একটি রাতের কান্না...(ছোটগল্প)

লিখেছেন লিখেছেন যুবায়ের ২২ নভেম্বর, ২০১৩, ০১:১৪:৩৭ রাত

রাত্রী তখন ২টা বাজে। রাস্তাটা একেবারেই ফাঁকা।

মাঝে মধ্য দ্রুতগতিতে চলে যাচ্ছে দু-একটি পুলিশের পেট্রল কার।

বহুতল ভবনগুলির দারোয়ানেরা গেটে তালা লাগিয়ে গভীর ঘুমে মগ্ন।

একটি ভবন থেকে সুরেলা বাশিঁর শব্দ ভেসে আসছে।শামীম ঘাড় ঘুড়িয়ে

পরখ করেনিল শব্দটি রোদেলা ভবন এর গার্ড রুম থেকে ভেসে আসছে…

যাক!! এলাকায় অন্তত একজন বাঁশুড়িয়া বেঁচে আছে আজঅবধি।

সামনের মোড়ে জটলা পাকিয়ে বসে আছে একদল কুকুর। মাঝে মাঝে ঘেউ ঘেউ শব্দে

রাতের নিস্তব্দতাকে প্রকম্পিত করে তুলেছে।শীতের রাতে খুব বেশী প্রয়োজন নাহলে কেও

রাস্তায় বের হয়না এই শহরে।

শামীমের বাচ্চাটির ভীষণ জ্বর উঠেছে…

বাসায় এক ফোঁটা জ্বরের সিরাপ নেই!!.. বাচ্চাটির কষ্ট দেখে অবশেষে শামীম বের হলো রাস্তায়।

কিছুটা পথ হেটে গেলেই সামনে একটি ক্লিনিক আছে। তার পাশেই দু-চারটে ঔষধের দোকান।

একটি দোকান নাকি ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। সেই ভরসাতেই শামীম তার ছোট্ট শিশুটির জন্য

ঔষধ আনতে বের হয়েছে রাতের দ্বি-প্রহরেও রাস্তাতে…শুধুমাত্র ঔষধের খোঁজে।

ডিভাইন রোডের ২৩ নম্বর বাড়িতে জ্বলছে আলো। মাঝে মাঝে মৃদু স্বরে ভেসে আসছে

কারো গোঙানীর শব্দ। থেমে থেমে নারী কন্ঠের কান্নার শব্দ। হয়তো আকুতি বা মিনতির

মত কান্না জড়ানো কন্ঠ। বাড়িটি সম্পর্কে লোকমুখে মাঝে মাঝে শোনা যায় এটি নাকি টর্চার

সেলে পরিনিত হয়েছে বর্তমানে।বর্তমান ক্ষমতাধর দলটির কিছু চেলা-চামচা বিভিন্নভাবে

বিভিন্নজনকে কিছু অজুহাতে ধরে এনে তাদের মারধোর করে। এর বিনিময়ে কিছু টাকা-পয়সা

আদায় হলেই তাকে ছেড়ে দেয়। আর যেহেতু বাড়িটিতে ক্ষমতাসিন দলের ছেলেরা এইসব কাজে

জড়ীত তাই প্রসাশন ও নীরবতা পালন করে যাচ্ছে।

আজ যাকে ধরে নিয়ে এসেছে সে নাকি তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করেছিল।

এটিই ছিল তার অপরাধ!!.. আর সেই অপরাঝেই তাকে মারপিট করা হচ্ছে..

সামনে মুর্তির মত বসে আছে লোকটির স্ত্রী। কান্নাভেজা কন্ঠে বারবার

আকূতি মিনতি

করে যাচ্ছে তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তার কথা কে শোনে!!..

পাষন্ডরা থেমে থেমে লোকটিকে বেধড়ক পেটাচ্ছে আর তার পাশে বসে তার স্ত্রী কেঁদে যাচ্ছে।

শামীম ওদের ভালো করেই চেনে। আসলে ওদের কোন দল নেই!!..

ওরা যখন যে দল ক্ষমতায় বসে ওরা তখন সেই দলের লোক বনে যায়। আসলে অপরাধী অপরাধীই!!.. অপরাধীদের কোন দল থাকতে নেই!!.. থাকতে পারে সন্ত্রসী বাহিনী!!..

আর এভাবে প্রতিনিয়ত লোকজন ধরে ধরে তাদের নির্যাতন করে টাকা আদায়

করে তা দিয়ে নেষার খোরাকের বন্দোবস্ত করে চলে প্রতিনিয়ত….

প্যরাসিটামল সিরাপ হাতে শামীম ফিরছে। বাড়িটির সন্মুখদিয়েই এসে তার বাসায় প্রবেশ করলো।

বুক থেকে একটি দির্ঘশ্বাস বের হলো…

’যে দেশে আইনের শাসন নেই সে দেশটিতে এমন ঘটনা ঘটে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়”!!...

এইসব সন্ত্রাসীদের কোন দল নেই!! ওরা যেদিকে হাল সেদিকে পাল তুলে দিয়ে বসে থাকে..

ওরা তখনই পলাতক হয়ে ফেরারী আসামী হয়ে শহর থেকে গ্রামে লুকিয়ে থাকে যখন

তত্বাবধায়ক সরকার আর্বিভূত হয়। সেনাবাহিনীর চৌকষ সদস্যরা যখন সমাজের এইসব

জন্ঞ্জাল পরিস্কারে অভিযান করে সাধারন মানুষ তখন প্রাণ খুলে করে স্বাধীনভাবে চলাচল

করে থাকে।
শামীম তখনি উপলব্ধি করতে পারে স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ।

(গল্পের সমস্ত ঘটনা,চরিত্র এবং বিষয়বস্তু কাল্পনিক। কোন ব্যক্তি বা কারো সাথে মিলে গেলে তা কাকতালীয়। আর এর জন্য লেখক কোনভাবেই দায়ী নহে)

বিষয়: বিবিধ

১২৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File