বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিবর্তন শিক্ষার মানউন্নয়নের অন্তরায়
লিখেছেন লিখেছেন বিনয়ী বালক ২৬ জুন, ২০১৩, ১০:৫৭:৪১ রাত
একটি সময় ছিলো যখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মানেই বিশাল পান্ডিত্যসম্পন্ন দূর নক্ষত্রলোকের কোন মানুষ। ছাত্র হিসাবে যাকে দুর থেকে শুধু দেখা যায, মুখোমুখি হয়ে গেলে বিনয়নম্র সালাম এবং সবসময় ভয়ার্ত শ্রদ্ধাবোধ।বিভাগীয় কোন শিক্ষকের সাথে দুটি কথা বলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ডিগ্রী অর্জনের সমতুল্য। হাসিমুখে দুটি কথা বলতে পাড়া তো অমাবস্যার রাতে পূর্ণিমা চন্দ্র দর্শন!
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সম্পর্কে এই অতিমূল্যায়ন কে নবরুপ প্রদান করে বাংলাদেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
ছাত্রশিক্ষক সম্পর্কের বিষয়টিকে নবমাত্রা দিয়েছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
জ্ঞান অর্জনের অন্যতম বাধা শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মাঝের দ্বিধা কিংবা সংকোচের দেয়ালটিকে দুরীভূত করেছেন তারা।
এখানে ছাত্ররা নির্দ্বিধায় শিক্ষকদের সাথে ক্লাশরুম এবং ক্লাশরুমের বাহিরে তাদের প্রয়োজজনীয় সমস্যাবলী নিয়ে আলোচনা করে।
"শিক্ষা কাউন্সেলিং" নামের আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির সফল প্রয়োগ এখানেই দেখা যায়।
শিক্ষকরা ছাত্রদের সাথে যোগাযোগের ডিজিটাল এবং ম্যান্যুয়াল সকল মাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন।
আর তাদের সদাচরন, আন্তরিক প্রছেষ্টায় "ছাত্র সন্তুষ্টি অর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয় যারা পরিচালনা করেন তারা।
বলা হয়ে থাকে একজন সন্তুষ্ট শিক্ষক ই পারে তার ছাত্রদেরকে সন্তুষ্ট করতে।
আর শিক্ষক যদি রুষ্ট হন, অসন্তুষ্ট হন, অসম্মানিত হন, কারো দ্বারা সার্বক্ষনিক অপ্রয়োজনীয় নজরবন্দ্বীহন অধৎস্তন কর্মচারীদের মতো, তাহলে জ্ঞানী শিক্ষক হয়ে ও তিনি সঠিক পাঠদান করতে ইচ্ছুক হবেন না।
সামপ্রতিক কালে দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-কর্মকতা-শিক্ষক-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে অসহিষ্নু আচরন। কারনে হলে শিক্ষকদের স্বাভাবিক গতিকে নিয়ন্ত্রন করা।
অভিযোগ গুলো যেখান থেকে আসে সেখানে মূলত অ-শিক্ষাবিদরাই শিক্ষকদের সাথে প্রশাসনের দূরত্ব তৈরি করে দেয়।
শিক্ষক ঠিকমতে পাঠদান করলো কি করলোনা, এ বিষয়টির চাইতে তাদের কাছে দরকার হয়ে পড়ে শিক্ষক চাকুরীজীবিদের মতো ৯-৫টা অফিস করলো কিনা।
অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞাপন দেয় "শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ এসকল বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের মাথার উপর কোন পাকা থাকে না।
ক্লাশরুম থেকে যখন নিজ অফিস কক্ষে আসে সেখানে চৈত্রের তাপদাহের মধ্যেও থাকে না কোন এসি।
এখানে যে গুলো বলা হলো এর কোনটাই কিন্তু আর্থি সুবিধার সাথে জড়িত না। প্রতিটাই হচ্ছে ব্যবস্থাপনা এবং ভৌত কাঠামের সাথে জড়িত। ছাত্ররা খুব পর্যবেক্ষন করে। পত্রিকায় দেওয়া বিজ্ঞাপনের সাথে বাস্তবের বড় অমিল।
কিছু কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায় শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা পূর্বের তুলনায় কমিয়ে দিতে। অথচ তারা ছাত্র বেতন প্রায় প্রতি বছর বৃদ্ধি করে থাকে।
কথায় কথায় চাকুরীচ্যুতি কিংবা চাকুরীচ্যুতির হুমকি প্রদান নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা।
আবার বিভিন্ন বিভাগীয় পর্যায়ে বেশ কিছু অতি রিটায়ার্ড শিক্ষককে নিয়োগ দিয়ে সচল এবং অচলের একটি সংঘাত ও দ্বার করিয়ে দেওয়া হয়।
একজন সন্তুষ্ট শিক্ষকই পারে তার ছাত্রদের সন্তুষ্ট করতে। একজন সন্তুষ্ট শিক্ষকই পারে প্রশাসনের সাথে ছাত্রদের সেতুবন্ধন তৈরী করে দিতে। একজন সন্তুষ্ট শিক্ষকই পারে তার ছাত্রদের মমতায় ভরা ভালো বাসা দিয়ে শত কষ্টের মধ্যে পড়ুমুনায় উৎসাহী করে তুলতে।
আর তার এ কর্ম তৎপরতাই পারে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করতে।
যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে তার শিক্ষকদের সম্পর্ক যতো ভালো সেখানে শিক্ষার পরিবেশ ততো ভালো। সেখানে ছাত্রদের সন্তুষ্টির পরিমান ও অনেক বেশী।
বেশরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমুহে শিক্ষার মানের নিশ্চয়তার জন্য শিক্ষক নিয়ন্ত্রন বা নিবর্তনকে গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষকের কর্তব্য পালনে সহায়তা খুব জরুরী।
বিষয়: বিবিধ
২০৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন