স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট আমাদের কী পথ দেখাতে পারে

লিখেছেন লিখেছেন অধিকারের কথা ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০১:০৭:৫৫ রাত

স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতাকামী নেতা পদত্যাগের ঘোষনা দিয়েছেন। স্কটল্যান্ড সংক্রান্ত রেফারেন্ডমের ফলাফল প্রকাশের পর স্বাধীনতার পক্ষের স্কটল্যান্ড ন্যাশনাল পার্টির নেতা আলেক্স স্যামন্ড পরাজয় মেনে নিয়েছেন। তিনি স্কটল্যান্ডের সকল নাগরিকদের এই ফলাফল মেনে নিতে বলেছেন।

১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। স্কটল্যান্ডের মোট ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ভোটারের প্রায় অনেকেই ভোট দেন। ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে ফলাফল প্রকাশ হতে থাকে। মোট ৩২টি কাউন্সিলের মধ্যে ৩১টি কাউন্সিলের প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় না ভোট পড়েছে ১৯ লাখ ১৪ হাজার আর হ্যা ভোট পড়েছে ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯২০টি। শতাংশ হিসাব করে দেখা যায় মোট ভোটের ৫৫.৩ শতাংশ পড়েছে না ভোটের পক্ষে, আর ৪৪.৭ শতাং ভোট পড়েছে হ্যা এর পক্ষে।

গোটা ইংল্যান্ড এবং এমনকি গোটা পৃথিবী আরেকবার গভীর আগ্রহ ও উদ্বেগের সাথে তাকিয়ে ছিল স্কটল্যান্ড সংক্রান্ত এই গণভোটের দিকে। শ্বাসরূদ্ধকর এক সময় পার করেছিল শুধু ব্রিটেন-স্কটল্যান্ডবাসী নয়, বরং পৃথিবীর সকল সচেতন জনগণই তাকিয়ে ছিল এই ফলাফলের দিকে।

এবং শেষ পর্যন্ত ফলাফল বের হয়। দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত স্কটিশরা স্বাধীনতার বিপক্ষেই তাদের ভোট দিয়েছে।

এবং মনে হয়েছে, এতে যারা স্বাধীনতা বা সার্বভৌমত্বের পক্ষে প্রকাশ্যে এবং মনেপ্রাণে অবস্থান নিয়েছিল তারা যেন কিছুটা হোচটই খেয়েছেন।

কিন্তু ফলাফলে বিমর্ষ এবং তার বিপরীতে বরঞ্চ উৎফুল্ল হবার কারণই আমার চোখে দৃশ্যমান হয়।

সংক্ষেপে বললে বলা যায়, এই রেফারেন্ডম প্রমাণ করলো, গণতন্ত্র বলতে যা বোঝায় তা যদি কার্যকর করার চেষ্টা করা হয় বা কার্যকর করা হয় তবে জনগণ নিজেদের ভবিষ্যত কল্যাণকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে তাদের মতামত প্রদর্শন করেন।

স্কটল্যান্ডের জনগণ গণভোটের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের অন্তর্ভূক্ত থেকে স্বাধীন অস্তিত্ব নিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু ব্রিটেন যে একটি গণতন্ত্রের দেশ, গণতন্ত্রের আবাসভূমি তা এই নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকবার প্রমাণ করলো, তাতেই সন্তুষ্ট থাকতে পারলেও ক্ষতি কী! ইংল্যান্ড বা গ্রেট ব্রিটেনে যে, অন্তত অন্যের মতামত বা বক্তব্যের প্রতি বা জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান প্রদর্শন করে তা এই গণভোটের মাধ্যমে বোঝা গেল আরেকবার।

খবরে জানা গেল, স্কটল্যান্ডের বড় বড় শহরগুলোতে হ্যা ভোটের পক্ষে বেশি ভোট পরেছে। অর্থাৎ শহরের জনগণ চেয়েছেন স্বাধীনতা। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো, ড্যান্ডি, ল্যাংকাশায়ারের ভোটাররা ভোট দিয়েছেন হ্যা এর পক্ষে। অপরদিকে ছোটো ছোটো শহরের ভোটাররা ভোট দিয়েছেন না ভোটের পক্ষে। বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে পড়ছিলাম, যখন হ্যা ভোটের পক্ষে এক শিক্ষক অথবা নাট্যকার প্রচারণা চালাচ্ছিলেন তখন পাশের এক শ্রমিক জোর গলায় বলছিলেন যে তিনি স্বাধীণতার বিপক্ষে বা না ভোটের পক্ষেই আছেন।

এই দৃষ্টান্তের দিকে খেয়াল করে বলা যায়, শ্রমিক বা যারা সেই অঞ্চলেল সত্যিকারের খেটে খাওয়া তারা কিন্তু সেই ‘জাতীয়তাবাদী’ চেতনার বিপরীতে বরং ‘শ্রেনী চেতনা’য় বেশি উদ্বুদ্ধ ও সচেতন।

এই উদাহরণের দিকে খেয়াল করলে কার্ল মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিন, মাও সে তুঙ-এর কথাই তো তবে সত্য প্রমাণিত হয়! কার্ল মার্কস তো বলেছিলেন, পুজি চায় জাতীয়তাবাদী চেতনা সৃষ্টির মাধ্যমে পুজিকে কুক্ষিগত করতে। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের এই ক্ষয়িঞ্চু যুগে ‘শ্রেনী চেতনা’কে ‍উপেক্ষা করে শুধুমাত্র ‘জাতীয়তাবাদের চেতনা’ সমাজকে বা লড়াইকে এগিয়ে নিতে পারে না। তাই সকল সংগ্রামকেই এখন শ্রেনী চেতনার দিকে ধাবিত করতে হবে এটাই এখন বাস্তব বস্তুগত ও লড়াইগত এবং সাধারণ বাস্তবতা।

সুতরাং, এই রেফারেন্ডমের মাধ্যমে র্সংগ্রামের সেই লাইনগত সঠিকতাই আরেকবার যেন প্রমাণযোগ্য হয়ে গেল।

যাই হোক ভালো লেগেছে সার্বভৌম স্কটল্যান্ডের পক্ষে কাজ করেও স্কটল্যান্ড ন্যাশনাল পার্টিকে ইংল্যান্ড ‘স্বাধীনতা বিরোধী’ ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ আখ্যা প্রদান করেনি। বাংলাদেশের মতো দেশে এই ধরণের মতামত বা মত প্রদান করার ধৃষ্টতা হয়তো দেখালে সহজেই এই ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ ‘স্বাধীনতা বিরোধী’ তকমা আটা হয়ে যেত নিশ্চয়!

এভাবে অন্যের চরম মত ও পথকে শ্রদ্ধা দেখিয়ে যে ইংল্যান্ড টিকে রয়েছে তা থেকে শিক্ষা নিতে নিশ্চয় অন্য দেশ বা জাতি চেষ্টা করতে পারে।

বিষয়: বিবিধ

১২৬০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

266646
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০১:২০

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 8870

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> লিটুয়ারা লিখেছেন : আমাদের পর্বত্য চট্টগ্রামে রেফারেন্ডাম দেয়া এখন সময়ের দাবি।
266657
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০২:১৬
মাটিরলাঠি লিখেছেন : ০.০১% লোক কোন দেশের ১০ ভাগের ১ ভাগ অঞ্চল নিয়ে রেফারেন্ডাম চাইতে পারে না। শান্তি চুক্তি করারও অধিকার রাখেনা।

২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:২৩
210424

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 8870

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 917

"> লিটুয়ারা লিখেছেন : এখানেই বর্বর মুমিন সাথে সভ্যভব্য ইংরেজদের ফারাক।
266670
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:২৯
তায়িফ লিখেছেন : ১০ লক্ষ্য বহিরাগত ভোটারকে যদি ভোটাধিকার বাদ দিয়ে যদি স্কটিসদের ভোট দিতে বলা হত তবে নিশ্চিত স্কটল্যান্ড স্বাধীন হত। ভারতকে বিভক্ত করে কাশ্মির সমস্যা জিইয়ে রেখে বর্বর ব্রিটিশরা শান্তিতে থাকতে পারবে না। স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার মৃত্যু হবে না।
266674
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:৪১
ঈমানের আলো লিখেছেন : আমাদের দেশে হলে তো 'না' ভোট প্রদানকারী এই ৫৫%কে স্বাধীনতা বিরোধী বলে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার জন্য জাগরন মঞ্চ তৈরী হয়ে যেত!!!
266764
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:৪৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
স্কটল্যান্ড এখন স্বাধিন হলোনা কিন্তু ৫-৬ বছর পর আবারও হতে পারে। কারন স্বাধিনতার বিপক্ষের ভোট বেশি নয়। বৃটিশ সরকারের করা অঙ্গিকারগুলি পুরুন না হলে আবারও জাতিয়তাবাদিরা এগিয়ে যাবে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File