মদিনা শরীফের কিছু ছবি ও স্মৃতির পূনঃপ্রচার।
লিখেছেন লিখেছেন জোবাইর চৌধুরী ১৯ জুলাই, ২০১৩, ০৬:২৫:১৮ সন্ধ্যা
পবিত্র মসজিদে নববীর বাইরের একাংশ।
ছবিতে (উপরে) দন্ডয়মান পিলারগুলোকে ল্যামপোষ্ট মনে হলেও দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে এক একটা পিলার বিশালাকৃতির তাঁবুতে (নিচের ছবি) পরিণত হয়। এতে ধর্মপ্রান মুসলিমরা গরমের তীব্রতা থেকে খানিকটা হলেও রেহায় পায়।
সেদিন হঠাৎ করেই মক্কা শরীফ থেকে মিঠু ফোন করে বলল রাতে রেড়ী থাকতে, তারা সবাই মদিনা শরীফ যাবে, আর আমিও যেন তাদের সঙ্গে যোগ দেই। অফিস বন্ধ থাকাতে বিনা বাক্যে রাজী হয়ে রওনা দিলাম মদিনা শরীফের উদ্দ্যশে। জেদ্দা থেকে যখন আমাদের বাসটি যাত্রা শুরু করল, তখন বাজে রাত সাড়ে এগারোটা। ৪৫০ কি.মি. পথ পাড়ি দিতে হবে মদিনায় পর্যন্ত।
পবিত্রতার আবেগে মোড়ানো মন নিয়ে বাসে বসে দোয়া দরুদ ও সুরা পাঠ করছি। খেয়াল করলাম অনিচ্ছা সত্বেও মনের মধ্যে অসংখ্য চিন্তা ভাবনা ঘোরপাক খাচ্ছে।সেখানে ক্লাস টু কিংবা থ্রীর পাঠ্য পুস্তকের সেই "মদিনা ঘরে ঘরে আনন্দ" কাহিনী থেকে শুরু করে "মনে বড় আশা ছিল...যাব মদিনায়.., সালামও জানাব গিয়ে নবীরও রওজায়" গানটি পর্যন্ত এসে ভীড় জমাচ্ছে। এসব ভাবনায় হাবুডুবু খেতে খেতে ক্লান্ত শ্রান্ত মন নিয়ে কখনো ঝিমোচ্ছি তো কখনো ঘুমোচ্ছি, কখনো আবার সামনের সিটে বসা মিঠুর মেয়ে আফনান ও ছেলে রায়ানের ফিসফিসানিতে জেগে উঠছি।
রাতের অন্ধকারকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলছিল আমাদের গাড়ী, লক্ষ্য করলাম রাস্তায় কোন ল্যাম্প পোষ্ট নেই। অন্ধকার মধ্যে গাড়ীর ফ্ল্যাস লাইটের আলোই একমাত্র ভরসা। মাঝে মাঝে অবশ্য নতুন গড়ে উঠা বসতি স্হাপনাও দেখা যাচ্ছিল। তারপরও রাতের অন্ধকারে হাইওয়ের বিপরীত দিক থেকে ছুটে আসা গাড়ীর ফ্ল্যাস লাইটগুলোকে দুর থেকে মনে হচ্ছিল অনেকগুলো জোনাকির সারিবদ্ধ মিছিল, কাছে আসতেই এক একটা জোনাকি যেন এক একটা মোটর যানে রুপান্তরিত হচ্ছিল।
পথ্যিমধ্যে আধঘন্টার যাত্রা বিরতি নিয়েও যখন আমরা মদিনায় পৌছালাম তখন মসজিদে নববী থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছিল।আমাদের রিসিভ করতে আগে থেকে অপেক্ষা করছিল ক্বারীসাহেব নামের এক পাকিস্তানী ভদ্রলোক, যিনি মিঠুর পূর্ব পরিচিত। ক্বারীসাহেব আমাদেরকে অনেকটা তাডাহুড়ো করেই হোটেলে পৌছে দিয়েছিল ফজরের জামাত ধরার জন্যে।
এভাবেই শুরু হল আমাদের দিন, নবীজির রওজা মোবারক জেয়ারতও শেষ করলাম। তারপর চলল নিয়মিত নামাজ আদায় ও দোয়া।
মিঠু, মক্কার বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলেও মদিনাতেও দেখলাম তার অসংখ্য শুভাকাঙ্কী। না চাইলেও ঐ সকল শুভাকাঙ্কীরা রীতিমত হোটেলেই ভীড় জমাচ্ছে। রাজনীতি করলে সম্ভবত এমনই হয়, মিঠুকেও দেখলাম এসব কর্মীবেষ্টিত থাকতেই সে বেশ সাচ্ছ্যন্দবোধ করছেন। মানুষের উপকার আর আপ্যয়নের কাজগুলো আমার এই কাজিনটি খুব খুশী মনেই করেন। নিজে নিদিষ্ট একটি দলের নেতা হলেও পরোপকারের কাজটি করেন দল মত নির্বিশেষে। মিঠুর ধন সম্পদের কথা জানিনা, তবে ধনের চাইতে মন যে বহুগুন বড়, সে কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে কায়মনোবাক্যে সব সময় প্রার্থনা করেছি আল্লাহ যাতে আমার এই কাজিনটিকে মনের বিশালতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ধনেরও বিশালতা দেন।
পরের দিন আবার দলবেধে গেলাম একে একে উহুদের পাহাড়, আমির হামজা(রাঃ) কবর, ইসলামের প্রচীনতম মসজিদ কু"বা, কেবলাতাইন মসজিদ থেকে শুরু করে খন্দকের পাহাড় পর্যন্ত।
সবশেষে শুত্রুবার ফজরের নামাজ পড়ে গেলাম জান্নাতুল বাকী নামক কবরস্হানে। সচক্ষে দেখে আসলাম লাশ দাফনের পদ্ধতির ভিন্নতাকে, যা আমাদের সাউদ এশিয়ান মুসলিমদের চাইতে খানিকটা ভিন্ন।
শুত্রুবার জু'মার নামাজ পড়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দরবারে শোকরিয়া আদায় ও নবীজির রওজায় পূনরায় সালাম জানিয়ে রওনা দিলাম কর্মস্হল জেদ্দার উদ্দেশ্যে। কত বার এসেছি এই মদিনা শরীফে মনে নেই....তারপরও যখনই আসি, যতবারই আসি ততবারই অনুভুত হয় অন্যরকম এক প্রশান্তি, যা প্রকাশের ভাষা আমার জানা নেই। যদিও স্মৃতিগুলো প্রায় একই রকম, এ যেন স্মৃতির পূনঃপ্রচার।
এবার আরো কিছু ছবি।
উপরের এবং নিচের ছবি দুটো হচ্ছে নবী করিম(সাঃ) রওজা মোবারকের।
উল্লেখিত স্হানটি যেখানে মানুষ নামাজ আদায় করছেন সেটাতে বসেই নাকি আমাদের নবী করিম(সাঃ) ওনাঁর সাহেবাগণদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করতেন।
উপরোক্ত ছবিটি হচ্ছে মসজিদে কু'বা। ধারনা করা যায়, এটিই হচ্ছে মুসলিম ইতিহাসের প্রথম মসজিদ। এই মসজিদটি আমাদের মহানবী(সাঃ) মদিনা হিজরতের পর পরেই নির্মান করেছিলেন। মুসলিম ইতিহাসের প্রথম এই মসজিদের পেছনেই রয়েছেন হজরত আলী (রাঃ) র বাড়ী।
উপরোক্ত ছবিটি হচ্ছে মসজিদে কেবলাতাইন। জানা যায়, এই মসজিদেই সালাত(নামাজ) আদায় অবস্হায় নবী করিম(সাঃ) এর কাছে কেবলা পরিবর্তনের ওহী নাজিল হয়। সেদিন থেকেই মুসলিমরা পবিত্র কা'বার(মক্কা) দিকে হয়েই নামাজ আদায় করা শুরু করেন। পূর্বে মুসলিমরা ফিলিস্তিনের বাইতুল মুক্কাদ্দেসের দিকেই কেবলা করে নামাজ আদায় করতেন।
পেছেনে দৃশ্যমান পর্বতগুলোকে উহুদ পর্বত বলা হয়। মুলত এই স্হানেই নবী করিম (সাঃ) নেতৃত্বাধীন মুসলিম মদিনাবাসীর সাথে মক্কার আবু সুফিয়ানের দলের সাথে যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। ইতিহাসে একে আমরা উহুদের যুদ্ধ বলেই জানি। তার পাশেই আছে হজরত আমীর হামজা(রাঃ) কবর।
উপরের ছবিটা হচ্ছে জান্নাতুল বাকী'র।
উপরের ছবিতে চট্টগ্রামের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর সাথে মিঠু সাথে আছে তার দুই পুত্র রায়ান ফেরদৌস ও রিহাব ফেরদৌস।
আমাদের জেয়ারত দলের সর্ব কনিষ্ট সদস্যা... আফনান ফেরদৌস, যিনি নিরলসভাবে এবাদত ও দুষ্টুমি দুটোই করেছে।
ব্লগার।
বিষয়: বিবিধ
১১৮১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন