সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টিঃ প্রেক্ষিত পার্বত্য চট্টগ্রাম
লিখেছেন লিখেছেন অধিকারের কথা ০৩ মে, ২০১৬, ১২:০১:০০ দুপুর
তারিখঃ ১২ জানুয়ারি, ২০১৬
মিঠুন চাকমা
পারিবারিক অভিজ্ঞতা জ্ঞাপন
আমার দাদীর বাড়ি রাঙামাটির লুঙুদু উপজেলার মাহজনপাড়া গ্রামে।বলে রাখি তিনি লেখাপড়া করেননি।তার সময়ে মেয়েদের লেখাপড়া করা বারণ ছিল। তাই সবাই স্কুলে যাবার সময়ে তিনি হয় রান্নাঘরের চুলা সামলাতে মায়ের সহকারী হয়েছেন নতুবা ঘরের নানা কাজে সহযোগিতা করেছেন।তার সাথে আলাপ করার সময় তার বাপের বাড়িতে ঘটা একটি ঘটনার কথা তিনি স্মরণ করছিলেন।তখন তিনি দাদুর বাড়িতে স্ত্রী হিসেবে চলে এসেছেন এবং কয়েকজন ছেলেপিলেও তার হয়েছে।একদিন তিনি জানতে পারেন তাদের গ্রামে তার পিতার ঘর ‘সর্বহারা’রা লুট করেছে। সর্বহারা নামে যারা এই ঘটনা ঘেটিয়েছিল তারা লুট করেছিল ধানের গোলা থেকে ধান, টাকা পয়সা যা ছিল ও তাদের ঘরে যে সকল কাপড়চোপড় ছিল সবকিছু।তিনি জানাচ্ছিলেন, তার মা বেশ কষ্ট করে বেইন বুনে বুনে পিনন ও খাদি (চাকমা নারীদের পরনের পরিধান)বুনতেন। এবং তা একটি পুটলি বা বোাঁচকায় রেখে দিতেন। সর্বহারা’রা যেদিন লুট করতে আসল সেদিন তার মা পিনন ও খাদি’র সেই পুটলি যেন লুটের হাত থেকে বাাঁচাতে পারেন তার জন্য তা ঘরের বাইরে পাহাড়ের নিচে ছুড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সর্বহারা’রা তাও কুড়িয়ে নিয়ে যায়। লুটের পরে তার মায়ের পড়নের কাপড় ছাড়া কিছুই ছিল না। তাকে অন্যজন থেকে কাপড় চেয়ে নিতে হয়েছিল। পরে তিনি নিজে তার মায়ের জন্য পিনন বা পরনের কাপড় পাঠিয়ে দেন।
সর্বহারারা কেন মাহজনপাড়া গ্রামে আমার দাদী’র পিতার বাড়ি লুট করেছিল? এ বিষয়ে দাদী কিছু্ই বলতে পারেননি। কারণ তিনি কীই বা বুঝবেন শ্রেনীশত্রু-মহাজন শ্রেনী বিষয়ে! আমি তো অবাক হই এতদিন পরে তিনি কিভাবে এই ‘সর্বহারা’ শব্দটি মনে রাখতে পারলেন তা নিয়ে!
আদতে দাদী বা তাদের পিতার পরিবার কি বড়সড় কোনো জমিদার কেউ ছিলেন? অথবা ছিলেন অত্যাচারী জমিদার, জোতদার?
ধনসম্পত্তির দিক থেকে হয়ত তাদের অন্যজনের চেয়ে ভালো অবস্থান ছিল। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের তৎকালীন প্রেক্ষাপটে ধনী বা জমিদার বলতে যা বোঝায় তা হল, ‘বজরঅ ভাদে পারানা’ বা একুনে ধানের যা উৎপাদন তা দিয়ে পুরো একটি বছর কাটিয়ে দিতে পারাই হলো তৎকালীন সময়ে ধনী বা থাউইএ(চাঙমা ভাষায় ধনী অর্থে বোঝাতে) বা জমিদার হিসেবে পরিচিতির বৈশিষ্ট্য।কিন্তু এটাও ঠিক যে এই জমিদার বা ধনী বা চাকমা ভাষায় থাউইএ শ্রেনীর লোকজনকে তাদের নিজেদের জমিতে নিজেদের গতরও খাটতে হতো।তারা বা এই শ্রেনী কাউকে অত্যাচার করতো কি না তা খুঁজতে হলে পাই পাই করে প্রতিজনের বিষয়ে বাস্তব ধারণা নিতে হবে। কিন্তু তারপরেও কি শ্রমিক শ্রেনীর কমিউনিস্ট বা বিপ্লবী রাজনীতিতে এই ‘মাঝারী ধনী’ বা ‘স্বচ্ছল ধ্বনী’ক শ্রেনীকে ‘শ্রেনীশত্রু’ তকমায় ফেলা যায়?
সম্ভবত, চীনে মাও সেতুঙের পিতা তারও চেয়ে অধিক ধনী বা বিত্তবান বা অধিক জমিদার ছিলেন। কিন্তু মাও সেতুঙ কি এই শ্রেনীকে ‘শত্রু’র কাতারে ফেলেছিলেন?
সর্বহারা পার্টি’র ‘পূর্ব বাংলার সমাজের শ্রেনী বিশ্লেষণ’ লেখাটি পড়লে বোঝা যাবে ‘দাদী’র পিতা কোন শ্রেনীতে পড়তেন। সম্ভবত, তারা বড়জোর ধনীক শ্রেনীর কাতারে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন।তবে ধনীক শ্রেনীর কাতারে পড়বেন কি না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। দাদী বলেছেন, তার পিতা খুব কষ্ট করে নিজে পরিশ্রম করে ‘আগাব ভুঁই’ চাষ অযোগ্য জমির মাটি কেটে কেটে চাষাবাদযোগ্য জমি প্রস্তুত করেছেন। খেটে খেটে জমির পরিমাণ বাড়িয়েছেন। এবং জমিতে তিনি যেমন মজুর নিয়োগ করতেন তেমনি নিজেও জমিতে শ্রম দিতেন। পরে তিনি এলাকায় মহাজন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
এই শ্রেনী সম্পর্কে বলা হচ্ছে-
‘সাধারণভাবে বলতে গেলে তারা পূ্র্ব বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামে কিছুটা ভুমিকা পালন করতে পারে এবং জমিদার বিরোধী ভূমি বিপ্লবী সংগ্রামে নিরপেক্ষ থাকতে পারে। এ কারণে আমরা ধনী চাষীদের জমিদার শ্রেনীভুক্ত করবো না এবং অপরিপক্কভাবে তাদের ধ্বংস করার নীতি নেব না।’(সূত্রঃ সিরাজ সিকদার রচনা সংগ্রহ, শ্রাবন প্রকাশনী; প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯; পৃঃ ৫০।
মাও্ সেতুঙ তার ‘চীনা সমাজের শ্রেনী বিশ্লেষণ’ প্রবন্ধে জমিদার শ্রেনী ও মুৎসুদ্দী শ্রেনী ব্যতীত মাঝারী বুর্জোয়া শ্রেনী থেকে শুরু করে পাতি বুর্জোয়া, স্বত্ত্বাধিকারী কৃষক, মালিক-হস্তশিল্পী, ছাত্র-প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক, অফিসের কেরানী, ছোট ব্যবসায়ী, দোকান কর্মচারী, ফেরী ওয়ালা, আধা সর্বহারা, সর্বহারা শ্রেনী প্রমুখকে বিপ্লবে সম্পৃক্ত করার কথা বলেছিলেন। ছোট প্রবন্ধটির শেষে তিনি বলছেন-
‘সংক্ষেপে, এটা সুস্পষ্ট যে সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে যোগসাজশে লিপ্ত সমস্ত সমরনায়ক, আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজিপতি শ্রেনী, বড় জমিদার শ্রেনী এবং তাদের সঙ্গে সংযুক্ত বুদ্ধিজীবীদের প্রতিক্রিয়াশীল অংশ হলো আমাদের শত্রু। শিল্পকারখানায় কর্মরত সর্বহারা শ্রেনীই হলো আমাদের বিপ্লবের নেতৃত্বস্থানীয় শক্তি। সমস্ত আধা সর্বহারা এবং পাতি বুর্জোয়া হলো আমাদের নিকটতম বন্ধু। দোদুল্যমান মাঝারী বুর্জোয়া শ্রেনীর দক্ষিণপন্থীরা আমাদের শত্র
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন