হতভাগার খাবার
লিখেছেন লিখেছেন হতভাগা ৩১ মে, ২০১৫, ০৪:৪২:৫৪ বিকাল
খাবার দাবারের ব্যাপারে খুব একটা এক্সাইটেড কোন কালেই ছিলাম না ।
বাড়িতে যারা রান্না করেন তাদের উপর কোন চাপ দিতাম না যে আমার জন্য আজ এটা কর , ওটা কর । যেটাই রাঁধতো খেয়ে নিতাম । প্রশংসাও করতাম না ভাল হলে আবার চেঁচাতামও না খারাপ হলে । কারণ কষ্ট করে যে উনারা রাঁধছেন সেটা আমি পারবো না কখনই ।
এর মাঝেও যে কিছু কিছু খাবার খেতে চাইতাম না তাও নয় । তবে সেগুলো কেন খেতে চাইতাম না তার কোন যুক্তিও নেই । কিছু কিছু জিনিস আছে যার কোন যুক্তি আনা যায় না ।
যে সব খাবার খেতে খুব মজা পাই সে গুলো হয়ত অনেকেরই প্রিয় খাবার ।
সকালে যে সব খাবার সাধারণত খাওয়া হয় তার মধ্যে : রুটি দিয়ে আলু ভাজি বা চিনি দিয়ে রুটি মুড়িয়ে খাওয়া সেই ছোটকালের অভ্যাস । সাথে রুটির বদলে পরাটাও থাকতো । রুটি ৪-৫ টা খেতে পারলেও পরাটা ২-৩ টার বেশী খেতে পারতাম না/পারি না । এখন আলু ভাজি ও চিনির জায়গা দখল করে নিয়েছে ডিম।
পরাটার সাথে যদি গরুর মাংশের ঝোল ও আলু হয় তাহলে তো কথাই নেই !
আর পিঠের মধ্যে চিতই পিঠা আমার খুব পছন্দের । মাটির কড়াইয়ে দেওয়া পাতলা , মাঝখানে ঝাঁঝড়া এবং প্রান্তগুলো হালকা পোড়া ও মচমচে ; এর সাথে খেজুরের পাতলা রস ও নারকেল বা মাংশের ঝোল ও আলু !!!!! এক বসাতে ১০-১৫ টাও খেয়ে ফেলি , মনেই হয় না কিছু।
দুপুরের খাবারে তো বাঙ্গালী হিসেবে ভাতই খাওয়া হয় । ভাত না খেলে কি জানি খাওয়া হয় নি এরকম মনে হয় ।
তরি তরকারির মধ্যে করল্লা আমার খুবই প্রিয় এবং তা আলু দিয়ে করল্লা ভাজি । কাচা কলার তরকারিও ভাল লাগে, বেশী ভাল লাগে এর ভর্তা । অন্যান্য তরকারিও কম বেশী খাওয়া হয় । তবে করল্লারই মাসতুতো ভাই কাকরোল একেবারেই দেখতে পারি না । জানি না কেন ।
শাকের মধ্যে লালশাক আমার প্রিয় । টালা মরিচ (শুকনা মরিচ পোড়ানো) দিয়ে লাল শাক খুবই ভাল লাগে । আর পালং শাক খেতে ভাল লাগে কাচা মরিচ দিয়ে ।
শীতের সময় ফুলকপি + টমোটো+ সিম+ আলু ভাজি খুব মজা করে খাই । খাবার পরেও খাই।
ডাল আমার খুবই প্রিয় । ডালের তলানী যেটা ঘন সেটার জন্য ওত পেতে থাকি , মানে আগে ভাগেই চলে যাই ।
মাছের মধ্যে সব মাছই মোটামুটি খাওয়া হয় । তবে রান্নার চেয়ে ভাজি মাছই বেশী পছন্দের । পাতলা করে কাটা ইলিশ মাছ ভাজা আবার কড়া ভাজি নিজেই করি ।
গরুর মাংশ ও মুরগীর মাংশ খাওয়া হয় । তবে গরুর মাংশ প্রেফার করি । চিকেন ফ্রাই খাবার পর থেকে মুরগীর মাংশ রান্না কেমন জানি পানসে পানসে লাগে ।
খাশির মাংশ পারত পক্ষে খাই না ।
রাতের খাবার দুপুরের খাবারের মতই । তবে রাতে কোন কোন সময় না খেয়ে থাকি যদি দুপুরের/বিকেলের খাবার বেশী হয়ে যায় । কারণ বেশী ভরা পেটে ঘুমাতে গেলে ঘুমেরও সমস্যা হয় ।
এই ৩ বেলার মাঝের সময় কিছু না কিছু টুকটাক খেতেই হয় - চা/কফি, সিঙ্গারা/সামুচা,চানাচুড়+মুড়ি , বাদাম ....... এসব হল ক্ষিদে মারার খাবার । না খেলেই ভাল লাগতো , কিন্তু ক্ষিদে যে মারতে হবে । দেখা যায় যে এসব খাবার গুলিই পেটের পীড়ার কারণ হয় ।
কোল্ড ড্রিংকস অকেশন ছাড়া খাওয়া হয় না । অন্যান্য ডেসার্ট জাতীয় খাবারও খুব একটা চয়েজ নেই । যেটা ভাল লাগে খেতে, খাই - মিষ্টি , পুডিং , দই , আইসক্রিম । তবে এমন না যে খেতেই হবে । আচারও খাওয়া হয় অকেশনালি।
বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে ভালই সমস্যায় পড়ি । শুরুতেই নিয়ে নেই বেশী , পরে শেষ করতে সমস্যা হয় । দেখা যায় যে আমার সাথে একই ব্যাচে বসা লোকজন সবাই চলে গেছে আর আমি এখনও শেষ করতে পারি নি । আর খাবারও তো নষ্ট করতে পারি না । ঐ দিন আর রাতে খাই না ।
বাইরে গিয়ে খাবার অভ্যাস নেই । কেউ নিয়ে গেলে খাই বা খাওয়াই , একা কখনও এসব খানে যাই না ।
খুব একটা বেশী যাওয়া হয় না বলে শুধু চিকেন ফ্রাই আর ফ্রেন্চ ফ্রাই পর্যন্তই আমার দৌড় । ভালই লাগে খেতে ।
এতসব খাবারের মধ্যে আমার খুব পছন্দ লাগে খেতে :
০ দুপুরে/রাতে ভাতের সাথে ডাল , শুকনো মরিচ + পিঁয়াজ+ সরিষার তেল মাখানো আলু ভর্তা , ডিম ভাজি (ওমলেট) । সাথে লাল শাক হলে তো আরও মজা ।
আবার, ভাতের সাথে শিংমাছ , সাথে আলু ও কড়া ঝোল ও কলা ভর্তা - এটাও খুব প্রিয়
ইদানিং সরু চালের পরিবর্তে মোটা চাল (কম দামী) খাওয়া শুরু করেছি । আমার এই চালেই খেতে ভাল লাগে ।
যেহেতু আমরা বাঙ্গালী , ভাত আমাদের খাবারের একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকবে এটাই স্বাভাবিক ।
তবে , ভাতের একটা বিরাট সমস্যা হল : ভাত বেশী খেলে চর্বি জমে বেশী যদি সেরকম শারিরীক পরিশ্রম না হয় । আর দুপুরের ভাত ঘুমের ভাব নিয়ে আসে যেটা যারা অফিস করেন তারা ভালই দেখতে পান ।
আমি বেশ কয়েকদিন অফিসে দুপুরের খাবার হিসেবে রুটি নিয়ে গিয়েছিলাম । ভালই লাগে খেতে । বিশেষ করে ভাত খেলে পেট ভারী ভারী মনে হয় , রুটি খেলে হালকা লাগে ।
বিভিন্ন সময় দাওয়াতে হোটেল শেরাটনের বুফেতে খাওয়া হয়েছিল । সেখানকরা ডেসার্টগুলো ভাল লাগলেও মূল খাবার গুলো বিস্মাদ লেগেছে । এরা মনে হয় খাবারে লবন ও মসলা দেওয়া যেটা বাড়িতে দেওয়া হয় । বিদেশীদের কথা মাথায় রেখেই বোধ হয় তারা এটা করে।
মানুষের জীবন ধারনের জন্য খাবার অপরিহার্য , এটা মানুষের ১ নং মৌলিক অধিকার। তবে কারও কারও কাছে খাবার খুব সহজ লভ্য আবার কারও কাছে দূর্লভ । কেউ দেখা যায় যে রাশি রাশি খাবার নষ্ট করছে আবার তারই প্রতিবেশী কেউ না খেয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে ।
খাবারের মনুষ্যসৃষ্ট এরকম ভারসাম্যহীনতা অনেক অপরাধ ও অনাচারের জন্ম দেয় ।
আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে আমরা খাবার খাওয়া নিয়ে লিখতে পারছি । কে কি খেতে ভালবাসি , কি রকম ভাবে এসবের আয়োজন চলে/করি।
অনেক মানুষ আছে যাদের এরকম লাক্সারী করার সুযোগ নেই ।
আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ আসবার তৌফিক দান করুন - আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৮ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
___> এই অংশটির সাথে আমার পুরো পুরি মিল আছে।
অন্য এক হতভাগা ভাইকে জানার সুযোগ হলো আজ! আপনার খাদ্যাভ্যাসের সাথে মোটামোটি সব বাংগালীর মিল আছে বলা যায়!
রুটি/পরোটা দিয়ে চিনি খাওয়া ভেবেছিলাম আমাদের পরিবারেই হয় শুধু! আমরা রুটি দিয়ে চাপা কলাও খেতাম!
শেষ অংশটুকু আসলেই ভাবিয়ে তোলে! আল্লাহ আমাদের অপারগতাকে ক্ষমা করুন!
জাযকাল্লাহু খাইর!
অথচ রীতিমত বিশাল খাবারের লিস্ট দিলেন হাহা! এই কথাটা খুব মজা লেগেছে: ভাত না খেলে কি জানি খাওয়া হয় নি এরকম মনে হয় ।" এটা সম্ভবত বাঙ্গালীদের কমন প্রবলেম। আমিও ব্যতিক্রম নই। শেষের কয়েকটা প্যারা সত্যি অনুভূতিতে নাড়া নেয়ার মত। অনেক ভাল থাকবেন ভাইয়া। আমীন।
ব্লগার গাজী সালাউদ্দীন এর পোস্টে আপনার মন্তব্যের জবাবে আমার প্রশ্ন ছিলো!! কিন্তু উত্তর পাইনি!!
আজকে বিষয়টি উপস্থিত করার কারন হলো.....(যেটাই রাঁধতো খেয়ে নিতাম । প্রশংসাও করতাম না ভাল হলে আবার চেঁচাতামও না খারাপ হলে । কারণ কষ্ট করে যে উনারা রাঁধছেন সেটা আমি পারবো না কখনই । )
কথা হলো ব্লগে হাজার রকম পোস্টে মন্তব্যের জোয়ার এবং বলার মত মন্তব্য এবং ব্যাতিক্রমধর্মী মন্তব্য, জ্বালাময়ী মন্তব্য.....ইত্যাদি ইত্যাদি ..... কিন্তু ঘরে মন্তব্যহীন!!!!! চরিত্রের অমিল পাওয়া গেল।
বিস্তারিত জানালে কৌতুহল মুক্ত হতাম!!!
আর নারী বিদ্বেষী মানে নারীর একটা বিশেষ পজিশনের বিদ্বেষী । আমি মা , বোন ,খালা , কন্যা , নাতনি বা দাদি , নানি এসব বিদ্বেষী নই ।
শহরে মানুষের খাবার চাহিদা শুধু লেখা বা অন্য কে জানানোর সময় এমন হয় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে! যাক,আপনি বেশীর ভাগের দলে না!
খাবারের এই ধারার সাথে মিল আছে আমারও কিছু টা! যদিও 'করল্লা' সবচেয়ে অপছন্দনীয় আমার কাছে! করল্লার নাম শুনলেও অন্তর কষ্টে কাদেঁ যেন!
অনেক ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় হতভাগা ভাই!!
লালশাক ভাজির সাথে অথবা যে কোন শাকভাজির সাথেই তেলেভাজা শুকনা মরিচ গরমভাত দিয়ে খেয়ে দেখতে পারেন। আশা করছি খারাপ লাগবেনা।
আপনার শেষ কথাগুলো বেশ ভালো লাগলো। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব বিষয়ে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
আর পিঠের মধ্যে চিতই পিঠা আমার খুব পছন্দের । মাটির কড়াইয়ে দেওয়া পাতলা , মাঝখানে ঝাঁঝড়া এবং প্রান্তগুলো হালকা পোড়া ও মচমচে ; এর সাথে খেজুরের পাতলা রস ও নারকেল বা মাংশের ঝোল ও আলু !!!!! এক বসাতে ১০-১৫ টাও খেয়ে ফেলি , মনেই হয় না কিছু। .....এটা আমার দারুন পছন্দ
ওহ...আপনার করল্লা ছাড়া অন্যগুলো বেশ পছন্দের আমার।
পুরো লিখাটার মধ্যেই কেমন যেন একটা সংযত গুছানো ভাব।
পড়ে ভালো লাগল.......।
বাংলাদেশে ভুপে খাবারের সাথে কোনদিন পরিচিত ছিলাম না, আবুধাবিতে আসার পর থেকে মাসে ২/১ বার খেতে হয়।
আপনার লিখাটা খুব খুব ভাল লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে
অনেক অনেক ধন্যবাদ হতভাগা ভাইয়া ।
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে
যদি হোয়াটস এ্যাপ ইউস করেন, মোবাইল নাম্বার দিলেও চলবে।
+৯৭১৫৫৩৫৭২৯১৬
অতপরঃ নাম্বারটি ডিলেট করে দিন
একটু বিস্তারিত বলি: আমরা কয়েকজন সহ ব্লগার মিলে ব্লগ ও ব্লগারদের উন্নয়ন কল্পে ছোট্ট একটি উদ্যোগ নিয়েছি, তাতে আপনাকেও এডমিনে রাখতে আগ্রহী, যেহেতু আপনি একজন নিয়মিত ব্লগার। আপনার একটু প্রচেষ্টা হয়তো ব্লগারদের একটু সাহস যোগাবে ও ব্লগে স্প্রিট পাবে। এটাই মুল উদ্দেশ্য। বিস্তারিত জানাতে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম।
যাক, যদি আপনার আপত্তি থাকে, তাহলে দয়া করে আমার এই মন্তব্যগুলো ডিলিট করে দিবেন প্লিজ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন