ভ্রান্তির বেড়াজালে বামেরা, আস্তাকুরে নিক্ষেপ হওয়ার পথে তাদের রাজনীতি
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ৩১ অক্টোবর, ২০১৩, ১১:০৮:২১ সকাল
গতকাল বিরোধী দলীয় নেত্রীর সাথে সিপিবি-বাসদের আলোচনায় আমি বিস্মিত এবং একই সাথে হতাশ হয়েছি। আমি আশা করেছিলাম, দীর্ঘদিনের ঘৃনা এবং প্রতিহিংসার রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে এই বামপন্থী দলগুলো বিরোধী দলীয় নেত্রীর সাথে আলোচনা-সংলাপের মধ্য দিয়ে সুস্থ ধারার রাজনীতি শুরু করবে। কিন্তু আমার সেই আশাকে গুঁড়েবালি দিয়ে তারা বরাবরের মতোই দীর্ঘদিনের ঘৃনা এবং প্রতিহিংসাকে উস্কে দেয়ার জন্য বিরোধী দলীয় নেত্রীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। আমাদের বাপ-দাদাদের কাছ থেকে শুনেছি, বামদল গুলোর নেতা-কর্মীরা নাস্তিক এবং ইসলাম বিদ্বেষী হলেও তারা দেশের স্বার্থে প্রায় সময় অনেক ভালো ভূমিকা রাখে, দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু হলে তারা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে, কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে তাদের ভূমিকা দেখে মাথায় প্রশ্ন আসছে, এই বাংলাদেশের বামদলগুলো আসলেই কি রাজনীতি করার জন্য রাজনৈতিক মাঠে আছে? নাকি তারা রাজনীতিবিদ সেজে ফ্যাসিস্ট কোনো দলের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগী হয়ে ভিন্নমতের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ঘৃনাকে উস্কে দেয়ার জন্যই রাজনীতির ময়দানে বিচরণ করছে? এই বামদলগুলোর বিগত ১০ বছরের রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং বক্তৃতা-বিবৃতির পরিসংখ্যান দেখলে আমার কিন্তু তাই মনে হয়। রাজনীতিতে শুধুমাত্র ঘৃনার চর্চা এবং সহিংস কথা-বার্তা বলে ভিন্নমত তথা ইসলামকে নির্মূল করার কাজেই তারা রাজনৈতিক ময়দানে রাজনীতিবিদ সেজে বিচরণ করছে।
বাংলাদেশ বর্তমানে ঐতিহাসিক একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সামনে নির্বাচন হবে কি হবে না, হলে কোন্ পদ্ধতিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী-বিরোধী দলীয় নেত্রীর সংলাপ আদৌ হবে কিনা-এইসব বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষ যখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে বামদলগুলো ইসলামী শক্তিকে নির্মূল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে একটি রাজনৈতিক দলের দেশের পক্ষে, শান্তির পক্ষে, সমঝোতার পক্ষে, ঐক্যের পক্ষে ভূমিকা রাখা উচিৎ। কিন্তু তা না করে একেবারে অপ্রয়োজনীয় ইস্যু নিয়ে বামদলগুলো নাকের পানি চোখের পানি সব একাকার করে ফেলছে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের বামদলগুলোতে কর্মী-সমর্থক যা-ও কয়েকজন ছিল, এই ঘৃনার রাজনীতি শুরু করার পর তারা রাজনৈতিক ময়দানে এখন শুধু নামটা নিয়ে কোনোমতে টিকে আছে। সিপিবি-বাসদ নামক মৃতপ্রায় দুটি বামপন্থী দল বিরোধী দলের নেত্রীর সাথে আলোচনা করতে যাবে-এই কথা শুনে আমি ভীষণ আশাবাদী হয়েছিলাম, দেশের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার পরামর্শ দেয়ার জন্য তারা বিরোধী দলীয় নেত্রীর সাথে দেখা করবে এবং এই ক্ষেত্রে তাদের বোধশক্তি কিছুটা ফিরে এসেছে ভেবে আমি মনে মনে ভীষণ পুলকিত হয়েছিলাম, কিন্তু খবরে দেখলাম তারা নাকি বিরোধী দলীয় নেত্রীকে জঙ্গি-মৌলবাদীদের ত্যাগ করতে বলার জন্য গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন! হাসব নাকি কাঁদব বুঝতে পারছি না। দেশে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যেখানে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার অবস্থা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যেখানে জনগণের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে, গার্মেন্টস কর্মীরা পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে, বিদেশ থেকে লাখ লাখ শ্রমজীবী মানুষ যেখানে চাকরী হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছে, ঠিক তখন বিরোধী দলীয় নেত্রীকে এসব ব্যাপারে ভূমিকা গ্রহণ করতে না বলে জঙ্গি-মৌলবাদীর তকমা দিয়ে জামায়াত-হেফাজতের সঙ্গ ত্যাগ করতে পরামর্শ দিয়ে এসেছে এই বামপন্থী দলগুলো!!!
মানুষ কি বামদেরকে এমনি এমনি নাস্তিক আর ইসলাম বিদ্বেষী ডাকে!!! প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখে চলেছে এই বামপন্থী দলগুলি, জঙ্গি-মৌলবাদীর ধোঁয়া তুলে ইসলাম বিরোধী ভুমিকার জন্য আমেরিকা-ইসরায়েল যেখানে সাধারণ মানুষের থু থু’র শিকার হচ্ছে, সেখানে এই বামদল গুলো সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম দেশে বসে জঙ্গি-মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার নামে ইসলামের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখার সাহস পায় কোত্থেকে? শাহবাগের আন্দোলনের মাধ্যমে ইসলামী সংগঠন নিষিদ্ধ করতে না পেরে তাদের এখন মাথা খারাপ অবস্থা। এই আওয়ামী সরকারের শেষ সময়ে এসে তারা পাগলপারা হয়ে গেছে, আগামী দিনের বাংলাদেশ যে জামায়াত-হেফাযত তথা ইসলামের মাধ্যমে শান্তির সুবাতাস বইবে, এটা তারা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে। কথায় কথায় তারা জামায়াত-হেফাযতকে জঙ্গি বলে কটাক্ষ করে, আমার প্রশ্ন জামায়াত-হেফাযত কিভাবে জঙ্গিপনা করেছে? বিদেশি কোন জঙ্গি গোষ্টির সাথে তারা হাত মিলিয়ে বোমাবাজি করতে চায়, এটার স্বপক্ষে এই বামদলগুলোর কাছে কোনো প্রমান আছে। আমি মনে করি, আদর্শিক ভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে তারা ঘৃনা এবং প্রতিহিংসার চর্চা করছে, তারা যদি জামায়াত-হেফাযতকে মোকাবেলা করতে চায়, তাহলে আদর্শিকভাবে মোকাবিলা করুক আর যদি রাজপথে নেমে যুদ্ধ করতে চায় তাহলে তাও করতে পারে, আপত্তি নেই। কিন্তু মিডিয়ায় বসে চটকদার কথা বলে ঘৃনার বিষবাষ্প ছড়ানো বা একবার এই নেত্রী আরেকবার ঐ নেত্রীর কাছে গিয়ে কানপড়া দেয়া-এটা কোন্ ধরণের রাজনীতি?
তবে বিরোধী দলীয় নেত্রীর কাছে গিয়ে জামায়াত-হেফাযতকে ত্যাগ করতে বলে তারা বরং বিএনপির উপকারই করেছে। বিরোধী দলীয় নেত্রী এখন বুঝতে পারবে, জামায়াত-হেফাযতই এখন এই বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় শক্তি, যদি বড় শক্তি না হতো তাহলে সরকার, মিডিয়া, বাম, রাম, নাস্তিক, শাহবাগীরা এভাবে উঠেপড়ে লাগত না। যদি জোট করতে হয় তাহলে এই বড় শক্তির সাথেই জোট করতে হবে, আসলে আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। ঐ যে আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেছেন না,
''তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন যদিও কাফেরদের অন্তরে যতই জ্বালা যন্ত্রণা হোক না কেন।''
বিষয়: রাজনীতি
১৫৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন