ইতিহাসের ছাঁচে আমাদের বর্তমান-একটি সতর্কবার্তা!
লিখেছেন লিখেছেন সত্য সমাগত ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১০:৪৮:৪৩ রাত
আমার এই লেখাটা তাদের জন্য নয় যারা আল্লাহ্কে মানেনা। আমার লেখা তাদের জন্যও নয় যারা মুখে আল্লাহর নাম বলে আর কাজ হয় অন্য। আমার এই লেখা তাদের জন্যও কোন কাজে আসবেনা যাদের মুখ দিয়ে হারাম খাবার ঢুকেছে। আমার লেখা তাদের জন্য যারা আল্লাহ্কে মানতে চায় অথবা মানার জন্য চেষ্টা করছে। কারণ, চতুর্থ দলের সংখ্যা নেহায়েত কম নয় যাদের মনের অবস্থাটা পবিত্র কুরআনের আলোকে এগোচ্ছে কিনা তা পরিস্কার হওয়া জরুরী। মুসলিম উম্মাহকে আজকে দুইভাবে ম্যানিপুলেট করা যাচ্ছেঃ ১) লিবারাল মুসলিমদের মাধ্যমে যারা কাফেররা কি মনে করবে সেদিকে দেখতে গিয়ে আল্লাহর কালামের সাথে কম্প্রোমাইজ করছে, আর ২) কট্টরপন্থীদের মাধ্যমে ইসলামের গায়ে কলঙ্ক লেপনের চেষ্টায় লিপ্ত আছে এক ধরনের গোষ্ঠী। আমাদের পৃথিবীর শেষ সময় উপস্থিত যাকে বলে ‘আখীরু জামান’ (এখন পর্যন্ত অনেক নিদর্শন প্রকাশ হয়ে গেছে), যে সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সতর্ক করে বলেছেন, দাজ্জালের সময়ে আমাদের “এ্যপিয়ারেন্স এবং রিয়ালিটি” হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের। কাররই সূক্ষভাবে দেখার যোগ্যতা থাকবেনা এবং বাস্তবতার আড়ালে লুকানো কিছু খুঁজে পাবেনা। যারা আল্লাহর কথা সত্য জানে, তাদেরকে আল্লাহর রাসূল নিজেকে বাঁচানোর জন্য সতর্ক করেছেন।
ইতিহাস নিয়ে যদি কেউ গবেষণা করতে চায় তাদের জন্য সবথেকে ভাল সোর্স পবিত্র কুরআন ছাড়া আর কি হতে পারে? সেই পবিত্র কুরআন পড়লে যেই জাতির বর্ণনা সব থেকে বেশি পাওয়া যায় তারা হল ইহুদী জাতি। এই জাতিটার কথা কুরআন মাজিদে যতবার বর্ণনা করা হয়েছে অন্য কোন জাতি এমন সৌভাগ্য(আসলে দুর্ভাগ্য) লাভ করেনি। কেন তাদের নিয়ে এতবার বলা হল তা ব্যাখ্যার দাবি রাখে। এরা আমাদের মতই নামাজ পড়ে এবং আমাদের মতই আশুরার দিনে রোজা রাখে। অধিকাংশ মুসলিম স্কলার এবং অনেক ঐতিহাসিক তাদের ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন যে, এই জাতিটার ইতিহাস এমন যা আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত। এই জাতিটা আসলে অভিশপ্ত জাতি। তাদের নানবিধ কর্মকাণ্ড তাদেরকে আল্লাহর গজবে ফেলেছে। এবং শেষ জামানায় মুসলিম জাতি এদের সব কয়টি অভিশাপের কারণ ভালো ভাবেই রপ্ত করবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তারপর আমি নিজের কিতাবে বনী ইসরাঈলকে এ মর্মে সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে, তোমরা দুবার পৃথিবীতে বিরাট বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং ভীষণ বিদ্রোহাত্মক আচরণ করবে৷”(সূরা বনী ইসরায়েলঃ ০৪) তাদের বিদ্রোহের একটি নমুনা হল, এরা আল্লাহর নির্দেশের বাইরে গিয়ে সূদ ভিত্তিক সমাজ ব্যাবস্থা কায়েম করেছে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী। আল্লাহর রাসূল বলেছেনঃ “শেষ জামানায় শিরক খুঁজে পাওয়া ঠিক তেমনি কঠিন হবে যেমন নিকষ কালো অন্ধকার রাতে কালো পাথরের উপর থাকা একটি কালো পিঁপড়া খোঁজা কঠিন”। আমরা যারা এই জাতির মত হয়ে গেছি তাদের সতর্ক হওয়া জরুরী কারণ, আমাদের সাথেও একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে যদি আমরা এখনই সতর্ক না হই। আমি একটি কম্প্যারাটিভ এ্যানালাইসিস করার মাধ্যমে তা তুলে ধরার চেষ্টা করবঃ
১. ঠাট্টা-বিদ্রুপ করাঃ
এই জাতির লোকেরা তাদের কাছে কোন সতর্ককারী(নবী-রাসূল) এলে প্রথমেই তাদেরকে হাসি তামাশার বস্তুতে পরিণত করত। এর একটা বিশেষ সুবিধা ছিল। কাউকে সহজেই দুর্বল করে ফেলা, যাতে সে দ্বিতীয় বার সতর্ক করতে না আসে। এভাবে দুর্বল করার বিশেষ উদ্দেশ্যও ছিল তাদের জন্য। সতর্ককারীরা সমাজের উপর চেপে বসা এলিট শ্রেণীর বাড়া ভাতে ছাই ফেলে দিবে, ফলে তাদের দীর্ঘ দিনের শয়তানী বন্ধ হয়ে যাবে। তারা ধর্মের ছদ্মাবরণে ধর্মকে ঢাল বানিয়ে বলতো, ‘আমাদের বাপ-দাদাদের রসম রেওয়াজ বদলে ফেলার জন্য ধর্মদ্রোহীতা নিয়ে এসেছে’। উদাহরণ স্বরূপ, আসিরীয়দের হাতে যখন সামারিয়াদের ইসরাঈলী রাষ্ট্রের পতন হয় এবং জেরুসালেমের ইহুদি রাষ্ট্র মহাধ্বংসের সম্মুখীন হয় তখন 'ইয়ারমিয়াহ' নবী নিজের জাতির পতনে আর্তনাদ করে ওঠেন । তিনি পথে-ঘাটে , অলিতে-গলিতে নিজের জাতিকে সম্বোধন করে বলতে থাকেন , "সতর্ক হও, নিজেদেরকে সংশোধন করো , অন্যথায় তোমাদের পরিণাম সামারিয়া জাতির চাইতেও ভয়াবহ হবে ।" কিন্তু জাতির পক্ষ থেকে এই সাবধান বাণীর বিরূপ জওয়াব আসে । চারদিক থেকে তাঁর ওপর প্রবল বৃষ্টিধারার মতো অভিশাপ ও গালি-গালাজ বর্ষিত হতে থাকে । ( যিরমিয়, ১৫ অধ্যায়, ১০ শ্লোক; ১৮ অধ্যায়, ২০-২৩ শ্লোক; ২০ অধ্যায় , ১-১৮ শ্লোক; ৩৬-৪০ অধ্যায় )।
• বর্তমানে আমাদের মাঝে যারা ইসলাম নিয়ে কথা বলতে চায় তাদেরকে ঠাট্টা করার ধরণ আরও শ্লেষাত্মক। তাদেরকে গালি দেয়া হয় জঙ্গি বলে, মৌলবাদী বলে। অথচ একজন মুসলমান অবশ্যই মৌলবাদী হতে বাধ্য। কারণ ইসলাম একটি মৌলিক ধর্ম।
• একবার আমাদের অতি পরিচিত দৈনিক প্রথম আলোতে এরশাদের চরিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে কুরআন শরিফের একটি আয়াত নিয়ে হাস্যরস তৈরি করা হয়। সেখানে বলা ছিল, ‘যদি সাগরের সমস্ত পানি কালি আর সমস্ত গাছপালা কলম হয় তবুও হু মু এরশাদের চরিত্র বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা’।(নায়ুযুবিল্লাহ)
• রিসেন্টলি আমাদের দেশে শুরু হয়েছে অন্য আরেকটা টার্মের ব্যাবহার-‘তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’। সোজা কথায় তারা ইসলামের কোন দোষ খুঁজে পাবেনা তাই বাঁকা পথে ইসলামকে অজনপ্রিয় করার কত চেষ্টা তাদের!
২. ঔদ্ধত্যের সাথে সীমা লঙ্ঘন করাঃ
ইহুদী জাতিটা এই বাজে স্বভাবটা খুব ভালো করেই রপ্ত করেছিল। বাইবেলে বলা আছেঃ “Thus says the LORD, "For three transgressions of Israel and for four I will not revoke its {punishment,} Because they sell the righteous for money And the needy for a pair of sandals.” (Amos 2:6; New American Standard Version ,1995) তাদের সীমা লঙ্ঘনের একটি নমুনা দেয়া যায় পবিত্র কুরআন থেকেঃ “স্মরণ করো, যখন তোমরা মূসাকে বলেছিলে, “আমরা কখনো তোমার কথায় বিশ্বাস করবো না , যতক্ষণ না আমরা স্বচক্ষে আল্লাহকে তোমার সাথে প্রকাশ্যে (কথা বলতে )দেখবো৷ সে সময় তোমাদের চোখের সামনে তোমাদের ওপর একটি ভয়াবহ বজ্রপাত হলো, তোমরা নিস্প্রাণ হয়ে পড়ে গেলে ৷” (সূরা বাকারাঃ ৫৫) এরা ভালো করেই জানতো যে মূসা (আঃ) একজন নবী ও রাসূল। কারণ, তাদের জন্য দাসত্ব, লাঞ্ছনা আর চরম অপমানের জীবন থেকে বের করে পৃথিবীতে সম্মান এনে দিয়েছিল যেই ব্যাক্তি, ফেরাউনের চরম অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা করে মুক্ত জীবন এনে দিয়েছিল যেই ব্যাক্তি, সে আর কেউ নয়-মূসা (আঃ)। এদের ঔদ্ধত্য এত চরম যে তারা সরাসরি আল্লাহ্কে দেখতে চাচ্ছে! আল্লাহ তা’আলা আরও বলেন, “আর সমুদ্রের তীরে যে জনপদটি অবস্থিত ছিল তার অবস্থা সম্পর্কেও তাদেরকে একটু জিজ্ঞেস করো৷ তাদের সেই ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দাও যে, সেখানকার লোকেরা শনিবারে আল্লাহর হুকুম অমান্য করতো এবং শনিবারেই মাছেরা পানিতে ভেসে ভেসে তাদের সামনে আসতো৷ অথচ শনিবার ছাড়া অন্য দিন আসতো না৷ তাদের নাফরমানীর কারণে তাদেরকে আমি ক্রমাগত পরীক্ষার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছিলাম বলেই এমনটি হতো৷”(সূরা আ’রাফঃ ১৬৩) বনী ইসরাঈলীদের জন্যে এ দিনটিকে পবিত্র দিন গণ্য করা হয়েছিল। মহান আল্লাহ এ দিনটিকে নিজের ও বনী ইসরাঈলীদের সন্তান-সন্তুতিদের মধ্যে সম্পাদিত পুরুষানুক্রমিক স্থায়ী অংগীকার গণ্য করে তাকীদ করেছিলেন যে এ দিন কোন পার্থিব কাজ করা যাবে না, ঘরে আগুণ পর্যন্ত জ্বালানো যাবে না, গৃহপালিত পশু এমন কি চাকর-বাকর -দাসদাসিদের থেকেও কোন সেবা করা চলবে না এবং যে ব্যক্তি এ নিয়ম লংঘন করবে তাকে হত্যা করা হবে। কিন্তু উত্তরকালে বনী ইসরাঈল প্রকাশ্যে এ আইনের বিরোধীতা করতে থাকে।
• আমাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। ইহুদীদের মত আমাদের ছুটির দিন হল শুক্রবার। এই দিনে আমাদেরকে সকল কাজকর্ম বন্ধ করে জুমার নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। অথচ আমাদের কাজ এত বেশী যে আমরা মসজিদে আসার সময় করে উঠতে পারিনা। আমাদের একদল ব্যাবসায়ী তো আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে শুক্রবারের ছুটি বাতিল করে রবিবারে করার জন্য আদাজল খেয়ে নামে। তাদের দাবি যে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রবিবার ছুটি, তাই তাদের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদেরকেও রবিবারে ছুটির ব্যাবস্থা করতে হবে। অথচ রবিবার আসলে খ্রীষ্টানদের ছুটির দিন! না জেনে অথবা জেনেশুনে তারা কি করে অন্ধ অনুকরন করে?
• একটা খবরে পড়ছিলাম আমাদের পাটমন্ত্রীর কাছে কুরআন পড়ায় চরম আপত্তি আছে। তার দাবি হল এটা সেকুলার দেশ এখানে সব ধর্মের লোক বাস করে। অন্যদের ধর্মও দেখতে হবে তাই কুরআন পড়া যাবে না।
• আওয়ামীলীগের এক নেতা এসে টক শোতে মুফতি সাখাওয়াত সাহেবের এক হাত দেখে নেয়ার জন্য এলেন(৫ই মে, ২০১৩ এর পর)। মুফতি সাখাওয়াত সাহেব বললেন যে, কেউ যদি ইসলাম শিখতে চায় তাকে যেতে হবে কোন আলেমের কাছে। সেই আলেমদের কি করে এই সরকার হত্যা করে? তার কথার প্রতিবাদে আমাদের ঐ নেতা ঔদ্ধত্য দেখাতে শুরু করে। তার কথার ধরন এই রকমঃ “আমাকে কি আপনার মত লোকের কাছে আমার ঈমানের প্রমাণ দিতে হবে? আপনি কে? আমার ঈমান রক্ষার ইজারা কি আপনাকে দেয়া হয়েছে?” উত্তরে আলেম সাহেব বললেন, “আমার কাছে আসতে হবে না কিন্তু যার কাছেই জান না কেন সেও কোন না কোন আলেম”। সে তখন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আগের মতই নিজের কথায় অনড় থাকল। পবিত্র কুরআন এদের সম্পর্কে যা বলেছে তা হলঃ “আমি তাদের গলায় বেড়ি পরিয়ে দিয়েছে, যাতে তাদের চিবুক পর্যন্ত জড়িয়ে গেছে, তাই তারা মাথা উঠিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমি তাদের সামনে একটি দেয়াল এবং পেছনে একটি দেয়াল দাঁড় করিয়ে দিয়েছি৷ আমি তাদেরকে ঢেকে দিয়েছি, এখন তারা কিছুই দেখতে পায় না৷” (সূরা ইয়াসিনঃ ৮-৯)
৩. টাল বাহানা ও ছলচাতুরীর আশ্রয় নেয়াঃ
পবিত্র কুরআন বলে, “এরপর স্মরণ করো সেই ঘটনার কথা যখন মূসা তার জাতিকে বললো, আল্লাহ তোমাদের একটি গাভী যবেহ করা হুকুম দিচ্ছেন ৷ তারা বললো, তুমি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছো ? মূসা বললো ,নিরেট মূর্খদের মতো কথা বলা থেকে আমি আল্লাহ কাছে আশ্রয় চাচ্ছি ৷ তারা বললো, আচ্ছা তাহলে তোমার রবের কাছে আবেদন করো তিনি যেন সেই গাভীর কিছু বিস্তারিত বিবরণ আমাদের জানিয়ে দেন৷ মূসা জবাব দিল আল্লাহ বলছেন , সেটি অবশ্যি এমন একটি গাভী হতে হবে যে বৃদ্ধা নয় , একেবারে ছোট্ট বাছুরটিও নয় বরং হবে মাঝারি বয়সের ৷ কাজেই যেমনটি হুকুম দেয়া হয় ঠিক তেমনটিই করো৷ আবার তারা বলতে লাগলো, তোমার রবের কাছে আরো জিজ্ঞেস করো, তার রংটি কেমন?মূসা জবাব দিল, তিনি বলছেন, গাভীটি অবশ্যি হলুদ রংয়ের হতে হবে , তার রং এতই উজ্জল হবে যাতে তা দেখে মানুষের মন ভরে যাবে ৷ আবার তারা বললো, তোমার রবের কাছ থেকে এবার পরিষ্কার ভাবে জেনে নাও, তিনি কেমন ধরনের গাভী চান ? গাভীটি নির্ধারণ করার ব্যাপারে আমরা সন্দিগ্ধ হয়ে পড়েছি ৷ আল্লাহ চাইলে আমরা অবশ্যি এটি বের করে ফেলবো৷ মূসা জবাব দিল আল্লাহ বলছেন,সেটি এমন একটি গাভী যাকে কোন কাজে নিযুক্ত করা হয়না, জমি চাষ বা ক্ষেতে পানি সেচ কোনটিই করে না, সুস্থ-সবল ও নিখুঁত ৷ একথায় তারা বলে উঠলো , হাঁ , এবার তুমি ঠিক সন্ধান দিয়েছো ৷ অতপর তারা তাকে যবেহ করলো, অন্যথায় তারা এমনটি করতো বলে মনে হচ্ছিল না ৷” (সূরা বাকারাঃ ৬৭-৭০)
এখানে আমাদের জন্য দুটি বিষয় শেখার আছেঃ
• প্রথমত, আল্লাহর রাসূল যখন কিছু বলেন তা আল্লাহর আদেশেই বলেন। অথচ এরা কি বলল-“তুমি কি আমাদের সাথে ঠাট্টা করছো?” আবার খেয়াল করে দেখুন, এরা কথা বলার সময় বারবার বলছে, “তোমার রবের কাছে আবেদন করো-” বলছেনা যে “আমাদের রব”। এদের কথার টোন কতটা ব্যাঙ্গ করার মত! এরপর আবার খেয়াল করুন, আল্লাহর রাসূল বলছেন একটা গাভী যবেহ করতে। অথচ এদের টাল বাহানা করার নমুনা থেকে বোঝা যায়, এরা আসলে কুরবাণী দিতে আগ্রহী নয়। তারা এও বলেনি যে, তোমার আল্লাহ্কে বল আমাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান বাতলে দিতে বরং তারা গাভীর সন্ধান বাতলে দিতে বলল।(কতটা উদ্ধত হলে আল্লাহর রাস্তার কথা ভুলে আল্লাহর একটা পরীক্ষা নিয়ে এতটা তামাশা করা যায়!)
• দ্বিতীয়ত, যখন মানুষ আল্লাহর আদেশ মানতে অস্বীকার করে তখন আল্লাহ কাজের বোঝা আরও বাড়িয়ে দেন। তার কাজ আরও জটিল থেকে জটিলতরও হতে থাকে।
বাইবেলে আছে একইভাবে কিছু ঘটনার অবতারণা করা হয়েছে, যখন ঈসা (আঃ) তাঁর সাথীদের বললেন তাকে অনুসরণ করতে তখন তারা বলল, And He said to another, "Follow Me." But he said, "Lord, permit me first to go and bury my father." But He said to him, "Allow the dead to bury their own dead; but as for you, go and proclaim everywhere the kingdom of God." Another also said, "I will follow You, Lord; but first permit me to say good-bye to those at home."… (লুকঃ ৯:৬০ ) অর্থাৎ, তাদের একজন বলল, আমাকে আমার বাবার কবর দিতে অনুমতি দিন। ঈসা (আঃ) উত্তরে বললেন, “এক মৃত আরেক মৃতকে কবর দিক।” কতটা বিরক্ত হলে তিনি এই কথা বলতে পারেন! আরেকজন রাসূলের আদেশ অমান্য করার বাহানা হিসেবে তার পরিবারের সাথে শেষ দেখা করার কথা বলে কেটে পরল।
এবার আসুন আমাদের কি অবস্থা একটু দেখা যাক।
• আমি ছাত্র অবস্থায় যখন ইসলামের কথা বলতে যেতাম আমার সহপাঠীদের- তাদের কমন কিছু ডায়লগ ছিল এমন, “আমার পড়া আছে, আমার তাড়া আছে”-ইত্যাদি ইত্যাদি। একবার তো এক বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকার সময় আমাকে ফজরের নামাযে ডাকতে বলে দেয়। আমি তার কথামত তাকে ডাক দিতে গেলে সেখানে অবস্থানরত দুই সহপাঠী নেতার(হলের তৎকালীন ছাত্রদল নেতা) সাথে দেখা হয়ে যায়। তারা তখন কেবল ঘুমাতে যেতে চলছে। যাহোক, পরে ঐ বন্ধু আমাকে আলাদাভাবে বলল যে, তাকে আর ডাকার দরকার নেই। নেতারা যেহেতু আমার সহপাঠী, তাই তারা আমাকে সরাসরি না বলে পরক্ষভাবে বলার ব্যবস্থা করে। তাদের গাত্রদাহ স্মরণ করে আমার উপরোক্ত অবস্থাটা মনে পরে গেল।
• আরেক ভাইয়ের কথা এমন যে, সে কোন কারণে তার কোন এক বান্ধবীকে পছন্দ করে ফেলেছিল। কিন্তু মেয়েটা তাকে পাত্তা না দিয়ে অন্য একজনকে পছন্দ করে ফেলে। এ কারণে আমাদের ঐ ভাই আমাদের সাপোর্ট চাচ্ছিল যাতে আমরা তাকে সাহায্য করে ঐ মেয়েকে পাইয়ে দেই। আফসোস, আমরা তার জন্য কিছুই করতে পারিনি। তাই সে আমাদেরকে অভিযোগ করল এবং পরবর্তীতে সে পুরোপুরি ইসলাম থেকে দূরে সরে যায়।
• বর্তমান সময়ে সবথেকে আলোচিত বিষয় হল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা। এই বিচারের নামে গত চার বছর আগে জায়ামাতের লীডারদের আটকে রাখে আর টালবাহানা করতে থাকে কোন ইস্যুতে ফাঁসানো যায়। প্রথমে তারা খুঁজতে চাইল কোন নেতা সরকারী টাকা আত্মসাৎ করেছে কিনা। না পেয়ে তারা অন্য চিন্তা করল এবং সব থেকে ভাইটাল ইস্যু নিয়ে জনতাকে দুইভাগে বিভক্ত করল। আর তা হল যুদ্ধাপরাধীর বিচার করা। কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যখন যুদ্ধাপরাদের সংজ্ঞা জানতে চাইল তখন তারা কোনভাবেই এই নেতাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে প্রমাণ করতে পারলনা। তাই নতুন করে টালবাহানা করল যা আমরা এখন মানবতা বিরোধিতা বলে চিনতে পারছি। আল্লাহুআকবার।
• জামায়াতে ইসলামীর উত্থান বন্ধ করতে হলে তাদের আন্ডার ডগ বানাতে হবে, তাই তারা আবার নতুন টাল-বাহানা শুরু করে। তা হল, এদের সংবিধানে আল্লাহর স্বারবভৌমত্ব আছে। আর যায় কোথায়? লিখতে হবে জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। তাতেও কাজ হবেনা। এদের নাকে খত দিতে হবে। নইলে রাজনীতি করতে দেয়া হবেনা। শেষ পর্যন্ত তাদেরকে বাতিল করা হয়েছে। কোন সত্যের পক্ষাবলম্বন করা হয়নি।
৪. অধিকাংশ নবী-রাসূল হত্যা করাঃ
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “অবশেষে অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌছলো যার ফলে লাঞ্ছনা, অধপতন, দুরবস্থা ও অনটন তাদের ওপর চেপে বসলো এবং আল্লাহর গযব তাদেরকে ঘিরে ফেললো৷ এ ছিল তাদের ওপর আল্লাহর আয়াতের সাথে কুফরী করার এবং পয়গম্বরদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার ফল ৷”(সূরা বাকারাঃ ৬১) অসংখ্য নবী-রাসূলের হত্যার ঘটনা বাইবেলে পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি হল যাকারিয়া (আঃ) যার কথা বাইবেল বলছে এভাবে, “আবার যখন ইহুদিয়া রাষ্ট্রে প্রকাশ্যে মূর্তি পূজা ও ব্যভিচার চলতে থাকে এবং হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সাল্লাম এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হন তখন ইহুদি রাজা ইউআস-এর নির্দেশে তাকে মূল হাইকেলে সুলাইমানীতে 'মাকদিস'( পবিত্র স্থান) ও 'যবেহ ক্ষেত্র'-এর মাঝখানে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করা হয় ।” (২ বংশাবলী, ২৪ অধ্যায় , ২১ শ্লোক ) । বাইবেলে আরও বলা হয়েছে, “That upon you may come all the righteous bloodshed upon the earth, from the blood of righteous Abel unto the blood of Zacharias son of Barachias, whom ye slew between the temple and the altar.” (Matthew 23:35 ;King James Version) এদের ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজ এমন অবস্থায় নিয়ে ঠেকেছিল যে, তারা বলতে লাগলো, “আমরা যীশূকে ক্রুসিফাই করেছি”। আর এই সব কারণে আল্লাহ এদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তির ব্যাবস্থা করে। নেবুচাদ নেজার(৬৩৪-৫৬২ খ্রিষ্টপূর্ব) এদের উপর অত্যাচার চালায় তাদের এমন ধরনের পাপের জন্য। এদের উপর প্রতিশ্রুত গজব নিয়ে আসেন তিনি এবং তাদের জন্য গোলামীর শিকলের আয়োজন করেন এবং তিনি নবী যেরেমিয়াকে (আঃ) কয়েদখানায় বন্দী অবস্থায় দেখতে পান। তাঁর সাথে কথা বলার পর জানতে পারেন যে নবী যেরেমিয়া তাদের সতর্ক করেছিলেন কিন্তু তারা শুনতে চায়নি। তখন নেবুচাদ বলেন, “Wretched people, they defied their Lord’s messenger”( Ṭabarī, Muḥammad Ibn-Ǧarīr Aṭ- (1987). The History of Al-Tabarī. State Univ. of New York Pr. pp. 43–70) এভাবে প্রত্যেকবার তাদের ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজের পর যতই তাদের সতর্কবার্তা শোনানো হত তারা কখনও সেদিকে কান দিতনা। ফলে নেবুচাদ নেজারের মত অনেক শক্তিশালী শাসক তাদের জন্য গজব নিয়ে আসে।
মুসলিম উম্মতের জন্য আল্লাহর রাসূলের একটি হাদিস প্রযোজ্য। তা হল, আল্লাহর রাসূল বলেন, “আমার উম্মতের সাথে একই ঘটনা ঘটবে যা বনী ইসরায়েলের সাথে ঘটেছিল। ” বলা হয়েছিল যে আমরা কি করে তাদের মত নবী-রাসূল হত্যা করব? আমাদের জন্য তো শেষ নবী এসে গেছে। নবীজি বলেন, “আমার উম্মতের আলেমগণ হবে বনী ইসরায়েলের নবীদের সমতুল্য”। এখন দেখুন, কি পরিমাণ অত্যাচার চালানো হয়েছিল এবং হচ্ছে আমাদের আলেমদের উপর!
• শুরু হল আমাদের প্রিয় নবীর নাতি হযরত হুসাইন (রাঃ) কে দিয়ে। তিনি মিথ্যার সাথে কোন কম্প্রোমাইজ করেননি। ইয়াজিদ বাহিনী তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে বলে কিন্তু তিনি ইসলামের সাথে রাজতন্ত্রের দ্বন্দ্ব আছে তা প্রমাণ করার জন্য নিজের শরীরের তাজা রক্ত ঢেলে দেন সেই কারবালার প্রান্তরে। আশুরার সময় আমরা খুব মাতম করি কিন্তু এই দিনের যে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটল তার দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করতে আমরা চাইনা।(এত ব্যাপক সেই আলোচনা যে আমি এখন তার অবতারণা করতে চাচ্ছিনা)
• আমাদের ইসলামের চার ইমাম যাদের তত্ত্বজ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত আমাদের চার মাযহাব, তাদের কপালে কি জুটেছিল? তাঁরাও ইসলামের সাথে বাতিলের তথা রাজতন্ত্র/স্বৈরতন্ত্রের সাথে কোন আপোষ না করায় তাদেরও কপালে জুটেছিল একই পরিণতি। ইমাম আবু হানিফা (রঃ)-কে কারাগারে অন্তরীণ রেখে তাঁকে বিষ প্রয়োগে মেরে ফেলা হয়। তাঁর উপর অভিযোগ ছিল তিনি তৎকালীন শীয়া বিদ্রোহে প্রত্যক্ষ মদদ দিয়েছিলেন। কিন্তু কোন প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি। কিন্তু পরে তাঁকে খলীফার প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি অস্বীকার করায় তাঁকে কারাগারে অন্তরীণ করে রাখা হয়। এখানে তাঁকে প্রচুর মারধোর করা হয়। ইমাম শাফিই (রঃ)-কে একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তাঁকে বলা হয় যে তিনিও শিয়াদের উস্কে দিচ্ছেন এবং তাদেরকে অর্থ সাহায্য দিয়ে আব্বাসী খলীফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তাঁকে অবশ্য মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি। পরে তিনি নিজেই হিজরত করে চলে যান। ইমাম ইবনে হাম্বল (রঃ)-কে প্রচণ্ডভাবে টর্চার করা হয়। তাঁকে ভীষণভাবে মার দেয়া হয় এবং তিনি এতে অসুস্থ হয়ে মারা যান। ইমাম মালেক (রঃ)-কে অভিযুক্ত করা হয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি রায় দেয়ার জন্য। খলীফা সবার কাছে এই মর্মে বায়াত নিতে চান যেন কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কোন কথা না বলে। তিনি রায় দেন যে, জোরপূর্বক কাউকে কিছু করানো বা বলানো হলে তার কোন বৈধতা থাকবেনা। এই কথা বলা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চলার সামিল। এই কারণে তাঁকেও আসামীর কাঠগড়ায় দাড় করানো হয়। তবুও তাঁরা সত্যের সাথে মিথ্যার আপোষ করেননি।
• গত শতাব্দীতে ইসলামের অন্যতম খাদেম আমাদের প্রিয় শহীদ কুতুব (রঃ)-কে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে শহীদ করে দেয়া হয়। তাঁর অপরাধ কি ছিল? তিনি পবিত্র কুরআন পড়ে একটি বই লিখেছিলেন, ‘ইসলামী সমাজ বিপ্লবের ধারা’। যার মূল উপজীব্য বিষয় ছিল, ইসলাম কখনও বাতিলের সাথে আপোস করেনা। আমাদের আফসোস যে আমরা ইসলামকে এখনও বুঝে উঠতে পারছিনা।
• এই শতকে শুরু হল কাদের মোল্লাকে দিয়ে অত্যাচারের সার্টিফিকেট দেয়া। এই ব্যাক্তিটাও কিন্তু একই কারণে শহীদ হয়ে গেল। তাঁর দোষ ছিল ইসলামী আন্দোলন করা। তাঁর ইচ্ছে ছিল আমাদের দেশকে পবিত্র কুরআনের আদলে একটি কল্যাণী রাষ্ট্রে পরিণত করা। তাঁকে ফাঁসানোর মত কোন শক্ত যুক্তি ছিলনা। কিন্তু এই নব্য ফ্যাসিবাদী সরকার তাঁকে একরকম জোর করেই ফাঁসি দিয়ে দেয়। আফসোস, আমাদের চোখের সামনেই ঘটনাটা দেখতে পাই। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারলামনা। তবে একটা বিষয় পরিস্কার হয়ে গেছে। আর তা হল, আমার কাছে ফাঁসির দড়ি এখন পুলসিরাত পার হবার রাস্তা মনে হয়। আমি এমন মৃত্যুই কামনা করি এখন যে মরণে হাসব আমি, কাঁদবে গোটা ভুবন।
৫. জেনে-বুঝে সত্য অস্বীকার করাঃ
আমাদের অতি পরিচিত জ্ঞানী ব্যক্তি আইন্সটাইন কি বলেছেন দেখুন, “My religion consists of a humble admiration of the illimitable superior spirit who reveals himself in the slight details we are able to perceive with our frail and feeble mind.” অর্থাৎ তিনি সুপেরিওর স্পিরিট নিয়ে এডমায়ার করতেই শুধু পছন্দ করতেন। তিনি আরও বলেছেন, “A man's ethical behavior should be based effectually on sympathy, education, and social ties; no religious basis is necessary. Man would indeed be in a poor way if he had to be restrained by fear of punishment and hope of reward after death” অর্থাৎ, মানুষের চিন্তাকে বাধা গ্রস্ত করে ধর্ম। যেই ব্যাক্তি চোখ বন্ধ করলে সময়কে একটি মহাকাশযান হিসেবে পায় যার ককপিটে বসে তিনি সময়কে চালনা করতে পারেন সেই ব্যাক্তি কি আর একটু সামনে এগিয়ে আল্লাহর অস্তিত্ব খুঁজে পেলেননা! আফসোস এদের জন্য, এদের মত আবু জাহেলদের জন্য যারা চোখ থেকেও অন্ধ। এবার একটু মূল খোঁজা যাক। আইন্সটাইন কে ছিলেন? তিনি একজন ইহুদী এবং বেনেডিক্ট স্পিনোযার একনিষ্ঠ অনুসারী। তাকে যখন প্রশ্ন করা হল, New York's Rabbi Herbert S. Goldstein asked Einstein by telegram: "Do you believe in God? Stop. Answer paid 50 words." In his response, for which Einstein needed but twenty-five (German) words, he stated his beliefs succinctly: "I believe in Spinoza's God, Who reveals Himself in the lawful harmony of the world, not in a God Who concerns Himself with the fate and the doings of mankind." উল্লেখ্য, বেনেডিক্ট স্পিনোযাকে বলা হয় ১৭ শতকের সব থেকে বড় যুক্তিবাদী। এই ব্যাক্তি আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে কি বলেছিল, “There can only be one substance in existence. That Substance is God and everything that exists is part of that substance. God is nature”এদের জ্ঞানের ব্যাপারে কারও কোন প্রশ্ন উঠতে পারেনা, অথচ এরা নিজেদের ব্যাক্তি স্বার্থে ‘প্রকৃতি’ নামের একটা ‘অস্পষ্টাকে’ ঈশ্বর বানিয়ে নিল(!!) এরাই ছিল কিতাবধারী জাতি(!!) যাদের কথা পবিত্র কুরআনে বারবার বলা হয়েছে। সাধারণত, কারও কিতাবের জ্ঞান থাকার অর্থ হল সে ভালো করেই বুঝবে সে কি করছে কি করছেনা, কি ভালো কি মন্দ। অথচ, এদের জ্ঞান এদেরকে আরও বেশী অবিশ্বাসের দিকে নিয়ে গেছে। এটা এমন নয় যে তারা বুঝতনা, তারা পুরপুরিভাবেই বুঝত কিন্তু তারা ছিল সীমা লঙ্ঘনকারী। এদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আবার স্মরণ করো, যখন আমরা তোমাদের থেকে মজুবত অংগীকার নিয়েছিলাম এই মর্মে যে, তোমরা পরস্পরের রক্ত প্রবাহিত করবে না এবং একে অন্যকে গৃহ থেকে উচ্ছেদ করবে না ৷ তোমরা এর অংগীকার করেছিলে, তোমরা নিজেরাই এর সাক্ষী৷”(সূরা বাকারাঃ ৮৪) আইন্সটাইনের অনুসারীরা আজকে কি করছে ফিলিস্তিনে? তারা মুসলিমদেরকে অত্যাচার করছে এই মর্মে যে তাদের কিতাব তাদেরকে এই কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে। ইসরায়েলের প্রথম প্রধান মন্ত্রী বেন গুরিয়েন বলেছিল, “The Bible is our deed to the Land of Israel.” তাদের কিতাব কি তাদেরকে বলেছে যে মানুষকে উদ্বাস্তু কর? না, তারা নিজেরা তাদের কিতাব পরিবর্তন করে নিয়েছে।
তাদের বর্তমান প্রজন্মও দেখা যায় তাওরাত পড়ে কিন্তু তা মানে না। একবার বর্তমানের একজন বড় স্কলার, নুমান আলী খান, কোন এক ইহুদীর সাথে কথা বলছিলেন। এই ব্যাক্তি দাবী করছে যা সে হলকাস্টের জীবিত ফিরে আসা ব্যাক্তি। সে বলছে যে সে তাওরাত পড়েও একজন নাস্তিক। কেন?-প্রশ্ন করলেন নুমান আলী খান। উত্তরে সে যা বলল তা আমাদের মত সামান্য মুসলমানদের জন্যও রক্ত হিম হবার সমতুল্য। সে বলল যে, আমরা ঈশ্বরের মনোনীত জাতি অথচ আমরা যখন বিপদে তখন ঈশ্বর কেন চুপ করে থাকলেন? তাই আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা যে ঈশ্বর আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনা। এদের কত বড় আস্পর্ধা!
এবার আসি আমাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে।
• আমাদের বর্তমান প্রজন্ম যাদের হাতে ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তাদের চালনা করছে কে? আমাদের কিছু সুশীল সমাজ নামের কিছু কীট। কে কে আছে তাদের মধ্যে? জাফর ইকবাল, মুন্তাসির মামুন, শাহরিয়ার কবির প্রমুখ। যে কেউ তাদের নাম শুনলে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। জাফর ইকবালের পা ছুয়ে সালাম করতে হুমরি খেয়ে পরে অনেকে। অথচ, এই ব্যাক্তিগুলো ধর্মের নাম শুনলেই ছুটো ছুটি শুরু করে দেয়। অনেক আগে আমি প্রথম আলো পড়ছিলাম। সেখানে জাফর সাহেবের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিল। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি তো দেশের কথা বলেন দেশকে ভালবাসার কথা বলেন। আথচ, আপনার ছেলে-মেয়েরা তো কেউ এদেশের মাটিতে পড়ালেখা করেনা। কেন? উত্তরে উনি বলেছিলেন, যে দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থায় ইসলাম শেখানো হয় সেখানে আমি আমার সন্তানদের শিক্ষা দিতে পারিনা। উনি আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে সরাসরি লিখতে লাগলেন, তোমরা যারা শিবির কর-নামে একটি কলাম(প্রথম আলোতে) এবং এর মাধ্যমে তিনি তার সন্তানদের মত করে আরও অনেক মায়ের সন্তানের জন্য অবাধ নাস্তিকতার দরজা খুলে দিচ্ছেন।
• আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বললেন যে, কারও বসত বাড়ি থেকে কাউকে উচ্ছেদ না করতে। অথচ, আমাদের বর্তমান সরকার ঠিক ইহুদিদের মত করে বুল্ডজার দিয়ে বাড়ি ভেঙ্গে দিচ্ছে। কারণটা খুবি সামান্য। এরা জামায়াতে ইসলামী করে বা তাদের সাপোর্ট করে। দেখুন তো পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত আয়াতের সাথে আপনারা বর্তমানের অবস্থার মিল খুঁজে পান কিনা?
৬. অন্যের অন্ধ অনুকরণঃ
ইহুদি জাতিটা সব সময় তাদেরকে যে নির্দেশ দেয়া হত তা অস্বীকার করত। এই চরিত্রের উদাহরণ দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, “স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন আমরা মূসাকে চল্লিশ দিন-রাত্রির জন্য ডেকে নিয়েছিলাম, তখন তার অনুপস্থিতিতে তোমরা বাছুরকে নিজেদের উপাস্যে পরিণত করেছিল ৷ সে সময় তোমরা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি করেছিলে ৷”(সূরা বাকারাঃ ৫১) এর ব্যাখ্যায় এসেছে, হযরত ইউসুফ আলাইহিস সাল্লামের পর বনী ইসরায়েল যখন অধপতনের শিকার হলো এবং ধীরে ধীরে কিবতীদের দাসত্ব শৃংখলে আবদ্ধ হয়ে পড়লো তখন অন্যান্য আরো বহু রোগের মধ্যে এ রোগটিও তারা নিজেদের শাসকদের থেকে গ্রহন করেছিলো । বাইবেলে একই কথা আছে কিন্তু একটু অন্যভাবে বর্ণনায়(রং চড়িয়ে বলা), When the people saw that Moses was so long in coming down from the mountain, they gathered around Aaron and said, “Come, make us gods who will go before us. As for this fellow Moses who brought us up out of Egypt, we don’t know what has happened to him.” Aaron answered them, “Take off the gold earrings that your wives, your sons and your daughters are wearing, and bring them to me.” So all the people took off their earrings and brought them to Aaron. He took what they handed him and made it into an idol cast in the shape of a calf, fashioning it with a tool. Then they said, “These are your gods, Israel, who brought you up out of Egypt.” (Exodus: 32) অর্থাৎ এখানে তারা তো অপরাধ করেছেই আবার বাইবেল এই কাজের সাথে হারুণ (আঃ)-কেও দায়ী করে অভিযোগ করেছে। অর্থাৎ তারা(ইহুদীরা) নিজ হাতে তাদের কিতাব লিখেছে, যার ফলে এই মিথ্যা অপবাদ দেয়ার ঘটনা খুব সহজেই রাটাতে পেরেছে। আমরা পবিত্র কুরআন না পড়লে কখনই এই সত্যটুকু জানতে পারতামনা। বাইবেল যা বলেছে তা এরা খুব সহজেই অবমাননা করেছে, যেমন-
• They rejected his decrees and the covenant he had made with their fathers and the warnings he had given them. They followed worthless idols and themselves became worthless. They imitated the nations around them although the Lord had ordered them, "Do not do as they do," and they did the things the Lord had forbidden them to do. [2 Ki 17:15 (NIV)]
• They would not listen, however, but persisted in their former practices. Even while these people were worshipping the Lord, they were serving their idols. To this day their children and grandchildren continue to do as their fathers did. [2 Ki 17:40-41 (NIV)]
• Do not be idolaters, as some of them were; as it is written: "The people sat down to eat and drink and got up to indulge in pagan revelry." [1 Cor 10:7 (NIV)]
এরা অন্য জাতির অনুকরণ ও অনুসরণ করে মূর্তি পুজায় লিপ্ত হয়ে পড়ে যার অনুকরণ করতে সরাসরি নিষেধ করা হয়েছে।
এবার আমাদের কথায় আসা যাক। আমাদের মূর্তি পুজার ধরণ কেমন? আমরাও বর্তমানে মূর্তিপূজার অনুসারী হয়ে উঠেছি। পয়েলা বৈশাখে আমরা বিভিন্ন মূর্তি বানিয়ে আনন্দে মেতে উঠি অথচ এটা হিন্দু ধর্মের সরাসরি অনুসরণ করা। ২ কিং ১৭/ ৪০-৪১ অনুযায়ী, ‘এরা কখনই শুনবেনা বরং তাদের আগের অনুসারীদের অনুসরণ করবে। এমনকি যখন তারা তাদের প্রভুর ইবাদত করে তারা মূর্তিকে সন্তুষ্ট করার জন্যই করে’। আমাদের পবিত্র কুরআন একই কথা বলেছে, “এ ছিল (কাবা নির্মাণের উদ্দেশ্য) এবং যে কেউ আল্লাহ প্রতিষ্ঠিত পবিত্র অনুষ্ঠানগুলোকে সম্মান করবে, তার রবের কাছে এ হবে তারই জন্য ভালো৷ আর তোমাদের জন্য গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হালাল করে দেয়া হয়েছে সেগুলো ছাড়া যেগুলো তোমাদের বলে দেয়া হয়েছে৷ কাজেই মূর্তিসমূহের আবর্জনা থেকে বাঁচো, মিথ্যা কথা থেকে দূরে থাকো” (সূরা হজ্জঃ ৩০) ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, মূর্তিপূজা থেকে এমনভাবে দূরে থাকো যেমন দুর্গন্ধময় ময়লা আবর্জনা থেকে মানুষ নাকে কাপড় দিয়ে দূরে সরে আসে। অন্য কথায় বলা যায়, তা যেন নাপাক ও ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ এবং কাছে যাবার সাথে সাথেই মানুষ তার সংস্পর্শ লাভ করে নাপাক ও নোংরা হয়ে যাবে। অথচ আমরা এখন আমাদের ঘর নানা রঙ-বেরঙের ছবি দিয়ে সাজাই এবং সেই ছবি নিয়ে আনমনা হয়ে যাই। কখন যে আমরা পুজা করে বসেছি আমরা নিজেও জানিনা।
৭. নবী-রাসূলের গায়ে কলঙ্ক লেপন এবং কিতাব নিজ হাতে লিখনঃ
ইহুদী জাতিটা এমন যে নিজেদের দোষ ঢাকতে নবীদের উপর কলঙ্ক লেপন করতেও তাদের বাধেনা। বাইবেলে বর্ণিত আছে, When the people saw that Moses was so long in coming down from the mountain, they gathered around Aaron and said, “Come, make us gods who will go before us. As for this fellow Moses who brought us up out of Egypt, we don’t know what has happened to him.” Aaron answered them, “Take off the gold earrings that your wives, your sons and your daughters are wearing, and bring them to me.” So all the people took off their earrings and brought them to Aaron. He took what they handed him and made it into an idol cast in the shape of a calf, fashioning it with a tool. Then they said, “These are your gods, Israel, who brought you up out of Egypt.” (Exodus-32: 1-4) And the LORD struck the people with a plague because of what they did with the calf Aaron had made.(Exodus-32: 35) অর্থাৎ তাদের বর্ণনায় হারুণ (আঃ) কে মূর্তি পুজার সাথে শরীক করে বাইবেল লেখা হয়েছে। এর আরও কোন অর্থ করলে দেখা যায়, এদের গায়ে লাগবে এমন কিছু হলে তা তারা নিজ হাতে পরিবর্তন করে নিত। অর্থাৎ, এরা নিজ হাতে কিতাব লিখত। কিন্তু পবিত্র কুরআন এই মিথ্যা বর্ণনার প্রতিবাদ করা হয়েছে বিভিন্ন আয়াতের মাধ্যমে। সূরা আ’রাফের ১৫০ আয়াতে বলে হয়েছে, “ওদিকে মূসা ফিরে এলেন তার জাতির কাছে ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ অবস্থায়৷ এসেই বললেনঃ আমার অনুপস্থিতিতে তোমরা আমার বড়ই নিকৃষ্ট প্রতিনিধিত্ব করছো! তোমরা কি নিজেদের রবের হুকুমের অপেক্ষা করার মত এতটুকু সবরও করতে পারলে না? সে ফলকগুলো ছুঁড়ে দিল এবং নিজের ভাইয়ের (হারুন ) মাথার চুল ধরে টেনে আনলো৷ হারুন বললোঃ হে আমার সহোদর! এ লোকগুলো আমাকে দুর্বল করে ফেলেছিল এবং আমাকে হত্যা করার উপক্রম করেছিল৷ কাজেই তুমি শত্রুর কাছে আমাকে হাস্যম্পদ করো না এবং আমাকে এ জালেম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করো না৷”
ব্যাখ্যায় এসেছে, ‘আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটি বড় বিস্ময়কর মনে হয়। বনী ইসরাঈলীরা যদেরকে আল্লাহর নবী বলে মানে তাদের মধ্য থেকে কারোর চরিত্রে তারা কলংক লেপন না করে ছাড়েনি, আবার কলংক লেপনও করেছে এমন বিশ্রীভাবে , যা শরীয়াত ও নৈতিকতার দৃষ্টিতে নিকৃষ্টতম অপরাধ বিবেচিত হয়। যেমন ,শিরক, যাদু, ব্যভিচার, মিথ্যাচার, প্রতারণা এবং এমনি ধরনের আরো বিভিন্ন জঘণ্য গুনাহের কাজ, যেগুলোতে লিপ্ত হওয়া একজন নবী তো দূরের কথা সাধারণ মুমিন ও ভদ্রলোকের পক্ষেও মারাত্মক লজ্জার ব্যাপার মনে করা হয়। বাহ্যত কথাটি বড়ই অদ্ভুত মনে হয়। কিন্তু বনী ইসরাঈলীদের নৈতিকতার ইতিহাস অধ্যায়ন করলে জানা যায়,আসলে এ জাতিটির ব্যাপারে এটি মোটেই বিস্ময়কর নয়। এ জাতিটি যখন নৈতিক ও ধর্মীয় অধপতনের শিকার হলো এবং তাদের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ পর্যন্ত এমনকি উলামা, মাশায়েখ ও দীনী পদাধীকারী ব্যক্তিরাও গোমরাহী ও চরিত্রহীনতার সয়লাবে ভেসে গেলো তখন তাদের অপরাধী বিবেক নিজেদের এ অবস্থার জন্য ওযর তৈরী করতে শুরু করে দিল এবং যেসব অপরাধ তারা নিজেরা করে চলছিল সেগুলো সবই নবীদের সাথে সংশ্লিষ্ট করে তাদের নবীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিল। এভাবে তারা বলতে চাইলো যে, নবীরাই যখন এসব থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে পারেন নি তখন অন্যেরা আর কেমন করে বাঁচতে পারে৷ এ ব্যাপারে হিন্দুদের সাথে ইহুদীদের অবস্থার মিল রয়েছে। হিন্দুদের মধ্যেও যখন নৈতিক অধপতন চরম পর্যায়ে পৌছে তখন এমন ধরনের সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছিল, যেখানে দেবতা, মুনি-ঋষি, অবতার তথা জাতির যারা সর্বোত্তম আদর্শ ব্যক্তিত্ব ছিল তাদের সবার গায়ে কলংক লেপন করে দেয়া হয়েছিল।এভাবে তারা বলতে চেয়েছিল যে, এত বড় মহান ব্যক্তিত্বরাই যখন এসব খারাপ কাজে লিপ্ত হতে পারে তখন আমরা সাধারণ মানুষরা আর কোন ছার৷ আর এ কাজগুলো যখন এ ধরনের মহীম মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্যে লজ্জাকর নয় তখন আমাদের জন্যেই বা তা কলংকজন হতে যাবে কেন৷’
আমাদের আফসোস যে, আমরাও আমাদের ইসলামের ব্যক্তিদেরকে কলঙ্কিত করতে ছাড়িনি। বর্তমান সময়ে আমাদের হেফাজত আন্দলনের নেতা আল্লামা শফী সাহেবকেও নাজেহাল করতে ছাড়া হয়নি। তিনি যখন ইসলাম রক্ষার আন্দোলন ঘোষণা করলেন ঠিক তার পরেই বের হয়ে পড়ে তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে বাহিনী গঠন করেছিলেন। তার বয়স এখন ৯০ বছর। এর আগে তিনি কোন ধরনের অপরাধের সাথে লিপ্ত ছিলেন না। কিন্ত যখনই তার ইসলাম রক্ষার আন্দোলন শুরু হল তিনিও হয়ে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী!
জায়ামাতে ইসলামীর নেতাদের বিরুদ্ধে একটি বড় অভিযোগ হল এরা নাকি ১৯৭১ সালে শত শত নারীকে ধর্ষণ করেছিল। একজনের বিরুদ্ধে তো বলাই হল যে উনি কম করে হলেও ৩০০ নারীকে ধর্ষণ করেছে! তাও আবার ২০-২১ বছর বয়সে! যুদ্ধই চলল ৯ মাস, আর এতটুকু সময়ের মধ্যেই তিনি এত শক্তিশালী একটা কাজে হাত দিলেন নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়ে! আর যুদ্ধ শেষে তিনি একটা নারীর দিকেও ফিরে তাকালেন না? আফসোস বর্তমান আমাদের উপর।
ঠিক এই মুহূর্তে আমি যখন লিখতে বসেছি, আমার জানা নেই সাতক্ষীরায়, লক্ষ্মীপুরে, নীলফামারী, কুরিগ্রামে বুল্ডোজার দিয়ে কত মানুষের ঘর ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে এবং সেখানে কোন পুরুষ না পেলে মহিলাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অত্যাচার করার জন্য। অবাক হয়ে দেখছি, সেখানে ১৯৭১ সালের আসল চিত্র ফুটে উঠতে। এখন কি বলবে আমাদের অন্তঃপুরে নিবাসী হাম্বা হাম্বা ডাক দেয়া লোকসকল? নাকি এখনও তারা বলবে তার দল করলে সব ঠিক, সাত খুন মাফ?
৮. এরা মৃত্যুকে প্রচন্ড ভয় পায়ঃ
এই জাতিটা দাবি করে তারা আল্লাহ কর্তৃক বাছাইকৃত। আল্লাহ ত’আলা বলছেন, এরা কি মনে করে যে আল্লাহ তাদের সাথে চুক্তি করেছে এই মর্মে যে তারা কখনই জাহান্নামে যাবেনা? পবিত্র কুরআন এইভাবে ঘোষণা করছে, “তাদেরকে বলো, যদি সত্যিসত্যিই আল্লাহ সমগ্র মানবতাকে বাদ দিয়ে একমাত্র তোমাদের জন্য আখেরাতের ঘর নির্দিষ্ট করে থাকেন, তাহলে তো তোমাদের মৃত্যু কামনা করা উচিত —যদি তোমাদের এই ধারণায় তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো ৷ নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, তারা কখনো এটা কামনা করবে না ৷ কারণ তারা স্বহস্তে যা কিছু উপার্জন করে সেখানে পাঠিয়েছে তার স্বাভাবিক দাবী এটিই (অর্থাৎ তারা সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবে না)৷ আল্লাহ ঐ সব যালেমদের অবস্থা ভালোভাবেই জানেন ৷ বেঁচে থাকার ব্যাপারে তোমরা তাদেরকে পাবে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে লোভী ৷ এমনকি এ ব্যাপারে তারা মুশরিকদের চাইতেও এগিয়ে রয়েছে ৷ এদের প্রত্যেকে চায় কোনক্রমে সে যেন হাজার বছর বাঁচতে পারে ৷ অথচ দীর্ঘ জীবন কোন অবস্থায়ই তাকে আযাব থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না ৷ যে ধরনের কাজ এরা করছে আল্লাহ তার সবই দেখছেন ৷” (সূরা বাকারাঃ ৯৪-৯৬)
এর ব্যাখ্যায় এসেছে, আল্লাহ তা’আলা মৃত্যুর কথা বলে ইহুদিদের দুনিয়া প্রীতির প্রতি এটি সূক্ষ্ম বিদ্রূপ করেছেন । আখেরাতের জীবন সম্পর্কে যারা সচেতন এবং আখেরাতের জীবনের সাথে যাদের সত্যিই কোন মানসিক সংযোগ থাকে, তারা কখনো পার্থিব স্বার্থ লাভের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে পারে না । কিন্তু ইহুদিদের অবস্থা এর সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল এবং এখনো আছে । কোন না কোনভাবে বেঁচে থাকা , তা যে ধরনের বেঁচে থাকাই হোক না কেন- সম্মানের ও মর্যাদার বা হীনতার, দীনতার, লাঞ্ছনা-অবমাননার-যেকোন জীবনই হোক না কেন তার প্রতিই তাদের লোভ।
এবার আসুন আমাদের নিজেদের ছবি দেখিঃ
• বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন যখনই আমি ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়েছি অধিকাংশ ক্ষত্রেই তাদের চেহারা হত ভীতিকর। যত তাড়াতাড়ি পারা যায় তারা কেটে পরার তালে থাকত। তাদের যে শঙ্কা তাদের চোখেমুখে ফুটে উঠত তা দেখার মত। মনে হত এখনই কেউ তার ঘাড় ধরে নিয়ে তার চামড়া টেনে ছিড়ে দিবে। অথচ তাদেরকে প্রাথমিক অবস্থায় শুধু নামাজ পড়ার জন্যই বেশি তাগিদ দেয়া হত। তাদের মাথায় কক্ষনই আসেনি যে তারা মরবে বা মরতে পারে। মৃত্যু যে অবস্যম্ভাবী তা তারা ভুলে গেছে ইহুদী জাতিটার মত।
• আমরা মুসলমান। আমরা কখনও দম্ভ ভরে চলার কথা না-কখনও ফাসাদ সৃষ্টি করার কথা না। কিন্তু বর্তমানে আমাদের অধিকাংশই এই চরিত্রটা খুব ভালভাবেই রপ্ত করে নিয়েছে। সবার ধারণা সে যা পাচ্ছে তা তার প্রাপ্য। এটাও ঐ জাতিটার একটা বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ ত’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “যখনই তাদের বলা হয়েছে , যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করো না, তারা একথাই বলেছে , আমরা তো সংশোধনকারী ৷” (সূরা বাকারাঃ ১১) আমাদের নেত্রী তো বললেন, তিনি ক্ষমতা চান না, শান্তি চান। আপনারা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন কেমন শান্তি আমরা পাচ্ছি। গত এক বছরে তার নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী ১৫০ জনের উপরে গুলি করে মানুষ মেরেছে। এই আমাদের শান্তির নমুনা। অবশ্য এখনও আমাদের একদল লোক বলবে যে, তার দল ঠিক কাজটাই করেছে। মানুষ মেরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে!
• “Even so every good tree bringeth forth good fruits; but a corrupt tree bringeth forth evil fruit. A good tree cannot bring forth evil fruit; neither can a corrupt tree bring forth good fruit. Wherefore by their fruits ye shall know them.” (Matt. 7:15–20.) [এখানে বলে রাখা দরকার ঈসা (আঃ) বনী ইসরায়েলের সব থেকে শেষ নবী] বাইবেলে বর্ণিত ঈসা (আঃ)-এর বাণী এটী। অর্থাৎ, ফল(কোন ব্যাক্তি) কেমন হবে তা তার বৃক্ষ দেখে চেনা যায়। আমরা ভাব-সম্প্রসারণে অনেকবারই এই কথাটা পড়েছি এইভাবে, “বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলেই পরিচয়”।
• বর্তমান যত নেতৃবৃন্দ ক্ষমতা দখল করে বসে আছে তাদের চরিত্র আর তাদের মূল কোথা থেকে এসেছে তা একটু খেয়াল করে দেখুন তো কাদের সাথে মেলে তাদের চরিত্র। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়ের স্ত্রীর নাম কৃস্টিনা-একজন ইহুদী। এটা কোন কাকতাল নয় বা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সব এক সূত্রে গাথা এবং এই সূত্র বর্তমান বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর উপর ইহুদীদের প্রচ্ছন্ন(প্রকট হবার অপেক্ষায়) আধিপত্যের উদাহরণ। যদি বলি ইসরায়েল রাষ্ট্র একটি বিষফোঁড়া তাহলে তার এদেশীয় প্রতিনিধি হল এই সরকার।
• এটা গেল আমাদের নেতাদের কথা। আমাদের জনগনের চেহারা একটু দেখুন। সমাজে যে মানুষগুলো বেশি বেশি প্রভাব দেখাতে চায়, অনেক ধরনের কমিটিতে (যেমন-মসজিদ কমটি) থেকে সবার উপর কথা বলার বাহাদুরি দেখায় তাদের চরিত্র একবার খেয়াল করে দেখুন-আব্দুল্লাহ বিন উবাই-এর চেয়ে ভালো পাবেন না।
শেষ কথাঃ
আমার লম্বা কথার শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। আল্লাহ বলেন, “সেই বিপর্যয় থেকে সাবধান হও, যার কবলে বিশেষভাবে কেবলমাত্র তোমাদের মধ্য থেকে যারা জুলুম করেছে তারাই পড়বে না”। (সূরা আনফালঃ ২৫)
আর এর ব্যাখ্যায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
"মহান আল্লাহ বিশেষ লোকদের অপরাধের দরুন সর্বসাধারণকে শাস্তি দেন না, যতক্ষন সাধারণ লোকদের অবস্থা এমন পর্যায়ে না পৌছে যায় যে, তারা নিজেদের চোখের সামনে খারাপ কাজ হতে দেখে এবং তার বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশের ক্ষমতাও রাখে এরপরও কোন অসন্তোষ প্রকাশ করে না।কাজেই লোকেরা যখন এমন অবস্থায় পৌছে যায় তখন আল্লাহ সাধারণ ও অসাধারণ নির্বেশেষে সবাইকে আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করেন"।
বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে তথা সমগ্র মুসলিম বিশ্বে তাকালে দেখতে পাই সবাই নানা রকম অশান্তিতে আছে। এই অশান্তি-হয় তা মানব সৃষ্ট না হয় প্রাকৃতিক। আল্লাহ এখনও ইহুদীদের মত আমাদের অভিশাপ দিয়ে দেননি কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে, এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকলে, আমাদেরকেও নির্বাসনে যেতে হবে, আমাদের উপরও অতীত জাতিগুলোর মত প্রাকৃতিক আযাব আসবে-সেই দিন দূরে নয়। এখন পর্যন্ত শুধু অত্যাচারী মানুষের মাধ্যমেই আমাদের শাস্তির ব্যবস্থা হয়েছে- বড় কোন প্রাকৃতিক আযাব এখনও আসেনি।
আমরাই পারি এই আযাব ঠেকাতে- যদি এখনও আমাদের মাঝে বোধোদয় হয়।
বিষয়: বিবিধ
৩৬১০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন