শাহবাগের রাস্তা দখল করে রাখার কোন যৌক্তিকতা এখন আর আছে কি ?

লিখেছেন লিখেছেন হতভাগা ০৯ মার্চ, ২০১৩, ০১:১২:০৮ দুপুর



কাদের মোল্লাসহ সব রাজাকারদের ফাঁসির দাবীতে গত ৫ই ফেব্রুয়ারী থেকে শাহবাগের ব্যস্ততম রাস্তাটি দখল করে রেখেছে গনজাগরন মন্চের লিডাররা এবং তাকে প্রোটেক্ট ও পেট্রোনাইজ করছে সরকার তার বাহিনী দিয়ে ।

কেন এই গনজাগরন ? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে - এরকম একটা বিষয় ছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের মেনিফেস্টোতে । বাংলাদেশের মানুষ শতঃস্ফূর্তভাবেই আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল যেন তারা এসে এই মেয়াদকালেই যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম শেষ করে যেতে পারে ।

আওয়ামী লীগকেই বেছে নেবার কারন হচ্ছে আওয়ামী লীগ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে দাবী করে । তাই যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য জনগন একেবারে শ্রেষ্ঠ পুলিশটিকেই বেছে নিয়েছে । সেই পুলিশই যদি তার প্রতি অর্পিত দ্বায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় বা বিচার নিয়ে টালবাহানা/নাটক করে তাহলে বাকীদের হাতে গেলে কি অবস্থা হবে ? কারন আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকী দলগুলোর উপর অভিযোগ আছে যুদ্ধাপরাধীদের পৃষ্ঠপোষকতা করার ।

এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেই ২০১০ এর মাঝামাঝি সময়ে । এতই যদি ক্লিনকাট প্রমান থাকে এবং এত বিপুল জনমত এবং বিপুল জনপ্রিয়তা থাকে সরকারী দলের প্রতি জনগনের তাহলে খুব স্বল্প সময়ের ভিতরেই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হয়ে যেত ।

বিচার প্রক্রিয়া চলাকালিন সময়ে জনগনের মনে এই সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছিল যে সরকার এই বিচারকে মূলা হিসেবে ঝুলিয়ে আগামী নির্বাচনের বৈতরনী পার হতে চাইবে । কারন গত কয়েক বছরে সরকার যে যে কাজ করেছে তাতে জনগনের ভোগান্তি বেড়েছে বৈ কমেনি।

জনমানুষের কাছে কৃত ওয়াদা পূরণ না করে তারা ছিল প্রতিবেশী বৃহত রাষ্ট্র ভারতের চাওয়া পূরণে ব্যস্ত । বড় বড় অর্থনেতিক কেলেন্কারী এবং খুন হত্যা এবং সর্বোপরি দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য জিনিসপত্রের কর্মাগত উর্ধ্বগতি তারা নিয়ন্ত্রন তো করেইনি বরনে এটাকে এখনও পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছে , কখনও কখনও বিরোধী দলকে এর জন্য দায়ী করেছে । এত জনপ্রিয়তা পাওয়া দল যদি তার না পারার জন্য বিরোধীদলকে দায়ী করে যারা কি না ৬-৭ বছর আগে চলে গেছে ক্ষমতা থেকে তখন বুঝাই যায় সরকারের ইনটেনশন ভাল না । এ যেন '' নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা '' এর মত ।

৫ই ফেব্রুয়ারী আগের চিত্র যদি আমরা দেখি তাহলে দেখা যাবে যে পদ্মাসেতূর কেলসেলেশনসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সরকার ছিল মহাফাঁপড়ে । তার উপর জনগন যখন দেখল কাদের মোল্লারা পার পেয়ে যাচ্ছে , তখন সবাই বুঝে নিল যে আঁতাত হচ্ছে যা তারা আগে থেকেই প্রেডিক্ট করছিল । যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা বললেও সরকার যে আসলে জামায়াতকে বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন করে লাভবান হতে চায় সেটা বুঝতে খুব বড় বিশ্লেষক হবার দরকার নেই ।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবার জন্য শত্রুর সাথেও সমঝোতা করতে পারে যা ১৯৮৬ , ১৯৯৬ এবং ২০০৮ এর নির্বাচনের সময় দেখা গেছে । আতাঁত করা আওয়ামী লীগের পূরনো স্বভাব । ৭ই মার্চ ''এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম , এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'' বলে কেন বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়া এবং ভুট্টো এদের সাথএ আলাপ আলোচনা চালিয়া যাচ্ছিলেন ৮-২৫ মার্চ অবধি?

শুরুতে এই গনজাগরণ সরকারের জন্য গোঁদের উপর বিষফোঁড়ার মত হলেও পরে চতুর আওয়ামী লীগ এটাকে সম্পূর্ণরুপে নিজেদের দিকে নিয়ে নেয় সর্বপ্রথম পুলিশ প্রটেকশন দিয়ে এবং '' যতদিন চলবে চলুক '' এটা বলে । প্রথম দিকে সরকারের কোন মন্ত্রী বা নেতা নেতৃকে মন্চে উঠে কথা বলতে বাঁধা দিলেও এখনকার পরিবেশ কিন্তু ভিন্ন । স্বাচিপের নেতা ইমরান এখন জাগরন মন্চের লিডার , যিনি কি না বঙ্গবন্ধু - ২ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন । এই স্বাচিপ নেতা তো আর নিজ দলের বাইরে কিছু বলতে পারবে না । কারন এদেশে জন্ম নেওয়া সব নেতারই টার্গেট হল মন্ত্রিত্ব । নেত্রীকে তুষ্ট করে এমন কথাইতো বলতে হবে তাকে । বলছেও সে । গনজাগরন মন্চের ঘাঢ়ের উপর বন্দুক রেখে সরকার যে কাজটি নিজে করা মানায় না তাই করাচ্ছে ইমরান ও তার দলকে দিয়ে । ফলাফল গত কয়েকদিনের গনহত্যা ।

৪২ বছরের হারানো রাস্তা পুনরুদ্ধারের জন্য রাস্তা ব্লক করা ঠিক নয় । শাহবাগীরা মানুষকে কষ্ট দিয়ে নিজেরা হিট হতে চাইছে । যদি তারা এতটাই জনপ্রিয় আন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছে বলে মনে করে তাহলে তারা এটাকে শহীদ মিনার বা টিএসসিতে নিয়ে গেলে পারে । এতে করে জনগনের দুর্ভোগ কমবে । জনসাধারন তাদের এই আন্দোলনকে সমর্থন করলেও রাস্তা দখল করাটাকে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না । সপ্তাহ দুয়েক ধরে এটাই পরীলক্ষিত হচ্ছে ।

'' লেবুকে যত কচলানো হয় তা তত তেঁতো হয়ে যায় ''

বিষয়: বিবিধ

১১৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File