বিয়ে নিয়ে অস্থিরতা, সমাধান কি?

লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:৪১:২৯ রাত

‘বিয়ে করতে চাই’ ‘বিয়ে করে ঈমান পূর্ণ করতে চাই’

ইদানিং ফেসবুকে বিয়ে নিয়ে এই কথাগুলো বেশী শুনা যাচ্ছে। ত্রিশোর্ধ যুবকরা বিয়ে নিয়ে প্রতিদিন ইনিয়ে বিনিয়ে নানা ধরণের পোস্ট লিখছে, আবার ২০-২২ এর কম বয়সী ছোকরারাও বসে নেই। বিয়ে নিয়ে নানা ধরণের উদ্বিগ্নতা, অস্থিরতা প্রকাশ পাচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই। পড়াশোনা শেষ করেছে- এমন যুবকরাও যেমন ফেসবুকে তার বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করছে, ঠিক তেমনি পড়াশোনা শেষ করেনি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ১৮- টিন-এজেররাও বিয়ে নিয়ে পোস্ট লিখেই চলেছে। আমি বিয়ে নিয়ে রচিত পোস্টগুলো খুব মনোযোগের সাথে পড়ি এবং পড়ে আইডেন্টিফাই করার চেষ্টা করি এই যুবকগুলো যারা প্রতিদিনই বিয়ে নিয়ে নানা ধরণের পোস্ট লিখছে তারা আসলে কারা? তাদের পরিচয় কি? তাদের প্রতিদিনকার জীবনাচরণ কেমন? কিভাবে তাদের সময় কাটে? তো মোটামুটি আমি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়েছি।

প্রথমেই বলে রাখি, বিয়ে করার ইচ্ছে পোষণ করা খারাপ কিছু না। একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য বিয়েটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। প্রতিদিনের খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা, চাকরী-বাকরি, নামাযের মতোই এটি প্রয়োজনীয়। একটা বয়সে উপনীত হলে মানুষ বিয়ে করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। যার মধ্যে বিয়ে করার ইচ্ছে জাগ্রত হবে না, তাকে অসুস্থ বলতে হবে। কিন্তু বিয়ের ব্যাপারটা এভাবে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাইকারী ভাবে প্রকাশ পাওয়ার কারণটা কি? যাদের বিয়ে করার ইচ্ছে জাগ্রত হয়েছে, বয়স ১৮- হোক বা ১৮+ হোক, তাদের সবাই কি ফেসবুকে বা অন্য কোন মাধ্যমে এই ইচ্ছেটা সবার কাছে শেয়ার করছে? যারা কথায় কথায় প্রতিটি পোস্টে বিয়ে করার ইচ্ছে শেয়ার করছে তারা কেনই বা শেয়ার করছে? উত্তর হচ্ছে একটাই। আর তা হল, যারা শেয়ার করছে তাদের দিনের অধিকাংশ সময় খুব ব্যস্ততার মধ্যে কাটে না। হয়তো কিছু সময় ক্লাস করছে বা চাকরী-বাকরি করছে, নামায পড়ছে, কিছু সময় কুরআন পড়ছে কিন্ত বেশীরভাগ সময়ই তার কাটছে কোন ধরণের ব্যস্ততা ছাড়াই। সেই অবসর সময়টাতে তার মাথার মধ্যে বিয়ে জিনিসটা ঘুরপাক খেতে থাকে। যারা কোন ধরণের সংগঠন বা সামাজিক কাজের সাথে জড়িত নেই, তাদের মধ্যেই বিয়ে ব্যাপারটা সারাক্ষণ মাথায় ঘোরে। আমি বলছি না তারা কোন কাজই করে না বা তারা খুব একাকীত্বে কাটায়। কিন্তু যতটুকু ব্যস্ত থাকা উচিত, তার মধ্যে এক তৃতীয়াংশ ব্যস্তও তারা থাকে না। আমি আমার জীবনে এমন অনেককে দেখেছি, যাদের বয়স ৩০ পার হয়ে গিয়েছে, কিন্তু পারিবারিক, সামাজিক বা সাংগঠনিক ভাবে তারা এতো ব্যস্ত থাকে যে বিয়ে ব্যাপারটা তাদের মাথায় কাজই করে না। অথচ তাদের পরিবার পরিজন তাদেরকে বিয়ে করানোর জন্য অস্থির। আমার এক পরিচিত সাংগঠনিক ভাইকে তার মা-বাবা বিয়ে করানোর জন্য রাজীই করাতে পারছেন না। তো আমি গিয়ে ভাইটিকে বললাম ওনার মা-বাবার অস্থিরতার কথা। উনি সাথে সাথে হেসেই উড়িয়ে দিলেন, বললেন, 'এই জালেম সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না। এখন সাংগঠনিক দায়-দায়িত্ব বেশী, এখন বিয়ে করার সময় নাই।' আমি বললাম, ভাই আপনার মাথায় কি বিয়ের ব্যাপারটা আসেই না? উনি জবাব দিলেন, 'ভাই আমি এতো বেশী ব্যস্ত থাকি আর সাঈদী সাহেব, গোলাম আযম সাহেবদের মুখগুলো আমার কল্পনায় এতো বেশী আসে যে বিয়ের ব্যাপারটা আমার কখনই কাজ করে না। আল্লাহ্‌ তৌফীক দিলে ইনশাল্লাহ সামনে বিয়ে করব, কিন্তু এখন এটা নিয়ে ভাবছি না।' অথচ এই ভাইটির মাশাল্লাহ পড়াশোনা শেষ, বিয়ে করার জন্য যথেষ্ট সামর্থ্য তার আছে, কিন্তু ব্যস্ততার জন্য তিনি ফেসবুকের এই ইসলামিস্ট ভাইদের মতো সারাক্ষণ বিয়ে বিয়ে করেন না। লক্ষ্য করুন, আপনি যখন পরীক্ষা বা গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তখন কিন্তু বিয়ের ব্যাপারটা আপনার মাথায় আসে না, যখনই আপনার গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজে ব্যস্ততা থাকে না, তখন বিয়ের ব্যাপারটি মাথায় আসা স্বাভাবিক।

আমি কাউকে ছোট করার জন্য এই পোস্টটি লিখিনি। আমি শুধু সবার মাঝে এই ম্যাসেজটুকু দিতে চাই, যাদের বিয়ে করার ইচ্ছে জাগ্রত হয়েছে, কিন্তু পারিবারিকভাবে আপনার বিয়ের কথা কেউ ভাবছে না বা আপনাকে বিয়ের উপযুক্ত ভাবছে না, তাদেরকে আমি বলব, আপনারা বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকুন এবং আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চান আর আপনার বিয়ের ব্যাপারটা যাতে সবাই চিন্তা করে সেটা নিয়ে নানান উপায়ে চেষ্টা চালিয়ে যান, কিন্তু আপনি যদি শুধু বিয়ে নিয়েই ভাবতে থাকেন তাহলে আপনার জীবন থেকে মুল্যবান অনেক সময় নষ্ট হবে। কুরআন-সুন্নাহই রোযা রাখার কথা বলা আছে। মাঝে মাঝে রোযা রাখার চেষ্টা করুন, দাওয়াতি কাজে আত্মনিয়োগ করুন, দিনের অধিকাংশ সময় নানা ধরণের সাংগঠনিক-সামাজিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকুন। আশা করি ব্যস্ত থাকলেই এই চিন্তা থেকে অনেকখানি বেরিয়ে আসতে পারবেন।

বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাওলানা তারিক মুনাওয়ার বলেছেন, যারা বিয়ে করতে চাই তারা আল্লাহ্‌র কাছে সবসময় ‘ইয়া ফাত্তাহ’ বলে দোয়া করবে এবং তার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণকর একজন সঙ্গীনী আল্লাহ্‌র কাছে চাইবে। জাজাকাল্লাহ।

বিষয়: বিবিধ

২৫০৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File