সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ এবং অতঃপর.....
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ২৯ আগস্ট, ২০১৩, ০৪:২৯:১২ বিকাল
২০১৪ সাল, ১৭ই রমযান, ফজরের নামাযের ঠিক আগ মুহূর্ত। ঐতিহাসিক বদর দিবস আজ। সারা বাংলাদেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের বাছাইকৃত প্রায় ১০ লক্ষ নেতা কর্মীকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন মসজিদে ফজরের নামায পড়তে বলা হয়েছে। উদ্দেশ্য, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে হামলা এবং কাফির/নাস্তিক/বাতিলদেরকে হত্যা করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে ফেলা। প্রায় ১০ লক্ষেরও অধিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রস্তুত। রয়েছে গ্রেনেড, হ্যান্ডগান, লেস লেথাল, রাইফেলস, কারবাইন্স, শটগানস, পিস্তল, সাবমেশিন গানস, এন্টি ট্যাংক গানস, এন্টি ট্যাংক মাইনস ইত্যাদি।
বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে জামায়াতে নামায অনুষ্টিত হয় গেল। জামায়াতের আমীর বিভিন্ন মসজিদে উপস্থিত তাঁর প্রতিনিধিদেরকে সাংকেতিক নির্দেশ পাঠিয়ে দিয়েছেন, এবার একযোগে হামলা হবে। একটি দল গণভবনে হামলা চালাবে, একটি দল বঙ্গভবনে হামলা চালাবে, একটি দল চলে যাবে সচিবালয়ের দিকে, একটি দল বিজিবি সদর দপ্তরের দিকে, একটি দল পুলিশ হেডকোয়ার্টারের দিকে, আর ছোট ছোট অনেকগুলো দল বিভিন্ন নাস্তিক/কাফিরদেরকে হত্যা করতে যাবে, বিশাল একটি শক্তিশালী দলকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ক্যান্টনমেন্টকে নিয়ন্ত্রনে নেয়ার জন্য। আরেকটি দলকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার জন্য। ‘’নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার’’ বলে বিভিন্ন মসজিদ থেকে লক্ষ লক্ষ জামায়াত-শিবিরের নেতা কর্মীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। কেন্দ্র থেকে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে ২ ঘণ্টা, তাই যা করার খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে করে ফেলতে হবে।
মুহুর্মুহু শক্তিশালী গ্রেনেডের মধ্য দিয়ে কেঁপে উঠছে অর্ধশত বছরের পুরনো বঙ্গভবন, গণভবন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অনেককেই বুলেটের আঘাতে হত্যা করা হয়েছে, এরপর প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতিকে বন্দী করা হয়েছে। অপরদিকে ঢাকা শহরের যেখানে মন্ত্রী, এমপি, নাস্তিক, কাফির নেতাদের বাসা বাড়ি আছে, সেখানে হামলা করে তাদের কাউকে বন্দী করা হচ্ছে, কাউকে হত্যা করা হচ্ছে। সমস্ত মিডিয়া, ক্যান্টনমেন্ট এবং সচিবালয় এখন জামায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রণে। বিজিবি এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টারে এখনো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে, জামায়াত শিবিরের অনেক নেতা কর্মী এখানে শহীদ হয়েছে, কিন্তু তারপরেও কিছুক্ষণের মধ্যে এই দুইটি সশস্ত্র বাহিনীও জামায়াত-শিবিরের কাছে পরাজিত। বেঁধে দেয়া ২ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে গণভবন, বঙ্গভবন, সচিবালয় সহ এক এক করে প্রত্যেকটি সরকারী স্থাপনা এখন জামায়াত-শিবিরের নিয়ন্ত্রণে। আমীরে জামায়াতকে নিয়ে একটি দল বঙ্গভবনে চলে গেছে। শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি চলে গেছেন গণভবনে। বঙ্গভবন থেকে কিছুক্ষণের মধ্যেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন আমীরে জামায়াত। সব দিক দিয়ে খবর এসেছে, জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র বিপ্লব সফল। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে খবর ছড়িয়ে পড়েছে, ২ ঘণ্টার সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা এখন জামায়াত-শিবিরের হাতে। চারদিকে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা।
এখন আমীরে জামায়াতের ভাষণ হবে, সমস্ত ইলেকট্রনিক মিডিয়া এটি সরাসরি সম্প্রচার করছে। ভাষণ শুরু হল, ‘আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন, ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসুলিহিল কারীম, আউযুবিল্লাহিমিনাশ শায়তানির রাযিম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, প্রিয় দেশবাসী আসসালামু আলাইকুম, আমি আমীরে জামায়াত এই মর্মে ঘোষণা করছি যে এই মুহূর্ত থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাম হবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ। আমি হব এই দেশের রাষ্ট্রপতি বা আমীর। সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে এই দেশ পরিচালিত হবে..........................................।‘’
বাংলাদেশ এখন থেকে একটি ইসলামী রাষ্ট্র। সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া, দুর্নীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ১ ঘণ্টার সরকারী প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের সমস্ত সুদী ব্যাংক, বীমা, এমএলএম কোম্পানি, সিনেমা হল, মেয়েদের পর্দার ব্যবস্থা নাই এমন সব গার্মেন্টস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, ব্রিটিশ ল’ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে, তার মানে হাজার হাজার উকিল, ব্যরিস্টার, ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারক এখন পথের ফকীর, সিনেমা হল, টেলিভিশনে নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, সেই সাথে হাজার হাজার মডেল, অভিনেতা-অভিনেত্রী এখন বেকার, অমুসলিম নাগরিকদেরকে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়া হলেও মুসলমানদের মধ্যে যারা নামায পড়বে না ও যে সকল নারী হিজাব করবে না তাদের জন্য কঠিন শাস্তির বিধান আরোপ করা হয়েছে, সকল মাজার, শিরকী স্তম্ভ গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে, চোরদের হাত কাটা, ওজনে কম দিলে বা খাদ্যে ভেজাল দিলে মৃত্যুদণ্ড সহ ইসলামী সব বিধান দেশে জারি করা হয়েছে । আমেরিকা, ইসরায়েল, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, চীন, জাপান সহ পৃথিবীর সবগুলো কুফরি দেশকে ‘কাফের এবং ইসলামের শত্রু’ বলে গালি দিয়ে সকল ধরণের কূটনীতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়েছে। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই ইসলামী প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশে অনৈসলামী সকল ধরণের কর্মকাণ্ড এবং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন পূত পবিত্র একটি ইসলামী রাষ্ট্র।
কিন্তু হায়! এ কি!!! গণপ্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ থেকে ইসলামী প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশে রূপান্তরিত হওয়ার ২৪ ঘণ্টা হতে না হতেই নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া প্রত্যেকটি সুদী ব্যাংকের মালিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, সুদী ব্যাংকের লক্ষ লক্ষ গ্রাহক, বেপর্দা গার্মেন্টস কর্মী, দেশের সকল অভিনেতা-অভিনেত্রী, মডেল, সিনেমা-নাটক-বিজ্ঞাপন ব্যবসায়ী, হাজার হাজার চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, খাদ্যে ভেজালকারী, বেকার হয়ে যাওয়া সমস্ত বিচারক, উকিল, মুক্তার, পেশকার, দালাল, সমস্ত নাস্তিক, মুরতাদ, কাফির, সেক্যুলার মানুষরা ইসলামী প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে পড়েছে। তারা ঢাকার রাজপথে গগনবিদারী শ্লোগান দিচ্ছে, ‘অবৈধ সরকার মানি না, মানব না’ ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’ ‘আমাদের পেটে লাথি মারা মানি না, মানব না’ ‘আমাদের পেশা বন্ধ করা যাবে না যাবে না’ ‘শিল্প সংস্কৃতি বন্ধ করা যাবে না যাবে না’ ‘সিনেমা-নাটক বন্ধ করা যাবে না যাবে না’ ‘ব্যাংক-বীমা-আদালত খুলে দে, দিতে হবে’ ইত্যাদি শ্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত। লক্ষ লক্ষ লোক তাদের বউ-বাচ্চা সহ রাজপথে নেমে পড়েছে। বিদেশী সকল মিডিয়া ঢাকায় চলে এসেছে, তারা রাজপথের আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলছে, সাংবাদিকেরা জিজ্ঞেস করছে, মুসলিম হয়েও কেন তারা ইসলামী রাষ্ট্র এবং তার সরকারকে মানতে পারছে না? আন্দোলনকারীদের একটাই কথা, ইসলামী সরকার এসেই তাদের পেশা বন্ধ করে দিয়েছে, এটা কিছুতেই তারা মানতে পারবে না, এটা মানলে তাদের না খেয়ে মারা যেতে হবে। এদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি অংশ জনগণের সাথে একাত্মতা পোষণ করেছে, তারা ইসলামী সরকারকে অতি দ্রুত ক্ষমতা থেকে সরে যেতে আহ্বান জানিয়েছে, নইলে রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে অনেক কিছুই ঘটে চলেছে। ২ ঘণ্টার ব্যবধানে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ইসলামী সরকার গঠন, কিন্তু তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবার তাদেরকেই কতগুলো গান পাগল, নাচ পাগল, মাদকসেবী, অবৈধ-সুদী ব্যবসায়ীদের আন্দোলনের কারনে সরে যেতে হচ্ছে।
অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে গঠিত সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হল, সেই সাথে সেনাবাহিনীর হাতে জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গ্রেফতার হল, সব শেষে যেই লাউ সেই কদু। বাংলাদেশ আবার আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। আগের মতোই নাস্তিক, সেক্যুলার, সুদীদের দ্বারা পরিচালিত একটি সরকার গঠিত হল এবং অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখলের অপরাধে জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে ফাঁসীতে ঝোলানো হল।
Moral: জনগনের মাঝে ব্যাপকভাবে ইসলামের আদর্শ প্রচার না করে, তাদেরকে একজন আদর্শ মুসলিম হিসেবে গড়ে না তুলে, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, মাদকমুক্ত জীবনের মধ্যে তাদেরকে প্রবেশ না করিয়ে, অশ্লীল নাটক-সিনেমার পরিবর্তে ইসলামী নাটক-সিনেমা তৈরি করে অশ্লীল অভিনেতা-অভিনেত্রীগুলোকে ইসলামী অভিনেতা-অভিনেত্রীতে পরিণত না করলে, একটি ইসলাম রাষ্ট্র চালানোর জন্য ইসলামী জনগণ তৈরি না করলে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে যতই ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করা হোক না কেন সেই সরকারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পতন হবে।
বিষয়: Contest_mother
২০৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন