ঢাকার যানজট : The ultimate pain of the Mega City
লিখেছেন লিখেছেন হতভাগা ২৮ জুলাই, ২০১৫, ০৫:৪৪:২৩ বিকাল
ঈদের পর ঢাকা শহর আবারও নিজের চিরচেনা রুপে ফিরে এসেছে ।
যে যানজট রোজার সময়ে টপ গিয়ারে ছিল , সেটা আবারও আগের ফর্মে ফিরে এসেছে । বৃষ্টি এতে যোগ করেছে বাড়তি আকর্ষন ।
এই যানজটের কারণে প্রতিটা মানুষের দৈনিক কমপক্ষে ২-৩ ঘন্টা সময় নষ্ট হয় । মানে বছরে ১-১.৫ মাস যানজটেই পরে থাকে মানুষ ।
ঢাকা শহরের একপ্রান্ত হতে আরেক প্রান্তে যেতে ৪০-৪৫ মিনিটের বেশী লাগার কথা নয় রাস্তা ক্লিয়ার থাকলে। কিন্তু এই পথ যেতে বিশেষ করে অফিসের পর মিনিমাম আড়াই ঘন্টা লেগে যায় । সন্ধ্যা ছয়টায় রওয়ানা হয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে কখনও কখনও রাত ৯ টা বেজে যায় ।
যারা সকালে বের হন তারা যদি ৭ টার আগে গাড়ি না ধরতে পারেন তাহলে ২ ঘন্টারও বেশী সময় লাগে অফিসে পৌছাতে । মতিঝিল টু মিরপুর বা উত্তরা বা মো'হাম্মাদপুর এলাকার চাকুরীজীবীরা সবচেয়ে বেশী সাফার করে এই যানজটের ঝামেলা ।
যানজটের ম্যাক্সিমাম কারণ মনে হয়েছে যে অধিকাংশ জায়গায় চার রাস্তার মোড় থাকা । একটার সিগনাল ছাড়লে আরেকটাকে বসে থাকতে হয় । শাহবাগের মধ্য দিয়ে যারা যাতায়াত করেন তারা জানেন ঘন্টা খানেক লেগে যায় এই পেইন থেকে বের হতে ।
আর যারা মগবাজার দিয়ে যাতায়াত করেন ফ্লাই ওভারের কাজের কারণে সেটা দিয়ে যাওয়া মানে নিশ্চিত দেড় ঘন্টা সময় নষ্ট হওয়া ।অথচ পথ দুটো ১ কিলোমিটারের বেশী হবে না ।
এই দুটো মোড় পার হলেই যে সব ফক ফকা তা কিন্তু নয় । প্রতিটা চৌরাস্তার মোড়েই অপেক্ষা করছে ৮-১০ মিনিটের সিগনাল । আর ভিআইপি মুভমেন্ট যদি থাকে তাহলে তো বোঝার উপর শাকের আঁটি।
৯ টায় বাসায় পৌছে ফ্রেশ হয়ে খেতে খেতে ১০ টা সাড়ে দশটা । ১১ টার আগে না ঘুমাতে গেলে সকালে উঠতে দেরি হয়ে যায় ।
এই Vicious cycle পড়ে ফ্যামিলির জন্য দুই ঘন্টাও দেওয়া যায় না । ছুটির দিনে তাই কোথাও বের হতে শরীর সায় দেয় না ।
ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ফ্লাইওভার বানানো হচ্ছে , কিন্তু তা কি আদৈ মানুষের সাফারিংস দূর করতে পারছে ? একমাত্র মিরপুর কালশী হয়ে যে রোড রেডিসনের সামনে নেমেছে সেটা ছাড়া আর কোন ফ্লাইওভারই সেরকম ফলদায়ক হয় নি ।
মহাখালী ফ্লাইওভারটি হয়ে আছে চরম ব্যর্থতার চিন্হ হিসেবে । এটাকে যদি টেনে নিয়ে গুলশান দুইয়ে নামানো হত তাহলে বনানীর মোড়ে যে তীব্র যানজট লাগে সেটা অনেক কমে আসতো ।
যেসব চার রাস্তার মোড়ে যানজট লাগে বেশী সেখানের যে কোন একটাতে (উত্তর-দক্ষিন / পূর্ব পশ্চিম মুখী) যদি M.E.S. থেকে যে ফ্লাইওভারটি উঠে আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে নেমেছে সেরকম করে ফ্লাইওভার বানাতো তাহলে যানজট ৫০% কমে যেত ।
বড় বড় ফ্লাইওভার না বানিয়ে যদি এরকম কিছু ছোট খাট ফ্লাই ওভার বানাতো তাহলে খরচও কম পড়তো ।
সরকারের আরেকটি প্রজেক্টের কাজ দেখতে পাচ্ছি যে তারা এলিভেটেড এক্সপ্রেস রেলওয়ে করতে চাচ্ছে ।
উত্তরা টু মতিঝিল অফিসে যাবার পথে যেতে কাওলাতে এর কার্যক্রম বেশ চোখে পড়ছে। খিলক্ষেতের রেলওয়ের জায়গায় যে মার্কেট গুলো করেছে সেগুলোকেও ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে ।
এটাও যে খুব এক্সপেনসিভ হবে তা বলাই বাহুল্য ।
কিন্তু এক্সিস্টিং যে রেল সার্ভিস রয়েছে সেগুলোকে যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা হয় তাহলে এত কর্মযজ্ঞের দরকার হয় না ।
আমরা যারা উত্তরা টু মতিঝিল আসা যাওয়া করি তাদের জন্য এই রেলওয়ে সার্ভিস আল্লাহর রহমত স্বরুপ। কমলাপুর হতে বিমানবন্দর স্টেশন যেতে ৩০ মিনিট সময় লাগে , যেটা বাসে আড়াই ঘন্টার কম লাগার কথা না । যারা Monthly টিকিট করে (৪৫০ টাকা প্রতিমাসে) তাদের জন্য এটা খুবই সাশ্রয়ী ।
আপনি সন্ধ্যা ৬ টায় বের হয়ে যদি সাথে সাথে ট্রেন পেয়ে যান তাহলে ৭ টার আগে বিমানবন্দর রেল স্টেশনে পৌছে যাবেন ।
বছর দুয়েক ধরে যাতায়াত করে আমার আফসোস লেগেছে যে , শুধু ঢাকার পূর্বাংশের লোকেরাই এর সুবিধা পেয়ে আসছে । পশ্চিমাংশ যেমন : নিউ মার্কেট ধানমন্ডি , মো'হাম্মাদ পুর , মিরপুরের লোকেরা এটার সুবিধা পাওয়া থেক বন্চিত । অথচ গুলিস্তান ফুলবাড়িয়াতে কিন্তু এক সময়ে রেলস্টেশন ছিল ।
এটা কি খুব অসম্ভব ছিল যে রেললাইন গুলোকে ঢাকার চারপাশে যেভাবে বেড়িবাঁধ দেওয়া আছে সেটার প্যারালালি করে দেওয়া । নারায়নগন্জ ঢাকার দক্ষিনে , সেখানে যদি টানা যায় তাহলে তো পশ্চিমাংশেও টানা যায় । আমার মিরপুর এর কিছু কলিগও ট্রেনে করে বিমানবন্দর স্টেশনে নেমে পরে মিরপুর এর বাস ধরে যাতায়াত করেছে এই রমজানে । সোয়া ৫ টা হতে সাড়ে ৫ টায় পৌছে গেছে বাসায় ৪টায় বের হয়ে ।
এই বেড়ি বাঁধকে ঘিরে যদি প্রতিদিন ৫ টা ডেমু ট্রেন চলাচল করে তাহলে ঢাকার ভেতরে যানজট কমে আসবে ।
কিন্তু বাসওয়ালাদের কারণে এগুলো কখনই হবার কথা নয় । ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় করাই হয় মূলত মানুষকে ট্রেনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে বাসে চড়তে । কমলাপুর হতে যেসব ট্রেন ছাড়ে সেগুলো যদি নিয়মিত অল্প সময়ের জন্য তেজগাঁ , বনানী এবং ক্যাণ্টনম্যাণ্ট রেলস্টেশনে থাকে তাহলে টঙ্গী ,গাজীপুর হতে মগবাজার পর্যন্ত যেসব বাস চলাচল করে তারা যাত্রী পাবে না ।
সরকারী বাসের পাশাপশি বেসরকারী বাস সার্ভিসও থাকে । সেগুলোর মালিক সরকারী দলেরই নেতারা । বেসরকারী বাস সার্ভিসের মত বেসরকারী ট্রেন সার্ভিস নেই বললেই চলে ।
ফলে বাস মালিক ও কর্মচারী সমিতির চাপের কারণে রেল সার্ভিসকে কখনও রেগুলার ও আরামদায়ক করা হয় না বাংলাদেশে । এও বলা যায় যে বাসওয়ালাদের কাছ থেকে রেলওয়ের লোকেরা (টপ টু বটম) নিশ্চয়ই মাসিক ভিত্তিতে ভাল অংকের টাকা পায় , নচেৎ নিজেদেরই ক্ষতি হয় এমন কাজ তারা কেন করতে যাবে ।
বিষয়: বিবিধ
১৬২০ বার পঠিত, ৩০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
গার্মেন্টস ওয়ালাদের জন্য ইপিজেড এর জায়গাতেও কুলাচ্ছে না ।
এসব গার্মেন্টসগুলো যদি গ্রাম বা উপশহরে করতো তাহলে গ্রাম থেকেই আসা এর নারীকর্মীদের ঢাকা শহরে আসা লাগতো না । নিজেদের জায়গায় তাদের পেরেশানীও হত কম । গ্রামেও অনেক ফ্যাসিলিটিজ চলে যেত।
আপনার লিখা পড়ি আবার আপনার সুচিন্তিত কমেন্ট সমূহ ও বিভিন্ন লিখায় পড়ি। কখনো মনে হয়নি আপনি আসলেই ঢাকা শহরে থাকেন।
আজকের এ লিখা অনেকটা অবাক করলো আমাকে। উপরে ছালছাবিল ভাইর কমেন্ট পড়ে মনে হলঃ
শতভাগ সামাজিক দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ না হলে ঢাকা শহরে থেকে ফুলটাইম চাকরি বাকরি করে বুঝিবা ব্লগিং করা কমপ্লিটলী অসম্ভব -
মাশাআল্লাহ আপনি তা করছেন, করতে পারছেন - আপনার সময়ের বরকত অনেক বেশী।
আল্লাহর অনুগ্রহ না থাকলে মানুষ মাত্রই ভুল করে।
ভাইয়া যানজট হয় সাধারণত সকাল ৮ হতে ১০ টা আর বিকাল সময়টা।
আর এই দুই সময় স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা স্কুলে এবং কলেজে যায়।
গতকাল ধানমন্ডি হতে কল্যানপুর আসার পথে দেখলাম একটা স্কুল ছুটি দিয়েছে। আর স্কুলের ছেলে মেয়েদের নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রায় ৩০-৫০ টা পাইভেট গাড়ি রাস্তার পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঐ গাড়ীগুলোর জন্য রাস্তার বাস গুলো ঠিক মত চলাচল করতে পারছেন না।
আসলে বাংলাদেশ গরীব দেশ হলেও এদেশের অনেক ফ্যামিলিতে ফ্যামিলির প্রতি সদস্যের জন্য একটা গাড়ি আছে। আর দেশের যানজটের মেন কারণ এটাই।
Early to bed and early to rise makes a man healthy , wealthy and wise - এই নীতিটা সবাইকে বুঝতে হবে ।
১২ ই ডিসেম্বর টঙ্গি কমিউটার নামে ডেমু চালু হয়েছিল যেটা সকাল ৭.৪০ এ টঙ্গী থেকে ছেড়ে ৭.৫০ এ পৌছাতো বিমান বন্দর স্টেশনে । ৮.২৫ এ পৌছে যেত কমলাপুরে।যাত্রীরা যারা আগেভাগে বের হত তারা এই ডেমু আসার ফলে বাসা থেকে রিলাক্সলি বের হত ।
জানুয়ারীতে যখন বিরোধী দলের অবরোধ শুরু হল তখন সেটা নাই হয়ে গেল । যুক্তি ছিল যে হরতাল অবরোধে ডেমু চলে না । অথচ সে সময়ে আন্তঃ নগর ট্রেন গুলো ঠিকই চলছিল.
খুশিতে চোখে জল চলে এল আপু
এলিভেটেট ট্্রেন লাইন নির্মান করা।
পুপুলেশন ডেনসিটি অনুসারে।
ভলভো বাসগুলোরও মান ইজ্জত থাকেনি মিরপুর-গুলিস্তান রুটে চলে ।
প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণই সবচেয়ে ভাল সমাধান ।
সেনাবাহিনীর হেড কোয়ার্টার কোথায় ? পুলিশেরটার ? বিমান বাহিনী বা বিজিবির ? এমন কি নেভির ? ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সেরটাও ?
একটা মেগা সিটির রাস্তা থাকবে সেটার ২৫% জায়গা নিয়ে । ঢাকাতে সেটা ১০% ও না ।
অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে জায়গা অধিগ্রহন করাও খুবই সেনসিটিভ ইস্যু । উন্নত দেশগুলোতে রাস্তা থাকে সোজা । ঢাকা শহরে রাস্তা সোজা ১০০ মিটারের বেশী পাওয়া যায় না । তার মধ্যে কিছু দূর গেলেই চার রাস্তার মোড় ।
ধন্যবাদ।
আর যারা ঐসব সেক্টরে বসে আছে তারা কিভাবে কি করলে ভাল হবে তা আপনার আমার চেয়ে হাজার গুনে ভাল বোঝে । আরও বোঝে কিভাবে কিছু না করে পুকুর চুরি করতে হয় ।
http://www.monitor-bd.net/blog/blogdetail/detail/11098/MinhazMasum/66128#.Vbft_pdXdOE
আমার এক কলিগের দেশের বাড়ি মুন্সিগন্জ । মিরপুর ১০ নং থেকে কোন এক সুবিধাজনক সময়ে তার দেশের বাড়িতে পৌছেছিল ৫৫ মিনিটে ।
আপনাদের ওখানে ২০০ কিলোমিটার ড্রাইভ করে অফিস করছে না !
মন্তব্য করতে লগইন করুন