফাঁসীর দাবীতে মাসের পর মাস আন্দোলন করছে তরুণ-তরুণীরা।''
জিম এই খবর পড়লেন এবং একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। তারপর আফসোস করতে লাগলেন, হায় বাংলাদেশ! যখন তোমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশটাকে গড়ার কথা, দুর্নীতিবাজদের রুখে দাঁড়ানোর কথা, ঠিক তখন তোমরা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় একটা বিষয় নিয়ে আন্দোলন করে নিজেদের মূল্যবান জীবনের পাশাপাশি বাংলাদেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছ, কত নির্বোধ এই দেশের তরুণ-তরুণীরা!
বিষয়: Contest_mother
১৪৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন