দাদা আমি এখনও যে ইশকুলে পড়ি
লিখেছেন লিখেছেন সত্য সমাগত ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৮:৫৪:৪৯ রাত
একটা গল্প মনে পড়ছে। এক পণ্ডিত তার সাগরেদকে নিয়ে এক দেশে গেলো। এই দেশে ছোটো মাছ এক পয়সা, মুরগি এক পয়সা, ইলিশ মাছ এক পয়সা, রুই মাছ এক পয়সা। মানে যাই কেনা হোক না কেন সব এক পয়সা। পণ্ডিত খুব দ্রুতই বুঝে গেল যে দেশে কোনো ভালমন্দের জ্ঞান নেই সে দেশে থাকা যায় না। অথচ এই অবস্থা দেখে সাগরেদ তো মহাখুশী। সে আর দেশ ছেড়ে যাবে না। পণ্ডিত অনেক বুঝিয়েও যখন কোন কাজ হল না তখন রণে ভঙ্গ দিলো। কিন্তু উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করতে লাগলো, হাজার হোক অনেক দিনের স্নেহের সাগরেদকে কি করে বিপদে ফেলে চলে যায়? সাগরেদ তো মহা খুশিতে দিন কাটাচ্ছে আর গোগ্রাসে খাবার খেয়ে মোটাতাজা হচ্ছে। কয়েক মাস পরের কথা। রাজার মেয়ের গলার হার হারিয়ে গেছে। চোর খুঁজতে গিয়ে এক অভিনব কায়দা অনুসরণ করা হল। একটা ফাঁসির দরি তৈরি করে বলা হল যার গলার সাথে মিলে যাবে সেই রাজার মেয়ের গলার হার চুরি করেছে। আল্লাহর কি কাজ, চোর খুঁজতে গিয়ে সাগরেদের গলার সাথে মিলে গেল। আর যায় কই। ঝুলিয়ে দাও ব্যাটাকে। পরের ঘটনাটা সবার জানা, তাই আর এগোলাম না। এবার কাজের কথায় আসি।
আমাদের কিছু ভাইকে(বন্ধু না বলে ভাই বলার কারন-ভাই বন্ধুর চেয়েও অনেক উপরে) আমি বর্তমান সময় নিয়ে বুঝাচ্ছিলাম যে এখন সময়টা নিজের অরিজিন চেনার। নইলে বন্যার পানির মতই ভেসে যেতে হবে আমাদের সবাইকে। আমাদের অরিজিন আমরা মুসলিম। আর আল্লাহ মুসলিমদের পথ চলার পাথেয় বলে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেনঃ “যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথে চলতে বাধা দিয়েছে আল্লাহ তাদের সমস্ত কাজ-কর্ম ব্যর্থ করে দিয়েছেন৷ আর যারা ঈমান এনেছে নেক কাজ করেছে এবং মুহাম্মদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা মেনে নিয়েছে- বস্তুত তা তো তাদের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত অকাট্য সত্য কথা- আল্লাহ তাদের খারাপ কাজগুলো তাদের থেকে দূর করে দিয়েছেন এবং তাদের অবস্থা শুধরে দিয়েছেন৷ কারণ হলো, যারা কুফরী করছে তারা বাতিলের আনুগত্য করছে এবং ঈমান গ্রহণকারীগণ তাদের রবের পক্ষ থেকে আসা সত্যের অনুসরণ করেছে৷ আল্লাহ এভাবে মানুষের সঠিক মর্যাদা ও অবস্থান বলে দেন৷” (সূরা মুহাম্মাদঃ ১-৩) আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা অকাট্য সত্যের একটি হল যাচাই বাছাই না করে কোন সিদ্ধান্তে না আসা। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “হে ঈমান গ্রহণকারীগণ, যদি কোন ফাসেক তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসে তাহলে তা অনুসন্ধান করে দেখ৷ এমন যেন না হয় যে, না জেনে শুনেই তোমরা কোন গোষ্ঠীর ক্ষতি করে বসবে এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে৷ ভাল করে জেনে নাও, আল্লাহর রসূল তোমাদের মাঝে বর্তমান৷ তিনি যদি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তোমাদের কথা মেনে নেন তাহলে তোমরা নিজেরাই অনেক সমস্যার মধ্যে পড়ে যাবে৷ কিন্তু আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ঈমানের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের কাছে পছন্দনীয় করে দিয়েছেন৷ আর কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে তোমাদের কাছে ঘৃণিত করে দিয়েছেন৷ আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে এসব লোকই সৎপথের অনুগামী৷ আল্লাহ জ্ঞানী ও কুশলী” (সূরা হুজুরাতঃ ৬-৯). তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, যদি কোন ফাসেক ব্যাক্তি কোন খবর আনে তাহলে আমাদের কাজ হল আমরা ‘হুজুগে বাঙ্গালি’ খেতাবটা,ভুলে গিয়ে আগে সত্য খবরটা বের করার চেষ্টা করা। তা না হলে আমারা নিজেরাও মিথ্যাবাদী হয়ে যাবো।
বর্তমানে আমরা শাহবাগ মঞ্চ থেকে একটা আহ্বান শুনেছি যে, যুদ্ধপরাধীর ফাঁসি চাই, দিতে হবে। আলবৎ সত্য কথা। অবশ্যই দিতে হবে-কিন্তু দেখতে হবে সত্যিকারের যুদ্ধপরাধি কে? বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি বলেছেন, ম খা আলমগিরের ফাঁসি বাদ হবে কেন? সেও তো যুদ্ধপরাধী-তা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বেঁচে যাবে কেন? এই কথা বলা হয়ে গেল অপরাধ। এখন শোনা যাচ্ছে যে, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকির ‘বীর উত্তম’ খেতাব কেড়ে নেয়া হবে কারণ সে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে বলে। শাহবাগ মঞ্চ থেকেও বলা হল একই কথা। সংসদ থেকেও বলা হল একই কথা। কেরে নেয়া হোক ‘বীর উত্তম’ খেতাব। অথচ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কারও যদি কোন ডকুমেন্ট থেকে থাকে তবে তা আছে একমাত্র কাদের সিদ্দিকির। আমি একটা ছবি আপলোড করছি।
এই ছবিটি তার মুক্তিযুদ্ধের বড় প্রমাণ। কিন্তু আমারা শুধু স্বার্থপরের মত একচেটিয়াভাবে কাউকে মেরে ফেলো, কেটে ফেলো, গুম করো ইত্যাদি ইত্যাদি বলে বেড়াচ্ছি। বলে বেড়াচ্ছি কারণ আমার স্বার্থে আঘাত লাগছে। বলে বেড়ানো যাচ্ছে কারণ আমরা হুজুগে বাঙ্গালি, আমাদের সত্য খোঁজার ইচ্ছে নষ্ট হয়ে গেছে। এই যুক্তিগুলো দেয়ার পরও আমার ভাইয়ের নতুন প্রশ্ন-তুমি রাজাকারের ফাঁসি চাও কি না? অবাক লাগে! আমি বলি কি আর আমার সারিন্দা বাজায় কি?
ব্লগার রাজীব মারা গেল আর তাকে শহীদ ঘোষণা করে শিবিরের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হল। আল্লাহ মহান। আল্লাহ বলেনঃ “জবাবে আল্লাহও তাঁর গোপন কৌশল খাটালেন ৷ আর আল্লাহ শ্রেষ্ঠতম কুশলী৷”(সূরা আলে ইমরানঃ ৫৪) অর্থাৎ, আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর। কেঁচো খুড়তে সাপ বের হয়ে গেল। রাজিবের নাস্তিকতার মুখোশ খুলে গেল আর বোঝা গেল কারা শাহবাগ মঞ্চে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কেউ যদি দেখতে চায় আমি টোটাল ডকুমেন্ট দিতে পারব যা প্রমাণ করবে কত আগে থেকেই রাজীব, আসিফ মহিউদ্দিন, অমি পিয়াল এই কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে আসছে। প্রত্যেকটি আপলোডের ডেট ও টাইম ফিক্সড থাকে সার্ভারে। এটা আমরা সবাই জানি। এর বিপরীতে পুরো মিডিয়া এখন আমার দেশ পত্রিকার বিরুদ্ধে লাগলো কারণ একমাত্র এই একটি পত্রিকা সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সত্য প্রচার করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার আল্লাহর বানী। আল্লাহ বলেনঃ “বলোঃ হে আল্লাহ ! বিশ্ব –জাহানের মালিক! তুমি যাকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা দান করো এবং যার থেকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নাও৷ যাকে চাও মর্যাদা ও ইজ্জত দান করো এবং যাকে চাও লাঞ্জিত ও হেয় করো৷ কল্যাণ তোমরা হাতেই নিহিত ৷ নিসন্দেহে তুমি সবকিছুর ওপর শক্তিশালী।”(সূরা আলে ইমরান-২৬) আল্লাহ যাকে সম্মানিত করবেন তাকে কেউ লাঞ্ছিত করে এটা কার সাধ্য?
হিরক রাজার দেশের গল্প দিয়ে শুরু করেছিলাম যে দেশে যাচাই বাছাই করার দরকার হয় না। যা খুশি করা যায় কারণ সে দেশের জনগন যেমন রাজাও তেমনি হবে তাই নয় কি? আমাদের অবস্থাও ঠিক তদ্রুপ হল বলে। যদি আমরা আমাদের বিবেক বিবর্জিত হয়ে কথা বলি আর পবিত্র কুরানকে ফলো না করি তাহলে আমাদের অবস্থা এমন হওয়া অসম্ভব নয়। এই দেশে আল্লাহর রাসুলকে গালি দিয়ে বহাল তবিয়তে অপরাধী ঘুরে বেড়ায় অথচ আল্লাহর রাসুলের হাদিস বলেঃ “রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ কোন ব্যাক্তি মুমিন হতে পারবেনা যতক্ষণ তার কাছে তার মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি এবং সকল মানুষ অপেক্ষা আল্লাহর রাসুলের প্রতি বেশি ভালবাসা না থাকবে”।(বুখারি-ঈমান পরব-১৩ নং হাদিস)
যখন সুস্পষ্ট প্রমাণ আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া যায় অথচ সব বুঝেও বলার চেষ্টা করা হয় বাংলাদেশের মুসলমানদের সেন্টিমেন্ট-সেটাতেও জামাত-শিবিরের হাত থাকতে পারে-তখন অনেক কষ্টে বলতে হয়ঃ
“চশমাটা খূলে গেলে মুশকিলে পড়ি
দাদা আমি এখনও যে ইশকুলে পড়ি
কব্জির জোড়ে আমি পারবোনা।”
সেক্ষেত্রে বলিঃ ‘ক’লু সালামা’ আমরা মূর্খদের এড়িয়ে চলি।
বিষয়: বিবিধ
১৩২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন