বৈঠকে চমকপ্রদ ঘটনা : কার ইশারায় চলছেন বাপ-বেটা?

লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৬:১৪:০৪ সকাল

চমকপ্রদ এক ঘটনা ঘটেছে বি. চৌধুরীর বারিধারার বাসায় আজকের যুক্তফ্রন্ট- জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বৈঠকে। সবকিছু চলছিল ঠিকঠাক, হঠাৎই আলোচনায় ছেদ ঘটে গেলো। আলোচনা সবে এগিয়েছে, মত-মন্তব্য জানাচ্ছিলেন আমন্ত্রিত নেতারা, এরই মধ্যে বৈঠক স্থগিত করে দেন যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

এ ঘটনা ঘটে রাত আটটার দিকে রাজধানীর বারিধারায় বিকল্প ধারা সভাপতি বি. চৌধুরীর বাসায়। বৈঠক সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সবেমাত্র বৈঠক জমে উঠেছে, এরই মধ্যে বি. চৌধুরীর ছেলে মাহী বি. চৌধুরীর কাছে বাইরে থেকে কোনও তথ্য আসায় তিনি বৈঠক থেকে বের হয়ে যান। একটু পরে আবারও বৈঠক কক্ষে ঢুকে ইশারায় বি চৌধুরীকে বাইরে ডেকে নিয়ে যান তিনি।

সূত্র জানায়, বাবা-ছেলের কথোপকথন শেষে বৈঠক কক্ষে বি. চৌধুরী ও মাহি বি. চৌধুরী ঢুকে আমন্ত্রিত নেতাদের মোবাইল ফোন কক্ষের বাইরে রাখার অনুরোধ করেন। এরপর নেতাদের কাছ থেকে প্রায় ১০-১২ টি ফোন পাশের কক্ষে এনে রাখা হয়। তবে ওই বৈঠকে অতিথি হিসেবে আসা এক নেতা জানান, তার সঙ্গে ফোন নেই। কিন্তু, এতে নিশ্চিত হতে পারেননি বৈঠকটির আয়োজক বি. চৌধুরী। আবারও কয়েক মিনিট চলার পর বৈঠক স্থগিত করে দেন বি চৌধুরী। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

বৈঠকের সময় রাষ্ট্রপতির বাসায় উপস্থিত একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, উপস্থিত নেতাদের মধ্যে একজনের ফোন বৈঠককালীন সময়ে লন্ডনের একটি নম্বরে যুক্ত ছিল এমন তথ্য পরিবারের একজন মাহি বি. চৌধুরীকে জানিয়ে দেন। এরপর তিনি বি. চৌধুরীকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে বৈঠক কক্ষে ঢুকে মাহি বি. চৌধুরী লন্ডনের একটি ফোনে কারও ফোন যুক্ত থাকার তথ্য জানালে বি. চৌধুরী সব ফোন বন্ধ করে বাইরে রেখে দেওয়ার জন্য নেতাদের অনুরোধ করেন। ইউকে’র যে নম্বরে বৈঠকের ভেতরের ফোনটি সংযুক্ত ছিল সেটির নম্বরের শুরুতে +৪৪ ছিল।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউন অনলাইনকে জানান, ‘বৈঠকের মাঝামাঝি সময়ে এসে বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী জানান, এখানের একটি মোবাইল নম্বর থেকে লন্ডনে কানেক্ট করা আছে। আর এরপরই সবার ফোন চাওয়া হলে আমরা সবাই ফোন জমা দিয়ে দেই।’

ওই ফোনটি বৈঠকে অংশ নেওয়া কোন নেতার ফোন থেকে করা এবং লন্ডনে ফোনের ওপাশে কে ছিলেন সে সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেননি মাহি বি. চৌধুরীসহ বৈঠকে উপস্থিত নেতারা।

এদিকে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে লন্ডনে কারো সাথে ফোনে যুক্ত থাকার খবর মাহী বি চৌধুরীর কাছে কিভাবে আসলো? কারণ এমন সংবাদ তো কেবল সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার কাছেই থাকার কথা। গোয়েন্দা মনিটরিং ছাড়া এই তথ্য কোনোভাবেই কারো জানার কথা নয়। তাহলে কি মাহি বি চৌধুরী ও তার বাবার সাথে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থারই সংযোগ রয়েছে? এমন প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র থেকে।

আগে থেকেই বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার পুত্রকে নিয়ে সন্দেহ সংশয় তৈরি হয়েছিলো। জাতীয় ঐক্যের চুক্তিপত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ স্বাধীনতা বিরোধী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে তারা জামায়াত বুঝলেও পরোক্ষ স্বাধীনতা বিরোধী নিয়ে গণ্ডগোল বেধেছিলো। পরে ঐক্যের নেতারা জানতে পেরেছেন, এই শব্দ দুটি মাহি বি. চৌধুরী বসিয়েছেন। পরোক্ষ স্বাধীনতা বিরোধী বলতে তিনি এখানে বিএনপিকে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ এর মাধ্যমে তিনি বিএনপিকেও জাতীয় ঐক্য থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছেন।

আজকের বৈঠকে এমন চমপ্রদ ঘটনার মধ্য দিয়ে এটা আবারও পরিস্কার হলো যে বি চৌধুরী ও মাহী বি চৌধুরী আসলে সরকারের এজেন্ট হিসেবেই কাজ করছেন। এবং সরকারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী জাতীয় ঐক্যের মধ্যে নিজেদের পরিকল্পনা প্রতিষ্ঠা করছেন। তাদের সব পরিকল্পনা বিএনপি ও জামায়াতকে জাতীয় ঐক্য থেকে দূরে সরিযে রাখা নিয়ে।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই বি. চৌধুরীর উদ্দেশ্য ও ভূমিকা নিয়ে রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষের মনে নানান ধরণের প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছিল। দিন যত যাচ্ছে বি. চৌধুরী ও তার ছেলের আসল রূপ ততই প্রকাশ পাচ্ছে। বি. চৌধুরী, তার ছেলে মাহি বি. চৌধুরী ও মেজর মান্নান যে সুকৌশলে বিএনপির ওপর পূর্বেকার বিহিষ্কারের প্রতিশোধ নিচ্ছে এটা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট।

এদিকে আজকের বৈঠকটি শেষ হওয়ার পর বি. চৌধুরীকে বৈঠক স্থগিত করার কারণ জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আলোচনা আবারও হবে।

তবে বৈঠক তড়িঘড়ি করে শেষ করার মূল কারণ অন্য কিছু কিনা তা নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়িতে শুরু হয় কানাঘুষা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহী বি চৌধুরী কোনও মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার একাধিক নেতার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের প্রতিনিধি হিসেবে পর্যবেক্ষক হিসেবে অংশ নেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, ২২ সেপ্টেম্বর সমাবেশের মধ্য দিয়ে যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, বিএনপি আশা করে এ প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে।

বি চৌধুরীর বাসায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেএসডির সভাপতি আসম রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার উমর ফারুক, নাগরিক ঐক্যের ডা. জাহেদ উর রহমান, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমীন প্রমুখ।

উৎসঃ অ্যানালাইসিস বিডি

বিষয়: রাজনীতি

৭০১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385870
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সকাল ০৭:৩৬
টাংসু ফকীর লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
385873
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বিকাল ০৪:৩৯
কুয়েত থেকে লিখেছেন : দালালী আর আন্দোলন কোনদিন একসাথে চলতেই পারেনা। ওরা আন্দোলন করেবে ঐক্যকরবে নিজেদের সার্থে জাতির সার্থে নয়। তাইতো ওদের কারনেই অবধৈ সরকারের এত বরসা। ধন্যবাদ আপনাকে
385874
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ সকাল ১১:২২
হতভাগা লিখেছেন : প্রথমতঃ , বিএনপি নির্বাচনে আসছে না এটা ১০০% নিশ্চিত। তাই ২০১৯ এর নির্বাচন যাতে ২০১৪ এর মত একেবারে ফাঁকা মাঠে না হয় সেজন্য এসব ঐক্য কিংবা যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী লীগেরই সৃষ্টি। এরা খুব বড়জোড় ২/৩ টা আসন পেতে পারে যা আওয়ামী লীগের জন্য মাথা ব্যথার কোনই কারণ হতে পারবে না।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File