কেউ পারবেনা দাবায়ে রাখতে!
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৮:০৬:১২ সকাল
আল বদর, আল শামস, রাজাকার আর কোলাবরেটরদের তালিকা প্রয়ণন করেছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।
সেইখানে সাড়ে দশ হাজার মানুষের তালিকা প্রণয়ন করেছে যাদের অনেকেই মৃত, বিদেশ পারি দিয়েছেন।
সেই তালিকাতে মাত্র ৩৭জন জামায়াতের লোক পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে ২৫ জন মৃত।
অনেকে এই তালিকা প্রণয়নের কারনে ঝাপ দিয়ে সাধুবাদ জানাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সরকারকে। ঐখানে প্রচুর পরিমানে আওয়ামী লীগ থাকার কারনেই উল্লাস।
এইখানে উল্লাসের কোন কিছুই নাই।
এই রাজাকারের তালিকায় বিএনপি জামাত আর আওয়ামী বিরোধীদের বাপ-দাদা চৌদ্দগুষ্ঠির নাম আসলে আজকে অনলাইনে আপনারাই প্রতিবাদে ফেটে পড়তেন।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা মাল্টিডাইমেনশনাল ।
মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাসে বাপ রাজাকার, ছেলে মুক্তিযোদ্ধা এইরকম প্রচুর আছে।
মেজর জিয়ার মতো ঘোষনা দিয়ে সেক্টর কমান্ডারের মতো মুক্তিযোদ্ধা আছে।
শেখ মুজিবুর রহমান আছেন, যিনি ছিলেন নেতা, বাংলাদেশের প্রতীক, যাকে অস্বীকার করা যাবেনা ।
গ্রামে গঞ্জের গরীব মানুষরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো স্রেফ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে বলে এমন মুক্তিযোদ্ধা আছে।
রামেন্দু মজুমদারদের মতো মুক্তিযোদ্ধা আছে যারা ভারতের ভাতায় মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধু ভারত ঘুরেছেন।
রুমি আর শহুরের পোলাপানদের ছোট একটা গ্রুপ ক্রাকপ্লাটুনের নামে আছে, যাদেরকে গ্লোরিফাই করা হয় কারন তারা মেইনস্ট্রিম আর শহুরে বড়োলোকের পোলাপান।
সাদেক হোসেন খোকার মতো মুক্তিযোদ্ধা আছে যারা বীরত্বের সাথে মুক্তিযুদ্ধ করেছে সম্মুখ সমরে।
নাদের গুন্ডার মতো অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা আছে যারা মহল্লায় মহল্লায় মাস্তানী করতো কিন্তু যুদ্ধে গেছে সবার আগে।
কলকাতায় সোনাগাছিতে মাগীবাজি করা মুক্তিযোদ্ধা আছে।
তাজউদ্দিন আর তৎকালিন প্রবাসী নেতাদের মতো বুদ্ধিমান আর সাহসী নেতারা আছে যারা গোটা ব্যাপারটাকে কূটনৈতিক বুদ্ধি দিয়ে মোকাবেলা করেছেন, মুক্তিযুদ্ধকে অর্গানাইজ করেছে।
সেক্টর কমান্ডাররা আছেন, ওসমানী আছেন যারা পাকিস্তানী বাহিনীর সেনা কর্মকতা হয়ে দেশের মানুষের উপর গণহত্যা দেখে রুখে দাড়ায়ছিলেন। দেশের মানুষরা আছেন যাদের কারনে মুক্তিযুদ্ধ সফল হয়েছিলো, মুক্তিযোদ্ধারা যদি মাছ হয় জনগণ তখন পানির মতো ছিলো। যারা দেশে ছিলো তারা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় আর খাবার দিয়ে সহায়তা করেছে। এটা না হলে পাকিস্তানীরা কখনোই পরাজিত হতো না।
যারা পাকিস্তানীদের চাকরী করেছেন কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছে এমন অনেক আছে। আবার এমন অনেক আছে রাজাকারী করেছে, মানুষ মেরেছে লুটপাট করেছে ১৬ই ডিসেম্বরের পর একটা অস্ত্র হাতে মুক্তিযোদ্ধা সেজে বসেছে।
আবার এমন অনেকেই আছে যারা বিহারী গণহত্যায় পার্টিসিপেট করেছে,লুটপাট করেছে ।
অনেক রাজাকারকে মুক্তিযুদ্ধের পর পর মেরে ফেলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাভাবিক ভাবে দিন কাটাইছে এমন মানুষ প্রচুর আছে আবার শরনার্থীর শিবিরে মানবেতর জীবন কাটাইছে এমন মানুষ প্রচুর আছে।
চীনাপন্থী বামেরা আছেন যারা পাকিস্তান সরকারের সাথে কাজ করেছেন। মুজিব বাহিনী আছে যারা সরাসরি মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে, মুক্তিবাহিনীর সাথে লড়াই করেছে, প্রবাসী সরকারকে চ্যালেঞ্জ করেছে নিয়মিত, মুক্তিবাহিনী থাকার পরো তারা প্যারালাল বাহিনী তৈরি করেছিলো মুজিবের নামে।
অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার নামে লুটপাট করেছে বিহারী আর পাকিস্তানীদের সম্পত্তি দখল করেছে।
হুমায়ূন আহমেদের নানার মতো শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আছেন যিনি সাধারন মানুষকে সহায়তা করেছেন যাকে মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করেছিলো।
জাফর ইকবালের বাবার মতো মুক্তিযোদ্ধা আছেন যিনি সব অস্ত্র মানুষকে দিয়ে দিয়েছিলেন, পরবর্তীতে আবার চাকরিতে ফেরত যাবার সময় পাকিস্তানীরা তাকে হত্যা করে।
জাফর ইকবালের মতো বাড়ীর পিছনে ট্রেঞ্চ খোদা চেতনাব্যবসায়ী আছে, শাহরিয়ার কবির এর মতো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে মুরগী সাপ্লায়ার মুক্তিযোদ্ধা আছেন যারা এখন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে লিখে সেটাকে ধর্মের রুপ দিয়েছেন কিন্তু নিজেদের তরুণ বয়েসে যারা মুক্তিযুদ্ধে যান নাই।
মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য ধর্ষনের শিকার বাঙ্গালী নারীরা আছেন, যাদের সন্তানদের এখন পাকিবীর্য বলে অপমান করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আসলে মানুষের ইতিহাসের মতোই বীরত্বে, কাপুরুষতা, দুঃখের, অর্জনের, কষ্টের, সাহসের, নোংরামীর, উৎপ্রেরনার, জাতীয়তার। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আসলে মানুষের ইতিহাস।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নিরপেক্ষ ভাবে লেখা আর দেশের চোখ আছে এমন মানুষ আমাদের মাঝে অনেক কম ছিলো। বেশীর ভাগ দালাল।
আজকে দেশ স্বাধীন না হলে যেসব মানুষের নাম পাকিস্তানীরা কোলাবরেটর আর পাকিস্তানীদের অনুগত বলে রেজিস্টার করেছিলো তারা হতো সবচে বড়ো সম্মানিত ব্যক্তি।
মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকাটা বছর বছর বাড়ে আর টাকা দিলেই যেখানে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নাম উঠানো যায় সেই ২ লাখ ১০ হাজারের তালিকাটা ১০ হাজার পার হত কিনা সন্দেহ আছে যদি দেশ স্বাধীন না হতো।
যারা মুক্তিযুদ্ধকে সাদা আর কালো চোখে দেখে তারা প্রকৃত গবেট আর দালাল। গোটা প্রক্রিয়াটা নিয়ে লেখার মতো কেউ না কেউ জন্মাবে তাই আপাতত পাকিস্তান, ভারত আর বাংলাদেশের বিভিন্ন লেখা পড়ে নিজের মতো জোরাতালি দেয়া ছাড়া কোন উপায় নাই।
রাজাকারের তালিকা প্রকাশের দরকার ছিলো সেই ১৯৭২ - ৭৩ সনে।
এখন এসব তালিকা প্রকাশ আর সংযোজন বিসর্জন এইসবের উদ্দেশ্য আসলে রাজনৈতিক। এগুলো কোটি টাকার মচ্ছব হবে। কেউ কেউ নাম কাটাতে চাইবে। কেউ কেউ চাইবে প্রতিপক্ষের নাম উঠাতে।
জামায়তের রাজাকারদের ফাসি দেয়া হয়েছে - একটা কনক্লুশন দরকার ছিলো।
এরপর শাহবাগকে কেন্দ্র করে নির্বাচন বিহীন ভাবে ক্ষমতা দখল করা হলো ২০১৪তে। পৃথিবীতে নজির বিহীন লুটপাট চালানো হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে। এরপর নিশিরাতে ভোটের মাধ্যমে ভারতের তাবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করা হলো। বাংলাদেশের একটা অর্থনৈতিক বাবলের মধ্যে বসে আছে। ভারতের অর্থনীতি ফাটলে বা আওয়ামী সরকারের পতন হলে বোঝা যাবে তারা কি পরিমান ডাটা ম্যানিপুলেশন করে স্কচটেপ দিয়ে স্কাইস্ক্রেপার ধরে রাখার চেষ্টা করতেছে।
পৃথিবীর কোন দেশ ইন্টারনাল ডিভিশন নিয়ে এগুতে পারে নাই।
মাল্টি কালচারাল সোস্যাইটি হলো জোরকদমের দৌড়, যারা সাথে এক হাত আর এক পা আপনার বাধা তার পায়ে গুলি করে আপনি দৌড়ে জিতে পারবেন না।
ধরেন ভিয়েতনামে আমেরিকানরা ১০ লাখ মানুষ হত্যা করছে, এতো বোমা মারছে যেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীতে মারে নাই। সেই ভিয়েতনাম আজকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে । আমেরিকা তার বড়ো পার্টনার।
জাপানে দুই দুইটা নিউক্লিয়ার বোমা মারছে আমেরিকা। লাখ লাখ লোক হত্যা করছে বিনাপ্রয়োজনে। জাপান বিশ্বের তৃতিয় অর্থনীতি আর আমেরিকার তার সবচে বড়ো বন্ধুদেশ। পূর্বজার্মানী আর পশ্চিম জার্মানী মিল হয়ে গেছে। ফ্রান্সে যে গণহত্যা করছে জার্মানী তাদের সাথে তারা ইউরোপিয় ইঊনিয়নে গেছে।
রুয়ান্ডায় ১৪ লাখ লোককে শ্রেফ কচুকাটা করেছিলো হুতুরা টুটসিদের মাচেট দিয়ে। তারা একত্রে আছে আর আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে ইমার্জি টাইগার। তারা রিকনসিলিয়েশন করেছিলো এই ভাবে যে মোড়ে মোড়ে দাড়ায়ে তার অপরাধ স্বীকার করেছে।
প্রতিশোধ নিলে তাদের আরো ১৪ লাখ লোককে হত্যা করতে হইতো।
আমেরিকা ব্লাডি একটা গৃহযুদ্ধ ফেস করসে যেখানে নর্থ সাউথের সাথে যুদ্ধে জিতসে, পাচ লাখ মানুষ মারা গেছিলো সেই যুদ্ধে।
আমেরিকা তো কাউকে কচুকাটা করে নাই।
কানাডার কুইবেক বছর বছর ধরে স্বাধীনতা চায়, স্কটল্যান্ড স্বাধীনতা চায় ইংল্যান্ড থেকে, ক্যাটালোনিয়া স্বাধীনতা চায় স্পেন থেকে।
কেউ কাউকে মেরে কচুকাটা করে না। মতবিরোধীতা থাকে এরপরো তারা একদেশেই থাকে।
সভ্য সমাজ এইভাবেই চলে।
পূর্বে, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে মানুষের জীবনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ একটা কুকুরের জীবনের চেয়েও কম।
এইরকম ডিভাইসিভ রাজনীতি যারা করে তাদের আসল কোন নেতৃত্বগুণ নাই। ইস্যু আড়াল করার জন্য তারা এই রাজনীতিটা করে।
বাংলাদেশ, অবিভক্ত বাংলায় স্বাধীনতার সূর্য ডুবসিলো সবার আগে। আবার বাংলাতেই ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন হয়েছে। পাকিস্তানীদের গণহত্যার বিরুদ্ধে দাড়ায়ে দেশ গঠন বাংলাতেই হয়েছে।
আশাকরি ডিভাইসিভ রাজনীতি পরিহার করে পুরো উপমহাদেশের রোল মডেল হবার কাজেও বাংলাদেশ আগায় যাবে। মমতা ব্যানার্জি যে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গিয়ে ভারতের মুসলিম বিদ্বেষী আইনের বিরোধীতা করলেন সেটা গোটা উপমহাদেশকেই পথ দেখায়।
১৬ই ডিসেম্বর ২০১৯ এ আমরা অনেক ক্ষেত্রে পাকিস্তানীদের পিছনে ফেলেছি। শিশু মৃত্যু হার রোধ, উন্নত সেনিটেসন তৈরি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন, গরীবি রোধে ভারতকে পিছনে ফেলেছি
বাঙ্গালী পারবেই, মানুষের মুক্তি স্রোতের মতো, কেউ তাদের দমায় রাখতে পারবে না, প্রতিটা ইস্যু নিয়ে নোংরা ডিভাইসিভ রাজনীতি আজকে এখনই বন্ধ করতে হবে।
Imtiaz Mirza
বিষয়: বিবিধ
৯০৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন