১৮ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের কাছে প্রশ্ন
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ২৫ অক্টোবর, ২০১৩, ০৯:২৮:১৪ রাত
আমি সংগঠনের একজন শপথের কর্মী। তাই সবসময় সাংগঠনিক দৃষ্টিকোণ থেকেই আমাকে সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করতে হয়। কিন্তু সাংগঠনিক দৃষ্টিকোণের বাইরেও আমার নিজস্ব কিছু চিন্তা-ভাবনা আছে, আছে কিছু ভালো লাগা, খারাপ লাগা। আজকের দিন নিয়ে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ আছে। এই পর্যবেক্ষণ আমি সংগঠনের সাথে যেমন শেয়ার করব, তেমনি ফেসবুকেও শেয়ার করে একটু আত্মতুষ্টিতে ভুগতে চাচ্ছি। শুরুতেই আমি ১৮ দলীয় জোটের কাছে কিছু প্রশ্ন করতে চাই, প্রশ্নগুলো আমি তুলে ধরছিঃ
১) নীলফামারীতে ২ জন জামায়াত-শিবির কর্মী সহ সারা দেশে আজ বিএনপি-ছাত্রদলের কিছু ভাই নিহত হয়েছেন, আমি ১৮ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের কাছে জানতে চাচ্ছি, আজ কি আমাদের ভাইয়েরা নিহত বা আহত হওয়ার কথা ছিল? আজ যেখানে চূড়ান্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে এবং কোনরকম সহিংসতার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আমাদের ভাইয়েরা রাজপথে নেমেছিল, সেখানে কোন্ হিসাবে আজকে আমাদের ভাইয়েরা নিহত হল? আজকে যদি আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের কোনো ব্যাপার থাকত, তাহলে ‘আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে আমাদের কয়েকজন ভাই নিহত হয়েছেন’ এই বলে নিজের মনকে বুঝ দিতে পারতাম। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পালন করতে গিয়ে কিছু ভাইকে আওয়ামী লীগ এবং পুলিশ কোন্ সাহসে হত্যা করল? হত্যা যখন করেছে তখন সেখানে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিশোধ নেয়া হচ্ছে না কেন? ২০০৬ এর ২৮শে অক্টোবরও চূড়ান্ত ধৈর্যের পরিচয় দিতে আমাদের অনেক ভাই প্রাণ হারিয়েছিল, আজকে এমন দিনে যেখানে আমাদের প্রতিশোধ নেয়ার কথা, সেখানে অকাতরে আমাদের ভাইয়েরা প্রাণ হারাবে কেন? এই ভাইদের রক্তের কি কোনো মূল্য নেই?
২) বেগম খালেদা জিয়া ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন এবং দাবী না মানলে ২৭-২৯ তারিখ হরতালের ডাক দিয়েছেন, এমন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর জন্য আমি তাঁকে সাধুবাদ জানাই। ২০০৬ সালে ২৮শে অক্টোবর চারদলীয় সরকারের শেষ দিনে আওয়ামী লীগ সারা দেশ ম্যাসাকার করে ফেলেছিল, সেই তুলনায় আজ ০.০১%-ও কিছু হয়নি। কিন্তু ১৮দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের কাছে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কালকে যদি আওয়ামী লীগ দাবী না মানে তাহলে ২৭-২৯ তারিখ হরতাল পালন করবেন ভালো কথা। কিন্তু এরপর কি করবেন? কিছু ভেবে রেখেছেন তো? নাকি শুধু হরতালের মতো কর্মসূচী দিয়ে যাবেন? আর আলোচনার নামে কালক্ষেপণের মধ্যে নিজেদের কতদিন জড়িয়ে রাখবেন? আমার ব্যক্তিগত মতামতঃ হরতালের মতো কর্মসূচী এখন মানুষ খায় না।
৩) আজ চট্টগ্রামের সমাবেশে বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, ‘’৭ই নভেম্বর আওয়ামী লীগের কবর রচনা করা হবে, এখন তাদেরকে কোল্ড স্টোরেজে রাখা হয়েছে।’’ এটা তিনি কি বক্তব্যে রাখলেন, তা আমার বোধগম্য হয়নি? ৭ই নভেম্বর আওয়ামী লীগের কবর রচনা করা হবে, এটা কোন ধরণের কথা? ৭ই নভেম্বর কি আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিন নাকি? গতকাল ২৪শে অক্টোবর রাত ১১টা ৫৯মিনিটে তাদের শেষ দিন ছিল। কবর রচনা করলে তো আজ ২৫শে অক্টোবরই করা উচিৎ ছিল। আওয়ামী লীগ সংসদ অধিবেশনের মেয়াদ ২৩শে অক্টোবর থেকে টেনে নিয়ে ৭ই নভেম্বর করেছে, তাদের মনগড়া ডেইটকে মেনে নিয়ে তাদের বৈধতা দিয়ে দিচ্ছেন? এখন যদি তারা ৭ই নভেম্বর থেকে সংসদ অধিবেশনের মেয়াদ ৭ই ডিসেম্বর নিয়ে যায়, তাহলে তাদের সাথে তাল মিলিয়ে মিলিয়ে কি আপনারা আন্দোলনের কর্মসূচী দিবেন?
এবার কিছু নিজের মতামত দিচ্ছি।
১) একটি স্বৈরাচারী সরকারের পতনের জন্য চাই বৃহৎ পরিকল্পনা। ছোট ছোট পরিকল্পনা করে কখনো স্বৈরাচারকে নামানো যায় না। কোনোমতে আগামীকালকের জন্য কর্মসূচী ঘোষণা করলাম, কিন্তু পরশুর জন্য যদি আমার কোন পরিকল্পনা না থাকে তাহলে নিজেকে আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে গুটিয়ে নেয়া উচিৎ।
২) এই মতামতটা আমার না, ফেসবুকের একটা ক্লাস টেনের বাচ্চা ফাহিম-এর কমেন্ট এটি। তবে আমার চিন্তার সাথে মিলে গেছে। সমাবেশ করার জন্য এতো অনুমতি-টনুমতির জন্য বিএনপির দৌড়ঝাঁপ দেখে অন্য একজন বন্ধুকে জবাব দিতে গিয়ে প্রকারান্তরে বিএনপির নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে সে লিখেছেঃ ‘’বিপ্লব অনুমতি নিয়ে হয় না মাই ডিয়ার। অনুমতি নিয়ে সরকারকে নামাইতে চান ডিয়ার?’’
বিষয়: রাজনীতি
১০৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন