রক্ত কথা বলে.....
লিখেছেন লিখেছেন সত্য সমাগত ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১১:৪৬:০৪ সকাল
গতকাল আমাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ মিডিয়ার সামনে যেভাবে কথা বললেন, তাতে আমার খুব খারাপ লাগছিল। আমাদের দুর্ভাগা জাতির কি করুণ দশা হলে নেতা বলতে বাধ্য হয়, “আমি সুইসাড করব”! ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এসে বলছে আগামীতে কে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিবে! আচ্ছা যদি ভারত আর আমেরিকাই নির্ধারণ করে আমাদের নেতা কে হবে, তাহলে নির্বাচনের মত উপহাস করার কি দরকার?
বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আমাদের প্রায় ১৮ কোটি জনতার নেতৃত্বে যারা আছে তারা খুব ভাল করে গুনে দেখলে ১ লাখের বেশি হবে না এবং তারা সবাই অনেক আগেই শয়তানের দোসর হয়ে গেছে। এদের কারও জনতার জন্য কিছু করার ইচ্ছে ছিল বলে মনে হয় নি। বরং তাদের প্রত্যেকটা কাজ আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট করেছে। জাতীয় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের সুনাম নষ্ট করতে এদেরকে এক হয়ে কাজ করতে দেখেছি। যার কয়েকটা উদাহরন হল, শেয়ার বাজার ধ্বংস, পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি, মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের জনশক্তি যাতে যেতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা। এর প্রভাব কার কেমন পরেছে আমার সবটা বোধগম্য নয়, কিন্তু আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আমারও একটা স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে এই অস্থিরতার ডামাডোলে পড়ে। অথচ ১৮ কোটি এই মানুষগুলো যদি একবার করেও থু থু দিত তাহলে এই সব কুলাঙ্গার নেতারা বানের পানির মত ভেসে যেত। এরশাদ তো স্বৈরাচারী ছিল কিন্তু সে কখনও মানুষ খুন করে ক্ষমতায় থাকার জন্য পুলিশবাহিনী ব্যাবহার করেনি। আর বর্তমান নেতৃত্ব জনগনের কথা ভুলে, লজিকের থোরাই তোয়াক্কা করে মানুষ খুন করার হলি খেলায় মেতে উঠেছে। বাসে পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়ে দোষ একজন আরেকজনের ঘাড়ে চাপানোর নোংরামীতে মেতে উঠেছে আমাদের রাজনীতি। এর পরে কার জন্য আকস্মিক মৃত্যুর ফাঁদ অপেক্ষা করবে তা আমার জানা নেই।
গত কয়েকদিন আগে আমাদের মহল্লায় নামাজের ওয়াক্তে একবার নির্বাচনের তফছিল নিয়ে কথা হচ্ছে। কার মনোনয়ন দেয়া হল আর কে পেলনা তা নিয়ে দুই মুরুব্বি কথা বলছিলেন। তাদের বেশ আনন্দিত মনে হল নির্বাচনের গরমে শরীর ভেজানোর আশা জাগায়। আমি বললাম, আচ্ছা চাচা আপনি তো ভাল মানুষ। আপনি কেন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন না, তাহলে আমরা একটু শান্তির নিঃশ্বাস নিতে পারি। চাচা বললেন, এসব কাজ আমাদের না। কথা শুনে আমার খুব রাগ লাগল। আমি বললাম, আসলেই তো আপনাদের কাজ না, অথচ ঠিকই আপনাদের মত ভেরার পাল খেদানর জন্য লাঠিটা শয়তানের হাতে দিতে পারবেন। একথা শুনে তার আর আমার সাথে কথা বলতে শুনিনি। আমাকে তিনি এড়িয়ে চলেন। অথচ সমাজ ধ্বংস হয় ভাল মানুষের নিশ্চুপ থাকার কারণে, গুটিকয়েক শয়তানের লাফালাফিতে নয়। এই লোকটা ভাবছে তাকে কেউ ঘাটাবেনা, অথচ সে নিজেও কতবার করে যে চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছে আর ইচ্ছে মত গালিগালাজ করেছে ঐ চাঁদাবাজদের তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
গ্রানাডায় ১৪৯২ সালে যখন রাজা ফারডিনান্ড আক্রমণ করে অবরোধ করে রাখে তখন শেষ সুলতানের সেনাপতি বলেছিল আমরা মুসলমান। আমরা কাপুরুষের জাতি নই। আমরা শহীদ হব তবুও গোলামীর শিকল পরবনা। তার এই বিপ্লবী চেতনার সাথে একমত হতে পারেনি তখনকার নেতৃত্ব। তাই আক্ষেপের সাথে সেনাপতি বলেছিল, “আজকে তোমরা যারা সমঝোতার নামে নিজেদের জিল্লতির মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছ, তোমাদের দুর্দশা দেখার জন্য আমি বেঁচে থাকবনা”। এই বলে তিনি একাই শত্রুশিবিরের দিকে তার ঘোড়া ছুটিয়ে দেন। তিনি আর ফিরে আসেননি কিন্তু তার বাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলে গিয়েছিল। স্পেনে এখন আর কোন মুসলমান প্রায় দেখাই যায়না। আজকে আমরা যারা দেশের এই চরম দুর্দশা দেখেও ভাবছি আমাদের কি? আমাদের তো কিছু হচ্ছেনা। কিন্তু সেই দিন দূরে নয় যখন সেই ‘কিছুই’ আমাদের ঘরেও এসে নক করবে, তখন কোন সাহায্যকারী পাওয়া যাবেনা।
জন্মের পর থেকে শুনে আসছি এদেশের মাটি খাঁটি সোনার চাইতে খাঁটি। তখন বুঝিনি, কেন? এখন বুঝি, আমাদের খাঁটি সোনা আসলে আর কিছু নয়, আমার দেশের মানুষ। এই মানুষগুলোকেই আসলে ভারত বা আমেরিকার যত ভয়। কারণ, এরা যদি চায় তাহলে সামনের যত বড় বাধাই আসুকনা কেন, সব বাধাই ভেঙ্গে সামনে এগিয়ে চলার অদম্য শক্তি আছে। সে বাধা যদি হিমালয় পর্বতও হয়, আমাদের জনতা তা মার্চ করে মাটিতে মিশিয়ে দিতে পারে। সেই কারণেই আন্তর্জাতিক পরাশক্তি আমাদেরকে এক হতে দিতে চায়না। তাদের ভয়, যদি এই তৃতীয় বিশ্বের মানুষগুলো একবার জেগে ওঠে তাহলে তাদের নিওকলোণীয়ালাজেশন বন্ধ হয়ে যাবে।
আমার এই লেখার পর আমি বেঁচে থাকব কি না আমার জানা নেই । আমিও কোন বাসের আগুনে পুরে ছাই হয়ে যাব কিনা ঐ সব নিরীহ মানুষের মত তা আমার জানা নেই। কিন্তু আমার আর সব ভাইবোনের মত এই মৃত্যু বৃথা যাবে না, শরীরের এই তাজা রক্ত শুকিয়ে যাবে না। কখনও তা কলমের কালি হয়ে, কখনও তা মানুষের মুখের জ্বালাময়ী ভাষা হয়ে বেরিয়ে আসবে। এই রক্ত বেঁচে থাকবে.......এই রক্ত বেঁচে থাকবে যতদিন ন্যায় প্রতিষ্ঠা না হয়। আর ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সে সব শয়তানের পিছু নিবে......নরক পর্যন্ত ধাওয়া করবে ইনশাআল্লাহ। কারণ, রক্ত কথা বলে......
বিষয়: বিবিধ
১৮৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন