মাদক ব্যবসায় আ.লীগের সাংসদ, পুলিশ, সাংবাদিকের নাম!
লিখেছেন লিখেছেন চেতনাবিলাস ১৬ এপ্রিল, ২০১৮, ০৭:৪৬:৫৭ সকাল
খুলনায় মরণনেশা মাদক ব্যবসার সঙ্গে ২৭২ জন ব্যক্তির জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এঁদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের এক সাংসদ, আরেক সাংসদের দুই ভাই, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও মোটরশ্রমিক লীগের নেতা এবং বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। এই পুরো মাদক চোরাকারবার ও সরবরাহে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সহায়তা করেন ৩৪ জন পুলিশ সদস্য।
মোট ৩৪৬ জনের এমনই একটি তালিকা সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে খুলনায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে পৌঁছেছে। সেই সঙ্গে তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু তালিকায় ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ, জনপ্রতিনিধি ও নেতা, পুলিশ, সাংবাদিকসহ ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের নাম থাকায় ব্যবস্থা নিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
খুলনা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাশেদুজ্জামান জানান, তালিকার সিংহভাগই সরকারি দলের নেতা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিক। তাই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না তারা। তবে, তালিকায় থাকা ছোটখাটো মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে খুলনার পুলিশ।
ওই তালিকায় থাকা কারো নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি উপপরিচালক। তবে এনটিভি অনলাইনের এই প্রতিবেদকের কাছে ওই তালিকার কপি রয়েছে।
যেভাবে তালিকা
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সরকারের তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা গত বছর পুরো খুলনায় তদন্ত করে মাদক ব্যবসায়ী, এর পৃষ্ঠপোষক ও সহায়তাকারীদের তালিকা তৈরি করে। এরপর তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এরপর আবার তদন্ত ও যাচাই-বাছাই করে ৩৪৬ জনের তালিকা পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও জননিরাপত্তা বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর তালিকাটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়। অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) গত ১৫ মার্চ, ১৭৪ নম্বর স্মারকের ওই তালিকাভুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য খুলনা জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যালয়কে আদেশ দেন।
এমপির নাম ৯ নম্বরে
তালিকাকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমেই আছে খুলনা জেলা, এরপরে আছে খুলনা মহানগর। এই দুটি ভাগে আবার তিন শ্রেণির লোকজনের নাম দেওয়া আছে। প্রতিটি ভাগের শুরুতে মাদক ব্যবসায়ী/চোরাকারবারিদের নাম ও ঠিকানা দেওয়া আছে। মধ্যে আছে মাদক ব্যবসায়ী/চোরাকারবারিদের পৃষ্ঠপোষক/আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারীদের নাম ও ঠিকানা। শেষে আছে মাদক চোরাকারবারে ও সরবরাহে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সহায়তাকারী স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নাম ও ঠিকানা।
খুলনা মহানগরে মাদক ব্যবসায়ী/চোরাকারবারিদের পৃষ্ঠপোষক/আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারীদের নাম ও ঠিকানা তালিকায় নয় নম্বরে রয়েছে খুলনা-২ আসনের এমপি ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মিজানুর রহমান মিজানের নাম।
খুলনা মহানগরে মাদকের পৃষ্ঠপোষক ২৮ জন!
খুলনা মহানগরে মাদক ব্যবসায়ী/চোরাকারবারিদের পৃষ্ঠপোষক/আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারীদের নাম ও ঠিকানার তালিকায় ১ নম্বরে আছে খুলনা সদর থানাধীন ৫ নম্বর মাছঘাট শ্রমিক লীগের সহসভাপতি মো. বাবুল শেখের নাম। এরপরে যথাক্রমে খুলনা সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ সমর্থক মো. শামসু (২৮), খুলনা মহানগর শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গদা ইউনুচ মুন্সী, ২১ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সদস্য ও ১৩৮ খাদ্য গুদাম ওয়াকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. ভাসান (৪০), মহানগর আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক হাফেজ শামীম ও খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আসাদুজ্জামান রাসেলের নাম।
বিষয়: বিবিধ
৬০৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন