এই লেখার কি শিরোনাম দিব?

লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৪:০৮:৩৮ বিকাল

মাথার সফটওয়্যার কাজ করছে না। সবকিছু এলোমেলো লাগছে। ফজরের নামাযের আগে ওজু করছিলাম, এমন সময় ওয়াশ রুমের দরজায় খুব জোরে জোরে ধাক্কা।

‘এই শুনসস নাকি, আর-ইসরা থেকে মহানগরীর সবাই এরেস্ট!’

আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম, ‘কি?’

ছোট ভাই বলল, ‘সভাপতি ছাড়া বাকী সবাইকে রাত ৩টার দিকে পুলিশ নিয়ে গেছে।’

ওয়াশ রুমে ছিলাম বিধায় মুখ দিয়ে আমার ‘ইন্না লিল্লাহ’ বের হতে চাইলেও থামিয়ে ফেললাম। এরপর কয়েক সেকেন্ড ঠাই দাঁড়িয়ে রইলাম। ফজরের জামায়াত শুরু হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে তড়িগড়ি করে মসজিদে ছুটলাম। মসজিদে গিয়ে নামাযে দাঁড়িয়েছি ঠিক, কিন্তু সারা শরীর যেন আমার কাঁপছে। মনটা এদিক সেদিক ছুটে বেড়াতে লাগল। সেই প্রিয় মুখগুলো আমার চোখের সামনে একের পর এক ভেসে উঠছিল। নুরুল আমিন ভাই, সোহেল রানা ভাই, শোয়েব ভাই, আলতাফ ভাই, জাফর ভাই, হেলাল, আজগর, দারোয়ান চাচা সহ আরো কত কত মুখ!!!

নামায শেষ করেই জামায়াতের ওয়ার্ড সভাপতিকে খবরটা দিলাম, উনি তো এই খবর শুনেই আঁতকে উঠলেন। উনি ‘ইন্না লিল্লাহ’ পড়ে একের পর এক প্রশ্নে জর্জরিত করতে লাগলেন আমাকে। ‘ওরা বোকার মতো কার্যালয়ে এক সাথে থাকতে গেল কেন?’ ‘ওরা কি আগে থেকে ইনফরমেশন পায় নাই?’ ‘মশরুর কই?’ ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন করলেন আর আমি শুধু ‘জানি না’ বলেই ওনাকে বিদায় জানিয়ে আর-ইসরার দিকে ছুটলাম সাইফকে নিয়ে।

আমাদের মতো আরো অনেকেই এখানে চলে এসেছে এতোক্ষণে। ১ তলা, ২ তলা, ৩ তলা, ৪ তলার প্রত্যেকটি রুমে একের পর এক প্রবেশ করলাম। কোথাও কেউ নেই? একেকটি রুম দেখছিলাম আর মনে হচ্ছিল যেন ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত একটি ভবন পরিদর্শন করছি! রুমের লেপ-তোষক থেকে শুরু করে বই-পত্র সব এলোমেলো। হায়েনা পুলিশগুলো এভাবে কি খুঁজেছে আল্লাহ্‌ই জানেন! এখানে ছাত্ররা থাকত, লেখাপড়া করত। তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলো সব এলোমেলো। হায়েনা পুলিশগুলো প্রায় সবার ব্যবহৃত মোবাইল সেট আর ল্যাপটপ নিয়ে গেছে। তারা বই নিয়ে যায় নি, নিয়ে গেলে হয়তো হায়েনাগুলোর হেদায়েত হতো।

চট্টগ্রাম মহানগরী ছাত্রশিবির কার্যালয় আর-ইসরা গতকাল রাত পর্যন্ত ছিল মুখরিত, ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের পদচারণে প্রাণের গুঞ্জরন ছিল ভবনটিতে, কিন্তু হায়েনা পুলিশ এই কার্যালয়ের গুঞ্জরিত প্রাণগুলোকে আজ গ্রেফতার করে নিয়ে গেল। তারা কি মনে করেছে মহানগরীর এই নেতাদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলেই ইসলামী আন্দোলনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে? আলহামদুলিল্লাহ্‌, চট্টগ্রাম মহানগরীতে যে পরিমাণ কর্মী আছে তা হায়েনা লীগ সরকারের পতনের জন্য যথেষ্ট। ইসলামী আন্দোলন এমনই এক আন্দোলন এখানে কখনো নেতৃত্বের সঙ্কট হয় না, হবেও না কখনো ইনশাল্লাহ। প্রথম সারির নেতা গ্রেফতার হলে দ্বিতীয় সারি থেকে নেতা উঠে আসবে, দ্বিতীয় সারির নেতা গ্রেফতার হলে তৃতীয় সারি আছে। একে একে সবাই গ্রেফতার হতে হতে শেষ পর্যন্ত যদি একজন কর্মীও অবশিষ্ট থাকে তাহলে সেই কর্মীই ইসলামী আন্দোলনের কাজ আঞ্জাম দিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। স্বৈরাচারী সরকারকে সেই একজনকে নিয়ে পাগলপারা হয়ে যেতে হবে, তারপরেও ইসলামী আন্দোলনের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেয়ামত পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলন চলবেই। একজন মুসা আঃ-এর উত্থান ঠেকানোর জন্য ফেরাউন কত আদম সন্তানকে হত্যা করেছে! কিন্তু মুসা আঃ এর উত্থানকে কি ফেরাউন ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছিল? সেই জালিম ফেরাউনের ঘরেই মুসা আঃ-কে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তা’আলা কি লালিত পালিত করেননি?

তাহলে হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। আলহামদুলিল্লাহ্‌, লক্ষ লক্ষ ইসলামী আন্দোলনের কর্মী এই দেশে রয়েছে, ফেরাউনের প্রেতাত্মা আওয়ামী হায়েনা সরকারের পতনের খুব বেশী দেরী নেই। সময় এখন ধৈর্য ধরার। আমাদের নেতৃবৃন্দকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনার জন্য আমরা আমাদের জীবন বিলিয়ে দিতে রাজি আছি। সংগঠনের পক্ষ থেকে ডাক আসার সঙ্গে সঙ্গে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে বেরিয়ে যেতে হবে। হায়েনার পতন না হওয়া পর্যন্ত দুর্বার গণআন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। ছাত্রনেতাদের মুক্তি না দিলে চট্টগ্রামের ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ক্ষোভের বিস্ফোরণ এখানকার প্রশাসন সামলাতে পারবে না, এই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়বে মহানগরী থেকে মহানগরীতে, জেলা থেকে জেলায়, সারা বাংলাদেশে নেতৃবৃন্দের মুক্তি এবং এই সরকারের পতনের আন্দোলন হবে ভয়াবহ ভাবে।

জালিমের বুক কাঁপানো গগনবিদারী শ্লোগান হবেঃ

নারায়ে তাকবীর

আল্লাহু আকবার

আর নয় প্রতিরোধ

এবার হবে প্রতিশোধ

রক্তের বন্যায়

ভেসে যাবে অন্যায়।

বিষয়: রাজনীতি

১৮৭২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File