ভালই বাটে পড়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট
লিখেছেন লিখেছেন হতভাগা ২৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৩:২৬:৪৯ দুপুর
৩ জমিদারের প্রস্তাব নিয়ে ২৭-২৯ জানিয়ারী আইসিসিতে আলোচনা হবার কথা । আমাদের পাপন সাহেব এখন সেখানে ।
এই প্রস্তাবে দৃশ্যত দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের টেস্ট খেলা বিশাল এক হুমকির মুখে পড়ছে ।
স্বাভাবিক ভাবেই দেশবাসীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এর বিপক্ষে সোচ্চার হয়েছে ।
প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান না নিতে বিসিবিতে ভোটাভুটি হয়েছে এবং তা পাশও হয়েছে ২০-৩ ভোটে !
এতে দেশবাসী ক্রিকেটপ্রেমীরা মারাত্মক ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে , প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে । ফলশ্রুতিতে বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজারের বদৌলতে জানা গেল যে বিসিবি এর বিপক্ষেই যাবে ।
আপাতঃ দৃষ্টিত নিশ্চিন্ত হবার মত ঘটনা হলেও পরিস্থিতি কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ভয়ংকর রুপ নিতে পারে ।
যে আশংকা আমার মনে হচ্ছে ( প্রথম আলোতেও দেখলাম) তাহলো :
০ এই প্রস্তাব পাশ করতে গেলে এক্সট্রা অর্ডিনারী মেজরিটি লাগবে । ১০টি পূর্ণ সদস্যের মধ্যে ৮ জনের সমর্থন পেতে হবে কমপক্ষে ।
০ এই ৮ জনের মধ্যে ৩ টা ভোট তো জমিদারদের নিজেদের , মানে ভারত , অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড । বাকী থাকে ৭ জনের মধ্যে ৫ জনের ।
০ নিউজিল্যান্ড নাকি অলরেডি এই প্রস্তাবে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করে দিয়েছে । ওরা বাংলাদেশকে খুব ঈর্ষা করে । ২০১০ এ একবার ৪-০ তে হোয়াইট ওয়াশের দগদগে ঘাঁ শুকাতে না শুকাতেই তারই উপর আবারও ২০১৩ এর ৪-০ তে হোয়াইট ওয়াশের ঘাঁ ওরা সহ্য করতে পারছেনা । খেলায় তো আর পারছে না তাই অন্য কোন পন্থা খুঁজছে বাংলাদেশকে সাইজ করার জন্য ।
৪ টা ভোট হল , বাকী থাকে ৬ টার মধ্যে ৪ টা ।
০ ওয়েস্ট ইন্ডিজ হলো অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের হুকুমের গোলাম । সাবেক প্রভুর গোলামী এখনও তাদের করতে মন চায় । ২০০৩ ওয়ার্ল্ড কাপে অস্ট্রেলিয়া , ইংল্যান্ডের দেখাদেখি তারাও নিউজিল্যান্ডের মত জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়াতে কোন খেলা খেলতে গেল না ।
আর টি২০ তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়ারদের চাহিদা প্রচুর । গেইল , পোলার্ড , ব্রাভোরা আইপিএল , বিগব্যাশে যা কামায় তা জাতীয় দলে ১০ বছর খেলেও কামায় না । ভারত আর অস্ট্রেলিয়া যদি তাদের বোর্ড ও খেলোয়ারদের কাছে টোপ ফেলে তাহলে তারা না করতে পারবে না ।
৫ টা পাওয়া গেল । বাকী ৫ জনের মধ্যে লাগে ৩ জনের ভোট ।
০ পাকিস্তানে অনেক বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয় না । তাদেরকে আইপিএল জাতীয় লীগেও ডাকা হয় না ।
৩ জমিদার যদি তাদের কাছে টোপ ফেলে যে , প্রস্তাবে সন্মতি দিলে তারা তো নিজেরা পাকিস্তানে খেলতে আসবেই অন্যদেরকেও আনাবে । এমনি তাদের জন্য আইপিএল এবং বিগব্যাশের দরজাও খুলে দেওয়া হবে ।
পাকিস্তান কি এই অফার ফেলতে পারবে ?
আর বাংলাদেশের প্রতি পাকিস্তান ক্ষাপ্পা থাকার অনেক কারণ আছে । আমরা কথায় কথায় স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে পাকিস্তানের ১৪ গোস্ঠি উদ্ধার করি । গত বছর তাদের শত অনুরোধেও তাদের দেশে খেলতে যাই নি ।
আমরা বাংলাদেশিরা পাকিস্তানকে কিছু একটাতে হারাতে পারলেই বলি '' ৭১ এর হাতিয়ার , গর্জে উঠলো আরেকবার '' ।
কিসের সাথে কিসের তুলনা !
পাকিস্তান কি এত বোকা যে সেই পরাজয়ের একটা যুতসই জবাব দেবার একটা মোক্ষম সুযোগ এত সহজেই হাতছাড়া করবে ?
৬ টা পেল , বাকী ৪ টার মধ্যে ২ টা ।
০ শ্রী-লংকা হলো উপমহাদেশের মধ্যে ভারতের একটা সাপোর্টং দেশ ।
২০১১ এর ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছিল খুবই সন্দেহজনক । এ নিয়ে ঐ সময় তাদের বোর্ডে ব্যাপক মনমালিন্য হয়ে গেছে । এছাড়া তাদের যে খেলার সাথে ভারতের স্বার্থ জড়িত আছে সে খেলায় তারা ভারতের চাহিদা মত খেলে ।
তাদের প্লেয়াররাও আইপিএলে খেলে ভালই কামাই করছে । জমিদারদের বিপক্ষে গেলে তারা তাদের বিশাল আয়ের একটা খাত হারাবে ।
ভারতের বিপক্ষে যাবার মত সাহস শ্রী লংকার এখনও হয় নি ।
৭ টা হল , আর মাত্র ১ টা ৩ টার মধ্যে ।
০ যদিও আমরা মনে করছি যে বাংলাদেশের মত জিম্বাবুয়েও ক্ষতিগ্রস্ত হবে , জিবম্বাবুয়ের চিন্তা ধারনা মনে হয় আর্থিক ।
কারণ টেস্ট প্লেয়িং কান্ট্রির মধ্যে তাদের বোর্ডই বেশী গরীব। আর জিম্বাবুয়ে তো ৫ বছর নিজেরাই নিজেদের টেস্ট থেকেই সরিয়ে রেখেছিল । তাই টেস্ট খেলতে না পারলে তাদের কোন আক্ষেপ থাকবে না যেমনটা থাকবে বাংলাদেশের ।
১০ টায় ৮ টা ভোট তো পেয়েই গেল জমিদাররা !
একা সাউথ আফ্রিকা কিছু করতে পারবে না যেখানে তাদের প্রভুরা আছে ।
এই প্রস্তাব পাশ হলে ১ম ৮ টা টেস্ট প্লেয়িং দেশগুলোর কিছুই আসবে-যাবে না , তারা যেমন ছিল তেমনই থাকবে । তাদের খেলাতে কোন সমস্যা হবে না । হয়ত টাকা কমে আসবে ।
কিন্তু এতদিনে তিলে তিলে একটা শক্তিতে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশের জন্য হবে খুবই খারাপ । টাকার কথা চিন্তা করার কোন সুযোগ নেই । ভাল খেলতে থাকলে টাকা আসবেই । কিন্তু যেখানে খেলারই সুযোগ থাকবে না সেখানে টাকার কথা পরে , খেলোয়ারই তো আসবে না ।
এই খেলাকে ঘিরে সে সব অবকাঠামো গড়ে উঠেছে এই প্রস্তাব পাশ হলে তার উপর বিরুপ প্রভাব আসতে বাধ্য ।
এই প্রস্তাব পাশ হলে বাংলাদেশকে জিম্বাবুয়ে সহ খেলতে হবে ৪ দিনের ইন্টার-কন্টিনেন্টাল কাপ যেখানে আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান , কেনিয়া এরা খেলছে । এবং সেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়ে র্যাংকিয়ের ৮ নং দলের সাথে খেলে জিততে হবে জমিদারদের দলে ঢুকতে চাইলে ।
টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে যাবের পর স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপের এই দেশগুলোর উপরে চলে এসেছে । ফলে এটা হবে বাংলাদেশের জন্য অবনমনই যেখানে এখন বাংলাদেশ তর তর করে উপরে উঠছে । আফগানিস্তানদের জন্য এটা হবে খুবই সূবর্ণ সুযোগ ।
তারা এই প্রস্তাবটার সুফল হাতছাড়া করতে যাবে না কখনই ।
এখন মনে হচ্ছে এই প্রস্তাবটা শুধু মাত্র বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্ভাবনাকে দমিয়ে দেবার জন্যই আনা হয়েছে ।
বাংলাদেশের উচিত ছিল বিপদের বন্ধু জোগাড় করে রাখা ।
বিষয়: বিবিধ
১৭৬০ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লোকটাকে আসলেই ভাল মনে হয় আমার কাছে । পাকিস্তানে যাবার ব্যাপারে ভালই ট্যাকল দিয়েছিল ।
বাংলাদেশকে পছন্দ করে এরকম দেশ খুব একটা নেই ।
তার উপর বাংলাদেশ একমাত্র বন্ধু বানিয়েছে এমন এক দেশকে যাকে বিশ্বের কোন দেশই পছন্দ করে না ।
বিস্তারিত পড়ুন
Click this link
পারলে কমেন্ট করেন
বাংলাদেশ এই বিষয়ে বরাবরই কাঁচা এবং পরমুখাপেক্ষী
০ ঠিক বলেছেন । কিন্তু ওদের বিভিন্ন অন্যায়ের সামনা সামনি জবাব দেবার এটাই যে একমাত্র মাধ্যম ছিল !
তবে তিন কুতুব এর রাংকিং এ অবনমন হবেনা- এ প্রস্তাবটি হয়তো মানবেনা পাকিস্তান ও দক্ষিণ অফ্রিকা কোন অবস্থাতেই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন