চাঁদের আলোয় বিপন্ন মানবতা
লিখেছেন লিখেছেন সত্য সমাগত ০৪ মার্চ, ২০১৩, ০৭:১৫:৪৬ সকাল
“Ordinary people seem not to realize that those who really apply themselves in the right way to philosophy are directly and of their own accord preparing themselves for dying and death.” Socretes. অর্থঃ “সাধারন মানুষ উপলব্ধি করতে চায়না যে, যারা সত্যিকারের দর্শনের অনুসারী হয়েছে তারা মৃত্যুর পরোয়ানা জারি করে ফেলছে”।
আমি কখনও নিরপেক্ষ মানুষ নই। আমি অবশ্যই বায়াসড পারসন। আমি ইসলামের জন্য বায়াসড, আল্লাহর জন্য বায়াসড, আল্লাহর রাসূলের জন্য বায়াসড। আমার কাজ সত্য প্রচার করা আর মিথ্যাকে আল্লাহর পৃথিবী থেকে নির্মূল করা। তাই আমি অবশ্যই বায়াসড। আমি আল্লাহকে ভালবাসি-তার জন্য জীবন দিতে চাই, আমি আল্লাহর রাসূলের জন্য ভালবাসা পোষণ করি-তার জন্য জীবন অকাতরে ধুলোয় লুটাতে কুণ্ঠিত বোধ করি না, আমি আল্লাহর রাসূলের প্রতি ভালবাসা পোষণকারীকে আমার প্রিয় ভাই বলে দাবি করি-তার পাশে কাধে কাধ মিলিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করি। তার কোন কিছু হলে চিৎকার করে তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করি, তাকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন দিতেও কোন ভয় পাই না।
বর্তমানে আমরা নতুন একটা যুদ্ধাপরাধের রায় দেখলাম। রায়ে আমাদের প্রিয় ইসলামের খাদেম আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাইদীকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়েছে। কি অপরাধ তার? তার বিরুদ্ধে আনীত ২০ টি অপরাধের মধ্যে মাত্র ২ টি মিথ্যা অপরাধে এই শাস্তি প্রদান করা হল।
প্রথম অপরাধে আসামীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি কোর্টে সাক্ষী দিতে এসে উল্টা আসামির পক্ষে সাক্ষী দিতে চাওয়ায় তাকে গুম করে দেয়া হল। আর একপেশে মিডিয়াগুলো প্রচার করছে পুলিশ এমন কাজ করেনি। অথচ জলজ্যান্ত মানুষটি সবার সামনে থেকে গায়েব। সাক্ষী ছাড়াই একটি রায় হয়ে গেল সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যু দণ্ড। কি হাস্যকর ব্যাপার!
দ্বিতীয় অপরাধ, যার জন্য আসামীকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়েছে তা হল ইব্রাহিম কুট্টিকে হত্যা করা। অথচ বাদী হয়ে ইব্রাহিম কুট্টির স্ত্রী যে মামলা করেছে তাতে সাইদী অথবা কথিত দেল্লু শিকদার কারও নাম নেই। তাহলে কোন অপরাধের শাস্তি এই নিরীহ মানুষ সাইদীকে পেতে হচ্ছে? আসুন একটু আলোচনা করা যাক।
দেলোয়ার হোসাইন সাইদী কি করতেন? তিনি আল্লাহর কালাম প্রচার করতেন, নবি-রাসূলের দেখানো পথে চলার জন্য আদেশ-নিষেধ করতেন। তিনি একজন সুবক্তা, তার কণ্ঠে যেন আল্লাহ্ মধু ঢেলে দিয়েছেন। তার কথা, তার আলোচনা মানুষ শোনে আর বিধর্মীরা মুসলমান হয়ে যায়। আর মুসলমান, যাদের ঈমান দুর্বল হচ্ছিলো তারা নতুন করে ইসলামকে বুঝে সরল পথে চলতে থাকে। তার ওয়াজ মাহফিলে মানুষের ঢল নামে। যেখানে মানুষকে টাকা দিয়েও কোন কাজ করানো যায়না সেখানে সাইদীর মাহফিলে মানুষের জায়গা দেয়া যায় না। মানুষ কিসের টানে চলে আসে? আল্লাহ-রাসূলের কথা সুললিত কণ্ঠে শোনার জন্য, আর সে অনুযায়ী নিজের আমল-আখলাক ভালো করার জন্য। একই কথা, একই আল্লাহ-রাসূলের বাণী শোনানোর জন্য অনেক আলেম ব্যাক্তি অনেক ভাবে চেষ্টা করে দেখেছে। কিন্তু লাভ হয়নি। বাংলাদেশে কুরআন-হাদিস, আল্লাহ-রাসূলের কথা আর সাইদী এক সূত্রে গাথা। এই সাইদী যতক্ষণ পর্যন্ত জামায়েতে ইসলামীতে যোগ দেয়নি ততোক্ষণ কোন প্রব্লেম ছিলনা। কিন্তু যখনই তিনি জামায়েতে ইসলামীতে যোগ দিলেন তখনই সমস্যার শুরু। আসলে অন্য কোন কারণে নয় শুধুমাত্র এই কারনেই তাকে শাস্তি দেয়া। তিনি বেঁচে থাকলে বর্তমান সরকার কখনই নিজের অপকীর্তি লুকোতে পারবেনা। আর অসংখ্য ভক্ত(দল-মত নির্বিশেষে) সাইদীর কথায় এই অপয়া সরকারের মুখে থুথু দিয়ে রাজনীতি ছেড়ে দিবে। সরকারের এখানেই যতো ভয়।
সাধারণ মানুষ রাজনীতি বোঝেনা-তারা শুধু নির্বাচনে ভোট দিয়েই ভুলে যায় কোথায় কি হচ্ছে। অথচ তারা সাইদীকে চেনে। তার সুললিত কণ্ঠের জন্য তিনি সবার হৃদয়ের মধ্যমণি। আর আল্লাহ্-রাসূলের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে। এই ভালো মানুষটি যখন বিপদে তখন কেউ ঘরে বসে থাকতে পারেনি-বেরিয়ে এসেছে রাস্তায়। কারণ তারা চাঁদে সাইদীকে দেখেছে। চাঁদে দেখা গেল কি না তা বলতে জাব না। আল্লাহ্ কি কোনও মিরাকল দেখাল, তাও বলব না। শুধু বলব- আসলে তারা সাইদীকে চাঁদে দেখেনি, তারা সাইদীর আইডিয়াকে দেখেছে। সাইদীর আইডিয়া কি? তার আইডিয়া ইসলাম। অত্যাচারীরা কোন বাক্তিকে হত্যা করতে পারে, তার অঙ্গহানি করতে পারে। কিন্তু তার আইডিয়া কখনও ধ্বংস হবার নয়। কারণ আইডিয়া বুলেটপ্রুফ। বাংলাদশে ইসলাম কখনও হারাবে না কেয়ামত পর্যন্ত। এটাই বাংলাদেশের আপামর জনতা উপলব্ধি করেছে এবং তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে অসংখ্য শাহাদাতের পেয়ালা পানের নজরানা দেয়ার মাধ্যমে। মানুষ নিজের জীবনের চেয়ে ইসলামকে ভালবাসে, ইসলামের কথা যে বলে তাকেও সমানভাবে ভালোবাসে। তারা ইসলামকে ভূলুণ্ঠিত হতে দিতে পারেনা-দিবেনা দুনিয়া উল্টে গেলেও।
আজকে সারা বিশ্বে মাত্র দুইটি দল আছে- ইসলাম না হয় কুফর। যারা ইসলাম পালন করতে চায় তারা অনেক দুর্বল আর যারা কুফর করে তাদের হাতে আছে সামরিক শক্তি। আজকে তাই ইসলামের দর্শনে কথা বলা আর নিজের জীবনের ইতি টানা একই কথা। বাংলাদেশে গত দুই দিনে প্রায় দু’শ বাক্তি শাহাদাৎ বরণ করল,কয়েক হাজার বাক্তি আহত হল-কিসের টানে? কোন দর্শন মানুষকে অকুতোভয় হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে উদবুদ্ধ করল? অবশ্যই ইসলাম। আর সরকার ও একপেশে মিডিয়াগুলো যখন সত্য প্রকাশ করতে অস্বীকার করল তখনই চাঁদের আয়নায় বিপন্ন মানবতা সাইদীর মুখচ্ছবি হয়ে সবার সামনে দেখা দিলো।
বিষয়: বিবিধ
১২৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন