একটি বিয়ে এবং ফেসবুকের পাসওয়ার্ড উপাখ্যান (পর্ব ২)
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ১৬ মে, ২০১৩, ১১:৪৪:৩৩ রাত
সেই মেয়েটির কথা তো আপনাদেরকে আর বলাই হয়নি। ঐ যে‚ যে মেয়েটিকে দেখতে গিয়েছিলাম‚ পছন্দও হয়েছিল কিন্তু ঐ মেয়েটি হুট করে ফেসবুকের পাসওয়ার্ড চাওয়াতে যত গন্ডগোলের সৃষ্টি হয়েছিল(গতকালকের পোস্ট দ্রষ্টব্য)।
আসলে দেশের যা অবস্থা তাতে ব্যক্তিগত সুখ-দূঃখের ঘটনা সবার সাথে শেয়ার করার মতো মন মানসিকতা আমার নেই। যাই হোক আজ আপনাদেরকে ঐ মেয়েটির ঘটনা জানাতে খুব ইচ্ছে করছে। মেয়েটির সাথে কথা বলে আসার পর আরো অনেক চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে‚ সেখান থেকে একটি ঘটনা আপনাদের কাছে এখন শেয়ার করব।
গত পর্বের ঘটনায় আপনাদেরকে জানিয়েছিলাম‚ আমি আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ঐ মেয়েকে দেয়নি‚ আমার পক্ষে কেন দেয়া সম্ভব নয় তাও খুব স্পষ্ট করে মেয়েটিকে জানিয়ে দিয়েছিলাম। আমার কথা শোনার পর মেয়েটি রাগ করেছিল কিনা আমি জানি না‚ কারণ মেয়েটি চুপ করে বসেছিল। মেয়েটির সাথে কথা বলার পর আমার মনে হয়েছে যে মেয়েটি একটু চঞ্চল প্রকৃতির অর্থাৎ অনর্গল কথা বলতে পারার একটা ক্ষমতা মেয়েটির মধ্যে আছে। আচ্ছা‚ আমি যে এভাবে 'মেয়েটি মেয়েটি' করছি আপনাদের কি পড়তে একটু খারাপ লাগছে? ঠিক আছে‚ মেয়েটির নাম আপনাদেরকে জানিয়ে দিই। তবে মেয়েটির আসল নাম আপনাদেরকে জানাতে পারব না‚ কারণ এভাবে অনুমতি ছাড়া কারো নাম জানানো তো উচিত নয়ই বরং কাউকে নিয়ে পোস্ট রচনা করাও ধৃষ্টতা বটে। তাই আসল নাম না বলে তার ডাক নামটা জানাচ্ছি। তার ডাক নাম হচ্ছে টুনটুনি। সারা দিন টুনটুনি পাখির মতো কিচিরমিচির করে বলেই হয়তো তার এই নাম। যাই হোক‚ টুনটুনির সাথে সেদিন যে দেখা করে আসলাম এর মধ্যে আর একবারও দেখা হয়নি। দেখা হবে কোন দূঃখে? আমরা মুসলিমরা বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ে একে অপরকে দেখার জন্য বা একটু ভালো করে জানাশোনার জন্য দুই পরিবারের সম্মতিতে এরকম একবারই বসে একে অপরের সাথে কথাবার্তা বলি। হ্যাঁ‚ যদি প্রয়োজন হয় তাহলে একাধিকবার পারিবারিক সম্মতিতে কথা বলার জন্য বসলে দোষের কিছু নেই। কিন্তু বিয়ের আগেই ঘন ঘন কথা বলা‚ দেখা করা বা ঘুরতে যাওয়া ইসলামী সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক। তো টুনটুনির সাথে আমার ঐ একবারই দেখা হয়েছে‚ কথা হয়েছে। সেদিন আমি আমার ফেসবুক পাসওয়ার্ড না দেয়ার কারনে টুনটুনি সেই যে চুপ হয়ে গেল আর একটি শব্দও তার মুখ দিয়ে বের হয়নি। আমি যে তাকে কত কিছু বলার চেষ্টা করলাম। কিন্তু না ঐ মেয়ের মুখ দিয়ে একটি শব্দও আর বের করতে আমি সমর্থ হয়নি।
আল্লাহর রহমতে নতুন বা অপরিচিত কারো সাথে আমি দু-চার মিনিট কথা বললেই ফ্রি হয়ে যেতে পারি। তেমনি টুনটুনির সাথে কথা বলার সময় শুরুতে আমার একটু অস্বস্তি লাগলেও ওর অনর্গল বাকপটুতার কারনে আমি খুব সহজেই আমার অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম। ও যখন আমার কথা শুনে একেবারে চুপ হয়ে গিয়েছিল‚ তখন আমিই এটা সেটা বলে তার মুখ দিয়ে কথা বের করার চেষ্টা করছিলাম। অর্থাৎ আমার মুখ দিয়ে যা বের হচ্ছিল আমি তাই বলছিলাম। বলছিলাম‚ আমার বিশ্বভ্রমন করার অনেক বড় একটা ইচ্ছে আছে। বিয়ের পর স্ত্রীকে সাথে নিয়ে বিশ্বভ্রমনে বের হব ইনশাল্লাহ (আমার বিশ্বভ্রমণের ইচ্ছের কথা শুনে টুনটুনির কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া নেই‚ ও সমানে চুপ)।
আরো বললাম‚ বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে সর্বপ্রথম হজ্ব করতে মক্কাতুল মুকাররমায় যাবো‚ সেখান থেকে যাবো মদীনাতুল মনোওয়ারায়। টুনটুনি যে ধরনের মেয়ে আমার মনে হচ্ছিল ও চুপচাপ আমার কথাগুলো শুনে ভেতরে ভেতরে ঠিকই আমার কথাগুলোর জবাব দিচ্ছে। ও মনে মনে নিশ্চয়ই এতোক্ষনে বলছে‚ "শখ কত? বিশ্বভ্রমণে বের হবে!!! সামান্য একটা পাসওয়ার্ড যে দিতে পারে না সে আবার স্ত্রীকে সাথে নিয়ে করবে বিশ্বভ্রমণ!!!" মক্কা-মদীনার কথা শেষ হওয়ার পর তাকে বললাম‚ "জানেন‚ আমার না কাশ্মীর যাওয়ার অনেক ইচ্ছে। মক্কা-মদীনার পর কাশ্মীরে যাওয়ার স্বপ্ন আমার অনেকদিনের। পৃথিবীর এক টুকরো জান্নাত বলা হয় এই কাশ্মীরকে।" টুনটুনি হয়তো এতোক্ষনে মনে মনে বলছে‚ "আমার এতো ঘুরার শখ-টখ নাই। বেশী প্রাইভেসি মারনেওয়ালার সাথে ঘুরাঘুরির প্রশ্নই আসে না।" আমি তাকে বললাম‚ "আমার স্ত্রী যে হবে সে একদিক দিয়ে খুব লাকী হবে। আমার কাছে তাকে কখনো আবদার করতে হবে না যে আমাকে এখানে নিয়ে যাও সেখানে নিয়ে যাও। সে আবদার করার আগেই আমি তাকে পুরো দুনিয়া ঘুরিয়ে আনব‚ ইনশাল্লাহ।" টুনটুনি হয়তো মনে মনে বলছে‚ "বিয়ের আগে সব ব্যাটারাই এভাবে বলে‚ কিন্তু বিয়ের পর এইসব ঘুরাঘুরির ইচ্ছে-টিচ্ছে কোত্থেকে কোথায় চলে যায়।" আমি এবার তাকে বললাম‚ "আপনি নিশ্চয় ভাবছেন আমি এইসব কথার কথা বলছি। কিন্তু না‚ বিশ্বভ্রমণ এটা আমার অনেকদিনের লালিত স্বপ্ন। আল্লাহ যদি তৌফিক দেয় তাহলে আল্লাহর এতো বড় দুনিয়া আমি ঘুরে দেখবই ইনশাল্লাহ।" ও আমার এই কথা শুনে একটু নড়েচড়ে উঠলো যেন। এতোক্ষন মাথা নিচু করে চুপচাপ সব কথা শুনছিল‚ কিন্তু এই কথা শোনার পর কি মনে করে যেন আমার দিকে একপলক তাকালো। আমার একটা অভ্যাস আছে, আমার উপর কেউ যদি রাগ করে তখন আমি তার সাথে অনর্গল কথা বলি। প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক, প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় যা মুখে আসে তাই বলে রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করি। টুনটুনি রাগ করেছে ভেবে আমি তাকে অনেক কথাই বলছিলাম, কিন্তু হঠাৎ সে এভাবে মাথা তুলে আমার দিকে তাকানোর কারনে আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘’আপনি কি আমার কথায় রাগ করেছেন? আচ্ছা যান, পাসওয়ার্ড দিব। এখন খুশি?’’ আমার এই কথা শুনে টুনটুনির মুখ থেকে বুলেটের গতিতে কথা বের হয়ে এল, বলল, ‘’লাগবে না আমার পাসওয়ার্ড। জীবনেও লাগবে না।‘’ টুনটুনির এই কথা শুনে আমার আর বুঝতে বাকী রইলো না যে ও খুব ভয়াবহ রাগ করেছে। আমি ভয়ে একেবারে চুপসে গেলাম। কারন আমি আমার আম্মু এবং ছোট বোন ছাড়া অন্য কোন মেয়ের এমন রাগের মুখোমুখি কখনো হয়নি। যাই হোক আমি তার এমন কথায় হতচকিত হয়ে বললাম, ‘‘আচ্ছা, আমি স্যরি, খুব স্যরি। আমি মনে হয় আপনাকে বোঝাতে পারিনি কেন আপনাকে আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড দিতে পারছি না।‘’ এটা বলে আমি চুপ হয়ে গেলাম। আর মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না, এই অবস্থায় আর কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। টুনটুনিও চুপ হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলো।
এরপর সে হঠাৎ রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমি তো এবার একেবারে বিস্মিত হয়ে গেলাম, কি ব্যাপার ও এরকম করল কেন? না বলে হুট করে এভাবে বেরিয়ে পড়ল কেন? মানুষ রাগ করে কিন্তু এভাবে রাগ করে? আমি ওর বাসায় অতিথি হয়ে এসেছি, ওর আব্বা-আম্মার সম্মতিতে এখানে ওর সাথে কথা বলার জন্য বসেছি, কিন্তু ও এই ব্যবহারটা করল কেন? যাই হোক ৫ মিনিট, ১০ মিনিট এভাবে ১২-১৪ মিনিট অপেক্ষা করে বসে আছি ঐ রুমে। এই রুম থেকে বেরিয়ে যাব কি যাবো না তাই ভাবছিলাম, আর ভাবছিলাম, যাক বাবা আমার ফেসবুক পাসওয়ার্ড আর ওকে দিতে হচ্ছে না। অনেক বড় বাঁচা বাঁচলাম। হে আল্লাহ্, তুমি যাই করো ভালোর জন্যই করো। এমনটা ভেবে উঠে যাবো কি যাবো না করতে করতেই টুনটুনির বিদ্যুৎ গতিতে আগমন। হাতে এক টুকরো কাগজ এবং একটি কলম। বলল, ‘’এখানে আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ডটা লেখেন।‘’ ওর এই কথা শুনে আমার এখন চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। হায়দার হোসেনের ঐ গানটা খুব মনে পড়ছিল, ‘‘আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার, বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার। কতটুকু অশ্রু গড়ালে হৃদয় জলে সিক্ত, কত প্রদীপ শিখা জ্বালালেই জীবন আলোয় উদ্দীপ্ত। কত ব্যথা বুকে চাপালেই তাকে বলি আমি ধৈর্য।‘’
যাক, সাহস করে দাঁতে দাঁত চেপে কাগজ-কলম হাতে নিলাম, ও দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো, ও না দেখে মতো করে আমি ঐ কাগজটিতে আমার পাসওয়ার্ডটা লিখতে লাগলাম, ২৫ সেকেন্ডেই পাসওয়ার্ডটি লিখে ফেললাম। কাগজটি ওর হাতে দিলাম, তারপর রুম থেকে বেরোনোর জন্য দাঁড়িয়ে গেলাম। ও কাগজটি হাতে নিয়েই পাসওয়ার্ডটির দিকে তাকালো। তারপর বলল, ‘কই, এখানে পাসওয়ার্ড কই?’’ আমি বললাম, ‘’কেন, আপনি দেখতে পাচ্ছেন না আমি কি লিখেছি?’’ ও বলল, ‘’আমার সাথে মশকরা করেন?’’ এটা বলেই ও রুম থেকে বেরিয়ে গেল, আমিও বের হয়ে ওদের ড্রয়িং রুমে চলে গেলাম।
ভাবছেন ঐ কাগজটিতে কি লেখা ছিল?
ঐ কাগজটিতে লেখা ছিল, *********
(এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটা ঘটনা, কারো সাথে মিলে গেলে সেটা অনভিপ্রেত এবং কাকতালীয় ব্যাপার মাত্র :D)
বিষয়: সাহিত্য
২০৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন