এবার পরিকল্পিত আন্দোলন, মাঠে থাকবেন খালেদাও
লিখেছেন লিখেছেন হতভাগা ২৬ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:৩২:০২ সকাল
26 Nov, 2013 নির্বাচনী তফসিল ঘোষণামাত্রই প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব শুরু। চলবে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত। কিন্তু এ আন্দোলন নিয়ে প্রধান বিরোধী দলে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব যেমন স্পষ্ট, তেমনি সাংগঠনিকভাবেও কিছুটা অগোছালো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তাদের নীতিনির্ধারণী ফোরামের অনেক নেতা আন্দোলনের পরিকল্পনা সম্পর্কেও জানেন না। একই সঙ্গে আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি শক্তি জোগান দিতে পারে যে জামায়াতে ইসলামী, সেই শরিক দলটির সঙ্গেও আগের মতো ঘনিষ্ঠতা নেই। আন্দোলনের ধরন-ধারণেও দুটি দলে ভিন্নতা রয়েছে। তা সত্ত্বেও বিএনপি মনে করছে, আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বটি সফল হবেই। সেভাবেই তারা পরিকল্পনা আঁটছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, সমঝোতা ছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা মানেই তো একতরফা নির্বাচন। সে ক্ষেত্রে বিরোধী দল কর্মসূচি দেবে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতা এবং ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন।
প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২৫ অক্টোবরের পর সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে অসহযোগিতার ডাক দেন। সেই থেকে আন্দোলনের একটি ধাপ শুরু হয়। কিন্তু আন্দোলনে পরিকল্পনার কোনো ছাপ ছিল না। সমাবেশ, টানা ৬০ ঘণ্টা করে দুই দফা ও সর্বশেষ টানা ৮৪ ঘণ্টার হরতাল- এই ছিল আন্দোলনের কর্মসূচি। ওই সব হরতালে মাঠে থাকেনি নেতা-কর্মীরা। হরতাল সফল করতে নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়ার মতো স্বাভাবিক পরিকল্পনাও ছিল না। অতীতে হরতাল ডেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে লিফলেট বিতরণ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হতো। ইদানীং সেসব উদ্যোগও থাকে না। হরতাল ডেকে ঘরে বসে থাকেন নেতারা। কর্মীরা মাঠে নামার আগ্রহ খুঁজে পায় না। এ নিয়ে খালেদা জিয়া নিজেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। নেতাদের মাঠে থাকার নির্দেশও দিয়েছেন। এমনকি তিনি নিজেই মাঠে নামবেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আন্দোলন জোরদার করতে সারা দেশে 'সংগ্রাম কমিটি' গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সে নির্দেশ পালন হয়েছে সামান্যই। ঢাকায় ওয়ার্ডভিত্তিক সংগ্রাম কমিটি গঠনের জন্য বলা হয়েছিল। ফলে সংগ্রাম কমিটির মাধ্যমে আন্দোলনের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকার যেভাবে পুলিশ দিয়ে আন্দোলন ঠেকাচ্ছে, মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের জেলে নিচ্ছে- তাতে আন্দোলনের গতি কিছুটা হলেও হ্রাস পাচ্ছে। অগোছালো আন্দোলনের প্রশ্নে তিনি বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঢাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত করে বিএনপি কখনো কঠোর আন্দোলন করেনি। মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হোক, তা বিএনপি চায় না। এ জন্যই ঢাকায় জোরালো আন্দোলন হচ্ছে না। তবে ঢাকার বাইরে সারা দেশে পুরোদমে আন্দোলন হচ্ছে। স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালন করছে মানুষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন, ২০০৭ সালের 'ওয়ান-ইলেভেন'-এর পর অন্যতম শরিক জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কিছুটা শিথিল হয়। সে অবস্থার উন্নতি এখনো হয়নি। এ জন্য আন্দোলনের ধরন-ধারণেও কিছুটা পার্থক্য রয়ে যাচ্ছে। জামায়াত করছে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার আন্দোলন আর বিএনপি করছে নির্দলীয় সরকারের আন্দোলন। তবে একতরফা নির্বাচন হলে সে পার্থক্য ঘুচে যাবে। সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ হতে পারে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও শিবিরের সাবেক সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক বরাবরই ঠিক আছে। সে জন্যই জোটবদ্ধ নির্বাচন ও আন্দোলন করা হচ্ছে। শীতল সম্পর্কের কথা তিনি অস্বীকার করেন।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অতীতে আন্দোলন অপরিকল্পিত থাকলেও আগামী দিনে সেটি থাকবে না। রাজধানীতে ধরপাকড়, জেল-জুলুম করে আন্দোলন দমালেও সারা দেশে সরকার তা করতে পারবে না। মূলত সেই ভাবনা থেকেই আন্দোলনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেই পরিকল্পনার মধ্যে রাজধানী ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার চিন্তাভাবনাও রয়েছে। এ জন্য দলের কিছু নেতার মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের এ ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, 'আন্দোলন কিভাবে জোরদার করতে হয় সেটি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ধার করব। বিগত সময় আন্দোলন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ যা যা করেছে, তার চেয়ে কিছু বেশি করা হবে। সে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।'
উৎসঃ কালের কন্ঠ
প্রতিক্রিয়া : উনার না মাজা ব্যথা !! কেমনে কি ?
বিষয়: বিবিধ
১০৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন