হতভাগার হজ (১ম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন হতভাগা ০৩ আগস্ট, ২০১৫, ০৫:৪৯:০৩ বিকাল
গত বছর ২০১৪ (১৪৩৫ হিজরী) সালে আল্লাহ তা'য়ালার অশেষ রহমতে পবিত্র হজ পালন করার সৌভাগ্য হয়েছিল । আমার সাথে আমিসহ ৪ জন ছিলেন ।
মোট ৪৪ দিনের প্যাকেজ ছিল আমাদের । প্রথমে মক্কায় ছিলাম ৩৩ দিন (হজের দিন গুলো সহ) , পরে মদিনায় ১০ দিন ।
http://www.monitor-bd.net/blog/blogdetail/detail/11098/MinhazMasum/67782
মিনহাজ ভাইয়ের পোস্ট দেখে আমিও আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার ইচ্ছা চাপিয়ে রাখতে পারলাম না । আমার এই অভিজ্ঞতার বর্ণনা হয়ত মিনহাজ ভাইয়ের মত এতটা সুসংহতভাবে হবে না । তবে এই সব দিন গুলোতে একজন হাজি কি কি সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন সেটার কথাই বুঝতে পারবেন ।
আমাদের ফ্লাইট ছিল ১৭ ই সেপ্টেম্বর ২০১৪ তে সকাল ৮.৪৫ এ চট্টগ্রাম থেকে । আগের দিন রাতে কানেকটিং ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চলে আসি ।
০ এহরামের কাপড় পড়ে নেই চট্টগ্রাম বিমানবন্দরেই , প্লেনে ওঠার ২৫-৩০ মিনিট আগে ।
০ এর আগে সেখানে ইমিগ্রেশনে পুলিশ আপনাকে চেক করবে ফর্মালিটিজ মেউনটেইন করতে।
০ ওখানকার পাশেই আপনাকে সৌদি সিম (Mobily)দেওয়া হবে । সাথে ৫ রিয়াল ফ্রি টক টাইম দেবে ।
০ এহরামের কাপড়ের নিচের অংশ বেল্ট দিয়ে বাঁধবেন । পকেট সিস্টেম বেল্ট কিনবেন । খুবই কাজ দেবে সেটি । মহিলাদের শরিয়ত সন্মত কাপড়ই ইহরামের কাপড়।
০ লাইন ধরে বিমানে উঠতে হবে. বিমানে নিজ আসন নিয়ে বসে পড়বেন। দোয়া পড়বেন এবং সাথে হজের নিয়মের বইটিও । সাড়ে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা সময় লাগে জেদ্দায় পৌছাতে।
বাংলাদেশী হাজিদের জন্য মিকাত (যেটা ইহরাম বাঁধার পয়েন্ট) হল ইয়া লাম লাম পর্বত । ইয়া লাম লাম পর্বতের নিকট আসার ৩০ মিনিট ও ৫ মিনিট আগে ঘোষনা দেবে যে নিয়ত বেঁধে ফেলার জন্য
০ জেদ্দায় আপনাদেরকে হাজিদের জন্য যে স্থা সেখানে রাখা হবে । বিভিন্ন চেকিংয়ের পর আপনাকে বাংলাদেশী হাজিদের জন্য রাখা লাউন্জে রাখা হবে । এসময়ে আপনার পাসপোর্ট টি রেখে দেবে আপনার এজেন্সী যে মোয়াল্লেমের অধীনে আছে তাদের লোকেরা । পরে যেদিন সৌদি থেকে চলে যাবেন সেদিন আবার সেটা ফেরত দেবে ।
০ হাজি হিসেবে সনাক্তের জন্য তারা আপনাকে একটা কার্ড দেবে আপনার এজেন্সীর মাধ্যমে ২/১ দিনের মধ্যে।
০ বিমানে থাকা আপনার লাগেজ গুলো একটা বিশেষ ট্রাকে এনে আপনাদের সামনে রাখা হবে । সমস্যা হল হাজি ক্যাম্পের মাধ্যমে সবাইকে একই কালারের ট্রলিব্যাগ দেওয়া হয় (কালো) , এতে নিজেরটা চেনা খুব মুশকিল । সাদা কালি দিয়ে নিজের নাম , পাসপোর্ট নং ও অন্যান্য দরকারী ইনফরমেশন লিখে রাখবেন ব্যাগের গায়ে ।
০ আপনার এজেন্সীর জন্য নির্ধারিত বাস এলে সেখানে আপনাকে উঠতে হবে , ব্যাগ যাবে উপরে।
দুপুর সাড়ে বারোটায় নেমে আমাদের জন্য নির্ধারিত হোটেলে পৌছেছিলাম রাত ৯ টায় । ধৈর্য্য ধরতে হবে সবসময়ই ।
পথে পথে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা খাবার ও লিফলেট বিলি করছিল ।
০ আমাদের হোটেলটি ছিল হারাম শরীফ থেকে ৮ মিনিটের হাটা দূরত্বে।
হজে আসার সময়ে শুনেছি যে এজেন্সী ওয়ালারা দূরে রাখে আর খাবারও হয় জঘন্য । আল'হামদুলিল্লাহ হজে এসে সেটা দূর হয়েছে । খাবার এমন দিত যে প্রথম প্রথম আমরা চিল্লাচিল্লি করতাম এত খাবার কেন দেওয়া হচ্ছে । ফেলে দিতে হয়েছে অনেক খাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও । পরে যারা খাবার আনতো তাদেরকে দিয়ে দিতাম যে গুলো নষ্ট হবার সম্ভাবনা ছিল।
০ সৌদি নেমে হোটেলে এসেই আমাদের প্রথম কাজ ছিল 'এশার নামাজ পড়ে ওমরাহ এর জন্য বেরিয়ে পড়া । নতুন হওয়াতে এবং এজেন্সীর লোকেরা পরে আসাতে আমাদের একা একাই ওমরাহতে যেতে হয়েছিল । রাত ১ টায় গিয়েছিলাম সেখানে । ওমরাহ করে তাহাজ্জুদ ও ফজরের নামাজ পড়ে মাথা মুন্ডন করে হোটেলে ফিরে এসে ইহরাম মুক্ত হই ।
০ পরের দিন গুলো স্বাভাবিক ভাবেই চলাফেরা করি । নামাজ , জিকির ও ক্বুরআন তেলোয়াতে মশগুল থাকি । ওয়াক্তে ওয়াক্তে হারাম শরীফে যাই । তবে মাগরিব ও 'এশার নামাজ পড়ে বাসায় ফিরি । হাজিদের তালবিয়াহ পড়া শুরু করতে হবে ইয়া লাম লাম পাহাড়ের কাছাকাছি এসে ইহরাম বাঁধা ও নিয়তের সাথে সাথে এবং এটা ১ম দিন বড় জামারাতে পাথর মারার ঠিক আগ মূহুর্তে বন্ধ করতে হবে । কিছুক্ষন পর পর এটা বলতে হবে এবং একসাথে ৩ বার ।
০ আমরা তাওয়াফ করতে যেতাম রাত দেড়টা - দুটায় , এসময় ভিড় কম থাকে । উপরে হুইল চেয়ারের জন্য যে রিংটা থাকে সেখানেই করতাম ।
০ জুম্মার দিন সকাল ১০ টার আগে বের না হলে হারাম শরীফের ভেতরে ঢোকা কঠিন । তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য বের হবেন আর ফজরের নামাজ পড়ে এসে রুমে এসে নাস্তা খেয়ে ঘুম দেবেন । সকাল ৮ টা সাড়ে আট টায় উঠে গোসল করে হারাম শরীফে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিতাম ।
০ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সাথে খুব একটা বেশী নেওয়া ঠিক হবে না কাপড় চোপড় ছাড়া । বিছানার চাঁদর ও পাম্প দেওয়া বালিশ নেবেন যেটা আরাফার ময়দান ও মুজদালেফাতে কাজে দেবে । পায়ের স্যান্ডেল হতে হবে হাওয়াই চপ্পল - এটা জরুরী ।
ছোটখাট জিনিস কেনার জন্য আছে বিখ্যাত '' তালাতা রিয়াল'' এর দোকান । আরবীতে ছালাছা মানে তিন , এটা ওখানে তালাতা বলে উচ্চারিত হয় ।
০ এবারকার খাবার সরবরাহ হবে সেন্ট্রালী । সৌদিদের খাবারে যেটা পাবেন না সেটা হল - হাজীদের জন্য এরা খাবারে স্পাইস ব্যবহার করে না বা করতে দেয় না । কারণ পেটের পীড়া হলে অসুস্থ হাজীদের সামাল দেওয়া কঠিন।
০ খুব খাবেন ফলের জুস । দারুন মজা পেয়েছিলাম এগুলো খেয়ে । ফ্রেস ফল সব ।
০ এখানকার রোদের প্রখরতা নিয়ে খুব টেনশনে ছিলাম । এখানকার তাপমাত্রা ৪০ থেকে কখনও কখনও ৫১ /৫২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডও ছিল । আল'হামদুলিল্লাহ ! কোন সমস্যা হয় নি এতে। হারাম শরীফের বারান্দার মেঝের পাথরের বৈশিষ্ঠ্য হল , এটা রোদে গরম হয় না । ঠান্ডাই থাকে । তবে এর উপর মসলা বিছালে নিচে হাত দিলে গরম লাগে।
০ সাথের বেশ কিছু হাজিদের দেখতাম যে মুহুর্মুহু ওমরাহ করছে । আশেয়া মাসজিদ গিয়ে ইহরাম বেঁধে আসতো । ৩-৫ রিয়াল লাগতো যেতে ও আসতে। আমি যাই নি কারণ ওমরাহ করতে গেলে হজ করার আগেই যদি অসুস্থ হয়ে পড়ি , সাথে মুরুব্বী ছিলেন ।
০ হজরে আসওয়াদে চুমু খাবার যে টাফ কম্পিটিশন সেটাতে যাই নি । কারণ এটা তো ম্যান্ডেটরি না ।
এভাবেই নিয়মিত মাসজিদে গিয়ে ৫ ওয়াক্ত নামাজ , ক্বুরআন তেলাওয়াত ও তাসবীহ পড়ে পার হত থাকে দিন গুলো ।
ঘনিয়ে আসে হজরে দিন গুলো ........
চলবে ইন শা আল্লাহ
বিষয়: বিবিধ
২০৬৭ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি হতভাগা কেন ভাইয়া ?
হজ্জের মত মহান বিধান ও আদায় করার সৌভাগ্য আপনার হয়েছে, তাই এবার নামটি পাল্টিয়ে রাখুন সৌভাগ্যবান।
পরের পর্বের অপেক্ষায়.....
আপনার এই লেখাটি ভবিষ্যৎ এর আকাঙ্খার পথে যাত্রী হবার উদ্দেশ্য প্রিয়তে রাখলাম।
"... কবে এ দুনিয়া হতে যাবার আগেতে কা'বাতে লুটাব শির !"
হজ ফরয আর ওমরাহ ফরয না । যাদের ওমরাহ করার সামর্থ্য আছে ফি বছর , তাদের উচিত আগে হজ করে পরে যত খুশী ওমরাহ করা ।
ধন্যবাদ।
২ রিয়াল দিয়ে আঁতরও কিনেছি গোটা পাঁচেক । একটা রেখে বাকীগুলো বিলি করেছি ।
ডিওডোরেন্ট এর বোতলের মত উপরে বলের মত মুখ থাকে । খুব একটা ব্যবহার হয় না ।
মনে হয় এভাবে ৩/৪ বছর যাবে ।
সবগুলো নিয়ে আলাদা পোস্ট দিলাম । ঠিক আছে তো ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন