হতভাগার জিজ্ঞাসা ১৯
লিখেছেন লিখেছেন হতভাগা ১৬ জুলাই, ২০১৭, ০২:২২:৫৯ দুপুর
১. ফযরের নামাযের জামায়াতের আগে যদি ২ রাকাত সুন্নত
পড়ার সুযোগ না হয় তাহলে সেটা কখন পড়ে নিতে হবে ?
২. মুফতি কাজী মুহাম্মাদ ইব্রাহীমের এক বয়ানে শুনেছি (ইউটিউবে) যে - পুরুষদেরকে চোখ নামিয়ে রাখতে বলা হয়েছে মহিলাদের দেখলে। কারণ দেখার ফলে যে টেস্টোস্টেরন হরমন নিঃসরণ হয় সেটা নাকি কোমরের ব্যথার কারণ হয়।
কোমরে ব্যথা তো মহিলাদেরও হয়। এগুলোর কি ব্যাখ্যা হতে পারে?
৩. অসুস্থ কোন ব্যক্তি যদি একেবারেই রোজা না রাখতে পারে এবং মিসকিনকে একবেলা খাবার দেবার সামর্থ্যও যদি না থাকে তাহলে তার কি হিসেব ?
বিষয়: বিবিধ
৮৪৭ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আবুধাবির মসজিদ গুলোতে ফজরের সময় দেখি লোকাল আরবিরা যদি জামায়াত চলাকালীন মসজিদে প্রবেশ করে, তখন আগে জামায়াতেই শরিক হয়। জামায়াত শেষে ২ রাকাত সুন্নাত পড়ে নেয়। আমিও তাই করি।
আবার অনেক বাংলাদেশি, ইন্ডিয়ানি ও পাকিস্তানীকে দেখি, ফজরের জামায়াত চলতেছে বা জামায়াত শেষ রাকাতে তখনো তারা জামায়াতে শরিক না হয়ে আগে দুই রাকাত সুন্নাত পড়ে নে। যদিও আমি এটা পছন্দ করিনা
হামদ ও সলাতের পর-
১ম প্রশ্নের উত্তর-
ফজরের সুন্নত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা ফজরের সুন্নত ছেড়ে দিও না। যদিও সৈন্যবাহিনী তোমাদেরকে তাড়া দেয়।-মুসনাদে আহমদ ২/৪০৫
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে আববাস ও আবু দারদা রা.-এর মতো বিশিষ্ট সাহাবীদের থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে নিতেন। যেমন আবু দারদা রা. ফজরের সময় মসজিদে প্রবেশ করে লোকজনকে ফজরের জামাতে কাতারবদ্ধ পেলে মসজিদের এক কোণে (ফজরের) সুন্নত পড়তেন। অতপর মানুষের সাথে জামাতে শরিক হতেন।-শরহু মাআনিল আছার, তহাবী ১/২৫৬
সুতরাং ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে যদি জামাতের সাথে দ্বিতীয় রাকাতও পাওয়া যায় তাহলে সুন্নত পড়ে নিবে। আর দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে সুন্নত পড়বে না; বরং জামাতে শরিক হয়ে যাবে এবং সূর্যোদয়ের পর তা পড়ে নিবে।
প্রকাশ থাকে যে, কোনো কোনো ফকীহ সুন্নত পড়ার পর ইমামকে তাশাহহুদে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সুন্নত পড়ার কথা বলেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ফকীহর মত তা-ই, যা উপরে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, জামাত শুরু হওয়ার পর মসজিদে সুন্নত পড়ার কিছু শর্ত রয়েছে। যথা-
ক. কাতারের সাথে মিলিত হয়ে পড়া যাবে না। মসজিদের বারান্দায় বা কাতার থেকে দূরে মসজিদের এক কোণে বা কোনো পিলারের আড়ালে সুন্নত পড়বে।
খ. জামাত থেকে পিছনে পৃথক হয়ে সুন্নত পড়ার মতো জায়গা না থাকলে সুন্নত পড়া যাবে না। এক্ষেত্রে জামাতে শরিক হয়ে যাবে।
-আলজামিউস সগীর ৯০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬১; বাদায়েউস সানায়ে ১/৬৪০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩০৮; আলবাহরুর রায়েক ২/৭৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১২০; মাবসূত, সারাখসী ১/১৬৭; ফাতহুল কাদীর ১/৪১৬
২নং প্রশ্নের উত্তরঃ
যেহেতু জনাব কাজী ইবরাহিম সাহেব উক্ত মতটি ব্যক্ত করেছেন, তাই আগে তার কাছেই জেনে নেয়া উচিত যে তিনি কোন গ্রন্থে উক্ত তথ্যটি পেয়েছেন। তবে এরূপ কিছু এখনো পর্যন্ত আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়নি। তথাপি, কোন মুসলমানের জন্যে কি এটুকুই যথেষ্ট নয় যে মহান রাব্বুল ইজ্জত তাকে আদেশ করেছেন, সেটার পিছে কোন হিকমত সে খুঁজে পায় বা না পায়?
বি.দ্রঃ জাব কাজী ইবরাহিম সাহেব তো কুরআন শরীফে “টাই” শব্দ খুঁজে পান, সুতরাং তার বক্তব্য কতটুকু নির্ভরযোগ্য এবং আদেল হতে পারে তা আল্লাহই ভালো জানেন।
৩নং প্রশ্নের উত্তরঃ
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যদি অসুস্থ্য ব্যক্তির রোগারোগ্যের সম্ভবনা থাকে তাহলে তিনি সুস্থ্য হয়ে উক্ত ছুটে যাওয়া রোযা গুলো আদায় করে নিবেন। কেননা আল্লাহ বলেন, “ আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।” [আল বাক্বরাহ/১৮৫]
কিন্তু যার রোগমুক্তির কোন সম্ভবনা নেই, সেক্ষেত্রে তাকে ফিদিয়া আদায় করবেন। ইরশাদ হচেছ, “অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুখ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্যদান করবে।” [আল বাক্বরাহ/১৮৪]
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি.-এর মতে উপরোক্ত আয়াতে কারিমার মাধ্যমে বৃদ্ধ মুসলমানদেরও উদ্দেশ্য করা হয়েছে। তাঁরা রোযা আদায় করতে না পারলে ফিদিয়া আদায় করবেন। [আল মুগনী ৪/৩৯৬,]
তথাপি কেউ যদি এতটাই দরিদ্র হন যে, তিনি ফিদিয়া আদায় করতে সক্ষম নন, সেক্ষেত্রে তিনি নিজের সাধ্যানুযায়ী যতটুকু হয় ততটুকু আদায় করবেন। এক্ষেত্রে সাহাবী আওস বিন সামির রাযি.-এর ঘটনাটিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করতে পারে, যেখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ কসমের কাফফারা আদায় করতে সমর্থ না হওয়ায় নিজে তাঁর পক্ষ হতে সামান্য কিছু খেজুর সাদাকাহ্ করে দিয়েছিলেন। [ইবুন মাজাহ/২০৬৩, নাসাঈ/৩৬৪০]।
সুতরাং, দারিদ্রের কারণে পূর্ণ ফিদিয়া আদায় করতে না পারলে তার সামার্থ অণযায়ী যতটুকু সম্ভব আদায় করবে।
বাকী আল্লাহই সর্বোত্তম জানেন।
স্ত্রীর মাসিকের সময় বা অসুখের সময় কি স্বামীর কোমরে ব্যথা হতে পারে কারণ সে সময়ে তো একই রকমের ঘটনা ঘটে?
(খ) হাদীসে বলা হয়েছে, "ফজরের নামায আলোকিত করে পড়ো, অর্থাৎ আলো ফোটার ঠিক আগ মুহুর্তে পড়।" যদি হাদীস অনুসরণ করে ফজর পড়া হয় তাহলে নামাযের পর সুন্নাত পড়ার সময় থাকে না সূর্যদয়ের কারণে।
(২) পূর্বে বলেছি, এ বিষয়টি এ পর্যন্ত কোন কিতাবে পড়িনি বা শুনিনি। সুতরাং না জেনে বলা মুশকিল। বাকী সূত্র দেওয়া হলে যাচাই করে দেখা যেতে পারে।
০ নামাজ আওয়াল ওয়াক্ত পড়ে নেওয়া কি উত্তম নয় ?
হজে থাকাকালিন সময়ে মক্কা মদিনার কোথায়ও আলোকিত করে ফযরের নামাজ পড়তে দেখিনি।
আউয়াল ওয়াক্তে বা তাখির ওয়াক্তে নামাযা পড়া উভয়টিই সহীহ সুন্নাহ হতে মুতাওয়াতিরভাবে প্রমাণিত। উভয় আমলের পক্ষেই একাধিক জলীল ক্বদর সাহাবির মতামত পাওয়া যায়। সুতরাং শুধুমাত্র আউয়াল ওয়াক্তকে “উত্তম” বলাটা সুন্নাতে রাসূলের সাথে ইনসাফপূর্ণ হবে না বলেই আমার মনে হয়।
জাযাকাল্লাহু খইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন