হতভাগার হজ (সেরা ব্লগ নির্বাচকের অনুরোধে - একাধারে ৩ টি পোস্ট)
লিখেছেন লিখেছেন হতভাগা ৩০ আগস্ট, ২০১৫, ০৫:২৫:২৭ বিকাল
গত বছর ২০১৪ (১৪৩৫ হিজরী) সালে আল্লাহ তা'য়ালার অশেষ রহমতে পবিত্র হজ পালন করার সৌভাগ্য হয়েছিল । আমার সাথে আমিসহ ৪ জন ছিলেন ।
মোট ৪৪ দিনের প্যাকেজ ছিল আমাদের । প্রথমে মক্কায় ছিলাম ৩৩ দিন (হজের দিন গুলো সহ) , পরে মদিনায় ১০ দিন ।
http://www.monitor-bd.net/blog/blogdetail/detail/11098/MinhazMasum/67782
মিনহাজ ভাইয়ের পোস্ট দেখে আমিও আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার ইচ্ছা চাপিয়ে রাখতে পারলাম না । আমার এই অভিজ্ঞতার বর্ণনা হয়ত মিনহাজ ভাইয়ের মত এতটা সুসংহতভাবে হবে না । তবে এই সব দিন গুলোতে একজন হাজি কি কি সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন সেটার কথাই বুঝতে পারবেন ।
আমাদের ফ্লাইট ছিল ১৭ ই সেপ্টেম্বর ২০১৪ তে সকাল ৮.৪৫ এ চট্টগ্রাম থেকে । আগের দিন রাতে কানেকটিং ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চলে আসি ।
০ এহরামের কাপড় পড়ে নেই চট্টগ্রাম বিমানবন্দরেই , প্লেনে ওঠার ২৫-৩০ মিনিট আগে ।
০ এর আগে সেখানে ইমিগ্রেশনে পুলিশ আপনাকে চেক করবে ফর্মালিটিজ মেউনটেইন করতে।
০ ওখানকার পাশেই আপনাকে সৌদি সিম (Mobily)দেওয়া হবে । সাথে ৫ রিয়াল ফ্রি টক টাইম দেবে ।
০ এহরামের কাপড়ের নিচের অংশ বেল্ট দিয়ে বাঁধবেন । পকেট সিস্টেম বেল্ট কিনবেন । খুবই কাজ দেবে সেটি । মহিলাদের শরিয়ত সন্মত কাপড়ই ইহরামের কাপড়।
০ লাইন ধরে বিমানে উঠতে হবে. বিমানে নিজ আসন নিয়ে বসে পড়বেন। দোয়া পড়বেন এবং সাথে হজের নিয়মের বইটিও । সাড়ে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা সময় লাগে জেদ্দায় পৌছাতে।
বাংলাদেশী হাজিদের জন্য মিকাত (যেটা ইহরাম বাঁধার পয়েন্ট) হল ইয়া লাম লাম পর্বত । ইয়া লাম লাম পর্বতের নিকট আসার ৩০ মিনিট ও ৫ মিনিট আগে ঘোষনা দেবে যে নিয়ত বেঁধে ফেলার জন্য
০ জেদ্দায় আপনাদেরকে হাজিদের জন্য যে স্থা সেখানে রাখা হবে । বিভিন্ন চেকিংয়ের পর আপনাকে বাংলাদেশী হাজিদের জন্য রাখা লাউন্জে রাখা হবে । এসময়ে আপনার পাসপোর্ট টি রেখে দেবে আপনার এজেন্সী যে মোয়াল্লেমের অধীনে আছে তাদের লোকেরা । পরে যেদিন সৌদি থেকে চলে যাবেন সেদিন আবার সেটা ফেরত দেবে ।
০ হাজি হিসেবে সনাক্তের জন্য তারা আপনাকে একটা কার্ড দেবে আপনার এজেন্সীর মাধ্যমে ২/১ দিনের মধ্যে।
০ বিমানে থাকা আপনার লাগেজ গুলো একটা বিশেষ ট্রাকে এনে আপনাদের সামনে রাখা হবে । সমস্যা হল হাজি ক্যাম্পের মাধ্যমে সবাইকে একই কালারের ট্রলিব্যাগ দেওয়া হয় (কালো) , এতে নিজেরটা চেনা খুব মুশকিল । সাদা কালি দিয়ে নিজের নাম , পাসপোর্ট নং ও অন্যান্য দরকারী ইনফরমেশন লিখে রাখবেন ব্যাগের গায়ে ।
০ আপনার এজেন্সীর জন্য নির্ধারিত বাস এলে সেখানে আপনাকে উঠতে হবে , ব্যাগ যাবে উপরে।
দুপুর সাড়ে বারোটায় নেমে আমাদের জন্য নির্ধারিত হোটেলে পৌছেছিলাম রাত ৯ টায় । ধৈর্য্য ধরতে হবে সবসময়ই ।
পথে পথে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা খাবার ও লিফলেট বিলি করছিল ।
০ আমাদের হোটেলটি ছিল হারাম শরীফ থেকে ৮ মিনিটের হাটা দূরত্বে।
হজে আসার সময়ে শুনেছি যে এজেন্সী ওয়ালারা দূরে রাখে আর খাবারও হয় জঘন্য । আল'হামদুলিল্লাহ হজে এসে সেটা দূর হয়েছে । খাবার এমন দিত যে প্রথম প্রথম আমরা চিল্লাচিল্লি করতাম এত খাবার কেন দেওয়া হচ্ছে । ফেলে দিতে হয়েছে অনেক খাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও । পরে যারা খাবার আনতো তাদেরকে দিয়ে দিতাম যে গুলো নষ্ট হবার সম্ভাবনা ছিল।
০ সৌদি নেমে হোটেলে এসেই আমাদের প্রথম কাজ ছিল 'এশার নামাজ পড়ে ওমরাহ এর জন্য বেরিয়ে পড়া । নতুন হওয়াতে এবং এজেন্সীর লোকেরা পরে আসাতে আমাদের একা একাই ওমরাহতে যেতে হয়েছিল । রাত ১ টায় গিয়েছিলাম সেখানে । ওমরাহ করে তাহাজ্জুদ ও ফজরের নামাজ পড়ে মাথা মুন্ডন করে হোটেলে ফিরে এসে ইহরাম মুক্ত হই ।
০ পরের দিন গুলো স্বাভাবিক ভাবেই চলাফেরা করি । নামাজ , জিকির ও ক্বুরআন তেলোয়াতে মশগুল থাকি । ওয়াক্তে ওয়াক্তে হারাম শরীফে যাই । তবে মাগরিব ও 'এশার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরি । হাজিদের তালবিয়াহ পড়া শুরু করতে হবে ইয়া লাম লাম পাহাড়ের কাছাকাছি এসে ইহরাম বাঁধা ও নিয়তের সাথে সাথে এবং এটা ১ম দিন বড় জামারাতে পাথর মারার ঠিক আগ মূহুর্তে বন্ধ করতে হবে । কিছুক্ষন পর পর এটা বলতে হবে এবং একসাথে ৩ বার ।
০ আমরা তাওয়াফ করতে যেতাম রাত দেড়টা - দুটায় , এসময় ভিড় কম থাকে । উপরে হুইল চেয়ারের জন্য যে রিংটা থাকে সেখানেই করতাম ।
০ জুম্মার দিন সকাল ১০ টার আগে বের না হলে হারাম শরীফের ভেতরে ঢোকা কঠিন । তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য বের হবেন আর ফজরের নামাজ পড়ে এসে রুমে এসে নাস্তা খেয়ে ঘুম দেবেন । সকাল ৮ টা সাড়ে আট টায় উঠে গোসল করে হারাম শরীফে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিতাম ।
০ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সাথে খুব একটা বেশী নেওয়া ঠিক হবে না কাপড় চোপড় ছাড়া । বিছানার চাঁদর ও পাম্প দেওয়া বালিশ নেবেন যেটা আরাফার ময়দান ও মুজদালেফাতে কাজে দেবে । পায়ের স্যান্ডেল হতে হবে হাওয়াই চপ্পল - এটা জরুরী ।
ছোটখাট জিনিস কেনার জন্য আছে বিখ্যাত '' তালাতা রিয়াল'' এর দোকান । আরবীতে ছালাছা মানে তিন , এটা ওখানে তালাতা বলে উচ্চারিত হয় ।
০ এবারকার খাবার সরবরাহ হবে সেন্ট্রালী । সৌদিদের খাবারে যেটা পাবেন না সেটা হল - হাজীদের জন্য এরা খাবারে স্পাইস ব্যবহার করে না বা করতে দেয় না । কারণ পেটের পীড়া হলে অসুস্থ হাজীদের সামাল দেওয়া কঠিন।
০ খুব খাবেন ফলের জুস । দারুন মজা পেয়েছিলাম এগুলো খেয়ে । ফ্রেস ফল সব ।
০ এখানকার রোদের প্রখরতা নিয়ে খুব টেনশনে ছিলাম । এখানকার তাপমাত্রা ৪০ থেকে কখনও কখনও ৫১ /৫২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডও ছিল । আল'হামদুলিল্লাহ ! কোন সমস্যা হয় নি এতে। হারাম শরীফের বারান্দার মেঝের পাথরের বৈশিষ্ঠ্য হল , এটা রোদে গরম হয় না । ঠান্ডাই থাকে । তবে এর উপর মসলা বিছালে নিচে হাত দিলে গরম লাগে।
০ সাথের বেশ কিছু হাজিদের দেখতাম যে মুহুর্মুহু ওমরাহ করছে । আশেয়া মাসজিদ গিয়ে ইহরাম বেঁধে আসতো । ৩-৫ রিয়াল লাগতো যেতে ও আসতে। আমি যাই নি কারণ ওমরাহ করতে গেলে হজ করার আগেই যদি অসুস্থ হয়ে পড়ি , সাথে মুরুব্বী ছিলেন ।
০ হজরে আসওয়াদে চুমু খাবার যে টাফ কম্পিটিশন সেটাতে যাই নি । কারণ এটা তো ম্যান্ডেটরি না ।
এভাবেই নিয়মিত মাসজিদে গিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ , ক্বুরআন তেলাওয়াত ও তাসবীহ পড়ে পার হত থাকে দিন গুলো ।
ঘনিয়ে আসে হজরে দিন গুলো ........
চলবে ইন শা আল্লাহ
**************************************************************************************************
হজের মূল কার্যক্রমে প্রবেশ করার আগে কিছু জিনিস মনে রাখা বান্চনীয় ।
সাধারণ দিন গুলোতে আপনি আপনার সময় ও সুযোগ মত তাওয়াফ করবেন । তাওয়াফ করা শেষে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয় , প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে সূরা কাফেরুন আর ২য় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া রীতি ।
এরপর জমজমের পানি খাবেন এবং শেষ অংশ মাথায় দিবেন , সাথে দোয়াও আছে । আশে পাশে শক্ত প্লাস্টিকের হাটু সমান ঘিয়া রংয়ের অনেক পানির ড্রাম আছে , ডিসপোজেবল পানির গ্লাস (প্লাস্টিকের) আছে । ম্যাক্সিমাম ড্রামেই ঠান্ডা পানি থাকে , নরমাল পানির ড্রাম একটু খুঁজে দেখতে হবে । তবে এটা ঐগুলোর সাথেই থাকে ।
তওয়াফের সময় ধাক্কা ধাক্কি হয় , তবে এটা খুব সামান্য । হাসি মুখে সহ্য করে যাবেন । ইচ্ছে করে এটা কেউ করে না । হুইল চেয়ার পিছনে থাকলে পায়ের পিছনের রগ সাবধান ।
হজরে আসওয়াদ থেকে তওয়াফ শুরু হয় । ইংরেজিতে লিখা আছে সাদা কালিতে সবুজ বোর্ডে Tawaf start. সবুজ রংয়ের টিউব লাইটও আছে বোঝানোর জন্য।
শুরু করে যখন চক্কর প্রায় শেষ হবে ঠিক সেই মুখে আপনার হাঁটার গতি কমে আসবে কারণ সেখানে কেউ কেউ নতুন ঢুকে তওয়াফ করতে আবার যাদের তওয়াফ শেষ তারা বের হয়ে যায় ।
একবার চক্কর দিতে আমার ৩.৫ থেকে ৪ মিনিট লাগতো । ৭ চক্কর দিতে ২৫-২৮ মিনিট।
ক্বাবা শরীফকে বাম দিতে রেখে হজরে আসওয়াদ থেকে তওয়াফ শুরু করতে হবে , দুই বা এক হাত তুলে '' বিসমিল্লাহে আল্লাহু আকবার '' বলে আরম্ভ করতে হয় প্রতি চক্করে।। তওয়াফের শেষ চতুর্থাংশ মানে রুকনে ইয়ামিনী থেকে হজরে আসওয়াদ পর্যন্ত যেতে যেতে '' রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া ....... '' এটা পড়া রীতি । বাকী প্রথম ৩ চতুর্থাংশে আপনার মন মত তসবীহ পড়ুন ।
হুইল চেয়ার লাগলে সেটা পাওয়া যায় ফ্রীতে যেখান থেকে হুইল চেয়ারে হাজিদের হারাম শরীফে নিতে রাস্তা করা আছে তার নিচে । এটা হাজিরা রেখে যায় (বাধ্য হয়) ।আরবীতে হুইল চেয়ারকে আরাবিয়া বলে । এটা নিয়ে সে সময়ে খুব ঝামেলা হয়েছিল।
হুইল চেয়ার কিনে নেওয়া ভাল কারণ হজের দিন গুলোতে এটা বয়ষ্কদের জন্য কাজে দেয় । Nahdi নামে আমাদের লাজ ফার্মার মত সেখানেও ফার্মেসী চেইন আছে , সেখান থেকে কিনেছিলাম । ২৯৫ রিয়াল করে ।
তাছাড়া হুইল চেয়ার ভাড়া পাওয়া যায় হারাম শরীফে ঐ পথেই, লোক আছে ঠেলার জন্য । ১০০ থেকে ৩০০ রিয়াল নেয় , সময় সাপেক্ষে।
অসুস্থ হলে বাংলাদেশ হজ মিশনের অফিসে চলে যাবেন মিসফালাহ রোডে । হিজরী রোডে ওদের ক্লিনিক ।প্রয়োজনে তারা আপনাকে বড় হাসপাতালে রেফার্ড করে দেবে , নিজেদের এম্বুলেন্সে নিয়ে যাবে । হাসপাতালটি আব্দুল আজীজ হাসপাতাল , মক্কার কাছেই নামকরা হাসপাতাল । হাজিদের খুব সন্মান করে তারা । এক পয়সাও লাগে না এই প্রসেসে। তবে আপনাকে হোটেলে ফিরতে হবে নিজ খরচায়।
হজের মূল কার্যক্রম শুরু হবার দিন ৪ এক আগে আপনাদেরকে হজের স্থান গুলো এবং বিভিন্ন বিখ্যাত স্থান দেখাতে নিয়ে যাবে । এটা আপনার হজের টাকার অংশেই পড়ে। মিনা , আরাফাত ও মুজদালেফা ঘুরিয়ে আনবে । মিনা ভাল করে চিনতে পারবেন কারণ মিনাকে বলা হয় তাবুর শহর । হাজারে হাজারে স্থায়ী তাবু সেখানে ।
জাবালে নূর : যেখানে রাসূল (সাঃ) প্রথম ওহী প্রাপ্ত হন , হেরা গুহা এখানে ।
জাবালে সুর : (মদীনায় হিজরত করার সময় রাসুল(সাঃ) কে কাঁধে নিয়ে আবু বকর (রাঃ) এখানে উঠেছিলেন , এটার উচ্চতা ২৫০০ ফুট। আবু বকর (রাঃ)কে সাপে কেটেছিল এখানেই ।
জাবালে রহমত : আরাফার ময়দানে , এখানে রাসূল (সাঃ) বিদায় ভাষন দিয়েছিলেন - এটাই হবে হাসরের ময়দান.
জান্নাতুল মাওলা : খাদিজা (রাঃ) এর কবর এখানে। কথিত আছে যে জান্নাতুল মাওলা ও জান্নাতুল বাকিতে কবরের আযাব হয় না / মাফ।
এসব স্থান আপনাদেরকে দেখাতে নিয়ে যাবে ।
**********************************************************************************************
মিনাতে যাবার আগের দিন মানে সাত তারিখ রাতে ( প্রকারান্তে সেটা আসলে ৮ তারিখের শুরু) আপনাকে রেডি থাকতে বলা হবে হজের ইহরাম বাঁধার জন্য । বলা হবে যে রাত সাড়ে আট টার (মানে 'এশার) পর যে কোন সময়ে গাড়ি আসবে । আপনাকে ওরা দরকার হলে ঘুম থেকে ডেকে নেবে।
এই ঘোষনা শোনার সময় আপনাদেরকে বলে দেবে যে 'আসরের সময় তারা দল বেঁধে যাবে। সেখানে নামাজ আদায় করে হজের জন্য দুইর রাকাত নামাজ পড়ে নেবে (নফল)।
খুব বেশী কিছু নিতে হবে না । তবে ইহরামের ২য় সেট কাপড় , বিছানা ও বালিশ নিতে ভুলবেন না ।
সকালে না নিয়ে আগের দিন রাতে নেবার কারণ হল , সকালে হাজারে হাজারে বাস এক সাথে মুভ করবে । এই ঝামেলা এড়ানোর জন্যই মোয়াল্লেমের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা থাকে।
বাস দেরিতে আসছে কেন - এই নিয়ে হৈ চৈ না করে তসবীহ পড়বেন বা ঘুমিওয়ে নেবেন । তবে টেনশনে ঘুমাতে পারি নাই।
মিনা মক্কা থেকে ৪-৫ মাইল দুরত্বের । যেতে যেত হয়ত রাত ১/২ টা বেজে যেতে পারে । তাবুগুলো এসি করাই থাকে । এক একটা তাবুতে প্রায় ১০০ জন থাকে । পুরুষ মহিলা আলাদা। তাবুর পাশে পানির ড্রাম আছে।
কার্পেটের উপর পাতলা বেডিং থাকে যার প্রস্থ এক হাত হবে কি না সন্দেহ। এখানেই আপনাকে শুতে হবে ।
মোবাইল চার্জেরও ব্যবস্থা আছে , তবে সেটার জন্য তটস্থ থাকতে হবে । মোবাইলে সব সময় চার্জ রাখবেন এবং ব্যালেন্সও থাকা চাই ।
বাথরুমের সমস্যার কথা শুনে এসেছি হজে আসার আগে থেকেই । আসলেই এখানে টাফ ফাইট দিতে হয় , তবে আগেভাগে গিয়ে সেরে আসলে সমস্যায় পড়তে হয় না বা যখন কোন রাশ থাকে না সে সময়ে যেতে পারেন। আমাদের মোয়াল্লেমের পাকিস্তানী হাজিরাও ছিল আরেক পাশে । তাদের টয়লেট আমাদেরটার চেয়ে কম হট্টগোলের।
বাথরুমে যে কল থাকে তাতে পাইপ লাগানো থাকে , তবে হ্যান্ড গান নেই । ফলে কল ধরে চালু করতে হয় । বেশীর ভাগ সময়ই পানি ছিটকে যায় এবং পাশের বাথরুমে চলে যায় নিচে ফাঁকা আছে বলে।
যেদিন আরাফাতে যাবেন তার আগে বিকেলে আপনাদেরকে সাথে নিয়ে দূর থেকে জামারাহ দেখাতে নিয়ে যাবে এবং কোন পথে জামারাতে পাথর মারতে যাবে এবং কোন পথে ফিরে আসবে সেটা ব্রিফ করবে।
রাতের জন্য বলা থাকবে যে গাড়ি আসবে , আরাফাতে যাবার জন্য তৈরি থাকতে । যদিও পরের দিন যোহর থেকে থাকার নিয়ম , তবুও রাতেই নিয়ে যায় । কারণ ঐ মিনায় যাবার কারণটাই। এখানে ব্যাপারটা আরও টাফ ।
আরাফার ময়দানের তাবুগুলো অস্থায়ী । এখানে কার্পেট থাকে , তবে বিছানা বালিশ আপনার ।
এখানে এসে ঘুমানোর পর সকালে উঠে তসবীহ পড়া শুরু করবেন এবং ক্বুরআন পড়বেন । একটুও সময় নষ্ট করবেন না । কারণ এখানে দোয়া কবুল হয় ।
গোসল করার সময় উপরের নিচের কাপড় ভিজানোর পর নতুন সেটের নিচের পাড়টা আগে জড়িয়ে ফেলবেন । কোনভাবেই ইহরামের কাপড় সম্পুর্ন ছাড়া হবেন না ।
প্রচুর খাবার সরবরাহ করা হয় এসময় । তবে বেশী খেলে সমস্যায় পড়বেন ।
মাগরিবের বেশ আগেই আপনাদেরকে বাসে উঠিয়ে নেবে , 'আসরের নামাজের পর পরই । মাগরিবের আগে গাড়ি আরাফাতের ময়দান ক্রস করতে দেওয়া হয় না ।
গাড়িতে আগে উঠলেও আপনার গাড়ি মুভ করতে করতে মাগরিবের ঘন্টা খানেক পার হয়ে যাবে ।
শুরু হবে মুজদালেফার উদ্দেশ্য যাত্রা । মাত্র আধা ঘন্টার পথ বাসে গেলে (যদি রাস্তা ক্লিয়ার থাকে)। হেঁটে গেলে শুনেছি রাত ১০ টায় পৌছে যাওয়া যায় ।
আমরা পৌছেছিলাম রাত পৌনে দুই টায় । মানে বাসে চড়া থেকে প্রায় ৯ ঘন্টা ।
আরাফাত থেকে মুজদালেফা গমনের এই সময়টা খুব টাফ । প্রচন্ড ধৈর্য্য ধরতে হয় এসময়ে । এত দীর্ঘ সময়ের কারণে বাথরুমেরও কঠিন সমস্যায় পড়তে হয় । দেরীতে পৌছানো পর আপনাকে যে সমস্যাটা ফেস করতে হবে যে, প্রথমেই বাথরুম করতে যেতে হবে ।
মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে পড়ে নিতে হবে । জামারাহতে মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করতের হবে ( পাথর মুজদালেফা থেকেই নিতেন রাসুল (সাঃ))। তাহাজ্জুদের নামাজ ও ফজরের নামাজ পড়ে মিনাতে যেতে হবে , হয় তাবুতে না হয় জামারাতে পাথর মারতে।
বাথরুম , মাগরিব ও এশার নামাজ একসাথে এবং পাথর সংগ্রহ করা - দেরীতে পৌছালে স্বল্প সময় পাওয়া যায় এগুলো করতে।
আল'হামদুলিল্লাহ ! আল্লাহই সব সহজ করিয়ে দিয়েছেন ।
ফজরের নামাজের পর দল বেঁধে যাবার কথা ছিল মিনায় তাবুতে । পথ ভুলে দল ছুট হয়ে গিয়েছিলাম ।
চলে যাচ্ছিলাম জামারাহের দিকে । আল্লাহ সহায় ছিলেন যে পাথরগুলো আমার সাথেই ছিল । পরে সবার পক্ষ থেকে পাথর মেরে এসেছিলাম ।
অনেক ঘুরাঘুরির পর মাগরিবের আগে আগে তাবুতে পৌছি । খুব টাফ সময় গিয়েছিল আরাফাত থেকে মুজদালেফা হয়ে জামারাহতে পাথর মেরে মিনায় তাবুতে ফিরতে । আল্লাহ সহায় ছিলেন বলে সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল ।
প্রথম দিন শুধু বড় জামারাহতেই পাথর মারতে হয় । যে তালবিয়াহ সৌদিতে আসার পর থেকে পড়তেছিলেন , বড় জামারাতে ১ম দি নপাথর মারার ঠিক আগে বন্ধ করে দিতে হবে ।সূর্যোদয় থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত সময়। ''আল্লাহু আকবার'' বলে প্রতিটা পাথর মারবেন ।
জামারাহতে পাথর মারার সময় কখনও প্রথমে যে রাশটা থেকে তাদের সাথে যাবেন না । ধৈর্য্য ধরে ৫-৭ মিনিট পর যাবেন । রাশ থাকবেন না তেমন । একেবারে বেড়ার গায়ে গা লাগিয়ে মারতে পারবেন ।
চারটা তলা থাকে জামারাতে গিয়ে পাথর মারতে । আগে এখানেই অনেক প্রানহানী হত বলে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে । বিশাল হলরুমের মত ফাঁকা জায়গা। আগের মত সমস্যা হবার কথা না ।
জামারাহতে পাথর মেরে অপেক্ষা করতে থাকি এজেন্সীর লোকেদের ফোন কলের , ক্বুরবানী হয়েছে কি না (ক্বুরবানীর জন্য ৪৫০ রিয়াল করে নিয়েছিল)।
সমস্যা এমন হয়ে গিয়েছিল যে পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম ,মোবাইলে চার্জও নেই ,ব্যালান্সও নেই। আল্লাহর অশেষ রহমতে একটা দোকানে পানি - জুস খেলাম , চার্জার ছিল চার্জ দিলাম এবং মোবাইলে রিয়াল ভরলাম । সেখানে জোহর ও আছরের নামাজও পড়লাম । একটু পরই এজেন্সীর লোক ফোন করলো যে ক্বুরবানী হয়ে গেছে । কাছেই বাংলাদেশী ভাই নাপিত সেজেছিলেন । তার কাছে ন্যাড়া হলাম ।
কি কঠিন অবস্থা থেকেই না আল্লাহ আমাদের খুব সুন্দরভাবে পথ দেখিয়ে বের করে এনেছিলেন !!!! সুব 'হান আল্লাহ ।
পরে দিন আর ভুল না করে এজেন্সীর লোক ও সহ যাত্রীদের সাথে যাই । ২য় ও ৩য় দিনে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পর থেকে সূর্যাস্তের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত জামারাহতে পাথর মারার সময় । টানেলের ভেতর দিয়ে খুব সুন্দরভাবে গিয়ে পাথর মেরে আবার চলে আসি ।
ঐদিন রাতে মক্কায় চলে আসি রাত ১টা দেড়টায় ফরজ তওয়াফের জন্য । মনে আশংকা ছিল যে খুব রাশ থাকবে এসময়ে হারাম শরিফে তওয়াফের জন্য ।
আশ্চর্যজনকভাবে লক্ষ্য করলাম যে সেখানে ঐ সময়ে ভীড় নেই বললেই চলে । রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে পড়লাম ফরজ তওয়াফের উদ্দেশ্যে । পরে ফজরের নামাজ পড়ে রুমে ফিরে আসি ।
সকাল ১০ টায় বের হই মিনার উদ্দেশ্যে ৩য় ও শেষ দিনের মত পাথর মারতে । সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ না করতে পারলে পরের দিন আবারও পাথর মারতে হবে - এরকম একটা হিসেব আছে।
৩য় দিনেও দলছুট হয়ে পড়েছিলাম পাথর মারার পর । পাথর মারার সময় যে রাশ থাকে তাতে পদদলিত হবার আশংকা থাকে এবং জুতা খোয়ানো তো মাস্ট।
মক্কায় ফিরতে ফিরতে 'আসর পেরিয়ে গিয়েছিল । কোন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছিল না আগের দিনের মত কারণ সব গাড়িই ফুল প্যাকড্ । এসময়ে সাথে পানিও ছিল না । পানির পিপাসা যে কি জিনিস সেদিন হাড়ে হাড়েই টের পেয়েছিলাম । রোদের তাপও সেদিন প্রচন্ড মনে হচ্ছিল।
যা হোক রুমে ফিরে এলাম । এর পর স্বাভাবিক ভাবে দিন পার করতে লাগলাম । সময়ে সময়ে তওয়াফ করতাম । বাকী ছিল মক্কা ছেড়ে যাবার আগে বিদায়ী তওয়াফ করা।
চলবে .... ইন শা আল্লাহ
*************************************************************************************************
হারাম শরীফে আযানের ৫-৭ মিনিট পর জামায়াত শুরু হয় । তবে ফরজ তওয়াফের সময় আযানের এক মিনিটের মধ্যে জামায়াত দাঁড়িয়ে যেত । হাজিদের ফরয তওয়াফের সুবিধার জন্য সুন্নত পরে পড়ার পরিস্থিতি করা হত ।
ফরজ তওয়াফের পর আরও ১২ দিনের মত মক্কাতে ছিলাম । হজে আসার আগেই নিয়ত করেছিলাম যে , আল্লাহ চায় তো হজের এই সফরে একবার অর্থ সহ ক্বুরআন খতম দেব । আল'হামদুলিল্লাহ ! আল্লাহ আমাকে সেই সৌভাগ্য দিয়েছেন । আমার সাথের দুইজনও সেটা করেছিলেন ( বাংলা সহ না ) ।
হারাম শরীফের ভেতর বিভিন্ন জায়গায় ক্বুরআন শরীফের সেলফ আছে । হাজারে হাজারে ক্বুরআন শরীফ সেখানে । পড়ার জন্য সুবিধাজনকটি বেছে নিবেন ।
হাজি হিসেবে ইন্দোনেশিয়ান ও মালয়েশিয়ানরা খুবই ভদ্র , কথাবার্তা বলে কম (ইংরেজী বলতে খুব একটা পারে না) , হারাম শরীফের ভেতর ক্বুরআন পড়ায় মশগুল থাকে ।
মধ্যপ্রাচ্যের (আরবদের) মধ্যে একটা প্রাউডি ভাব দেখা যায় । ভারতীয়দের দেখলেই চেনা যায় কারণ তাদের দেখে মনে হয় খুব গরীব ( তাদের দেশে সংখ্যা লঘু বলে হয়ত) ।
তার চেয়ে বরং পাকিস্তানীদের দেখে মনে হয়েছে বেশ দিল খোলা এবং বন্ধু বৎসল।
আসা যাওয়ার পথে হাজিদের ফেলে দেওয়া বিভিন্ন জিনিস কুড়ানোর জন্য যাদের রাখা হয়েছিল তাদের দেখে মন খারাপ হয়ে যেত - কারণ এরা বাংলাদেশী । কাজ করার চেয়ে তারা হাজিদের থেকে বখশিশ পাবার প্রতি বেশী মনযোগী মনে হয়েছে।
মক্কার প্রায় সব দোকানেই বাংলাদেশীদের দেখেছি । তারাও আমাদের বুঝতো । তবে পরিচয় দিতে কেমন যেন লুকিয়ে থাকতো । এমনভাবে কথা বলতো যেন মনে হয় তারা ইন্ডিয়ান।
আসা যাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে মক্কা টাওয়ারের নিচের দোকান গুলোতে ঢুঁ মারতাম । তবে তেমন কিছুই কিনতাম না । সবার কাছে শুনেছি যে মক্কা থেকে মদিনায় জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলকভাবে বেশ কম।
আস্তে আস্তে ঘনিয়ে আসতে লাগলো মক্কা থেকে বিদায় নেবার পালা । ঐ দিন বিদায়ী তওয়াফ করি সাথে জনদেরকে নিয়ে ।
মক্কা যে পাহাড়ী এলাকায় অবস্থিত সেটা এখানে আসার আগে জানতাম না , আমাদের হোটেল থেকে হারাম শরীফে যাবার পথটি বেশ ঢালু ছিল ১০০ মিটারের মত । আর একটা বিষয় দেখলাম যে এখানকার কোন পাহাড়েই একটা গাছও নেই যা আমাদের দেশের সব পাহাড়েই আছে । এটা আল্লাহর সৃষ্টিরই বৈচিত্রতা।
কাবা শরীফের দিকে তাকিয়ে থাকলেই ২০ টা নেকি পাওয়া যায় । তওয়াফের জন্য ৪০ আর নামাজের জন্য ৬০ টা নেকি ।
মক্কাতে যখন আসি তখন ক্বাবা শরীফ দেখে খুব একটা ফিলিংস না আসলেও যখন চলে আসার সময় হল তখন খারাপ লাগতো । মানুষ কোন জায়গায় গিয়ে সপ্তাহ খানেক থাকলে চলে আসার সময় খারাপ লাগে , মন কাঁদে । আর এটা তো আল্লাহর ঘর !
মদিনার পথে .....
সকাল ১০ টায় বাস আসার কথা থাকলেও সেটা এসে ছাড়ে দুপুর ১২ টায় মদিনার উদ্দেশ্যে ।
মক্কা থেকে মদিনা প্রায় ৪৫০ কি.মি. । আমাদের বাস চলছিল মরুভূমির মাঝে রাস্তা দিয়ে । মনেই হয় না যে মরুভূমি এটা । ৭৫ কি.মি. বেগে চালাচ্ছিলেন ড্রাইভার । কিন্তু আশে পাশের ছোট ছোট গাড়িগুলো এত স্পীডে যাচ্ছিল যে মনে হচ্ছিল আমাদের বাস খুব স্লো চলছে।
পথি মধ্যে বাসের সামনের ডানপাশের চাকা পাংচার হয়ে গেল । আল্লাহর রহমতে তেমন কিছুই হয় নি । ভাগ্যও সহায় ছিল যে ড্রাইভার বাসটিকে একটা দোকানের সামনে এনে রাখলো এবং গাড়ি মেরামতের একটা গাড়িকে কল দিল । এসব গাড়ি আশে পাশেই টহলে থাকে । খুব ভাল লেগেছিল ব্যাপারটা ।
সেখানে আমরা 'আসরের নামাজ পড়ে নিলাম । ১ ঘন্টার মত সময় নিয়েছিল ঠিক করতে । কোন বিরক্ত হই নি কারণ গাড়িকে এমনিতে থামতেই হত খাবারের জন্য এবং নামাজের জন্য ।
রাত ১০ টার দিকে পৌছলাম আমাদের জন্য নির্ধারিত হোটেলে । এটা বিখ্যাত ঢাকা হোটেলের পেছনে ছিল । ঢাকা হোটেলের সামনে এবং মদিনার হারাম শরীফের দিকে যেতে মাঝখানে একটা বিরাট ফাঁকা ময়দান আছে , সেখানে ফুটপাতে বেশ ভাল বিক্রি হয় । এটাই ছিল মেইন কেনাকাটার স্থান আমাদের( সত্য বলতে)। হারাম শরীফে আসতে যেতে এখানে থেমে জিনিস পত্র দেখেনি এরকম লোক পাওয়া দুষ্কর। প্রচুর কবুতর আসতে এখানে ।
মদিনা গমন হজের কোন অংশ না হলেও এটা প্যাকেজে রাখা হয় এই সেন্সে যে '' সৌদিতে আসলাম , আমার নবীজীর কবর জিয়ারত করলাম না - এটা কি ঠিক?''
মদিনার আবহওয়া মক্কার তুলনায় বেশ ঠান্ডা মনে হয়েছে । তবে এখানে পা বেশ ফাটে । ভ্যাসলিন কাজে দেবে এক্ষেত্রে।
মক্কাতে যেমন রুমে এসে খাবার দিয়ে যেত মদিনাতে ঠিক তার উল্টো । টোকেন দিয়ে যেত এজেন্সীর লোকেরা '' সকালের নাস্তা '' '' দুপুরের খাবার '' '' রাতের খাবার'' । এটা দেখিয়ে তাদের নির্ধারিত হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসতে হত । কখনও কখনও খাবার গিয়ে নিয়ে আসতাম রুমে ।
এখানেও নিয়মিত হারাম শরীফে যেতাম নামাজ পড়তে। মক্কাতে যে দূরত্বে রাখা হয়েছিল এখানে সেই একই রকম দূরত্বে রাখা হয়েছিল।
হারাম শরীফের বারান্দার ছাতাগুলো খোলা ও বন্ধ দেখা একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার মনে হয়েছিল শুরুতে । এগুলো সূর্য ওঠার আগে আগে খুলতো এবং মাগরিবের কিছু আগে বন্ধ হয়ে যেত ।
হারাম শরীফের বারান্দায় টয়লেটের জন্য যে ঘর গুলো আছে সেখানে প্রায় ৩ তলা নিচ পর্যন্ত টয়লেট , শেষের তলায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা । হাজার খানেকের উপরে টয়লেট ছিল । সিড়ি এবং এসকেলেটর ছিল এখানে । মক্কাতে টয়লেট নিয়ে যে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল মুরুব্বিদের নিয়ে এখানে সেটার তুলনামূলক সুব্যবস্থা দেখে ভালই লেগেছিল ।
নামাজ পড়তে কখনও কখনও হারাম শরীফের ছাঁদে চলে যেতাম অদ্ভুত সুন্দর লেগেছিল ছাদটা । বিশেষ করে মাগরিবের পর এশার আগে পরিবেশটা খুব মনোরম লাগে ।
মদিনাতে হজরে আসওয়াদে চুমু খাবার মত একটা টাফ কম্পিটিশন আছে , সেটা হল রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ পড়া । হারাম শরীফের ভেতর কার্পেটগুলো লাল রংয়ের হলেও এই স্থানটার [রাসূল (সাঃ) এর কবরের কাছে ] কার্পেটের রং সবুজ রংয়ের । এখানে কমপক্ষে দুই রাকাত নামাজ পড়ার রীতি আছে ।
এটার জন্য কম্পিটিশন হজরে আসওয়াদে চুমু খাবার কম্পিশনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম বলে মনে হয়েছে আমার কাছে । ২ বার নামাজ পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল ।তবে ''আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত এই সময়টা নামাজ পড়া এমনিতেই নিষেধ।
রাসূল (সাঃ) এর কবর জিয়ারত করা হয়েছিল ২/৩ বার । কবরগুলোকে বাম পাশে রেখে পার হতে হয় , প্রথমে নবীজীর কবর । তারপরে আবু বকর(রাঃ) ও উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) এর কবর । সালাম দিয়ে পার হতে হয় । বের হয়ে দোয়া করতে হয় তবে সেটা কিবলা বরাবর।
পুরুষেরা সহজেই এটা করতে পারে , তবে মহিলাদের ডেকে নেওয়া হয় ।
এর পাশেই জান্নাতুল বাকী । এখানে পুরুষেরা যেতে পারে । আমাদের দেশের মত এখানে কোন নাম ফলক নেই । মাঝে মাঝে বড় ঘেরা দেওয়া থাকে কিছু কিছু করবে এবং সেখানে সিভিল ড্রেসে পুলিশ বসা থাকে । সবাই মনে করে যে এটা মনে হয় কোন নবীর কবর , তবে উত্তর পাওয়া যায় না ।
মদীনাতে থাকার সময় আমাদেরকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে
উহুদ পর্বত : এটা আসলে আমাদের হোটেলে পিছনেই ছিল , প্রথমে বুঝতে পারি নি । এখানে রাসূল(সাঃ) সংঘটিত যুদ্ধে তার দন্ত মোবারক(১টা) হারিয়েছিলেন এবং আমীর হামযা (রাঃ) শহীড হয়েছিলেন । উনার কবর এখানেই । পাশেই ছিল জাবালে রোমা ।
মাসজিদ এ কিবলাতাইন : এটা সেই মাসজিদ যেখানে রাসূল (সাঃ) নামাজ পড়ার সময় কিবলা পরিবর্তনের কথা বলে আয়াত নাজিল হয়েছিল । এর আগে মুসলমানদের কিবলা ছিল বায়তুল মুকাদ্দাস । এই মাসজিদে ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ি সবাই।
মাসজিদ এ কুবা : এটা সেই মাসজিদ যা রাসূল(সাঃ) মদিনায় হিজরত করার পর প্রথম নির্মান করেছিলেন । এখানে ২ রাকাত নামাজ পড়লে একটা ওমরাহ এর সওয়াব পাওয়া যায় ।
খন্দকের মাঠ : এটা খুব একটা ভালভাবে দেখা হয় নি ।
এ ছাড়া আমরা গিয়েছিলাম সেখানকার একটা ফ্যাক্টরীতে যেখান থেকে প্রচুর খেজুর কিনেছিলাম।
মক্কায় মার্কেটিং না করায় মদিনায় ঝাঁপিয়ে পড়ি মার্কেটিংয়ের জন্য । হারাম শরীফের সাথে যে সব ৮/৯ তলা বিশিষ্ট খয়েরী রংয়ের হোটেল কাম মার্কেট ছিল সেগুলো দেখতে খুব ভাল লাগতো । প্রতিটা মার্কেটের নিচের তলায় স্বর্নের দোকানে ভরপুর ছিল । কোন মহিলা সেখান এ গেলে দিশা ঠিক রাখতে পারবে বলে মনে হয় না । প্রচুর স্বর্নের দোকান সেখানে।
সৌদিতে এসেছি , আবার মদিনাতেও এসেছি - স্বর্ণ না কিনলে কি হয় ? কিনতে হয়েছেও । ১৫২-১৭৫ রিয়াল ছিল/গ্রাম ।
আমাদেরকে প্রথমে যে হোটেলে রাখা হয়েছিল সেখান থেকে সরিয়ে শেষের এক দিন আরেকটা হোটেলে রেখেছিল । খুব চিৎকার চেঁচামেচি হয়েছিল এজন্য । তবে ২য় হোটেলে ওঠার আগেই লাগেজগুলো কার্গোর কাছে হ্যান্ডওভার করা হয়েছিল বলে ফ্রি ফ্রি লাগছিল । ৮০ কেজি এর বেশী নেওয়ার নিয়ম ছিল না । প্রতি কেজি ওভার ওয়েটে ৬৫ রিয়াল জরিমানা ছিল । কার্গোতে দেবার আগে লাগেজগুলো খুব শক্তভাবে বাঁধতে হবে ।
২য় হোটেলে একরাত কাটানোর পরই রাত ৩-৩.৫ টায় গাড়ি আসে । রওয়ানা দেই জেদ্দার উদ্দেশ্যে , ফেরার সময় এসেছিল বলে । ফ্লাইট ছিল ঐ দিন রাত সাড়ে আট টায় ।
জেদ্দায় পৌছতে পৌছতে দুপর ১/২ টা । গোসল করে নামাজ পড়ে কিছুটা ফ্রেশ হয়ে নিই । অপেক্ষা করতে থাকি কখন ডাকবে বোর্ডিং পাস নেবার জন্য । আসরের পরপরই চেকইন করে ঢুকে পড়ি ।
এক ঘন্টা লেট এ রাত সাড়ে নয় টায় প্লেন ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা হয় । সকাল সাড়ে ৫ টায় ঢাকায় নামি ।
শেষ হয় আমাদের হজযাত্রা। মহান আল্লাহকে অশেষ কৃতজ্ঞতা আমাদেরকে এই পবিত্র ভূমি দেখিয়ে আনার জন্য এবং ফরয কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার জন্য ।
ফিরে আসার পর মন টানে । ডিশ এ মক্কা শরীফের চ্যানলে দেখলে নস্টালজিক হয়ে পড়ি ।আবারো যেতে ইচ্ছে করে । এখন যারা হজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের দেখে মনে হয় - আমি নিচ্ছি না কেন !
ইচ্ছে আছে ইন শা আল্লাহ আবারও যাবার (বদলি হজের জন্য) ।
বিষয়: বিবিধ
২৫৫১ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ওমরাহের সময় একবার মাথা মুন্ডন করেছি । ক্বুরবানীর খবর শুনে ২য় বার মাথা মুন্ডন করেছি । ১৫ দিনের ব্যবধানে ।
পর্বগুলো আগে পডেছিলাম, পুণরায় শেয়ার করার জন্য শুকরিয়া্ জাযাকাল্লাহ খাইর
১। ৪০-৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কষ্ট হয়নি এটা বেশ ভালো লাগলো।
২। ইজতেমার ময়দানেও টয়লেট এ প্রবলেম হয়! তাই আমি নামাজ পড়েই দৌড় দিতাম! তখন নামাজের পরপর খালি পাওয়া যেতো! বাদ আসর টাইমটা ভালো ছিলো! যাক একটা অভিজ্ঞতা আছে! মক্কায় গেলে ব্যাপারটা অনেকের চেয়ে সহজ হবে।
৩। কুরআন খতমের বিষয়টি ভালো লাগলো
৪। পাহাড়ে একটা গাছও নেই! বিষয়টা অন্যরকম লাগলো!
৫। সাথের সবাই ঠিকভাবে তো ফিরেছিলেন?!
ভাইয়া আপনার সৌভাগ্যে আমরাও আনন্দিত!
অনেক ধন্যবাদ।
এর পরে আর হতভাগা নামটা থাকার যৌক্তিকতা দেখিনা!!
আল্লাহতায়ালা আপনার হজ্ব কবুল করুন
যদিও একাধিকবার উমরা আদায়ের তৌফিক হয়েছে,আল্লাহ মহান যেন পবিত্র হজ্ব পালন করার সুযোগ দেন-এই দুয়া চাই!!
আপনার-সবার হজ্ব কবুল হোক-এই দুয়া রইল!
মন্তব্য করতে লগইন করুন