ছিটমহল বাসী পরিচয় অর্জন করল, কিন্তু পরিচয় অর্জন করল না তিনবিঘা করিডোর?
লিখেছেন লিখেছেন মাটিরলাঠি ৩১ জুলাই, ২০১৫, ১১:২৮:৪১ রাত
৬৮ বছর পর ভারত-বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহল ৩১শে জুলাই, ২০১৫ শুক্রবার রাত ১২টা ১ মিনিট পর দুই দেশের ভূখণ্ডের অংশ। এত দিন দেশহীন থাকা ছিটমহলগুলোর ৫০ হাজারের বেশি মানুষ দেশ ও পরিচয় পেল। কিন্তু তিন বিঘা করিডোর?
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
লালমনিরহাট জেলাধীন পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ছিটমহল দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা। এ ছিটমহলের সাথে তৎকালীন পাকিস্তানের মূল ভূখন্ডের যোগাযোগের জন্য একটি ‘প্যাসেজ ডোর’ এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল, যা বর্তমানে ‘তিন বিঘা করিডোর’ নামে পরিচিত। পাকিস্তান আমল পেরিয়ে বাংলাদেশ আমল পর্যন্ত তিন বিঘা হস্তান্তর প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের অনেক বৈঠক এবং চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহল পাটগ্রাম উপজেলার একটি স্বতন্ত্র ইউনিয়ন ‘দহগ্রাম ইউনিয়ন’ হিসেবে পরিগণিত হয় এবং ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে আগস্ট এখানে ইউনিয়ন পরিষদের শুভ উদ্বোধন ঘটে। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে জুন ইজারার মাধ্যমে উক্ত তিন বিঘা বাংলাদেশকে প্রদান করা হয়। তবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১ ঘন্টা পর পর করিডোর দিয়ে বাংলাদেশীদের যাতায়াতের সুযোগ দেয়া হয়। অতঃপর করিডোর দিন- রাত খোলা রাখার জন্য দাবী উত্থাপিত হলে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে এপ্রিল থেকে তা সকাল ৬-৩০ মিনিট হতে সন্ধ্যা ৬-৩০ পর্যমত খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়। সর্বশেষ গত ৬ই সেপ্টেম্বর ২০১১ খ্রি. তারিখে ঢাকাতে অনুষ্ঠিত হাসিনা-মনমোহন বৈঠকে স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশীদের যাতায়াতের জন্য তিনবিঘা করিডোর বর্তমানে ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা হচ্ছে।
ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি ১৯৭৪
পশ্চিমবঙ্গ- বাংলাদেশ সীমান্তে তিস্তা নদীর পাড়ে ভারতের অধিকারভুক্ত একটি সরু এলাকা (১৭৮x৮৫ বর্গ মি.)। ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি ১৯৭৪ এ বাংলাদেশ ও ভারত একে অপরকে যথাক্রমে 'তিন বিঘা করিডোর' ও 'সাউথ বেরুবারি' (৭.৩৯ বর্গ কি.মি.) এর সার্বভৌমত্ব হস্তান্তরের কথা ছিল। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ তৎক্ষণাত সংবিধান সংশোধন (৩য় সংশোধনী) করে হস্তান্তর করলেও ভারত করেনি। বাংলাদেশ সরকারের অনেক প্রতিবাদের পর অবশেষে ঢাকায় সেপ্টেম্বর ২০১১ এ মনমোহন- হাসিনা বৈঠকে 'তিন বিঘা করিডোর' হস্তান্তরের পরিবর্তে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাংলাদেশকে ইজারা দেয়ার প্রস্তাব হয়। চুক্তিতে উভয়পক্ষ সম্মত হয় আগের মত দিনের আলোতে ১২ ঘন্টা 'তিন বিঘা করিডোর' খোলার পরিবর্তে মূল ভূখন্ডে প্রবেশে ২৪ ঘন্টা ই বাংলাদেশী ছিটমহলবাসীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে ।
অর্থাৎ তিনবিঘা করিডোর স্থায়ীভাবে বাংলাদেশের সার্ব ভৌমত্বে আসল না অথচ এর বিনিময়ে বাংলাদেশ দঃ বেরুবাড়ী ভারতকে দিয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে কারো মাথাব্যাথা আছে বলে মনেও হয় না। ওদিকে ভারতে দাবী উঠেছে দহগ্রাম ভারতকে দিয়ে দিতে হবে।
তথ্যসূত্র
১. তিনবিঘা করিডোর।
২. ছিটমহল সংক্রান্ত বিস্তারিত উইকিতে।
৩. ডাউনলোড করুন পিডিএফ ফাইল India & Bangladesh Land Boundary Agreement.
৪. সীমান্তচুক্তির প্রভাব তিন বিঘায় পড়বে না ।
৫. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন লালমনিরহাট জেলা।
৬. ছিটমহলের উৎপত্তি ও বঞ্চনার ইতিবৃত্ত।
৭. গুগল ম্যাপে তিনবিঘা করিডোর।
১৯৭৪ সনের চুক্তি অনুযায়ী তিনবিঘার করিডোরের উপর ভারত তার সার্ব ভৌমত্ব ত্যাগ না করে ও সংবিধান সংশোধন না করে, তাহলে বাংলাদেশের একটি বিশাল ভুখন্ড ও একটি জনপদ ভারতের দয়ার উপর থেকে যাবে। বর্তমান বন্ধুপ্রতীম সরকারের উচিত বিষয়টি সমাধান করা।কেননা তিনবিঘার পরিবর্তে আমরা তাদের দক্ষিণ বেরুবারী দিয়ে দিয়েছি সংবিধান সংশোধন করে।
বিষয়: বিবিধ
২৪২০ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মাশাআল্লাহ। সবই জামাতী মুমিন'দের অবদান।
ধন্যবাদ
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন