‘’তোমরা যারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন কর’’ (শেষ পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ০১ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:২২:৩৬ রাত
’৯৬-তে তত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আন্দোলন করার কারনে জামায়াত সহ ইসলামিস্ট দলগুলোর সহানুভূতি তারা পেয়েছিল এবং সেই সাথে আওয়ামী নেত্রীর হিজাব এবং হাতে তসবিহ্র দানার তেলেসমাতি তো ছিলই। নির্বাচনের দুইদিন আগে জামায়াত এবং অন্যান্য ইসলামিস্ট দলগুলো টের পেয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ তার ফ্যাসিস্ট আচরণ এখনো ত্যাগ করেনি, তারা ক্ষমতার লোভে সাময়িক কিছু ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে মাত্র। অধ্যাপক গোলাম আযম নির্বাচনের দুইদিন আগে ঘোষণা দিলেন ‘নৌকা ঠেকাও’। কিন্তু ততদিনে যা হওয়ার হয়ে গেছে। ফলাফলঃ আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসল, এরপর যা হওয়ার তাই হল। সারা দেশে হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, লুটপাট, খবরের কাগজে প্রতিদিন শত শত টুকরার লাশের ছবি, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শত ধর্ষণ উদযাপন ইত্যাদি। দাড়ি-টুপি ওয়ালাদের যখন তখন গ্রেফতার, নির্যাতন এগুলো তো ছিলই, আর শেষ দিকে এসে জঙ্গিবাদের উত্থান। রমনা বটমূল, সিনেমা হল কোথায় বোমা মামলা হয়নি? বাংলাদেশের শান্তিকামী মানুষ যা বোঝার বুঝে গেল, তারা ব্যালটের মাধ্যমে আওয়ামীলীগকে চিরতরে রাজনৈতিক ময়দান থেকে উৎখাতের সিদ্ধান্ত নিল, ফলাফলঃ চারদলীয় জোট বিপুল ভোটে জয়ী।
কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা ঘোষণা দিল, একদিনের জন্যও নাকি তিনি চারদলীয় জোট সরকারকে শান্তিতে থাকতে দিবেন না! ক্ষমতায় থেকে যে পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল আওয়ামী লীগ, ক্ষমতায় না থেকেও হরতালের পর হরতাল, অবরোধ, ট্র্যাম্প কার্ড, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা ইত্যাদি জঘন্যতম কাজ ’০১ থেকে ’০৬ সালে করেছিল। চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিন অর্থাৎ ’০৬-এর ২৮শে অক্টোবর আওয়ামী লীগ যা করেছিল তা তো বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মহা ট্র্যাজেডি। সেদিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যেভাবে লগি-বৈঠা দিয়ে নির্মমভাবে মানুষ হত্যা করেছিল তা মানবতা বিরোধী অপরাধের সকল রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়। সারা বাংলাদেশে সেদিন ২৬ জন বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীকে অমানবিকভাবে হত্যা করে আওয়ামী লীগ বুঝিয়ে দেয় যে তারা ক্ষমতার জন্য সব করতে পারে। সারা বিশ্বের মানুষ অবাক হয়ে গিয়েছিল, খোদ একটি দলের সভানেত্রী কিভাবে লগি-বৈঠা নিয়ে ঢাকায় সবাইকে আসতে বলে? এ কেমন রাজনৈতিক শিষ্টাচার? সেই ২৬ জন নিহত ব্যক্তিদের হত্যার দায়ভার কি দলের সভানেত্রীর ঘাড়ে বর্তায় না?
সারাদেশে তাণ্ডব চালিয়ে কিছু মানুষকে অবৈধভাবে ক্ষমতার মসনদে বসার সুযোগ করে দেয়া হয়, এর নাম কি আওয়ামী গণতন্ত্র? এই দেশের মানুষ ভেবেছিল, সেই অবৈধ সরকার ২-৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন দিবে, নির্বাচন দিলে সারা দেশে আবারো আওয়ামী লীগের ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে ভোট বিপ্লব হত, কিন্তু একটি সাজানো নির্বাচন করার নীলনকশা নিয়ে এগোতে থাকে সেই অবৈধ তত্বাবধায়ক সরকার। ২ বছর দেশি বিদেশি চক্রান্ত ঠিকঠাক মতো সাজিয়ে একটি সাজানো নির্বাচনের আয়োজন করে সেই সরকার। ফলাফলঃ আওয়ামী লীগ বিজয়ী। আর এর পরের ইতিহাস সবার জানা। গত ৫ বছর কত হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, কত মা-বোনের ইজ্জত হরণ করা হয়েছে, কত হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে তা এখানে উল্লেখ করে আমি আমার এই লেখার পরিধি বাড়াতে চাই না। শুধু এতোটুকু বলব, আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়ার আগে শেয়ার বাজারে নিঃস্ব হওয়া সেই মানুষগুলোর কথা একটু বিবেচনা করবেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা নির্যাতিত সেই মা-বোনদের কথা একটু বিবেচনা করবেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে শত শত ভাইকে পুলিশ-র্যা ব দিয়ে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, মধ্যরাতে ইলেক্ট্রিসিটি বন্ধ করে দিয়ে মতিঝিলের সেই নিরপরাধ মুসল্লিদের উপর নৃশংসতার কথা একটু ভেবে দেখবেন, গত ৫ বছরে ছাত্রলীগের গুণ্ডামীর কথা একটু ভেবে দেখবেন, প্রকাশ্য দিবালোকে এতো এতো ক্যামেরা-সাংবাদিক-পুলিশের সামনে তারা বিশ্বজিৎ নামক একটি নিরীহ ছেলেকে কুপিয়ে কুপিয়ে কি নৃশংস ভাবেই না হত্যা করল। আওয়ামী লীগ মানেই তাণ্ডব, তাণ্ডব নামেই আওয়ামী লীগ, নৃশংসতার অপর নাম আওয়ামী লীগ।
একটি দলের সভানেত্রী যখন ১টি লাশের বদলে ১০টি লাশ ফেলার ঘোষণা দেন, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ মারার কথা বলেন, একটি দলের প্রভাবশালী মন্ত্রী যখন বিরোধী দল হরতাল ডাকলে ঘরে ঘরে গিয়ে হত্যা করার নির্দেশ দেন, তখন সেই দলকে নৃশংস না বলে কি বলব? আওয়ামী তাণ্ডবের কথা বলা শুরু করলে আর শেষ হবে না, দিন ফুরোবে রাত ফুরোবে। আওয়ামী লীগ যে স্বভাবগত ভাবেই একটি ফ্যাসিস্ট দল, এটা জানার জন্য আওয়ামী বিরোধী হওয়া লাগে না। যারা আওয়ামী সমর্থন করে তারাও জানে আওয়ামী লীগ কি জিনিস। আওয়ামী লীগের বড়, মাঝারি, ছোট সব স্তরের নেতাদের কাছে অস্ত্র আছে, এই কথা সর্বজনস্বীকৃত। তারা যে অস্ত্রের রাজনীতি করে, মিছিল মিটিং করলে অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিপক্ষের উপর গুলি ছুঁড়ে তা তো সবারই জানা। তাই ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন, এরকম একটি ফ্যাসিস্ট দলকে আপনি সমর্থন করবেন কি করবেন না। যদি সমর্থন করে থাকেন, তাহলে আপনার মস্তিষ্কে সমস্যা আছে ধরে নিতে হবে অথবা ধরে নিতে হবে স্বভাবগত ভাবে আপনি নিজেই একজন ফ্যাসিস্ট মন-মানসিকতার। আল্লাহ্ সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন, আমীন।
বিষয়: রাজনীতি
১০২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন