পচতে থাকা মায়ের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে শিশু তৃষা! এটা কার অপরাধ ?
লিখেছেন লিখেছেন ইসলামের বাংলাদেশ ০৪ মার্চ, ২০১৪, ১২:১৩:০৩ দুপুর
পচতে থাকা মায়ের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে শিশু তৃষা!
এটা কার অপরাধ ?
'ওমা মারে, মা। মারে বাচাও। আর পারি না। আল্লাহ আমারে মরণ দাও। না আল্লাহ আমারে মাইরো না। আমি মরলে আমার বাচ্চাডারে কে দেখব। তোমরা আমার বাচ্চাডারে দেইখো।' রাজনৈতিক সহিংসতার পেট্রলবোমায় গুরুতরদগ্ধ গৃহবধূ মুনিয়া বেগম (২০) এভাবেই তার ছোট দুই বছরের শিশু তৃষার ভবিষ্যত নিয়ে শংকা প্রকাশ করে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছেন। শরীরের অধিকাংশ স্থান গুরুতর দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর প্রহর গোনা এই মায়ের আকুতি আটকে থাকছে আশ্রয় নেওয়া মামার বাড়ির টিনের ছাপড়া ঘরেই। উন্নত চিকিত্সাতো দূরের কথা অর্থাভাবে মুনিয়া স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে শিবচরের সন্ন্যাসীরচরে মামার বাড়ি আশ্রয় নিয়ে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর আগে মামাদের সহায়তায় বিক্রমপুরের মৃত মোকসেদ মুন্সীর মেয়ে মুনিয়া বেগমের সাথে মেহেরপুর জেলার গোভীপুর গ্রামের মোফাজ্জেল খানের ছেলে হোটেল শ্রমিক রানা খানের বিয়ে হয়। দুই বছর আগে মুনিয়ার একটি মেয়ে সন্তান হয়। দরিদ্র হলেও সুখেই কাটছিল মুনিয়ার সংসার। গত ১১ নভেম্বর দুপুরে জামায়াত-বিএনপির হরতাল চলাকালে মেহেরপুর জেলার গোভীপুর থেকে আমঝূপি গ্রামের রানার বোন রূপার বাড়িতে অটোরিকশাযোগে মেয়েসহ বেড়াতে যাচ্ছিলেন মুনিয়া। যাত্রাপথে চানবিল মাঠের কাছকাছি অটোরিকশাটি পৌঁছালে পিকেটাররা পেট্রলবোমা ছুড়ে মারে। এ সময় মুনিয়া গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়। মুনিয়াকে প্রথম মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। চিকিত্সকরা জানান, মুনিয়ার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেলেও শ্বাসনালী আক্রান্ত না হওয়ায় বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু হতদরিদ্র রানা চিকিত্সা ব্যয় না মেটাতে পারায় চলতি বছরের ২ জানুয়ারির হাসাপাতাল থেকে শিবচরের সন্ন্যাসীরচরে মুনিয়ার মামা বাড়িতে নিয়ে আসে। এর পনের দিন পর মুনিয়াকে আবারও ঢাকায় নেওয়ার কথা থাকলেও অর্থাভাবে তা সম্ভব হয়নি। মুনিয়ার প্রতিদিনের ওষুধ খরচের ৪০০ টাকাও জোগাড় করতে না পারায় মুনিয়ার অবস্থার দিন দিন অবনতি ঘটছে। পুষ্টিকর খাবার না খাওয়ানোর ফলে মুনিয়ার শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটছে। ভাল চিকিত্সা, ওষুধ ও খাবারের অভাবে পুড়ে যাওয়া অংশগুলোতে পচন ধরেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ছোট শিশুটিও মায়ের বিকৃত চেহারা দেখে তার কাছে যেতে ভয় পাচ্ছে। ঘা বাড়তে থাকায় মুনিয়া তার শরীরের কোনো অংশে কাপড়ও ব্যবহার করতে পারছে না। রাখা হচ্ছে অপরিচ্ছিন্ন একটি ঘরে মুরগির খোয়াড়ের মতো তৈরি করে। মৃত্যুর জন্য মুনিয়া বারবার আকুতি করেও ছোট মেয়ের দিক তাকিয়ে আবার বাঁচতে চাইছেন। কিন্তু অর্থের জোগানের চিন্তায় সে আশা ম্লান থেকে ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
মুনিয়ার মামী মুকুলি বেগম ক্রন্দনরত অবস্থায় বলেন, দুনিয়ার ওর কোনো জায়গা নেই। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ওকে রাখতে পারছে না। তাই আমিই রেখেছি। কিন্তু আমিওতো গরিব। ওকে টাকার অভাবে চিকিত্সা করাতে পারছি না। ভালো কিছু খাওয়াতেও পারছি না।
মুনিয়ার স্বামী রানা খান বলেন, প্রায় এক লাখ টাকা সহায়াতা পেলেও ধার কর্জ করে দেড় লাখ টাকা খরচ করেছি। এখন হাতে কোনো টাকা নেই। সারা দিন ওর পাশেই থাকতে হয়। তাই কাজও করতে পারছি না। চিকিত্সার অভাবে শরীরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা বেড়েই চলেছে। আমরা গরিব তাই দেখা ছাড়া কিছুই করার নেই।
মুনিয়া অপলক দৃষ্টিতে বাঁচার আকুতি জানিয়ে বলেন, 'ভাই সারা শরীরে যন্ত্রণা। এই দেশের অপ রাজনীতির শিকার আমি। ভালো চিকিত্সা পেলে আমি বাচতে পারতাম। কিন্তু কে আমাকে চিকিত্সা করাবে। মরে গেলেও বাচতাম। কিন্তু মেয়েটার জন্য বাচতে ইচ্ছা করে। আমি মারে গেলে ওকে কে দেখবে। আমাকে বাচান ভাই। দয়া কইরা বাচান।'
দত্তপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুরাদ মিয়া মুনিয়াকে দেখতে গিয়ে বলেন, সারা শরীর ভয়াবহভাবে দগ্ধ হয়েও ও প্রায় চার মাস ধরে বেঁচে আছে। ওর কষ্ট দেখে মনে দাগ কেটে যায়। সমাজের বিবেকবানদের ও সরকারকে ওকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে। মুনিয়াকে বাঁচানোর জন্য তিনি স্বামী রানার মোবাইল নাম্বারে ০১৮৩৮২৮৬৪১১ যোগাযোগ করার অনুরোধ জানান।
http://www.kalerkantho.com/online/country-news/2014/03/02/57749
বিষয়: বিবিধ
১৩২০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন