একটি বিয়ে এবং ফেসবুকের পাসওয়ার্ড উপাখ্যান (পর্ব ১)
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ রাসেল ১৫ মে, ২০১৩, ১২:৫৪:৩৬ দুপুর
বিয়ের জন্য এক জায়গায় মেয়ে দেখতে গেছি। সব দিক দিয়ে মেয়েকে আমার পছন্দ, অর্থাৎ আমার ফ্যামিলিও ঐ মেয়েকে আমার বউ করে আনতে এক পায়ে খাড়া। ঐ মেয়ে এবং তার ফ্যামিলিও আমাকে পছন্দ করল। দুই পরিবারের সম্মতিতে ঐ মেয়ের সাথে একান্ত ভাবে কথা বলতে বসলাম। মেয়ে আমার প্রশংসা করল, আমিও মেয়ের প্রশংসা করলাম। ঐ মেয়ে বিয়ের পর কি কি করবে, তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি আমাকে একের পর এক শোনাতে লাগল, আমার কাছ থেকেও অনেক কথা জানতে চাইল। ঐ মেয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, আমার মতো একটি ছেলেকেই নাকি এতদিন ও খুঁজছিল, আজ আল্লাহ্র রহমতে পেয়ে গেছে।
যাই হোক, আমার সাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে ঐ মেয়ে আমাকে বলল, আমাকে তো আপনার পছন্দ হয়েছে, আপনি এবং আপনার পরিবার যদি সম্মত হয় তাহলে আমাদের মধ্যে বিয়ে হতে পারে, কিন্তু বিয়ের কথাবার্তা সামনে এগোনোর আগে আপনার কাছে আমার একটা রিকোয়েস্ট আছে। আমি একটু টাস্কি খেয়ে বললাম, ‘’কি রিকোয়েস্ট?’’ এরপর ঐ মেয়ে আমাকে যে রিকোয়েস্ট করল তাতে আমি হাসব না কাঁদব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
আমাকে ঐ মেয়ে রিকোয়েস্ট করল, ‘’আমি কি আপনার ফেসবুক পাসওয়ার্ডটা পেতে পারি?’’ আমি শুনেও না শোনার ভান করে বললাম, ‘’কিসের পাসওয়ার্ড?’’ ঐ মেয়ে বলল, ‘’ফেসবুকের পাসওয়ার্ড।‘’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘’আমার ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড দিয়ে আপনি কি করবেন?’’ বলল, ‘’আমি কি করি না করি এটা আমার ব্যাপার, আপনি দিবেন কিনা সেটা বলেন।‘’ আমি যারপরনাই বিস্মিত হয়ে বললাম, ‘’আপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন?’’ ও বলল, ‘’না, আপনাকে সন্দেহ করব কেন? কিন্তু বিয়ের আগে আপনার ব্যাপারে একটু যাচাই বাছাই করে নেয়া ভালো না?’’ আমি বললাম, ‘’তা তো অবশ্যই, কিন্তু ফেসবুক পাসওয়ার্ড দিয়ে কিসের যাচাই বাছাই করবেন? আপনি এমনিই অন্য যেকোন মাধ্যমে আমার ব্যাপারে খোঁজখবর নেন। এসব পাসওয়ার্ড-টাসওয়ার্ড নিয়ে টানাটানি কেন?’’ ও বলল, ‘’না, আমাকে পাসওয়ার্ড দিতেই হবে।‘’ আমি তাকে অত্যন্ত নিশ্চয়তার সাথে বললাম, ‘’আমি জীবনেও কোন মেয়ের সাথে ফেসবুকে প্রেম করি নাই। আর যদি প্রেম করিও, তাহলে আমি ইনবক্সের ম্যাসেজগুলো ডিলিট করেও তো আপনাকে আমার পাসওয়ার্ডটা দিতে পারি, তাই না?’’ ও একেবারে নাছোড় বান্দার মতো বলল, ‘’না, আপনি ডিলিট করেন আর যাই করেন, আমাকে আপনার পাসওয়ার্ড দিতেই হবে।‘’ আমি বললাম, ‘’দেখেন পাসওয়ার্ড এটাতো আমার একান্তই ব্যক্তিগত জিনিস, আমি যদি আপনাকে আমার পাসওয়ার্ড দিই তাহলে আমার প্রাইভেসি ক্ষুণ্ণ হবে।‘’ ঐ মেয়ে বলল, ‘’আপনি আপনার বউয়ের সাথেও প্রাইভেসি দেখাবেন?’’ আমি বললাম, ‘’আপনি তো এখনো আমার বউ হননি। যদি আমাদের মধ্যে বিয়ে হয়ে যায়, তখন শুধু পাসওয়ার্ড কেন? যা চাইবেন তাই দিব, আমার জানটাও দিয়ে দিব। কিন্তু এখন আমি আমার পাসওয়ার্ড, ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার, পাসপোর্ট নাম্বার সহ একান্ত ব্যক্তিগত কোন নাম্বারই দিতে পারব না। কারন আমি এখনো নিশ্চিত নয় আপনাকেই আমি বিয়ে করছি কিনা। যদি নিশ্চিত হতাম তাহলে পাসওয়ার্ড দিয়ে দিতাম।‘’ ও বলল, ‘’বুঝেছি, আপনি আমাকে আসলে পছন্দই করেননি!!!’’ আমি বললাম, ‘’পছন্দ করব না কেন? পছন্দ না করলে আপনার সাথে এখানে এতক্ষণ কথা বলতাম?’’ ও এবার খুব রাগতস্বরে এবং খুব জেদ নিয়েই বলল, ‘’আমি এতো কথা বুঝি না আপনি পাসওয়ার্ড দিবেন কি দিবেন না?’’ আমি বললাম, ‘’আমি আগে আমার এবং আপনার ফ্যামিলির সাথে আমাদের বিয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হই, তারপর পাসওয়ার্ড দিব। নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি আপনাকে আমার পাসওয়ার্ড দিতে পারব না। কারন আমাদের মধ্যে বিয়ে নাও হতে পারে, তবে আমি মহান আল্লাহ্কে সাক্ষী রেখে বলছি আমি ফেসবুকে কোনদিন এমন কোন কাজ করি নাই, যেটা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক এবং যেটা আমার বিবেক বিরোধী, এটা আপনি ১০০তে ১০০% নিশ্চিত থাকতে পারেন। আমি আপনাকে পাসওয়ার্ড শুধু একটা কারনেই দিচ্ছি না, যদি আমি আমার পাসওয়ার্ড আপনাকে দিই তাহলে আমার আর আপনার মাঝে কোন গ্যাপ থাকবে না, কোন প্রাইভেসি থাকবে না, যা বিয়ের আগে ছেলে এবং মেয়ের মাঝে থাকাটা জরুরী। এ ছাড়া অন্য কোন কারন নেই। এখন আমাকে বিশ্বাস-অবিশ্বাস করাটা একান্তই আপনার ব্যাপার। আর বিশ্বাস জিনিসটাই হচ্ছে এমন, যেটা না দেখে করতে হয় শুধু পারস্পরিক আস্থা এবং সমঝোতার ভিত্তিতে। আর যদি তাও না থাকে তাহলে একটি সম্পর্ক কখনো সামনের দিকে এগোয় না। কারন একেবারে ১৬আনা জানাশোনা দিয়ে বিশ্বাস কিনতে পাওয়া যায় না, কথা এবং আচার-আচরণের উপর আস্থা রাখতে হয়।‘’
ঐ মেয়ে চুপ, একদম চুপ। মুখে কোন কথা নাই, মনে হয় আমার কথায় সে খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আমারও আর তাকে সন্তুষ্ট করার কোন পলিসি জানা নাই। আমার কথাটা তাকে বললাম, এবার সে বসে বসে ভাবুক আমাকে সে বিশ্বাস করবে কি করবে না। তবে আল্লাহ্ তাকে হেফাযত করুন আজীবন, এই কামনাই করি।
(এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক একটা ঘটনা, কারো সাথে মিলে গেলে সেটা অনভিপ্রেত এবং কাকতালীয় ব্যাপার মাত্র :D)
বিষয়: সাহিত্য
২৩৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন