জাতির সূর্যসন্তানদেরকে বড্ড বেশী অবহেলা করা হচ্ছে
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ২২ মে, ২০১৩, ০২:৪৪:১৭ দুপুর
৯২ বছর বয়সী বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ অধ্যাপক গোলাম আযম কারাগারে। অত্যন্ত অমায়িক, জীবনে কারো সাথে উচু গলায় কথা বলেন নাই সেই মাওলানা নিজামী কারাগারে। বিপ্লবী দরাজ কণ্ঠের অধিকারী, কুরআনের বুলবুল নামে খ্যাত আল্লামা সাঈদী কারাগারে। মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনকে বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য যিনি সবচেয়ে অকুতোভয় সেই ইসলামী মিডিয়া মাস্টার মীর কাসেম আলী কারাগারে। নিজের জীবনের ৬৫ বছরেও যে ব্যক্তির হাত কারো জন্য উঠে নাই সেই আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ গণহত্যার মিথ্যে অভিযোগে কারাগারে। সারাটি জীবন সৎভাবে ইসলামের পথে থেকে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাওয়া সেই দুইটি মানুষ আবদুল কাদের মোল্লা এবং মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ফাঁসীর রায় মাথায় নিয়ে কারাগারে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমেদ্বীন মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী কারাগারে, মাওলানা আবদুস সুবহান কারাগারে, মাওলানা একেএম ইউসুফ কারাগারে। লক্ষ তরুণের প্রাণের নেতা যিনি নিজেও টগবগে তরুণ, যার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষেরও কোন অসততার অভিযোগ নাই, সেই দেলোয়ার হোসেন ৫৩দিন রিমান্ডের নামে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে কারাগারে। সময়ের অকুতোভয় বীর, কলম সৈনিক মাহমুদুর রহমান কারাগারে। এভাবে আর ক’জনের নাম বলব? বাংলাদেশের সমস্ত ভালো মানুষগুলোই তো আজ কারাগারে, বাংলাদেশের ১৬কোটি মানুষের মধ্যে এই মানুষগুলোই তো সবচেয়ে সেরা, একেকটি যেন জাতির সূর্যসন্তান। এতোগুলো ভালো মানুষ কারাগারে, আচ্ছা আমি বাইরে কেন? জাতির সবচেয়ে সেরা মানুষগুলো কারাগারে ধুঁকে ধুঁকে মরছে, বছরের পর বছর পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষীদের ছেড়ে তাদের কারাগারে কাটাতে হচ্ছে, রমযানের পর রমযান কাটাচ্ছেন, ঈদের পর ঈদ কাটাচ্ছেন, কি দুঃসহ তাদের জীবন!
অথচ তাদের ভক্ত দাবী করা আমার মতো মানুষগুলো কত আরাম-আয়েশে দিব্যি দিন কাটাচ্ছি! পরিষ্কার কথা হচ্ছে, আমি এখনো এই মানুষগুলোর ধারে-কাছেরও একজন ভালো মানুষ হতে পারিনি, যে মাপের ভালো মানুষ হলে আল্লাহ্র সাথে সুসম্পর্ক হয়েছে বলা যায়, একজন তাকওয়াবান মানুষ বলা যায় তা হতে পারিনি অথবা আল্লাহ আমার মতো মানুষকে কারাগারে না রেখে দুনিয়ার আরাম-আয়েশের জীবন দিয়ে আরো তাকওয়াবান হওয়ার জন্য, আরো মুত্তাকী হওয়ার জন্য আরো ক’টা দিন অবকাশ দিচ্ছেন, বাংলাদেশের সেরা মানুষগুলোর জন্য আমি যাতে কারাগারের বাইরে থেকে কিছু একটা করতে পারি তাই হয়তো আল্লাহ আমাকে এই অবস্থায় রেখেছেন। আল্লাহু আলাম, আল্লাহই ভালো জানেন, আমি আসলে জানি না আমি কেন কারাগারের বাইরে?
বাংলাদেশের দিকে তাকালে কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যায়, যাদেরকে মাথার মুকুট বানিয়ে এই জাতির গর্ব করা উচিত, তারা আজ অন্ধকার কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন আর অন্যদিকে যাদেরকে দেশছাড়া করা উচিত ছিল, কারাগারে ফেলে রাখা উচিত ছিল, ফাঁসীকাষ্টে ঝোলানো উচিত ছিল, সেই নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুন, আনোয়ার হোসেন, জাফর ইকবাল, রোকেয়া প্রাচী গংরা আজ জাতির ‘সুশীল’ হয়ে বসে আছে!!! একটি জাতির জন্য সবচেয়ে চরম দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে!!! বাংলাদেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি এই সুশীল নামের কুশীলরা করছে, তা অদূর ভবিষ্যতে কাটিয়ে ওঠা অনেক কঠিন হবে বাংলাদেশের জন্য। আজ ২মাস হতে চলল, সেই ধর্মবিদ্বেষী জঘন্য কীট আসিফ মহিউদ্দিনদের কিন্তু এখনো ফাঁসী দেয়া হয়নি, উপরন্তু তাদেরকে কারাগারের ভেতরে আরাম-আয়েশে রাখা হয়েছে, তাদের মধ্যে আবার দুইজনকে দয়া করে জামিন দেয়া হয়েছে, অথচ এই চরম দুষ্কৃতিকারী ধর্মবিদ্বেষীগুলোকে যদি ফাঁসীতে ঝোলানো হতো, তাহলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সত্যিকার অর্থে কলঙ্কমোচন হতো, আল্লাহ্র অফুরন্ত রহমতের ঝর্নাধারা এই দেশের মানুষকে সমৃদ্ধ করত। কিন্তু এই রাষ্ট্র সেই রহমতের ঝর্নাধারা থেকে ক্রমাগত বঞ্চিতই হচ্ছে। একজন সাঈদী বা একজন গোলাম আযমকে ফাঁসী দিয়ে এই রাষ্ট্রের একচুলও উন্নতি হবে না। অন্য কোন রাষ্ট্রের স্বার্থসিদ্ধি হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের নয়। এক অন্ধকার রাষ্ট্রের দিকে বাংলাদেশ ক্রমেই এগোতে থাকবে যদি আল্লামা সাঈদী-গোলাম আযমদের হত্যা করা হয়। তাদের আদর্শ বিশ্বনবী হযরত মূহাম্মদ সাঃ এর আদর্শ, তাদের মনগড়া কোন আদর্শ প্রতিষ্টা করার জন্য তারা সংগ্রাম করছেন না, আল্লাহ তাদের যে প্রখর জ্ঞানের অধিকারী করেছেন, চাইলে একজন গোলাম আযম বা নিজামী আজ জাতির সুশীল সেজে বসে থাকতে পারতেন, কিন্তু ইসলাম তথাকথিত কোন সুশীলতার বিপক্ষে, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্র জমিনে আলাহর বিধান কায়েম হয়ে না যায়। তাই গোলাম আযমরা একমাত্র আল্লাহ্র বিধান কায়েমের অপরাধেই আজ ফাঁসীর দ্বারপ্রান্তে, আল্লাহ্র কসম অন্য কোন কারনে নয়। এই মানুষগুলোকে ফাঁসীর মাধ্যমে হত্যা করা মানে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা, বংলাদেশে হানাহানি-মারামারি বৃদ্ধি পাবে, ভাইয়ে ভাইয়ে তুমুল যুদ্ধে-সংঘর্ষে এই দেশের মানুষ জড়িয়ে পড়বে, তা পৃথিবীর কোন শক্তি নিয়ন্ত্রন করতে পারবে না। তাই গোলাম আযমদের হত্যা করা মানে পুরো বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকেই হত্যা করা।
যতই নির্যাতন করা হোক, আজকে না হলে কালকে, কালকে না হলে পরশু এই দেশে আল্লাহ্র আইন বাস্তবায়ন হবেই, ইনশাল্লাহ। গোলাম আযমরা যে আইন কায়েমের জন্য সারাজীবন পরিশ্রম করেছেন তা একদিন না একদিন কায়েম হবেই, যতই তাদের হত্যা করা হোক, কিন্তু তার আগেই যে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বাংলাদেশ, তা এককথায় অকল্পনীয়। এই কথাগুলো এ কারনে বললাম, কারন যারা রাষ্ট্রটি চালাচ্ছেন, তারা এখন এক মহা ঘোরের মধ্যে আছেন। তাদেরকে যদি আমরা চরম সত্য কথাগুলো মনে করিয়ে দিয়ে তাদের ঘোর কাটাতে না পারি, তাহলে এই তারাই একদিন আমাদেরকে দোষারোপ করবেন, তাদের ঘোর কাটাতে আমরা কেন তাদেরকে সহযোগিতা করিনি এই প্রশ্ন তারা আমাদেরকে করবেন। তাদের ভুলের কারনে বাংলাদেশ অন্ধকারের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেলে তাদের অন্তরেও এক সময় না এক সময় হতাশা কাজ করতে পারে। তাই আগে ভাগেই তাদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছি এবং তাদেরকে আগে থেকে সতর্ক করিনি এই কথা কিন্তু তারা আর বলতে পারবে না।
সুতরাং রাষ্ট্র পরিচালকদের বলতে চাই, আল্লামা সাঈদীদের প্রয়োজন এই জাতির রয়েছে, প্রয়োজন রয়েছে তৌহিদী জনতার প্রাণের দাবী ১৩ দফা বাস্তবায়ন করার। বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে এই ১৩ দফা বাস্তবায়ন করলেই, ইসলাম ছাড়া অন্য কোন মতবাদ প্রতিষ্টায় বাংলাদেশ শান্তির দেশ হবে না, সৌহার্দের দেশ হবে না, ইসলাম ছাড়া অন্য যত মতবাদই এই দেশে প্রতিষ্টা হোক না কেন বাংলাদেশে দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগেই থাকবে। তাই জাতির শ্রেষ্ট সন্তানদের মুক্তি দিয়ে তৌহীদী জনতার প্রাণের দাবী ১৩ দফাগুলো মেনে নেয়া হোক। সুশীল নামের কুশীলগুলো কারাগারে পাঠিয়ে ধর্মবিদ্বেষীদের ফাঁসীতে ঝোলানো হোক।
বিষয়: রাজনীতি
১৮৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন