এ কে খন্দকার ১৯৭১:ভেতরে বাইরে বইয়ে নতুন কিছু বলেছেন মনে হলো না

লিখেছেন লিখেছেন অধিকারের কথা ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:০৩:২৮ রাত

স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে লেখা এ কে খন্দকারের আলোচিত বইটি আজ দেখার সুযোগ হলো। বইটি কিছুক্ষণের জন্য ধরার বা পড়ার সুযোগ পেলাম। বইটি উল্টে পাল্টে দেখে ও জাম্পিঙ করে এ পাতা ও পাতা থেকে কিছুে পড়ে মনে হলো না বইটিতে তিনি নতুন কিছু লিখেছেন। তবে তার লেখায় তিনি এক অর্থে তা স্বীকারও করেছেন।

বইটির এক অংশে তিনি লিখেছেন-

মুক্তিযুদ্ধের ৪২ বছর পর আমি বইটি লিখছি।তাই বইটিতে তথ্য উপস্থাপনার ক্ষেত্রে আমাকে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে। আমার তথ্যগুেলোকে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য আমাকে বেশকিছু বই পড়তে হয়েছে।

এরপর তিনি একটি বইয়ের তালিকা প্রদান করেছেন।

যে বক্তব্য বিষয়ে বইটি আলোচিত ও সমালোচিত এবং বিতর্কের অবতাড়না সৃষ্টি করেছে তাতে লেখা রয়েছে-

বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণেই যে মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিল, তা আমি মনে করি না। এই ভাষণের শেষ শব্দগুলো ছিল ‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান’। তিনি যুদ্ধের ডাক দিয়ে বললেন, ‘জয় পাকিস্তান’। এটি যে যুদ্ধের ডাক বা স্বাধীনতার আহ্বান, তা প্রচন্ডভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং তর্কাতীতও নয়।

শেখ মুজিব ‘জয় বাংলা’ এবং তার পরে ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছেন কি না তা নিয়েই বোধহয় বর্তমান শাসক দল আওয়ামীলীগ বেশি পরিমাণে বিরোধিতা করে বইটির সমালোচনা করেছে। কিন্তু এ নিয়ে তো আরো অনেকেই বলেছেন এবং বিভিন্ন প্রামাণ্য বা স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে লেখা বিশ্বাসযোগ্য ও তথ্যউপাত্ত সত্য হিসেবে বিবেচিত বিই বা প্রকাশনায় লেখা হয়েছে। কিন্তু কেনই বা এই বিশেষ বই নিয়ে শাসক দল আওয়ামীলীগ এত পরিমাণ বিতর্কের অবতাড়না করছেন তার কী বিশেষ কারণ রয়েছে তা আমলে আনতে দ্বিধান্বিত হতে হচ্ছে।

তাহলে কি একটি বই নয় বেশ কয়েকটি বইয়ে একই তথ্য একইভাবে লেখার কারণে আওয়ামীলীগের বিশ্বাসে চিড় ধরেছে, বা এতে বাংলাদেশের জনগণের বিশ্বাসে চিড় ধরবে বলে আওয়ামীিলগি ‍দুর্ভাবনা করছে?!!

অবশ্য এতে তাদের দুর্ভাবনা সৃষ্টি হবার যথেষ্ট কারণ থাকতে পারে। কেন না সাধারণ যুক্তিবিদ্যার সূত্র বা বিচারবোধের বা আইনের সূত্রেই বলে যে, একই তথ্য আলাদা ব্যক্তি একইভাবে সত্য হিসেবে এবং হুবহু একইভাবে উপস্থাপন করলে বা চিত্রিত করলে তা যুক্তিবিদ্যা বা বিচারবোধের বা আইনের সূত্র মোতাবেক ‘সত্য’ বা ’সঠিক’ হিসেবেই ধরা হয়। আর প্রবাদে তো আছে ‘দশচক্রে ভগবান ভূত’।

এই সাধারণ সিদ্ধান্ত বা অনুমান ব্যতীত আমার চোখে আওয়ামীলগের উক্ত বইয়ের প্রতি এত খড়গহস্ত হবার কোনো কারণ তো দেখি না।

কিন্তু এই যদি মূল কারণ হয়ে থাকে তবে বোধকরি আওয়ামীলীগ ঠিক সময়ে বা যথাযোগ্য সময়ে তার প্রতিবাদ বা বিরক্তিবোধ বা ক্রোধ দেখাতে সমর্থ হয়েছে বলে মনে তো হয় না। বরঞ্চ বইটি নিয়ে সংসদের ভেতরে ও বাইরে বিতর্ক করায় জনগণের কাছে আওয়ামীলীগের প্রতি ‘ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না’ এই প্রপঞ্চ বা ধারণা সৃষ্টি হবার প্রবণতাই আমরা দেখতে পাচ্ছি।

যাই হোক, শেখ মুজিব ১৯৭১ সালের ০৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ’জয় বাংলা’র পরে ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছেন বা বলেননি তার পক্ষে বা বিপক্ষে আমার অবস্থান ব্যক্ত করার কোনো ইচ্ছাই ব্যক্তিগতভাবে নেই। তিনি জয় বাংলা বললেও বা তারপরে জয় পাকিস্তান বললে বা না বললেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বোধহয় সৃষ্টি না হয়ে থাকতো না। কারণ ২৫ মার্চের আগেই পাকিস্তান সরকার যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছিল। অন্যদিকে যারা বাংলাদেশ সৃষ্টির পক্ষে আন্দোলন করছিল তারা যে ‘প্রস্তুতি’ সম্পন্ন করেনি তা বোধহয় একবাক্যে স্বীকার করলেই ইতিহাসের জন্য স্বস্তিকর। আর এই ‘সত্য’ বা ‘সঠিক তথ্য’ কেউ অস্বীকার করলে বরং স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসকে বিতর্কিতই করা হবে।

ইতিহাসে যার যতটুকু সম্মান ততটুুকুই তাকে বা তাদের দেয়া দরকার বলেই মনেহয়। আর তাতে যদি ‘জোর করে’ ‘গোয়েবলসীয় প্রচারণা’ কাজে লাগিয়ে কেউ ইতিহাসকে নিজের পক্ষে নিতে চায় তবে তাতে ইতিহাস বিতর্কের সৃষ্টি করবে বলেই তো বোধে জাগে।

এ কে খন্দকারের বইটি আশাকরি আমি পরে বিস্তারিত পড়বো। কিন্তু বইটিতে পুরোনো প্রকাশিত বইয়ের পুরোনো তথ্যই প্রকাশিত বলে মনে হয়েছে। কিঞ্চিত তার ব্যক্তিগত কিছু মন্তব্য বা নিজের কীর্তির বর্ণনা বা নিজের মত ব্যক্ত করা ব্যতীত তার বইটিতে নতুন কোনো কিছু নেই বলেই আমার বিশ্বাস।

আর সামরিক বাহিনীতে চাকুরি করা ব্যক্তিদের বিভিন্ন বই পড়ে আমার মনে হয়েছে, তারা সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবকিছু মাপতে চান। কিন্তু একটি জাতির জাতিসত্তার স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টির ইতিহাস বা রাষ্ট্রগঠনের ইতিহাসে ‘সামরিক’ তৎপরতা একটি বৃহৎ তৎপরতার কিঞ্চিৎকর অংশ মাত্র।

তিনি বলেছেন, ’আমার ধারণা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন আরো স্বল্প সময়ে হতে পারত, যদি সঠিক সময়ে রাজনৈতিক নেতারা স্বাধীনতার প্রস্তুতি নিতেন এবং আমাদের নির্দেশনা দিতেন’। এটা তার মতামত মাত্র। কিন্তু কার্যত সেটা তো হয়নি!

এবং সেটা আগামীর ’ইতিহাস’ সৃষ্টিতে ‘পাথেয়’ বা ভাবনা সৃষ্টির উপাদান হলেও হতে পারে মাত্র। কিন্তু তা বিগত ইতিহাসকে কোনো বিশেষকিছু বিশেষত্ব দিতে অপারগ!

সুতরাং, তার ব্যক্তিগত মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই বলা যায়, ইতিহাস নিজস্ব গতিধারায় পরিচালিত হয়ে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এবং সেই ইতিহাস নিয়ে তিনি একটি মত দিয়েছেন মাত্র। এবং সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বইটিতে তার মতামত আমলে নেয়া যেতে পারে মাত্র। নতুবা তিনি যা বলেছেন তা অন্য লেখকদের চর্বিতচর্বনের রিফাইন করা রূপ মাত্র।

বিষয়: বিবিধ

১২৮৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

264431
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:১৯
কাহাফ লিখেছেন : একে খন্দকার মুক্তিযুদ্ধের উপ সেনাপতি ও আওয়ামী মন্ত্রী-এমপি না হলে বইটি নিয়ে এতো আলোচনা হতো না নিশ্চয়........।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:২৭
207983
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : এক্সাক্টলি। ১০০%
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:০৩
208076
অধিকারের কথা লিখেছেন : অাপনার কথা সত্য। তবে নিচের লিংকের লেখা নিশ্চয় অারো চিন্তার খোরাখ সমৃদ্ধ করবে।

http://www.priyo.com/blog/2014/09/13/105728.nhtml
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:০৪
208077
অধিকারের কথা লিখেছেন : অাপনার কথা সত্য। তবে নিচের লিংকের লেখা নিশ্চয় অারো চিন্তার খোরাখ সমৃদ্ধ করবে।

http://www.priyo.com/blog/2014/09/13/105728.nhtml
264455
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৭:৩৯
হতভাগা লিখেছেন : এ কে খন্দকারের সমস্যা হল উনি কিছু যুক্তিযুক্ত সত্য কথা বলেছেন যা মানুষের মনেও ঘুর পাক খাচ্ছে সবসময়ই ।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:০৬
208078
অধিকারের কথা লিখেছেন : নিচের লিংক ভিজিট করতে পারবেন।
http://www.priyo.com/blog/2014/09/13/105743.html
264515
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:১২
অধিকারের কথা লিখেছেন : নিচের লিংক ভিজিট করলে নিশ্চয় আরো কিছু তথ্য পাওয়া যাবে যা চিন্তাভাবনাকে সমৃদ্ধ করবে।

০১.


264516
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:১৩

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File