কতিপয় ভাবনার বিচ্ছিন্নতাবোধ(বাংলাদেশের চলমান অবস্থা সম্পর্কে কিছু নিজস্ব মত)
লিখেছেন লিখেছেন অধিকারের কথা ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, ০৯:৩৩:১৪ রাত
কতিপয় ভাবনার বিচ্ছিন্নতাবোধ
ব্লগার রাজীব হায়দারকে খুন করা হলো নির্মমভাবে। ফেসবুকে যখন খবরটি পড়লাম, বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলাম। কী লিখে এই বিমূঢ়ভাব প্রকাশ করবো তা নিয়ে এই ক'দিন চিন্তা করলাম। কিন্তু ধাতস্থ হতে হতে আজ ব্লগার ও কার্টুনিস্ট তরিকুল ইসলাম শান্ত'র হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর খবরটি পড়লাম। বোধহয় মৃত্যুসহ সবকিছু স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে হয়।
এক বছর আগে সাগর আর রুনী বেডরুমে খুন হলেন। এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, বেড রুমের নিরাপত্তা তো সরকার দিতে পারে না।তারপর থেকে বলতে গেলে বোধকরি, আমার মধ্যে কী জানি কেন বেডরুমভীতি রোগে পেয়ে বসেছিল। রাত হলেই হঠাৎ যখন মনে পড়তো 'সাগর-রুনী' এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তখন ঘুমঘুম ভাব চলে যেত, মাঝে মাঝে ঘুমও হতো দেরী করে।
যাহোক সামগ্রিকতার আলোকে উপরের অনুভূতি প্রকাশ আমার ব্যক্তিগত মানসিক অবস্থা শেয়ার করার চেষ্টা মাত্র।
এই ক'দিন আমি ক'টি মিডিয়ায় চোখ রাখার চেষ্টা করেছি। পড়ার চেষ্টা করেছি, বুঝতে চেষ্টা করেছি। আদতে আমি বুঝতে পারছি না কী বলবো। কী মন্তব্য করবো। শাহবাগের লড়াইয়ের যে তেজ তা সারাদেশময় ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু তাকে নিশ্চয়ই নিতান্তই গোয়েবলসীয় প্রচারণার ফাঁদে যদি ফেলা হয় তবে কী জানি দেশের আগামী সময়ে কী অপেক্ষা করছে।
আজ আসলে এই সময়ে এসে চারিপাশ দেখে আমার কথা বলা লেখার ভাষাও ফুরিয়ে যাচ্ছে।
মিডিয়াগুলোর মধ্যে কী পেয়ে বসেছে কে জানে। অবশ্যই জামায়াতের ১৯৭১ সালের অবস্থান নিয়ে তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো প্রয়োজন অন্তত এই দেশের বীরত্বপূর্ন জন্মলগ্নকে সার্থক-মহান-ইস্পাতকঠিন করে তোলার জন্য। কিন্তু তাই বলে সকলকিছুতে ভেজাল মেশানোর কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না।
মিডিয়ায় যারা কাজ করছেন, যারা মিডিয়ার থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে কাজ করছেন তাদেরকে বলি, যখন যা মনেহয় তা তাকে মিডিয়ারীতি বা নীতি বানাবেন না।
দৈনিক আমারদেশ এখন দেশ ছাড়িয়ে বাইরের ষড়যন্ত্র খোজ করে আর বিডিনিউজ২৪ বা বাংলানিউজ২৪ বর্তমান চলমান চাঞ্চল্যকর সকলকিছুতে সত্যকে না খুজে ফুলিয়ে ফাঁফিয়ে প্রকাশ করে তথ্যসমূহকে।
সকলকিছু দেখে আমার শুধু এই মন্তব্যই করতে ইচ্চে হচ্ছে, আমাদের চরম ডান-মধ্যপন্থী মেইনস্ট্রীম মিডিয়ায় বোধকরি এক হিস্টিরিয়া রোগে পেয়ে বসেছে।
এইসব দেখেশুনে আমার লেনিন-মার্ক্স-এঙ্গেলসকেই মনে পড়ে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার পরে দেশে শ্রেনীগতভাবে ক্ষমতায় এসেছিল "লুম্পেন বুর্জোয়া বা পেটিবুর্জোয়া শ্রেনী", এই শ্রেনীর বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে লুন্ঠন-ডাকাতি করা, তাদের স্বভাবই হচ্ছে ডাকাতের মতো মেরে-ধরে লুঠ করে নেয়া। তাদের স্বভাবে আইন-নীতি হচ্ছে মাৎসন্যায়। সেই শ্রেণীরই লোকজন তো প্রতিনিধিত্ব করছে বর্তমান শাসক ও শাসন বহির্ভূত শ্রেনীসমূহের মাঝে। সুতরাং তাদের চেতনা এবং মনন বা তাদের কাজের ধরনে তো থাকবে বলাৎকার-বলপ্রয়োগ এবং মাৎসন্যায় নীতি। তারা কোনোকিছুতেই 'মুৎসুদ্দী বুর্জোয়া বা অন্যের হয়ে ভাড়াখাটা বা কিছুটা আইন নীতি মানার প্রবণতা থাকে না। তাদের মধ্যে থাকে না ভদ্র পেটিসুলভ প্রবণতা, যারা লুঠ করে কিন্তু তা করে আইনকে লংঘন না করে বরং আইনের মারপ্যাঁচকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে। তারা লুঠ করে জোরপূর্বক এবং আইন-নীতিকে থোরাই কেয়ার করে।
আমাদের এই হিস্টিরিয়াগ্রস্থতা থেকে বের হয়ে আসা প্রয়োজন। তা না হলে রবি ঠাকুরকে স্মরণ করে তাঁর কবিতার চরণ উদ্ধৃত করবো-
"অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে । "(নৈবেদ্য নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া)
অন্যায়কারীকে শাস্তি দিতে নিজেই যদি অন্যায়কে প্রশ্রয় দিই তবে তার প্রতিফল কী হতে পারে তা বোঝাতেই কবির এই উদ্ধৃতি যোগ করলাম।
ছোটোমুখে বড় কথা লিখলাম কী না জানি না।তাই লেখার শীরোনাম দিয়েছি, "কতিপয় ভাবনার বিচ্ছিন্নতাবোধ"।
বিদ্র: এই ভাবনা সম্পূর্ন নিজস্ব অর্থাৎ আমার মাত্র।
বিষয়: রাজনীতি
১২৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন