বিএনপিতেই প্রশ্ন, এমন হরতাল আর কত?
লিখেছেন লিখেছেন হতভাগা ০৬ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:২৫:৫৪ রাত
06 Nov, 2013 নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হয়েছে। টানা দুই সপ্তাহে হরতাল থাকায় স্বভাবতই প্রশ্ন সামনে এসেছে, আগামী সপ্তাহেও কি হরতাল, না অন্যকিছু?
আপাতঃ এ প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর বিএনপি দেয়নি। তবে ৬০ ঘণ্টার হরতাল শেষের আগ মুহূর্তের সংবাদ সম্মেলনে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে।
দাবি আদায়ে এসব কর্মসূচি নিয়ে বিএনপি এবং তাদের জোটেই ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্ন। দলের নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করছেন, এভাবে আর কত? একটি হরতালেও রাজধানী ঢাকায় জোটের মূল দল বিএনপি বড় ধরনের শোডাউন দেখাতে পারেনি।
ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়েছে তাদের হরতাল কর্মসূচির পিকেটিং। শরিক জামায়াতে ইসলামীর মত দলের তৃতীয় সারির নেতারা অলি-গলিতে ঝটিকা মিছিল আর ককটেল ফাটিয়ে হরতালে উপস্থিতির জানান দিচ্ছে।
আগে হরতাল কর্মসূচি দেওয়ার পর সেদিন সকাল থেকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করতেন প্রথম সারির অনেক নেতা। এখন সেটিও দুর্লভ ঘটনা হয়ে ধরা দিচ্ছে। সর্বশেষ ৬০ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচিতে ঢাকার রাজপথে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কারো দেখা পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে দলেই ক্ষোভ বিরাজ করছে। তৃতীয় সারির নেতারা এমন কি দ্বিতীয় সারির অনেক নেতাও আরটিএনএন’র কাছে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের ক্ষোভ, ‘দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা অন্যদের সঙ্গে করে হরতালে নয়াপল্টনে মিছিল বের করলে কী সরকার ব্রাশ ফায়ার করে সবাইকে মেরে ফেলবে? সরকারের পক্ষে তা যেহেতু সম্ভব নয়, তাহলে তাদের আসতে সমস্যা কোথায়?’
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিএনপির যেসব নেতারা সভা-সেমিনার ও সমাবেশে উত্তপ্ত বক্তব্য দিয়ে নিজেকে জাহির করেন, হরতালে তাদেরই খুঁজে পাওয়া ভার। সর্বশেষ হরতালে ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্বস্থানীয় কোনো নেতাকে যেমন মাঠে দেখা যায়নি, তেমনি অঙ্গ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরাও ছিলেন না।
১৮ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা রাজধানীর কয়েকটি স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে হরতালের সমর্থনে পিকেটিং করলেও এবার তেমন সক্রিয় ভাব লক্ষ্য করা যায়নি। বাকি শরিকদের তো দূরবীণ লাগিয়েও হরতালে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
তবে দু-একটি দল গতানুগতিকভাবে প্রতিদিনের হরতাল শেষে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তুলে ধরেন, রাজধানী শতাধিক স্পটে হরতালের সমর্থনে অমুক দলের বিক্ষোভ মিছিল, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এতজন আহত-আটক ইত্যাদি। তবে ওইসব মিছিল কিংবা আহতের ব্যাপারে পরে দলগুলোর শীর্ষ নেতারাই কোনো সদুত্তর দিতে পারেন না।
আহতরা কোথায় চিকিৎসাধীন, তারও কোনো তথ্য দিতে পারেন না ওইসব নেতারা। এ নিয়ে জোটের মধ্যে যেমন ক্ষোভ বাড়ছে; তেমনি আন্দোলনে আগ্রহ হারাচ্ছেন সক্রিয় কর্মীরা।
নির্দলীয় সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে বিরোধী জোটের ডাকা হরতালগুলোতে কার্যত বিএনপি ও জামায়াতের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পুলিশের নজরদারি উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলিতে বিচ্ছিন্নভাবে পিকেটিং করে থাকে। তবে তাদের উপস্থিতিও মুষ্টিময়।
কোনো কোনো সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা রাজপথে ককটেল ছুঁড়ে ও গাড়িতে আগুন দিয়ে দ্রুত সরে পড়ে। এসব কর্মসূচিতে ভুলেও দেখা যায় না সভা-সমাবেশে হাকডাক দেওয়া ‘জাদরেল’ (নিজেদের দেওয়া উপাধি) নেতাদের।
গত ১৪ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টন ভাসানী মিলানায়তনে মহানগর বিএনপির এক যৌথসভায় ঢাকার সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা নেতাকর্মীদের দা, কুড়াল ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান। খোকার এমন বক্তব্যে পর নড়েচড়ে উঠে প্রশাসন।
তাকে আটক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। গ্রেপ্তার আতঙ্কে তখন থেকেই আত্মগোপনে যাওয়া খোকা মাত্র দুবার সমাবেশে দেখা দিয়েছিলেন। তারপর আবারো ফিরে গেছেন আত্মগোপনে।
সাদেক হোসেন খোকার এমন অবস্থান ইঙ্গিত করে গত ৩ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘পুলিশের ভয়ে আত্মগোপনে কেন? সভা-সমাবেশে সভাপতিত্ব করলেই আন্দোলন সফল হয় না। এখন তো আর আত্মগোপনের সময় নয়।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার লোক যদি কারো গাড়ির ড্রাইভার হন, তবে সে গাড়ি কার কোথায় চলে, তা সবারই জানা। ওই নেতাকে (আত্মগোপনে থাকা) বলতে চাই- বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে প্রচুর টাকা কামিয়েছেন, এখন দলের জন্য কিছু টাকা খরচ করেন।’
গয়েশ্বর আরো বলেন, ‘আপনি হুমকি-ধমকি দিয়ে নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিবেন কিন্তু নিজে রাজপথে না গিয়ে নিরাপদে থাকবেন, তা কী করে হয়? আসল কথা হলো- শেখ হাসিনার লোককে বেগম জিয়া লালন করেন।’
খোকার হুমকির ওই যৌথসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, ‘কোয়ার্টার ফাইনাল হয়েছে, সেমিফাইনাল হয়েছে। এবার ফাইনাল রাউন্ডের খেলা। খেলার সময় সাত দিন। এর মধ্যে সব প্রস্তুতি নিতে হবে। এ খেলায় জয়ের কোনো বিকল্প নেই। হারলে টিকে থাকা যাবে না।’
এরপর ডেটলাইন ২৫ অক্টোবর পার হয়েছে। আরো দুই সপ্তাহ পার হলো। সরকারকে নাড়া দেয়ার মতো কর্মসূচি বলতে কিছুই হয়নি বলে দাবি করেন মহানগর বিএনপির এক নেতা। তিনি বলেন, ‘আর কত ডেডলাইন, এখন মুখে ঘোষণার চেয়ে নিজে মাঠে নেমে করে দেখানো জরুরি হয়ে পড়েছে।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকে প্রথমে ২৭, ২৮ ও ২৯ অক্টোবর টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করেন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর একই দাবিতে ফের ৪, ৫ ও ৬ নভেম্বর টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি দেয় বিরোধী জোট। এসব হরতালে সংসদ ভবন চত্বরে কয়েকজন বিএনপির সংসদ সদস্য ছাড়া রাজধানীর রাজপথে কোথাও দেখা যায়নি প্রধান বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকে।
ঢাকার রাজপথে বিএনপির আন্দোলনকে উপহাস করে নয়াপ্টনে পুলিশের আলোচিত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘হরতালে ঢাকায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দেখা মেলা ভার। তারা আসলে ঘোষণাতেই পাকা, কাজে নয়।’
হরতালে রাজধানীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা কে কোথায় পিকেটিং করেছেন এমন প্রশ্নে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে অর্পিত দায়িত্ব কেন্দ্রীয় নেতারা নিজ নিজ অবস্থানে থেকেই পালন করে চলেছেন।’
ঢাকায় আন্দোলন জোরদার না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম আরটিএনএন- কে বলেন, ‘ঢাকায় মিছিল-মিটিং দূরে থাক, নেতাকর্মীরা তো রাস্তাতেই দাঁড়াতে পারছে না। পুলিশ দেখামাত্রই গুলি করছে, পিকেটিং করতে গিয়ে কেউ গ্রেপ্তার হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত সঙ্গে সঙ্গে কারাদণ্ড দিচ্ছে।’
তিনি দাবি করেন, ‘তবুও সব বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা নিজেদের সাধ্যমত মিছিল-পিকেটিং করে যাচ্ছেন। অচিরেই তা আরো বড় আকার ধারণ করবে।’
হরতালে রাজপথে মহানগরের শীর্ষ নেতাদের অনুপস্থিতি বিষয়ে আবদুস সালাম বলেন, ‘সবাই রাজপথে থাকেন এবং নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর বিএনপির এক যুগ্ম-আহ্বায়ক আরটিএনএন- কে বলেন, ‘ঢাকায় আন্দোলন হবে কীভাবে? মহানগরের অধিকাংশ থানায় কমিটি নেই। যে কমিটি হয়েছে তাতেও ঝামেলার অন্ত নেই। সঙ্গে আছে মহানগর বিএনপিতে দীর্ঘদিনের ‘ঐতিহাসিক’ ইগো প্রবলেম।’
সাবেক এই ওয়ার্ড কমিশনার বলেন, ‘মহানগর কমিটির শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগের শেষ নেই। তারা উভয়েই সংস্কারপন্থি। নেতাকর্মীরা তাদের খুব একটা বিশ্বাস করেন না। বিশ্বাসহীন নেতাদের ডাকে কেউ কী রাস্তায় নামবে?’
বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, ‘সত্যি কথা বলতে বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটি নিয়ে দলীয় চেয়ারপারসন নিজে চরম অস্বস্তিতে আছেন। সারা দেশে কড়া হরতাল হলেও ঢাকায় তার আঁচ না পড়ায় ক্ষুব্ধ তিনি।’
তবে ঢাকাকে নিয়ে আন্দোলনের ‘বিশেষ পরিকল্পনা’ থাকায় বেগম জিয়া তাদের এখনই কিছু বলছেন না বলেও জানান তিনি।
উৎসঃআরটিএনএন
প্রতিক্রিয়া : বিএনপির উচিত হবে এসব আন্দোলন , হরতাল বাদ দিয়ে সরকারের কথামেনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া । আওয়ামী লীগের কাছ থেকে দাবী আদায় করার মত দল বাংলাদেশে নেই ।
বিএনপি এখন একটি মাজাভাঙ্গা দল । নির্বাচনে হারার সম্ভাবনা থাকলেও তাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যেই নির্বাচনে আসতে হবে ।
না হলে তারা বিলীন হয়ে যাবে ।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন