হতভাগার জিজ্ঞাসা ৬
লিখেছেন লিখেছেন হতভাগা ১৬ মে, ২০১৬, ১০:৫১:০৯ সকাল
১. জুম্মার নামাজ কোনভাবে মিস হয়ে গেলে কি করার আছে ?
২. নামাজের সময়ে বিশেষ করে জুম্মার নামাজে যখন মাসজিদের বাইরে মাঠে/বারান্দায় খুব ভীড় হয় তখন যদি কেউ এমন জায়গায় দাঁড়ায় যা ইমামের সামনে হয়ে যায় - এমতাবস্থায় কি নামাজ সঠিক হবে?
৩. তায়াম্মুম পরিষ্কার + পবিত্র মাটি ছাড়া আর কিভাবে করা সম্ভব ?
৪. কসরের নামাজ কখন পড়তে হয় ? আমার জানামতে দূরত্ব যদি ৪৮ মাইল(নাকি কি্মি্) এর বেশী হয় এবং সেখানে যদি ১৫ দিনের কম সময় থাকা লাগে সেরকম হলে নামাজ কসর করা যায়।
কারও কর্মস্থল যদি এরকম দূরত্বের হয় এবং প্রতিদিন সে বাসা থেকে অফিস করে তাহলে সে কি কসর করবে নাকি পুরোটাই পড়বে ?
৫.ইকামতে সময় দেখা যায় যে লা.... বলার সময় যেখানে ৪ আলিফ টান দিয়ে পড়ার কথা সেরকম হয় না, কম হয় । এতে কি নামাজ সঠিক হবে ?
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৪ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কসরের নামাজ হচ্ছে আউট অফ অর্ডিনারি রুটিনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য|যদি কেউ প্রতিদিন পঞ্চাশ মাইল যাতায়াত করে চাকুরীর জন্য তবে তার জন্য কসর প্রযোগ্য হবে না পঞ্চাশ মাইল দূরুত্বে | কিন্তু কেউ যদি সপ্তাহে বা মাসে ওই একই সমান দুরত্বে ভ্রমন করে তবে তার জন্য কসরের নামাজ প্রযোজ্য হবে | আমার সপ্তাহে একদিন আমাদের এখান থেকে ৫৫ মাইলের মত দুরে আরেকটা শহরে যেতে হয় একটা একাডেমিক কাজে | আমি মসজিদের ইমাম সাহেবকে তখন কি ভাবে নামাজ পড়ব সেটা জিগ্গেস করাতে উনি আমাকে কসর পড়ার কথা বলেছেন যেহেতু এটা আমার প্রতিদিনের রুটিন কাজের বাইরের ব্যাপার বলে |
আমি অবশ্য কোনো উত্তরের জন্যই রেফারেন্সে জানতে চাইনি | তাই কোনো রেফারেন্সে বলতে পারলাম না |
( ২,৩ ও ৫ নং জানা থাকলে জানাবেন)
৪। কসর এর ক্ষেত্রে ৪৮ মাইল দূরত্ব এর বিষয়টি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। মুসাফির বা সফরকারী হলেই কসর নামায পড়তে হয়। তবে হানাফী আলেমরা একটি স্টান্ডার্ড পরিমাপ নির্ধারণ করার জন্য ৪৮ মাইলকে ভিত্তি ধরতে বলেছেন।
আপনার উল্লেখিত ক্ষেত্রে কসর না পড়ে রেগুলার নামায পড়বে। কারণ এক্ষেত্রে উনি নিয়মিত যাতায়াতকারী, মুসাফির নন। মুসাফিরের জন্যই কসর। এ মুহুর্তে রেফারেন্স নেই। অভিজ্ঞ আলেমদের আহবান জানাচ্ছি।
তিনি তখন জোহরের নামাজ পড়বেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা লুকিয়ে আছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, কারা জুমার জামায়াতে হাজির হয়েছে সে সব লিপিবদ্ধ করার জন্য ফেরেশতারা কিতাব নিয়ে হাজির থাকেন। ইমাম যখন খোতবা পড়তে দাঁড়িয়ে যান, তখন ফেরেশতারা ইমামের খোতবা শোনার জন্য সে দিনের জন্য কিতাব বন্ধ করে দেন। এর পরে যারা মসজিদে প্রবেশ করবেন, তাদের নামাজ জোহরের নামাজ বলেই গণ্য হবে। যদিও তিনি ইমামের সাথে জামায়াত করেছেন কেননা সংগৃহীত ফেরেশতাদের বালামে খোতবা শুরুর পরে আসা মুসল্লিদের নাম লিপিবদ্ধ হবার সুযোগ নাই।
একদা ওসমান (রাঃ) আজান না শোনার কারণে রাসুলের খোতবা দেওয়া কালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করেন। রাসুল (সাঃ) পুরো খোতবায় ওসমান (রাঃ) কে ভৎসনা করেন।
এ ঘটনায় ওসমান (রাঃ) নিয়ত করেন যদি তিনি কোনদিন সুযোগ পান, তাহলে জুময়ার নামাজে আরেকটি আজানের ব্যবস্থা করবেন। পরে তিনি যখন খলিফা হন তখন জুময়ায় দ্বিতীয় আজানের ব্যবস্থা করেন।
তারপরও আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়া দেখান, গোস্বা করে বান্দার আমল তিনি কখনও নষ্ট করেন না। ধন্যবাদ।
০ সূরা আবাসা এর এর প্রথম কয়েকটি আয়াত দেখতে পারেন এবং অন্ধ সাহাবী ও মুসলিম বিশ্বের ৩য় খলিফার তুলনা সম্পর্কে বললে ভাল হয়।
ইমামের আগে যে বা যাহারা সংখ্যায় যতই হোক না কেন, অগ্রসর হয়ে কাতারে দাঁড়ালে নামাজ সঠিক হবে না।
১। বিশেষ কোন কারণে জুমআর নামায মিস হলে জোহেরর নামায আদায় করবেন।
২। ইমামেম আগে দাড়ালে কোন অবস্থাতেই নামায হবে না।
৩। তায়াম্মুম মাটি ও মাটি জাতীয় সকল বস্তু দ্বারা করা যাবে, যেমন বালি, সুরমা, পাথর, ইট ইত্যাদি।
৪। কসরের জন্য সফরের দূরত্ব
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِكٍ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، رَكِبَ إِلَى ذَاتِ النُّصُبِ فَقَصَرَ الصَّلاَةَ فِي مَسِيرِهِ ذَلِكَ . قَالَ مَالِكٌ وَبَيْنَ ذَاتِ النُّصُبِ وَالْمَدِينَةِ أَرْبَعَةُ بُرُدٍ হাদীস নম্বর-৩৫০ : হযরত সালেম বিন আব্দুল্লাহ রহ. বলেন: হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার রা.
জাতুন নুসুব নামক স্থানেরদিকে গেলেন। তিনি তাঁর এ পরিমাণ সফরে কসর করলেন।
হযরত মালেক রহ. বলেন: মদীনা ও জাতুন নুসুব নামকস্থানের মাঝে দূরত্ব হলো চার বুরুদ অর্থাৎ, ৪৮ মাইল।
(মুওয়াত্তা মালেক: ৩৪১, ইবনে আবী শাইবা: ৮২২০)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাউকুফ। এ সনদটি মুহাদ্দিসগণেরনিকটে الذهب سلسلة
“হাদীস বর্ণনার সোনালী ধারা” হিসেবে খ্যাত। সুতরাং হাদীসটি উঁচু মানের সহীহ।
وَأَخْبَرَنَا أَبُو حَامِدٍ أَحْمَدُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ أَحْمَدَ الرَّازِيُّ الْحَافِظُ، أنبأ زَاهِرُ بْنُ أَحْمَدَ، ثنا أَبُو بَكْرٍ النَّيْسَابُورِيُّ، ثنا يُوسُفُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ مُسْلِمٍ، ثنا حَجَّاجٌ، ثنا لَيْثٌ، حَدَّثَنِي يَزِيدُ بْنُ أَبِي حَبِيبٍ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، " أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ، وَعَبْدَ اللهِ بْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ كَانَا يُصَلِّيَانِ رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ، وَيُفْطِرَانِ فِي أَرْبَعَةِ بُرُدٍ فَمَا فَوْقَ ذَلِكَ "
হাদীস নম্বর-৩৫১ : হযরত আতা বিন আবী রবাহ রহ. বলেন:হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমার এবং আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা.চার বুরুদ বা তার চেয়ে বেশী দূরত্বে দুই দুই রাকাত নামাযপড়তেন এবং রোযা ছাড়তেন। (সুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী:৫৩৯৭)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, মাউকুফ। ইউসুফ বিন সাঈদের উপরপর্যন্ত সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী।
আর ইউসুফ বিনসাঈদ বিন মুসলিমকে
হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেন, ثقةحافظ “নির্ভরযোগ্য, হাফেজ”।
(তাকরীব: ৮৮৭৪) আবু বকরনিশাপুরীর ব্যাপারে ইমাম ইবনে আসাকির বলেন: الفقيه الحافظ “ফকীহ, হাফেজ”।
(তারীখে দিমাশক: ৩৪৯৬) যাহেরবিন আহমাদকে ইমাম জাহাবী বলেন: الإمَامُ، العَلاَّمَةُ، “ইমামএবং উঁচু মাপের আলিম”।
(সিয়ারু আলামিন নুবালা: তবকা-২১, রাবী নম্বর- ৩৫২) আর আবু হামেদকে ইমাম বাইহাকীনিজেই হাফেজ বলেছেন।
ইমাম নববী রহ. বলেন: رَوَاهُ الْبَيْهَقِيّ بِإِسْنَاد صَحِيح. “হাদীসটি ইমাম বাইহাকী সহীহসনদে বর্ণনা করেছেন”। (খুলাছাতুল আহকাম: ২৫৫১)
সারসংক্ষেপ : এক বুরুদের পরিমাণ ১২ মাইল। (মিসবাহুললুগাত) সুতরাং চার বুরুদে ৪৮ মাইল হয়।
কিলোমিটারের হিসেবে ৭৭ কিলোমিটারের কিছু বেশী। এ পরিমাণ দূরত্বঅতিক্রমের নিয়াতে কেউ নিজ এলাকা পরিত্যাগ করলে সে কছর করা শুরু করবে।
৫। লা.... তিন আলিফ, এতে এক আলিক টানার অনুমতি রয়েছে।
চার আলিফ টানা মানে - না (নাই) । এক আলিফ টানা মানে - হাঁ (আছে)!!
"লা" টানা ছাড়া পড়লে অর্থ হল : অবশ্যই।
এক আলিফ, তিন আলিফ, চার আলিফ সবগুলোর অর্থ "না" "নয়" "কক্ষনো নয়" "হতে পারে না" "হবে না" "হয় নাই" ইত্যাদি।
আশা করি বুঝে নেবেন।
ইক্বামতের মধ্যে চার আলিফের কোন মদ নেই, তিন আলিফের আছে, যা এক আলিফও পড়তে পারবেন।
আবার এক আলিফ কে তিন আলিফ পড়াও জায়েয, যেমন আযানের মধ্যে একটু টেনে দেওয়া হয়।
ধন্যবাদ।
তখন তাঁকে ঘরের দেওয়ালে হাত দিয়ে বালি সংগ্রহ করে তায়াম্মুম করতে হবে।
যখন হাদিস বলা হয়েছিল, তখন 'মাইল আর কিলোমিটারের' পরিমাপ সৃষ্টি হয়নি। অনেকের কাছে মাইল আর কিলোমিটারের পরিমাপের তফাত জানা থাকার কারণে দুটোকে গুলিয়ে ফেলেন। যাক, মুসাফিরের ধার্য সকল দিনেই তিনি কসরের নামাজ পড়বেন।
তাঁকে যদি প্রত্যহ কসরের দূরত্বে যেতে হয় তাহলে প্রতিদিন কসর পড়বেন, এভাবে পুরো জীবন যদি পড়ার দরকার হলে তাই তাঁর জন্য মাসয়ালা। কারো চাকুরী কসরের দূরত্বে হলে, তিনি প্রত্যহ কসর পড়বেন। মুসাফিরের নিয়তের মানুষ ঘর থেকে বের হওয়া এবং ঘরে ফেরা অবধি তিনি কসর পড়বেন।
যেমন, তিনি যদি বাড়ীতে আসার পথে, ঘরে পৌছার দুই মাইল আগে মাগরিবের ওয়াক্ত হয়ে পড়ে। তাহলে তিন সেই মাগরিবের নামাজের সাথে এশার নামাজ পড়তে পারবেন মুসাফির হিসেবে। যদিও তিনি বাসায় পৌছার পরে এশার আজান শুরু হবে। এই সুযোগ মহান আল্লাহ মুসাফিরের জন্য স্পেশাল করে দিয়েছেন।
ইকামাত হল নামাজে জামাতে দাঁড়ানোর জন্য আহবান। ইকামাতে কোন ভুল হলেও নামাজ হয়ে যাবে। কেননা ইকামাত নামাজের আরকান কিংবা আহকামের অংশ নয়। অর্থাৎ নামাজের ১৩ টি আরকান-আহকামের মাঝে ইকামাতের কোন কথা নাই।
নবী রাসূলদের পরেই সাহাবাদের স্থান ।
উনারা যদি এরকম করেন তাহলে যার মনে কুচিন্তা আছে সে তো সুযোগ নেবেই । আর সাহাবাদের মুখ থেকে তো অনেক হাদিস সংকলিত হয়েছে ।
সাহাবারা যেটা করতে সাহস করতেন না সেটা এখনকার আলেমগণ করেন কিভাবে ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন